বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা হবে কার?

  •  ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ   
  • ৩১ মার্চ, ২০২১ ১৭:৫৭

বিজেপির ভোট না বাড়লেও, তৃণমূলের ভোটে ভাগ বসিয়ে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটসুবিধা করে দিচ্ছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের জনগণের ভোটভাবনায় কেন্দ্রের প্রভাবসহ নানাবিধ অনুষঙ্গ কাজ করছে বলে অনুমিত হচ্ছে। কি সাম্প্রদায়িক, অসাম্প্রদায়িক, বাঙালি জাতীয়তা, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, মুসলিম সেন্টিমেন্ট, হিন্দু সেন্টিমেন্ট, এনআরসি ইস্যু, করোনা মহামারি ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্নের মুখে একচেটিয়া সমর্থন বা জোয়ার কোনো পক্ষের নেই মাঠে।

ভারতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ২৭ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। এই প্রথমবার ৮ দফায় বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। ২৭ মার্চ প্রথম দফায় ৩০টি আসনে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ ৩১টি আসনে। ৬ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ৩১টি আসনে ভোটগ্রহণ। চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল ভোটগ্রহণ ৪৪টি আসনে। এর পরে ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফায় ভোটগ্রহণ ৪৫টি আসনে। ২২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফায় ভোটগ্রহণ হবে ৪৩টি আসনে। সপ্তম দফায় ২৬ এপ্রিল ৩৬টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। অষ্টম ও শেষ দফায় ৩৫টি আসনে ভোটগ্রহণ ২৯ এপ্রিল। ২ মে হবে নির্বাচনের ফল প্রকাশ।

এবারের নির্বাচনে এক একটি জেলায় একাধিক দফায় ভোটগ্রহণ হবে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমানের সব আসনে একই দিনে ভোটগ্রহণ। আর কার্শিয়ংয়ে তো একটিই বিধানসভা আসন। এমনকি কলকাতাতেও এবার দু’দফায় ভোটগ্রহণ। সপ্তম ও অষ্টম দফায় হবে মহানগরের ভোটগ্রহণ। রাজ্যের মোট ২৩টি জেলায় বিধানসভার আসনসংখ্যা ২৯৪টি। এর মধ্যে ৬৮টি আসন তফশিলি জাতি ও ১৮টি আসন তফশিলি জনজাতিদের জন্য সংরক্ষিত।

২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন দ্বিমুখী ত্রিমুখী যা-ই হোক না কেন, এ মুহূর্তে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় কৃষক আন্দোলনের প্রভাব, ধর্মীয় মেরুকরণ, সিএ, রাকেশ সিং পামেলা কোকেন কাণ্ড এগুলো যেমন বিজেপিকে সংকটে ফেলতে পারে, তেমনি তৃণমূলের প্রশান্ত কিশোর ও ভাইপোর (অভিষেক ব্যানার্জি) একক কর্তৃত্ব, কয়লা কাণ্ড, নারদা কাণ্ড, কাটমানি কাণ্ডও সংকটে ফেলতে পারে। অপরদিকে বাম কংগ্রেস জোটকে আব্বাসীর সঙ্গে জোট বাঁধাকেও সংকটে ফেলতে পারে। বিজেপির জন্য কভিড-১৯ ভ্যাকসিন সবার জন্য নিশ্চিতকরণ পরিস্থিতি অনুকূল করতে পারে।

তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য কন্যাশ্রী কর্মসূচি তাদের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। পাশাপাশি বাম কংগ্রেসের জন্য পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়ন, অসংগঠিত ও অভিবাসী শ্রমিকদের পাশে থাকা তাদের জন্য অনুকূলে নির্বাচন পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তবে আর যা-ই হোক শেষ হাসি কারা হাসবেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২ মে পর্যন্ত।

