বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গুজবের কবলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার

  • মো. রকিবুর রহমান   
  • ২৮ মার্চ, ২০২১ ১৯:১২

যেসব বিনিয়োগকারী ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছেন, ভালোভাবে কোম্পানি বিশ্লেষণ করেছেন তাদের লাভ-লোকসান নিয়ে ভাবার কোনো দরকার নেই। বাজারে শেয়ারের দাম ওঠানামা করবে এটাই স্বাভাবিক। ভালো মৌলভিত্তিক শেয়ার যদি আপনার হাতে থাকে, একটু বেশি দামেও যদি কিনে থাকেন এবং যদি ধরে রাখতে পারেন, সেই শেয়ারে আপনি কখনও লোকসান করবেন না, ইনশা আল্লাহ।

বিভিন্নভাবে সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য বাজারকে গুজবের মাধ্যমে অস্থিতিশীল করে তোলে এবং বাজার থেকে ফায়দা লুটতে চায়। এর বাস্তব প্রমাণ আমরা আবারও পেলাম। বাজারে এমন গুজব যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

বাজারে বার বার একটা গুজব ছাড়ানো হয়েছে যে, কোভিড-১৯ বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার ছুটি ঘোষণা করবে এবং পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাবে, যা একেবারেই সত্য নয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রেস রিলিজের মাধ্যমে এ গুজবকে খণ্ডন করেছেন। বিএসইসি’র চেয়ারম্যান সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন কোনো কারণেই পুঁজিবাজার বন্ধ থাকবে না। যতদিন ব্যাংক ব্যবস্থা চালু থাকবে ততদিন পুঁজিবাজার চালু থাকবে। এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু ইতোমধ্যেই গুজবের কারণে বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। অনেক বিনিয়োগকারী এই গুজবে প্রভাবিত হয়ে তাদের শেয়ার panic sell করেছেন। যাতে করে মূলত, বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন সেই গুজবের প্রভাব কাটিয়ে, বাজারের ওপর আস্থা রেখে আবার বিনিয়োগ শুরু করেছেন। আমাদেরকে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে, গুজবনির্ভর বাজারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বিনিয়োগকারীরা। অতএব, বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করার পূর্বে (যারা ভালো মৌলভিত্তিক শেয়ার হোল্ড করছেন) দশবার চিন্তা করতে হবে কেন বিক্রি করবেন।

আমি বিশ্বাস করি, যেসব বিনিয়োগকারী ভালো মৌলভিত্তিক কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছেন, ভালোভাবে কোম্পানি বিশ্লেষণ করেছেন তাদের লাভ-লোকসান নিয়ে ভাবার কোনো দরকার নেই। বাজারে শেয়ারের দাম ওঠানামা করবে এটাই স্বাভাবিক। ভালো মৌলভিত্তিক শেয়ার যদি আপনার হাতে থাকে, একটু বেশি দামেও যদি কিনে থাকেন এবং যদি ধরে রাখতে পারেন, সেই শেয়ারে আপনি কখনও লোকসান করবেন না, ইনশা আল্লাহ।

আমাদের দেশের পুঁজিবাজারের চরিত্রটা যদি যাচাই করি তাহলে আমরা দেখি একটি গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীকে প্রতারিত করে। মৌলিক শেয়ারের দাম যখন stable থাকে, তখন ওই সকল দুষ্টচক্রের হাতে কোনো শেয়ার না থাকার কারণে তারা কীভাবে শেয়ারের দাম কমিয়ে শেয়ার ক্রয় করবে সেই চেষ্টা করে এবং অনেক সময় সফল হয়ে যান। যারা ভালো মৌলভিত্তিক শেয়ার কিনে হোল্ড করতেন তারা প্রভাবিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হন।

