বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিএনপির থলের বিড়াল বেরিয়ে গেছে

  •    
  • ২১ এপ্রিল, ২০২১ ১৫:৫১

সত্যকে কেউ কোনো দিন চাপা দিয়ে রাখতে পারে না। সে স্বমহিমায় একদিন প্রকাশ পাবেই। এতদিন ধরে গুম, খুনের জন্য সরকারের ওপর দোষারোপের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছিল বিএনপি। যা কিছু ঘটুক তার জন্য দায়ী করত সরকারকে। সেটা যে সুপরিকল্পিতভাবে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হতো তা কিন্তু আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে। হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছে তাদের দলের অন্যতম শীর্য নেতা মির্জা আব্বাস।

গত ১৭ এপ্রিল সিলেট বিভাগ জাতীয়তাবাদী সংহতি সম্মিলনী, ঢাকার ব্যানারে বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর ‘নবম নিখোঁজ দিবস’ উপলক্ষে একটি ভার্চুয়াল আলোচনা সভা করে। সেখানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনাসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। সেখানে একটি সত্য কথা বলে রাজনীতিতে বোমা ফাটিয়ে দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সেদিন আলোচনা সভার এক পর্যায়ে তিনি বলেন-

“আমি আজকে বলতে চাই, এখানে সেক্রেটারি জেনারেল আছেন, কথাটা আমি বলতে বলতে ভুলে গেছিলাম। ইলিয়াস গুমের পেছনে, আমি রিপিট করছি, ইলিয়াস গুমের পেছনে আমার দলের লুটপাটকারী, বদমাইশগুলো আছে, তাদের দয়া করে আইডেন্টিফাইড করার ব্যবস্থা করেন, প্লিজ। এদেরকে অনেকেই চেনেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইলিয়াস গুম হওয়ার আগের রাতে দলীয় অফিসে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয় মারাত্মক রকমের। ইলিয়াস খুব গালিগালাজ করেছিল তাকে। সেই পেছন থেকে দংশন করা যে সাপগুলো, আমার দলে এখনও রয়ে গেছে। যদি এদের দল থেকে বিতাড়িত না করেন, তাহলে কোনো পরিস্থিতিতেই দল সামনে আগাতে পারবেন না।”

মির্জা আব্বাস বিএনপির যেনতেন কোনো নেতা নয়। তিনি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের প্রভাবশালী নেতা, তার কথাকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলী বনানী থেকে তার ড্রাইভারসহ ‘অপহৃত’ হন। এরপর থেকে বিএনপি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ তুলে লাগাতার হরতাল দেয়। তাদের হরতাল, অবরোধ মানেই মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা। বাসের মধ্যে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল একজন বাসচালককে।

রাজধানীতে ২৫-৩০টি বাসে আগুন দেয়া হয়। বিশেষ করে সিলেটে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়। ইলিয়াসের জন্মস্থান বিশ্বনাথে একাধিক নিরীহ মানুষের লাশ ফেলে আন্দোলনকে চাঙা করার চেষ্টা করে। বিএনপি তো প্রতিটি ঘটনায়ই সরকার পতনের রাস্তা খোঁজে । ইলিয়াসের নিখোঁজকে পুঁজি করেও তারা সরকার পতনের চেষ্টা করেছিল।

ইলিয়াস আলী বিএনপি’র সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও জাতীয় রাজনীতিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন না। তবে সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে তার একটা প্রভাব ছিল, এটি সকলেই স্বীকার করেন। বিএনপির তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সঙ্গে তার ছিল সাপে নেউলে সম্পর্ক। তাদের দু-পক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হতো। তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে সাইফুর রহমান পদত্যাগ করতেও চেয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপে ইলিয়াস আলীকে সাইফুর রহমানের পা ধরে ক্ষমা চাইতেও হয়েছিল। সে ছবি গনমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।

ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার দুই দিন পর তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার স্বামীকে বেআইনিভাবে আটক করে রেখেছে। এ ছাড়া ইলিয়াস আলীর মুক্তির জন্য তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন।

ইলিয়াস আলীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে- স্ত্রীর এই অভিযোগের পর, ইলিয়াস আলীকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, সরকারকে তা জানাতে বলে আদালত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিয়ে বলা হয়, ইলিয়াস আলীকে তারা তুলে নেয়নি বা আটক করেনি এবং ইলিয়াস আলী তাদের জিম্মায়ও নেই। দেরিতে হলেও আজ কিন্তু সেকথাই প্রমাণিত হলো।

