বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আফগানিস্তান কি আদর্শ রাষ্ট্র?

  •    
  • ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ১৪:৫৬

আফগানিস্তানে এখন কেউ আর পর্যটক হিসেবে বেড়াতে যান না। অথচ এই আফগানিস্তানের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের জন্য আমাদের দেশে স্লোগান দেয়া হয়, “আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান।” যারা এই স্লোগান দিচ্ছে তাদের কজনইবা বর্তমান আফগানিস্তানের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখে। আফগানিস্তান এরই মধ্যে যে একটি রক্তাক্ত রণাঙ্গনের দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সেই খবর স্লোগানধারী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর কজনইবা জানে। তাদের সেই জানার সুযোগ আছে কি?

একসময় আফগানিস্তান তেমন উন্নত না হলেও এর প্রকৃতি এবং জনগণের সরল জীবনযাপন নিয়ে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় একটি দেশ ছিল। বাঙালি বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তক সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪-১৯৭৪) আফগানিস্তানে তার কিছু কাল অবস্থান নিয়ে লেখা স্মৃতিগ্রন্থ ‘দেশে বিদেশে’ (১৯৪৮) পাঠককুলকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। আফগানিস্তান আগে থেকেই সেই সৌন্দর্য এবং মনোরম পরিবেশের পরিচয় বহন করে আসছিল।

বিশ শতকের ৬০ এবং ৭০-এর দশক পর্যন্ত আফগানিস্তানকে নিয়ে কোনো উত্তেজনা ছিল না। কিন্তু ১৯৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব আফগানিস্তান (পিডিপিএ)-এর নেতৃত্বে ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে।

তদারকির নেতৃত্বে গঠিত সরকারকে এসব মহল সোভিয়েত ধাঁচের মনে করে সরকারবিরোধীদের অস্ত্রশস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করতে থাকে। তদারকির নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের অভ্যন্তরে শিক্ষা, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থার সংস্কারে যেসব উদ্যোগ নিচ্ছিল তাতে আফগানিস্তানে দীর্ঘগোত্রীয় আঞ্চলিক শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তনের কিছু উদ্যোগ ছিল। আফগানিস্তানের শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা শিক্ষার সুযোগ পেতে শুরু করেছিল।

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায়ও বেশ কিছু পরিবর্তনের উদ্যোগ রাষ্ট্র গ্রহণ করে। এসব পরিবর্তনকে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহজে মেনে নিতে পারেনি। সেকারণেই প্রতি বিপ্লবী শক্তিকে তারা সহযোগিতা প্রদান করতে থাকে।

অভ্যন্তরীণভাবে পিডিপিএ এই শক্তিকে মোকাবিলা করার ততটা শক্তি রাখেনি। সেই অবস্থায় সরকারের অনুরোধে সোভিয়েত সেনাবাহিনী ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে সরকারের পাশে দাঁড়াতে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে।

সোভিয়েত বাহিনীর এই সহযোগিতা মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিমা দুনিয়ার দৃষ্টিতে অনুপ্রবেশ এবং আফগানিস্তানকে দখল করে নেয়ার প্রচার পায়। ফলে মুসলিম দেশগুলোতে আফগানিস্তানের সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মুজাহিদ বাহিনী সরকার উৎখাতে গঠন করে। এরা আমেরিকা, পশ্চিমের বিভিন্ন এবং মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশ থেকে অর্থ, অস্ত্র এবং লোকবল পায়।

বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক তরুণ আফগানিস্তানে সরকার উৎখাতে দলে দলে যায়। আফগানিস্তান হয়ে ওঠে এক যুদ্ধের রণাঙ্গন, নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাতে থাকে। সরকার তাদের ভাষায় সংগঠিত বিপ্লব রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। সোভিয়েত বাহিনীও আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায়।

আফগানিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতায় একের পর এক সরকার অধিষ্ঠিত হয়। পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অনুগত সরকার বসিয়েও আফগানিস্তানে শান্তি, স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারেনি বরং উগ্র-ধর্মান্ধ তালেবান ও জঙ্গি গোষ্ঠী ক্রমাগত রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সশস্ত্র যুদ্ধ আফগানিস্তানকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং জাতি-উপজাতিসমূহের জন্য স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার সকল অধিকার হরণ করে নেয়। আফগানিস্তান এখন কোনো বিদেশি দ্বারা পরিচালিত দেশ নয়। কিন্তু দেশটির কোথাও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কারোই স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা বিধান করার ন্যূনতম পরিবেশ নেই। প্রায়ই বোমা হামলা এবং নানা বিস্ফোরণে সাধারণ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়ার খবর শুনতে হয়।

আফগানিস্তানে এখন কেউ আর পর্যটক হিসেবে বেড়াতে যান না। অথচ এই আফগানিস্তানের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের জন্য আমাদের দেশে স্লোগান দেয়া হয়, “আমরা হবো তালেবান, বাংলা হবে আফগান।” যারা এই স্লোগান দিচ্ছে তাদের কজনইবা বর্তমান আফগানিস্তানের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখে। আফগানিস্তান এরই মধ্যে যে একটি রক্তাক্ত রণাঙ্গনের দেশ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সেই খবর স্লোগানধারী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর কজনইবা জানে। তাদের সেই জানার সুযোগ আছে কি? এদের লেখাপড়া, দেশ-বিদেশ সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া, খোঁজখবর রাখা এবং বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ সৃষ্টিকারী রাষ্ট্রব্যবস্থা কীভাবে গঠিত হয়, কোথায় সে ধরনের রাষ্ট্র আছে- আবার নেই, কেন নেই এসব প্রশ্নের উত্তর জানার মতো লেখাপড়া কি তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়? তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজ দেশ তথা বাংলাদেশ সম্পর্কেও পাঠ দেয়ার মতো কোনো পাঠ্য বই নেই।

শিক্ষার্থীরা জানে না তাদের বাংলাদেশটি কীভাবে এবং কেন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল। তারা আরও জানে না জনগণের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা স্তব্ধ করে দিতে পাকিস্তানি সেনা-শাসকগোষ্ঠী তাদের সেনাবাহিনী, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামীসহ ধর্মীয় নামধারী সব কটি রাজনৈতিক দল, মুসলিম লীগ, পিডিপিসহ আরও কিছু গোঁড়া পাকিস্তানপন্থি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক বিরোধিতা করেছিল, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী হয়ে গণহত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল।

মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার্থী আরও জানে না গত ৫০ বছরে কোন সরকারের শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কতটা উন্নতি-অবনতি লাভ করেছিল। এমনকি তাদের শিক্ষকদের প্রায় সবাই বাংলাদেশের অভ্যুদয়, এর বিকাশ এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বেড়ে ওঠার ইতিহাস, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করার লেখাপড়া খুব একটা রাখেন না। কারণ তারাও এই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য থেকেই যে শিক্ষা লাভ করেছেন তাতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের বেড়ে ওঠার ইতিহাস শেখার সুযোগ পাননি।

ফলে ছাত্র-শিক্ষক উভয়েরই দেশ সম্পর্কীয় ধারণা পাঠ্যপুস্তক ও একাডেমিক কারিক্যুলাম থেকে পাওয়া নয়। তবে দেশ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ব সম্পর্কে যা জানে তার বেশিরভাগই শোনা কথা, মনগড়া কথা, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বলে বেড়ানো গল্প কাহিনি- যার সঙ্গে জ্ঞানচর্চার কোনো সম্পর্ক নেই। সেকারণে কওমি মাদ্রাসাসমূহে শিক্ষাব্যবস্থা মূলত কোরআন-হাদিস শেখাভিত্তিক। এর বাইরের কোনো ধরনের শিক্ষার বিষয় (বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সমাজ, ইতিহাস, সাহিত্য) কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাক্রমের পঠনপাঠনে নেই। ফলে একরৈখিক জ্ঞানচর্চা ছাড়া সমন্বয়বাদী শিক্ষা লাভের সুযোগ ওই শিক্ষাব্যবস্থায় নেই।