অপরদিকে, এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাজারের এই দুষ্ট চক্রটি serial trade, circular trade, market manipulation-এর মাধ্যমে, অনেক সময় sponsor, director, promoter, management-এর সঙ্গে মার্কেট ম্যানিপুলেট করে, বিভিন্ন রিউমার ছড়িয়ে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে, ওই সব কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের জন্য বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে ফেলেন। বিনিয়োগকারীরা যখন তাদের ফাঁদে পা দিয়ে ওই সব শেয়ার কিনেন তখন তারা সাংঘাতিকভাবে প্রতারিত হয়।

আমি দৃড়ভাবে বলতে চাই গতকাল ডিএসই’র ‘স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী: বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আলোকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অর্জন ও সম্ভাবনা’ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী, বিএসইসির চেয়ারম্যান, সচিব, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, সুস্পষ্টভাবে পুঁজিবাজারকে স্বচ্ছতা জবাবদিহির মধ্যে রেখে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে যা কিছু করার সেগুলো চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন। শুধু equity মার্কেট নয়, bond, sukuk, isalmic bond, etf, sme, treasury-bond, atb, otc যেগুলো বাজারে চালু করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা আরও ত্বরান্বিত করার তাগিদ দেন। already বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে standard chartered bank ও beximco-এর bond অনুমোদন দিয়েছে।

অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক treasury-bond ট্রেড করার সব পদক্ষেপ নিয়েছে। মিউনিসিপ্যাল বন্ড নিয়ে আসার জোড় প্রচেষ্টা চলছে। বিদেশী অনেক কোম্পানি বন্ড ছাড়ার জন্য এগিয়ে আসছে যারা পরবর্তী সময়ে তালিকাভুক্ত হবে। বন্ড মার্কেটে যাতে সহজে ট্রেড করা যায় এবং এর অপারেশন যাতে সিম্পল হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় রুলস-রেগুলেশনস প্রণয়ন ও সংশোধন করা হয়েছে।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাজারকে শক্তিশালী করে এবং মার্কেট মেকার হিসেবে কাজ করে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টরকে শক্তিশালী করা হচ্ছে তারা যাতে ভালো মৌলভিত্তিক শেয়ারে ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে বাজারকে সাপোর্ট দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। investment corporation of Bangladesh, আইসিবিকে মার্কেট মেকার হিসেবে role play করতে হবে। আইসিবি সঠিক role হচ্ছে মার্কেটকে stabilize করা। পুঁজি বাজারের উন্নয়নে আইসিবিকে market maker-এর ভূমিকা পালন করতে হবে। অপরদিকে, পুঁজিবাজারে যাতে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান ( লোকাল ও আন্তর্জাতিক) আসতে পারে তার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। বিদেশিরা যাতে সহজে বাজারে ইনভেস্ট করতে পারেন এবং সহজে তাদের লাভের অংশ repatriate করতে পারেন তার সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ভুল থেকে বেরিয়ে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার জন্য এগিয়ে এসেছেন। যা পুঁজি বাজার উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক দিক। লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যে corporate tax-এর ব্যবধান কমপক্ষে ১৫% করতে হবে যাতে ভালো মৌলভিত্তিক Big Farms পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্তিতে আরও উৎসাহ পায়।

Ministry of Finance (MoF), National Board of Revenue (NBR), সবাই পুঁজিবাজার যেন stable হয়, যেন পার্টিসিপেশন বাড়ে, তার জন্য সকল ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। existing সকল লিস্টেড কোম্পানিতে good corporate culture, good corporate governance আনার সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। otc market থেকে ভালো ভালো কোম্পানিকে main market-এ আনা হচ্ছে। ছোট paid up কোম্পানিকে address করা হচ্ছে। যে সকল কোম্পানিতে sponsors, directors, promoters রা ৩০% হোল্ড করেন না, সেসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে বিএসইসি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।