নিখোঁজের কয়েকদিন পর ২৫ এপ্রিল বিএনপির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, আজকের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “আমাদের নেত্রী সরকারকে এক্সজিটের রাস্তা করে দিতে চার দিন সময় দিয়েছেন। যদি এই সময়ের মধ্যে ইলিয়াস আলীকে সরকার ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে রোববার থেকে দেশে যে আগুন জ্বলবে, সেই আগুন নেভানোর শক্তি আপনাদের (সরকার) থাকবে না।

মির্জা আলমগীর সাহেব সেদিন তো বিনা কারণে আগুন জ্বালিয়ে ছিলেন, এখন আপনি কী বলবেন? সেদিন তো ইলিয়াস আলী ইস্যুতে নাটক তৈরি করে সরকার পতনের রাস্তা খুঁজছিলেন। আর ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস সাহেব তো আপনাকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলেছিলেন। আপনি তো কোনো প্রতিবাদ করেননি! তাহলে আপনিও জানেন ইলিয়াস আলী কোথায় আছেন? এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত অতিদ্রত এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় এনে ইলিয়াস আলী ইস্যুর যবনিকাপাত করা।

২.

হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তারে বিএনপি খুবই অস্বস্তিতে পড়েছে। হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তারে গর্জে উঠেছে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবরা। হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেপ্তারের পর তিনি বলেছেন, ‘দেশের ধর্মীয় নেতা, আলেম-ওলামাদেরকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে যারা আমাদের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষ, শ্রদ্ধেয় আলেম, এদেশে মানুষের কাছে যারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র তাদেরকেও গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলাও দেয়া হচ্ছে। অবিলম্বে এই সমস্ত মামলা-মোকাদ্দমা তুলে ফেলা, ধর্মীয় নেতা, আলেম-ওলামাদের মুক্তি দাবি করেন।

তিনি হেফাজত নেতাদের ধর্মীয় নেতা বলে উস্কানি দিচ্ছেন। অথচ এই নেতাদের উস্কানি ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বায়তুল মোকাররম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিরীহ মানুষকে হত্যা, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম যখন করেছিল, তখন এ ধ্বংসাত্মক কাজের বিরুদ্ধে একটি কথাও তারা বলেননি। বরং বার বার বলতে চেয়েছে এগুলো সরকারই করাচ্ছে। অথচ আজ যখন হেফাজত নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তখন দিশাহারা হয়ে পড়ছে বিএনপি। এদেরকে ধর্মীয় নেতা আখ্যা দিয়ে মাঠ গরম করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি জোটের মধুর সম্পর্ক অনেক পুরোনো। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে বিএনপি চেয়ারপার্সন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে তাদের কর্মী মাঠে নামিয়েছিল। খাবার, পানি দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল সেটি দেশবাসী দেখেছে। আজ আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র করে ধর্মীয় তকমা দিয়ে হেফাজতকে মাঠে নামিয়ে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল বিএনপি। তাদের সে আশার গুড়ে বালি।

শাপলা চত্বরে সমাবেশের আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন বাবুনগরী। দেয়া হয় অর্থ ও সন্ত্রাস করার জন্য সশস্ত্র জামায়াতি ক্যাডার। ইতোমধ্যে সেকথা স্বীকার করে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক মুফতি ফখরুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের কর্মসূচির ঠিক এক সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন জুনায়েদ বাবুনগরী। বিএনপির পক্ষ থেকে ওই আন্দোলনে দেয়া হয় অর্থ এবং পাশাপাশি জামায়াতের নেতাকর্মীরা সরাসরি হেফাজতের কর্মসূচিতে ঢুকে জ্বালাও-পোড়াও করবে সেই সিদ্ধান্ত হয়। সেটাই তারা করেছিল। সরকারের পতন ঘটানোই ছিল তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।

হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের আরও অনেক ষড়যন্ত্রের কাহিনি বের হয়ে আসবে। নতুন ষড়যন্ত্রে বিএনপির কোনো কোনো নেতার সঙ্গে আবার মিটিং হয়েছে, অর্থ লেনদেন হয়েছে সেটাও বের হয়ে আসবে। সেজন্য আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এদিকে নয় বছর পর মির্জা আব্বাস সাহেবের বক্তব্যে যেভাবে বিএনপির ষড়যন্ত্রের থলের বিড়াল বের হয়ে গেছে। আবার মানুনুল গংদের জবানবন্দিতে আরও যে কত বিড়াল বের হয়ে আসবে, সেই অজানা আতঙ্কে মির্জা ফখরুল সাহেবরা দিশাহারা হয়ে পাগলের প্রলাপ বকছেন।

লেখক: সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।

haldertapas80@gmail.com

এ বিভাগের আরো খবর