১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শুরু হবে জঙ্গলমহলের তিন জেলার পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ায় ভোট রয়েছে মোট ২৭টি আসনে। পাশাপাশি ভোট হবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৪টি আসনে। এ দফায় নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ভোট হবে ‘হাই ভোল্টেজ’ কেন্দ্র পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে। যে কেন্দ্রটি হচ্ছে এবার নির্বাচনের সমস্ত আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এ কেন্দ্রেই একদিকে প্রার্থী তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপরদিকে, তারই প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন বিজেপি’র প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে তাই দু’জনেই গত কয়েক দিন ধরে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্থানে রোড-শো ও জনসভা করে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়েছেন জোরেশোরে।

প্রথম দফার ভোটে ২৬টি আসন জয়ের দাবি ইতোমধ্যেই করেছেন বিজেপির চাণক্য। আর দ্বিতীয় দফায় নজর রাখছেন বিশেষ করে নন্দীগ্রাম। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা ভোটের শেষ দিনের প্রচারে ফের ঝড় তুলতে রাজ্যে উপস্থিত হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নন্দীগ্রামে বড় ব্যবধানে জিতবে শুভেন্দু, সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন অমিত শাহ।

২০২১-এর এ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তৃণমূলের অনেক মন্ত্রী ও বিধায়কদের ভাগিয়ে বিশেষ করে মকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, রাজীবদের নিয়ে বিজেপি দল ভারী করেছে। তৃণমূলের জন্য এ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অপরদিকে বাংলার সংস্কৃতির ওপর বিজেপি তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে ধরনা দেয়া সবকিছুই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলবে। তা ছাড়া আরজেডিকে ৩ থেকে ৫ আসনে ছাড় দিয়ে তৃণমূল তাদের সঙ্গেই রাখতে চেয়েছে হিন্দি ভাষাভাষী অঞ্চলে। চিত্রতারকাদের মধ্যে গতবার তৃণমূলের যেমন একচেটিয়া প্রভাব ছিল, এবার তেমনটি আর নেই।

ইতোমধ্যে চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় তারকা মিঠুন চক্রবর্তী, যশ ও রুদ্রনীল বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, শোভন-বৈশাখীও একই পথ ধরেছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, বিজয়বর্গীয়রা পশ্চিমবঙ্গ চষে বেড়াচ্ছেন। কখনও যোগদান অনুষ্ঠান, কৃষকের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য সেখানে খাওয়া, ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা মনীষীদের শ্রদ্ধা জানানোর নামে হাজির হচ্ছেন। তৃণমূলের তারকা প্রার্থীদের মধ্যে সায়নী ঘোষ, রাজচক্রবর্তীরা যেমন আছেন এর পাশাপাশি শতাব্দী, দেবরাও নির্বাচনি মাঠে নেমেছেন। সব মিলিয়ে ‘কেহ কারো নাহি ছাড়ে’। ভোটের ময়দানে একচেটিয়া প্রভাব নেই কারও। এহেন বহুমাতৃকতার এক ভোট যুদ্ধের লড়াই।

এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল বা বিজেপি কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। এমনই আভাস মিলেছে বাংলার জনমত সমীক্ষায়। সিএনএক্সের সমীক্ষায় আভাস, তৃণমূল ও বিজেপি উভয়েই থমকে যাবে ম্যাজিক ফিগার ছোঁয়ার আগেই। তৃণমূল ও বিজেপির কিং মেকার হয়ে উঠতে পারে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট। বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটসুবিধা করে দিচ্ছে গেরুয়া শিবিরের (বিজেপি) ভোট শুরুর মুখে জনমত সমীক্ষায় আভাস তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটে ভাগ বসাচ্ছে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট। ফলে তৃণমূলের ভোট কমছে অনেকটাই।

আগের জনমত সমীক্ষার তুলনায় ৩ শতাংশ ভোট কমছে। বিজেপির ভোট না বাড়লেও, তৃণমূলের ভোটে ভাগ বসিয়ে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটসুবিধা করে দিচ্ছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের জনগণের ভোটভাবনায় কেন্দ্রের প্রভাবসহ নানাবিধ অনুষঙ্গ কাজ করছে বলে অনুমিত হচ্ছে। কি সাম্প্রদায়িক, অসাম্প্রদায়িক, বাঙালি জাতীয়তা, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ, মুসলিম সেন্টিমেন্ট, হিন্দু সেন্টিমেন্ট, এনআরসি ইস্যু, করোনা মহামারি ইত্যাদি নানাবিধ প্রশ্নের মুখে একচেটিয়া সমর্থন বা জোয়ার কোনো পক্ষের নেই মাঠে।