মার্কেট মেকার অ্যাক্ট করা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে মার্কেট মেকার license দেয়া শুরু হয়েছে। কোম্পানি buy-back আইন করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সবাই কাজ করছে, FRC active হচ্ছে, যারা ভুল অডিট রিপোর্ট দেবে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে। যারা serial trade, circular trade, market manipulation করবে তাদেরকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। বাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বাজার পরিচালনায় বিএসইসি’র চেয়ারম্যান PROS শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম zero tolerance-এ আছেন। তিনি বার বার একটি ম্যাসেজ সবাইকে দিয়ে যাচ্ছেন কোথাও কোনো অনিয়ম উনি সহ্য করবেন না, তিনি যত শক্তিশালী হোক না কেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বাজারকে গতিশীল করতে equity মার্কেটের পাশাপাশি bond, sukuk, isalmic bond, etf, sme, treasury bond, atb, otc এসব এনে বাজারকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং সফলতা অর্জন করতে যাচ্ছে। যে সকল কোম্পানিতে স্পন্সর ডিরেক্টর ৩০% শেয়ার হোল্ড করে না, তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যেসব কোম্পানির পরিচালকেরা দীর্ঘ দিন বোনাস দিয়ে শেয়ারের পরিমাণ বৃদ্ধি করেছেন, serial trade, circular trade, market manipulation-এর মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন, তাদেরকে কোম্পানির ৭০% শেয়ার কমপক্ষে face value-তে কিনতে হবে। তারা যদি শেয়ার কিনতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাদেরকে ম্যানেজমেন্ট থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং দক্ষ ও ডায়নামিক প্রফেশনালস নিয়োগ দিতে হবে।

ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্য, over valuation, রাতারাতি বাজারে আসার আগে কোম্পানির EPS বেড়ে যাওয়া, পণ্যের বিক্রি বেড়ে যাওয়া, reserve বেড়ে যাওয়া, কোম্পানির productive পণ্যের মজুদ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখিয়ে কোম্পানিকে বিনিয়োগকারীর নিকট আকর্ষণীয় করে মার্কেটে শেয়ার বিক্রি করতে দেয়া যাবে না। বিগত দিনে যেসব কোম্পানি এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাদের কোনো অধিকার নেই এই মার্কেটে থাকার।

আমি দৃড়ভাবে বিশ্বস করি, একজন সুশিক্ষিত বিনিয়োগকারী হিসেবে আমি সঠিক বিচার-বিবেচনা করে আমার বিনিয়োগ করব, কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শেয়ার বেচাকেনা করব না। যারা বাজারে রিউমার ছড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তাদের কথায় কান দেব না, প্রয়োজনে রেগুলেটরি অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করব এবং তাদেরকে শনাক্ত করব।

আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে এবং সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে হবে। হতাশ হবেন না, রিউমার প্রত্যাখ্যান করুন, অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শেয়ার কেনাবেচা করবেন না। আপনার বিনিয়োগ আপনি করুন। নিজের বিচার বিশ্লেষণ দিয়ে ভালো শেয়ার কিনুন, রিউমার-হিউমারের ওপর ভিত্তি করে শেয়ার কেনাবেচা করবেন না। লোভে পড়ে বিনিয়োগ করবেন না, তাড়াহুড়া করবেন না, সকল পদক্ষেপ সতর্কতার সঙ্গে নিবেন। সবাই মার্কেটের জন্য কাজ করছে, মার্কেটে নতুন অপশন আসছে, যেমন: bond, sukuk, isalmic bond, etf, sme, t-bond, atb, otc ইত্যাদি আপনার বিনিয়োগের জন্য নতুন উইন্ডো খোলা হচ্ছে যা আপনাকে বিনিয়োগের জন্য আরও উজ্জীবিত করবে। বাজার সঠিক পথে আছে এবং এভাবে এগিয়ে গেলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ট্রেডের যে স্বপ্ন তা আগামী ৩ বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন হবে দৃঢ়ভাবে আশা করছি।

লেখক: সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড

এ বিভাগের আরো খবর