বনানী সামরিক কবরস্থানে ২০০৮ সাল থেকেই সদ্য নবজাতিকা কন্যা বিয়োগের পর হতেই ঘন ঘন যাতায়ত শুরু হয়। ২০১৭ সালের ১০ম রমজান ৭ জুনে পিতৃবিয়োগের পর কবর জিয়ারত করতে প্রতি শুক্রবার বাদ আসর যাওয়া হয়। এর মাঝে ২০১৯-এর ১৯ সেপ্টেম্বর মা প্রয়াত হন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
মায়ের কবর দেয়ার পরও বনানী সামরিক কবরস্থানে অনেক ফাঁকা জায়গা ছিল, বিশেষ করে দক্ষিণদিকে বনানী কবরস্থান দেয়াল বরাবর জায়গাটা পুরোটাই ছিল খালি।
এর মধ্যে ২০২০-এর মার্চ হতে বাংলাদেশ লক-ডাউনে চলে গেলে মৃত্যুর মিছিল হতে থাকে দীর্ঘায়িত, বিশেষ করে এপ্রিল ২০২১ অবধি দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ অতিক্রম করল পর পর ৩ দিন। দেশে সর্বমোট করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে ১০,০০০ অতিক্রম করেছে। একটু অক্সিজেন এবং আইসিইউয়ের একটি বেড যেন সোনার হরিণ।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল হারালাম আমার এক কোর্সমেট মেজর শহীদুল্লাহ, পদাতিক বাহিনীর একজন অফিসার যে ১২ দিন ঢাকা সিএমএইচের আইসিইউতে জীবন মরণের সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্লাস সেভেন ও এইট পড়ুয়া দুই মাসুম সন্তানকে রেখে ইন্তেকাল করেন। সদ্য এলপিআর শেষ করে প্রয়াত মেজর শহীদুল্লাহর সেনা ওয়েলফেয়ার পরিদপ্তরের পরিচালনাধীন একটি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার কথা ছিল। প্রয়াত বন্ধু মেজর শহীদুল্লাহর দুই সন্তানই এবার রোজা রেখেছিল বাবার সঙ্গে ইফতার করবে এই আশায়। কিন্তু…
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ২০২০ থেকে আজ অবধি এই করনায় বহু চাকরিরত, এলপিআরভুক্ত অফিসার, জুনিয়র কমিশন্ড অফিসার, নন কমিশন্ড অফিসার, অন্যান্য পদবির কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছোট ছোট সন্তান সন্তানাদি রেখেই পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন।
এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ড তথা সেনাবাহিনী প্রধান ও সকল ফর্মেশন কমান্ডার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিম্মলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন:
১. মৃত ব্যক্তির পরিবারকে চাকরিরত অবস্হায় প্রাপ্ত রেশন-সুবিধা ন্যূনতম ৫ বছরের জন্য প্রদান করা হবে সংশ্লিষ্ট ফর্মেশনের উদ্যোগে।
২. মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ন্যূনতম ৩ বছর সরকারি বাসস্হান ব্যবহার করতে দেয়া হবে।
৩. মৃত ব্যক্তির সন্তানাদির পড়াশোনার সকল খরচ সেনাবাহিনী পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মওকুফ করা হলো।
৪. মৃত ব্যক্তির স্ত্রী-স্বামীর যোগ্যতা অনুসারে সংশ্লিষ্ট ফর্মেশন কমান্ডারের দায়িত্বে তাদের সেনাসদরের এজিস শাখা পরিচালিত ট্রাস্ট ব্যাংক, সেনা কল্যাণ সংস্হা, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহের উদ্দেশ্যে চাকরির বন্দোবস্ত করতে সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
উপরোক্ত কল্যাণমুখী কার্যক্রম একজন প্রকৃত সেনানায়কের জন্য ফরজ। তার ওপর ন্যস্ত এই দায়িত্ব অত্যন্ত পবিত্র। একবার ভেবে দেখেছেন কি কখনও যে, সামনে মৃত্যু অবধারিত জেনেও কেন একজন সৈনিক তার কমান্ডারের জন্য জীবন কোরবান করতে সামান্য দ্বিধা করে না?
উপরোক্ত কল্যাণমুখী কর্মকাণ্ডে যখন একজন সৈনিকের থাকে কমান্ডের ওপর অগাধ বিশ্বাস, তখন সেই সৈনিক দেশের জন্য রক্ত দিতে করে না বিন্দুমাত্র চিন্তা।
বাংলাদেশের সার্বিক মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করে দেশকে করোনা হতে মুক্তির পথ প্রদর্শন করবেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা, কলাম লেখক।