শিক্ষাদর্শন সম্পর্কে যারা অল্পবিস্তর খোঁজ রাখেন তারা জানেন যে, যেকোনো শিক্ষাব্যবস্থাই শিশু-কিশোর, তরুণ শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করা, নিজেদের সুকুমারবৃত্তির উন্মেষ ও বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে বিরাজমান বহুমুখী প্রতিভার স্ফুরণ ঘটানো, আগ্রহ সৃষ্টি করা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের চিন্তার জগতকে প্রসারিত করা, জ্ঞান, কর্ম ও জীবন দক্ষতায় তাদেরকে সৃজনশীল মানুষরূপে গড়ে তোলাই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।

সব শিক্ষার্থী একরৈখিকভাবে শিক্ষা লাভ করলে সেসব শিক্ষার্থী তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিটি শিক্ষার্থীর সুকুমারবৃত্তি আলাদা, তাই তাদের মন, জ্ঞান ও দক্ষতার বিকাশ বিভিন্ন বিষয় পঠনপাঠন ও জানার মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। কিন্তু আমাদের কওমি মাদ্রাসাগুলো যারা পরিচালনা করেন, তারা জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষাদর্শন এবং শিক্ষা কারিক্যুলামের মৌলিক বিষয়গুলোই আমলে নিচ্ছেন না। সেকারণে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা জ্ঞানচর্চার আধুনিক চিন্তাধারা সম্পর্কে একেবারেই কিছু জানার সুযোগ পায় না।

অথচ প্রতিটি শিক্ষার্থীরই থাকে অসংখ্য বিষয়ে জানার আগ্রহ। কিন্তু সেই আগ্রহ দমন করে দেয়া হলে শিক্ষার্থীর মন স্বাধীনভাবে বিকশিত হওয়ার পথ খুঁজে পায় না। তাদের মনের সব জানালা বন্ধ করে আবদ্ধ ঘরে রেখে তাদেরকে সুশিক্ষিত নাগরিক, দক্ষ জনশক্তি, মেধাবি, সৃজনশীল, আধুনিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। মাদ্রাসাটির অভ্যন্তরে সেকারণেই শিক্ষার্থীদের মন বিকশিত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। সেখানে থাকে কঠোর শাসন, দৈহিক নির্যাতন এবং অনেক ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার, অস্বীকার করার প্রবণতা।

এছাড়া কোমলমতি এসব শিশুদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে নানা ধরনের ভুল তথ্য ও বিকৃত ধারণা দেওয়া হয়। দেশের রাজনীতি সম্পর্কেও তাদের মধ্যে দেয়া হয় অবৈজ্ঞানিক, বইপুস্তক ছাড়া প্রচলিত নানা ধরনের বিশ্বাস-অবিশ্বাস, বিদ্বেষ, ঘৃণা ইত্যাদি। জ্ঞানচর্চার সীমাবদ্ধতার কারণে এদের মধ্যে উগ্র, হঠকারী এবং বিশৃঙ্খল চিন্তাধারার জন্ম নেয়। সেকারণে তারা উগ্রবাদিতা ও জঙ্গিবাদের কাছে অনেকটাই আত্মসমর্পণ করে। তাদের শিক্ষকদের অনেকেই সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আন্তর্জাতিকভাবেও এ সময়ে ধর্মীয় উগ্র রাজনৈতিক শক্তি আঞ্চলিক ও বৃহত্তর মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের নানা ধরনের সংগঠন গড়ে তুলেছে।

তালেবান, আইএস ইত্যাদি সংগঠন এখন বেশ পরিচিত। এসব সংগঠনের সঙ্গে বাংলাদেশেও কিছু সংগঠন গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা প্রায়শই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে ইসলামিক দলগুলো প্রত্যক্ষভাবে না হলেও আদর্শগতভাবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইসলামভিত্তিক দল দ্বারা প্রভাবিত।

আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক কওমি মাদ্রাসা এখন রাজনৈতিকভাবে গুরত্ব পেতে শুরু করেছে। কয়েক দশক আগে কওমি মাদ্রাসার বিষয়গুলো একেবারেই আলোচনার বাইরে ছিল। এগুলোকে সকলেই হতদরিদ্র, এতিম এবং মধ্যবিত্ত ঘরের শিশু-কিশোরদের ধর্মশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবেই দেখা হতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কওমি মাদ্রাসা এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যাই শুধু কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়নি, বেশ কিছু মাদ্রাসা আঞ্চলিক ও জাতীয়ভাবে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যুতে বেশ সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। কওমি মাদ্রাসাগুলো থেকেই একসময় হেফাজতে ইসলাম নামে একটি ধর্মীয় সামাজিক সংগঠনের জন্ম হয়।

এই সংগঠনটির জন্মের পরেই রাজনৈতিকভাবে হেফাজত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ২০১৩ সালে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সরকার উৎখাতের আন্দোলনে ঢাকায় ৪ এপ্রিল ও ৫ মে তারিখে আনা হয়। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষ এবং বাংলাদেশে সুবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে সরকারের কিছু কর্মসূচি ছিল।

পৃথিবীব্যাপী করোনা সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের সরকার করোনার নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ছিল। সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্যোগ আগেও নিয়েছিল, এবারও নিয়েছিল। করোনার কারণে সরকার উৎখাতের সময়টি যুতসই ছিল। কৌশলগতভাবে তারা হেফাজতকে মাঠে নামায়।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করা হয়। সেটি ঘটলে করোনার এই দুঃসময়েও দেশে সরকার উৎখাতে হানাহানি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে পেছনে থাকা দলগুলো নেমে পড়ত। তবে ভাস্কর্যের ইস্যুটা ততটা সাড়া ফেলতে পারেনি।

২৬ মার্চ নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, ভারতবিরোধিতা ইত্যাদিকে সম্মুখে এনে দেশে ৩ দিন তাণ্ডব চালানো হয়। ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ শুধু হেফাজতই নয় জামায়াত, বিএনপি ও কটি উগ্রবাম রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ বেশ কিছু জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছিল তা নজিরবিহীন। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের হাতে পবিত্র কোরআন ও পেট্রল ভর্তি বোতল তুলে দেয়া হয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষার্থীরা একদিকে কোরআন হাতে নিয়ে রাস্তায় বসে বসে পড়ছিল, আবার অন্যরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছিল। চট্টগ্রামে থানা ও ভূমি অফিস ভাঙচুরসহ ধ্বংসাত্মক কাজে নামানো সর্বত্রই শিক্ষার্থীদের এভাবেই সরকারি বেসরকারি সম্পদ ভাঙচুরে জড়ানো হয়। এসব শিক্ষার্থী বার বার স্লোগান দিচ্ছিল, “বাংলা হবে আফগান, আমরা হবো তালেবান।” বোঝাই যাচ্ছে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় নীতি নৈতিকতার শিক্ষায় পারদর্শী করার চাইতে উগ্র, হঠকারী, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, অজানা আফগানিস্তান এবং জঙ্গি তালেবান মগজ ধোলাইটি তারা খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছে।

এটি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের জন্য যারা যুদ্ধ করেছিলেন, একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তাদের আত্মত্যাগের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। এই শিক্ষার্থীরা জানে না আফগানিস্তানের কী অবস্থা। আইএস রাষ্ট্রের প্রতি অনেক তরুণ-তরুণীর মোহ ছিল। তারা পালিয়ে সিরিয়ায় আইএস রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যোগাদান করেছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, অনেক তরুণীকে সেখানে আইএসের গণিমতের মাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেক তরুণ-তরুণী আইএসের জন্য জীবন উৎসর্গ করল কিন্তু কিছুই সৃষ্টি হলো না। বাস্তবতাবিবর্জিত, হঠকারী, জঙ্গিবাদী চিন্তায় কোনো রাষ্ট্র মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না। এই শিক্ষা আমাদের এসব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা কবে নেবেন- সেটি মস্ত বড়ো প্রশ্ন।

লেখক: গবেষক, অধ্যাপক

এ বিভাগের আরো খবর