বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাষ্ট্র ও তরুণ

  •    
  • ১৬ এপ্রিল, ২০২১ ১৭:০১

কোভিডের এই পরিবর্তিত রূপ, এই আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট যাকে বলা যেতে পারে কোভিড-২০, তার ছোবলও আমাদের দেশে পড়েছে। একে মোকাবিলা করার জন্যে সরকার কঠোর লকডাউন দিয়েছে। রাজপথ অনেক ফাঁকা এখন।

কোনো রাষ্ট্র যখন সর্বোচ্চ ক্রাইসিসে পড়ে, দেখা যায় শেষ অবধি তাকে রক্ষার জন্যে তরুণ সম্প্রদায়কেই এগিয়ে আসতে হয়। কারণ ওই রাষ্ট্রে তাদেরই স্বার্থ থাকে বেশি। তাদের জীবন, তাদের ভবিষ্যত সবই নির্ভর করে ওই রাষ্ট্রের ভালোমন্দের ওপর। জলবায়ু পরিবর্তনের যে ক্ষতি পৃথিবী জুড়ে হচ্ছে, তা পৃথিবীর খুব কম দেশের নির্বাচনে অন্যতম একটি ইস্যু। এর মূল কারণ খুব কম দেশেই তরুণেরা রাজনীতির নিয়ন্ত্রক। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এখনও বয়স্কদের হাতে। তাদের জীবদ্দশায় এই জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষতি তাদের খুবই কম ভোগ করতে হবে। তাই তারা এ নিয়ে ততটা সিরিয়াস নন, যতটা তরুণেরা। এমনকি উন্নত দেশগুলোতে তরুণেরা তাদের ভোটটি দেবার ক্ষেত্রে সবার আগে চিন্তা করে কোনো রাজনৈতিক দলটি জলবায়ুর পরিবর্তনের ক্ষতি রোধ করতে সব থেকে বেশি সক্রিয়। অন্যদিকে বয়স্করা চায় তাদের সাময়িক লাভ। অর্থাৎ চিকিৎসা সেবা, পেনশন ইত্যাদি।

এ মুহূর্তে মিয়ানমারে যে আন্দোলন চলছে, সামরিক সরকারের গণহত্যার বিরুদ্ধে যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে সেখানকার মানুষ, সব বাধা উপেক্ষা করে প্রতিদিন যে রাজপথে মানুষ নেমে আসছে, একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে তাদের বেশিভাগ তরুণ। এবং সত্যি অর্থে এ মুহূর্তে মিয়ানমারের মোট জনগোষ্ঠির বেশি সংখ্যক তরুণ। তারা গত দশ বছরে দেখেছে, তাদের দেশে যে সামান্যতম গণতন্ত্রটুকু ছিল ওই গণতন্ত্রই তাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে একনায়কতন্ত্র বা সামরিকতন্ত্রের থেকে অনেক বেশি। সেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে আগের থেকে কয়েকশত ভাগ বেশি হারে। তরুণরাও অনেকে কাজ পেয়েছে। অনেকে পেয়েছে শিক্ষার অধিকার। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর সঙ্গে যোগ হবার পরে তারা জানতে পেরেছে ১৯৫৮ সালের আগে মিয়ানমার অর্থাৎ তৎকালীন বার্মা থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার থেকে অনেক উন্নত দেশ ছিল। তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি ছিল। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যতও অনেক ভালো। এবং ১৯৫৮ থেকে যদি তারা প্রকৃত গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে পারত, তাহলে আজ এশিয়ার অন্যতম অর্থনীতি হতো মিয়ানমার বা বার্মা।

তরুণদের উপলব্দিতে আরো এসেছে এই দেশটির সামরিক বাহিনী তাদের যে নিয়মিত কাজ অর্থাৎ সীমান্ত রক্ষা, সে কাজ তারা কখনোই করেনি। বরং ১৯৬১ সাল থেকে তারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আসছে, এশিয়ায় যার দ্বিতীয় উদাহরণ একমাত্র পাকিস্তান। তাছাড়া এই সামরিক বাহিনীর দ্বারা দেশ শাসিত হওয়ার ফলে মিয়ানমারের জনগোষ্ঠি আজও অবধি একটি জাতিতে পরিণত হতে পারেনি। এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেখানে বহু উপজাতি নিয়ে গঠিত হলেও তারা তাদেরকে একটি জাতীয়তাবাদের ছাতার তলে আনতে পেরেছে, মিয়ানমার তা পারেনি। কারণ, এই ধরনের কাজ অর্থাৎ রাষ্ট্র তৈরির একটি মৌলিক কাজ কখনই সামিরক শাসন দিয়ে হয় না। এ কাজ করতে পারে একমাত্র বড় মাপের রাজনীতিকরা তাদের রাজনৈতিক শক্তি দিয়ে।