এক্সক্লুসিভলি সাক্ষাৎকারে প্রথম কলকাতাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর জানিয়েছেন, ‘কেন এই নির্বাচন ঐতিহাসিক? কেন আর পাঁচটা নির্বাচনের থেকে এই নির্বাচনকে আমরা আলাদা করে দেখছি? তার প্রধানত ৩টি কারণ। প্রথম হলো করোনা আবহ। বিশ্বব্যাপী যে অতিমারি। এই অতিমারি পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন। ইতোমধ্যেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ছে ফলে এরকম অতিমারি পরিস্থিতিতে নির্বাচন সম্পূর্ণ করা এবং স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা, নির্বাচন কমিশন ও সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চ্যালেঞ্জ।

পাশাপাশি নির্বাচনে যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে নির্বাচন সম্পন্ন করা সত্যিই চ্যালেঞ্জ। সে কারণে এটা ঐতিহাসিক। দ্বিতীয়ত, যেটা মনে করা হচ্ছে গত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের পরই বিধানসভার ভোটের দামামা বেজে যায়।

২০১৯ থেকে ২০২১-এর মধ্যে আমরা দেখলাম। এমনকি অতিমারির মধ্যেও প্রতিনিয়ত তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বাগবিতণ্ডা, সভা পালটা সভা, মিছিল পালটা মিছিল, প্রতিবাদ পালটা প্রতিবাদ এরকম পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আমরা আগে কখনই দেখিনি। তৃতীয়ত, এর আগে কখনও এভাবে আইডেন্টিটি পলিটিক্সও আমরা দেখিনি। অর্থাৎ, পরিচয়সত্তার রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে এই নির্বাচনটা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন ইস্যু-ভিত্তিক হতে দেখেছি আন্দোলনভিত্তিক হতে দেখেছি। নেতা বা নেত্রীর জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে হতে দেখেছি অর্থাৎ ইস্যু, প্রার্থী, কর্মসূচি এগুলোই স্থান পেয়েছে। কিন্তু এই প্রথম নির্বাচনে আইডেন্টিটি গুরুত্ব হয়ে উঠছে। যেমন মতুয়াদের নিয়ে আইডেন্টিটি পলিটিক্সের কথা বলা হচ্ছে। যেমন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে মতুয়া ভোটব্যাংক হিসেবে এবং বিজেপির ভোট পাওয়ার জায়গা থেকে দেখা হচ্ছে।

বিগত বেশ ক’বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের পক্ষে তোষণের অভিযোগ উঠেছে। আবার সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকের বিরুদ্ধে হিন্দু ভোটের মেরুকরণ যখন হচ্ছে তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার একের পর এক হিন্দুদের তুষ্ট করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি হিন্দুদের জন্য কখনও উন্নয়ন বোর্ড। মতুয়াদের জন্য উন্নয়ন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন বোর্ড তৈরি করা হয়েছে। এভাবে পরিচয়সত্তাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনি রাজনীতি এর আগে পশ্চিম বাংলার মানুষ কখনও দেখেনি। এমনকি বামেরা পর্যন্ত আইডেন্টিটি পলিটিক্স অস্বীকার করতে পারেনি।