মিয়ানমার এই এক জাতিগোষ্ঠিতে না আসার ফলে এখনও সেখানে নয়টি এথনিক গ্রুপ সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত। আর সামরিক বাহিনী ও সামরিক সরকার এখনও তাদের বিরুদ্ধে বিমান আক্রমণ থেকে শুরু করে সব ধরনের সাজোয়া বাহিনী দিয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে একটি নরগোষ্ঠিকে জাতীয়তাবাদের আওতায় আনতে হলে রাষ্ট্রের অন্য সকল নরগোষ্টির সমান সুযোগ দিতে হয় এবং পাশাপাশি রাষ্ট্রকে এমন আচরণ করতে হয় যাতে ওইসব নরগোষ্টি কখনোই মনে করবে না, রাষ্ট্রর কাছ থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে। বরং সে নিজেই হয়ে উঠবে রাষ্ট্রের একজন রক্ষক। এই কাজ অনেক বড় রাজনৈতিক কাজ। রাষ্ট্রে বা রাজনীতিতে যখন অস্ত্র আসে, ধর্ম আসে, তখন কোনোভাবেই এই উদার আধুনিক জাতীয়তাবাদ একটি রাষ্ট্রে গড়ে তোলা যায় না বরং সেখানে সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে। মিয়ানমারে তাই হয়েছে।

তরুণেরা যেমন এই সংঘাত দেখছে, তেমনি পৃথিবীর সঙ্গে যুক্ত হবার পরে, তথ্য প্রযুক্তির কারণে ইনফরমেশান ব্যাংকে ঢুকতে পেরে তারা জানতে পারছে তাদের পূর্বপুরুষেরা অর্থাৎ সামরিক শাসন আসার আগে, এমনকি ব্রিটিশ কলোনির আমলেও তারা অনেক সুখে ছিল। তাই একদিকে তাদের নিজেদের ভবিষ্যত, তাদের চাকরি বা কাজের সংস্থানের আশা, অন্যদিকে নিজেদের উপলব্ধি কীভাবে সামরিক সরকার তাদের দেশটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে – এই সব মিলে তাদের ভেতর জন্ম নিয়েছে বর্তমানের এই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। আর তাই তারা জীবনপণ করে রাস্তায় নেমেছে। পৃথিবীর অনেক বিপ্লবের মতো, অনেক ইতিহাস সৃষ্টির মতো তারাও বিপ্লব সৃষ্টি করে চলেছে। তাদেরকে কেউ আহ্বান করেনি রাজপথে আসতে, তারা নিজে থেকেই এসেছে।

মিয়ানমার বাস্তবে এখন দুই সংগ্রামের মধ্যে। একদিকে তাদের রাষ্ট্রের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, অন্যদিকে কোভিড-১৯ যা ইতোমধ্যে পরিবর্তিত রূপ নিয়ে বলা যেতে পারে কোভিড-২০ হয়ে গেছে। এর ভয়াবহতাও তাদের দেশে বাড়ছে। কোভিডের এই পরিবর্তিত রূপ, এই আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট যাকে বলা যেতে পারে কোভিড-২০, তার ছোবলও আমাদের দেশে পড়েছে। একে মোকাবিলা করার জন্যে সরকার কঠোর লকডাউন দিয়েছে। রাজপথ অনেক ফাঁকা এখন। তবে তারপরেও একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, কেন এই কোভিড-২০ এমনিভাবে বাংলাদেশকে আক্রান্ত করল। এখানে আমাদের তরুণ সম্প্রদায় অনেক বড় ভুল করেছে। কোভিড-১৯ তরুণদের জন্যে ভয়াবহ ছিল না। তারা আক্রান্ত হলেও তাদের ভেতর উপসর্গ দেখা যায়নি। আর এ কারণে তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছিল স্বাস্থ্যবিধি না মানার এক চরম উদাসীন মানসিকতা। এই মানসিকতা ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণেও দেখা গেছে অনেক মানুষের মধ্যে। যার চরম মূল্য এখন দেশকে দিতে হচ্ছে। এখানে সব দেশে রাজনীতিকরাও কম যান না। পার্শ্ববর্তী দেশের আমাদের সীমান্তবর্তী একটি রাজ্যে এই কোভিডের মধ্যেই চলছে নির্বাচনের ভয়াবহ দাপাদাপি। তাই সব মিলে খেসারত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা এ মুহূর্তে কেউ বলতে পারছে না। মিয়ানমারের সামরিক শাসন উচ্ছেদ যেমন অনিশ্চিত, কোভিডের আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট থেকে মুক্তি পাওয়াও তেমনি অনিশ্চিত।

আর এই অনিশ্চয়তায় তরুণদের জীবন থেকে চলে যাচ্ছে আরও একটি বছর। বিশেষ করে যারা শিক্ষার্থী তাদের জীবন থেকে চলে যাচ্ছে শিক্ষার মূল্যবান আরও একটি বছর। দেশের এমন একটি সময়ে তরুণদের দায় অনেক বেশি। কারণ এই মহামারি শেষে কী অবশিষ্ট থাকবে, কেউ জানে না। বাংলাদেশ প্রতি মুহূর্তে হারাচ্ছে তার কৃীতি সন্তানদেরকে। এদের স্থান পূরণ থেকে শুরু করে আগামী অর্থনীতি বিনির্মাণ সব দায় এখন বাংলাদেশের তরুণদের ওপর। তারাও মূলত মিয়ানমারের তরুণদের থেকে কম বড় যুদ্ধের ক্ষেত্রে এখন দাঁড়িয়ে নয়। তাই যে কোনোভাবে হোক, নিজ উদ্যোগেই ভবিষ্যতকে সুন্দর করা ও বর্তমানের এই ভয়াবহতা মোকাবিলা করার যোগ্যতা তরুণদের অর্জন করতেই হবে। আর সত্যি অর্থে, জীবন দেয়ার থেকে জীবন গড়ার সংগ্রাম অনেক বেশি কঠিন। সেই কঠিন সংগ্রাম এখন তাদের সামনে।

এ বিভাগের আরো খবর