মুসলিম পরিচয়সত্তার ওপর ভিত্তি করে যে আব্বাস সিদ্দিকী আইএসএফ তৈরি করেছে। সেই সংগঠনের সঙ্গেও হাত মেলাতে কুণ্ঠাবোধ করেনি বামেরা। কারণ তারা জানে মুসলিম ভোট ফিরে না আসলে পশ্চিম বাংলার রাজনীতিতে দাঁড়ানো যাবে না। ফলে বিজেপি হিন্দু আইডেন্টিটির জায়গা থেকে বামেরাও আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করেছে মুসলিম আইডেন্টিটির জায়গা থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম আইডেন্টিটিকে সম্বোধন করার চেষ্টা করেছেন। সবটা মিলে আইডেন্টিটি পলিটিক্স বা পরিচয়সত্তার রাজনীতি এই নির্বাচনে জেঁকে বসেছে। যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। সেই কারণেই এই নির্বাচনকে অনেকেই বলছে ঐতিহাসিক নির্বাচন। পাশাপাশি নির্বাচনি সভায় ‘খেলা হবে’ স্লোগান কোনোদিন মানুষ ভাবতে পারেনি নির্বাচনকে খেলার পর্যায় নিয়ে যাওয়া হবে। তার বিপরীতে নানা রকম স্লোগান যেমন উঠে আসছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সবাই কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। গেরুয়া শিবির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গকে রাজনৈতিকভাবে দখল করার চেষ্টা করছে উলটোদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলা বাঙালির সেন্টিমেন্ট সামনে এনে তিনি বিজেপির অগ্রযাত্রাকে আটকানোর চেষ্টা করছেন।

কয়েক দিন ধরে ভারতের পত্রপত্রিকায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশ সফরের কথা ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছিল। তার এ সফরকে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনি রাজনীতির অংশ হিসেবে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে খবরগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। কলকাতার আনন্দবাজার কিংবা দিল্লির হিন্দুস্তান টাইমস স্পষ্ট করে লিখেছে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে সব ধরনের কৌশলই গ্রহণ করছে। আর সেই কৌশলেরই অংশ হচ্ছে মতুয়া সম্প্রদায়ের সমর্থন-সহানুভূতি আদায় করা। সফরটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে হলেও তার সফরের অংশ হয়েছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ওড়াকান্দির হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ মন্দির এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। তৃণমূলের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনের দিন বাংলাদেশ সফরের নামে ভোট প্রচারণায় তিনি খুবই ক্ষুব্ধ এবং ভোট প্রচারণার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি নির্বাচন বিধি ভঙ্গ করেছেন বলে জানান। এমনকি তিনি এটাকে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির পরিপন্থী বলেও আখ্যায়িত করেন।

অন্য দেশের রাজনীতিতে, বিশেষত নির্বাচনে ভারতের প্রভাব খাটানোর চেষ্টার বিষয়ে অবশ্য নতুন করে বলার কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্পকে জেতাটে ‘আব কা বার ট্রাম্প সরকার’ স্লোগানটি প্রধানমন্ত্রী মোদিই দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনের সময়ে বিরোধী দলগুলোর বর্জন ভাঙতে তৎকালীন পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়ের উদ্যোগের স্মৃতিও কারও বিস্মৃত হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ যে ভারতের নির্বাচনি রাজনীতিতে একটি ইস্যু হয়ে আছে, তা নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু মতুয়া ভোটব্যাংক প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের অংশ হয়ে যাওয়ায় এখন নিশ্চিত করে বলা চলে যে ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশের ভূমিকা কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

সুতরাং, এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো দলই পাবে বলে মনে হয় না। বর্তমান বাস্তবতায় বিজেপি সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমে পড়ায় এবং বাংলা দখলের অভিপ্রায়ের কারণে এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের আসন সংখ্যা কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ২ মে চূড়ান্ত ফলাফলের দিনই নির্ধারিত হবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার পরিচালনা ও নেতৃত্বে থাকবেন তৃণমূল, বিজেপি নাকি বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট। ফলাফল যেটাই ঘটুক প্রতিবেশী পশ্চিবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির সম্পর্ক আরও গভীর ও হৃদ্যতার হবে এটাই উভয় বাংলার জনগণের প্রত্যাশা।

লেখক: গবেষক, কলাম লেখক, সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি

এ বিভাগের আরো খবর