প্রবাস বলতে বোঝায় নিজ দেশের বাইরে অন্য কোথাও বসবাস। দূর এবং অপরের দেশে বসবাস বলেই এর আরেক অর্থ ‘নির্বাসন’। পাণ্ডব জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির সুখের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, অপ্রবাসী ও অঋণী হয়ে দিনশেষে যে শাকান্ন ভক্ষণ করতে পারে সেই সুখী। যুধিষ্ঠিরের সংজ্ঞায় পৃথিবীতে আর যেখানেই হোক প্রবাসে সুখ নেই, আছে কেবল দুঃখ, বেদনা, হাহাকার।
প্রবাসে সুখ নেই, তবু লক্ষ লক্ষ মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে যায়। চাঁদপুরের আবু সুফিয়ান (কল্পনাম) হাড়কাঁপানো ঠান্ডা উপেক্ষা করে পার হয় ইউরোপের গহিন অরণ্য, জীবনের মায়া তুচ্ছ করে পাড়ি দেয় দুস্তর পারাবার কিংবা কিশোরগঞ্জের সুফিয়া (কল্পনাম) ঘরবাড়ি সহায়সম্বল বেচে উড়াল দেয় মধ্যপ্রাচ্যে।
অর্থনীতিবিদেরা হয়তো যুধিষ্ঠিরের উল্টোটাই বলবেন। বলবেন, জীবন মানের উন্নয়ন, বেশি আয়, সুখ-স্বাছন্দ্যপূর্ণ ভবিষ্যতের স্বপ্ন তাদের টেনে নিয়ে যায় দূর কোনো পরবাসে। তবে সুখের লাগিই হোক আর নাই হোক, সীমানা পাড়ি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশি হয়ে যায় বিদেশি, গায়ে লেগে যায় ‘প্রবাসী’ তকমা। স্বদেশি-প্রবাসী ইত্যাদি ভাগাভাগিতে সামনে দাঁড়িয়ে যায় বিভাজনের দেয়াল।
তুলনামূলক আলোচনায় দেশি বাংলাদেশি অনেকটাই ‘খাঁটি’ বাংলাদেশি, প্রবাসীরা যেন একটু ‘কম দেশি’, তাদের দেশপ্রেমও একটু ‘কম কম’; তাই তারা দেশ ছেড়ে ভিনদেশে বসবাস করতে যায়।
দেশপ্রেম প্রমাণের জোরাল একটি শর্ত হলো, দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অবস্থান করা। এই সরলরৈখিক ভাবনায় দেশকে ভালোবাসা এবং দেশে থাকা মোটামুটিভাবে সমার্থক। ফলে বিদেশি বিদ্যা ও কর্ম সম্পাদনের পর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে মহিমান্বিত করতে দেখা যায় অহরহ। এবং যারা প্রবাসে বসবাসের সুযোগ ও কাজের মোহ ছেড়ে দেশে ফিরে যেতে পারে তারা নির্লোভ দেশপ্রেমিক, এই ভাবনাটিও সর্বজনসিদ্ধ।
প্রবাসী এক অর্থে তাই লোভী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ফলে প্রবাসে থেকে দেশের ইস্যু নিয়ে ভালো-মন্দ যাই বলুন হা রে রে করে তেড়ে আসবেন আপনার চেনাপরিচিতরা। যেমন: আপনি বললেন ঢাকার বাতাস বিষাক্ত হয়ে গেছে, মানুষ কীভাবে যে বাঁচে! অমনি আপনার ঠোঁটকাটা বন্ধু বলে উঠবে, ‘নিরাপদ দূরত্বে থেকে এসব বলাই যায়।’
আপনি বললেন, আহা একদিনে সড়কে এত মৃত্যু! কেউ তো একটু নিয়মকানুন মেনে চলে না। আর রাস্তাঘাটও যে বেহাল। তখনই আপনাকে হকচকিত করে দিয়ে আপনারই বন্ধু বলে উঠবে, ‘অন্যের দেশে থেকে সুন্দর সুন্দর রাস্তায় গাড়ি চালাও, ঘুরে বেড়াও তাই দেশকে নিয়ে এভাবে বলতে পার। কাঁচা হোক তবু ভাই নিজের রাস্তা।’
আপনি প্রবাসে থাকেন তাই আপনার দেশপ্রেম মুহুর্মুহু সন্দেহ বাতিকতার শিকার হবে। ফলে প্রবাসীর ‘কমদেশি’ দোষমুক্ত থাকার জন্য শব্দচয়নেও অনেক সাবধানি হতে হয়, কেননা পান থেকে চুন খসলেই কবি আব্দুল হাকিমের পরবর্তী প্রজন্ম এসে শোনাতে থাকে:
যে জন বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সেসব কাহারো জন্ম নির্ণয় ন জানি ।।
দেশি ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।।
কবি যেন রীতিমতো হুমকি দিলেন, ‘থাক তোমরা বিদেশেই, তোমাদের জন্য বিদেশই ভালো।’ অথচ একই মন্তব্য আপনি বাংলাদেশে বসে করবেন তাতে আপনার দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।
প্রবাসীর জন্য চারদিকে আছে ‘সার্ভিল্যান্স ক্যামেরা।’ বাচ্চা ভিন্ন ভাষায় কথা বলছে কেন? বাচ্চা ভাত না খেয়ে বার্গার পছন্দ করে কেন? তুমি সালোয়ার-কামিজ পর না কেন? পরলে কেউ কি মানা করবে? সাদাদের সঙ্গে মিশতে যেও না যেন! সাদাদের সঙ্গে বাচ্চাকে মিশতে দিও না। বড়জোর অন্য এশিয়ানদের সঙ্গে মিশতে দিও। সাদাদের সঙ্গে মিশতে দিলে সব শেষ। ধর্মকর্ম কিছুই হবে না, আর বাবা-মাকে ফিরেও দেখবে না। এমনভাবে আপনার দিকে এসব মন্তব্য আসতে থাকবে যেন বাংলাদেশের প্রতিটি গৃহ ধার্মিক সন্তান-সন্ততিতে পূর্ণ এবং তারা পিতামাতার একান্ত বাধ্য ও অনুগত।
উপরিউক্ত মন্তব্যের পেছনে যে ধারণা কাজ করে তা হলো, ‘বাংলাদেশি সংস্কৃতি ধরে রাখা।’
প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশি সংস্কৃতি আসলে কী? অখণ্ড কোনো সংস্কৃতি কি বাংলাদেশে আছে? কেউ কি তা দাবি করতে পারে?
অখণ্ড ‘বাংলাদেশিত্ব’ বলে কোনো কিছু না থাকলেও প্রবাসীকে নিতে হয় নানাবিধ চাপ। প্রতিনিয়ত আত্মপরিচয়ের নির্মাণ-বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কেননা, আপনার হৃদয়, মগজ, আচরণ, অভ্যাস, জীবণাচরণজুড়ে একদিকে আছে জন্মভূমির প্রভাব, আবার অন্যদিকে আছে আপনার অর্জিত বৈশ্বিক জ্ঞান, সংস্কৃতি ও বোঝাপড়া। প্রবাসী পরিচয়ের সঙ্গে বোঝাপড়া খুব সহজসরল বিষয় নয় বরং জটিল।
আত্মপরিচয়ের সংকট প্রবাসীর বহুবিধ। আপনাকে একনজর দেখেই (গায়ের রং) লোকে বলে দেবে আপনি ভারতীয়। তারা একই সঙ্গে বর্ণ ও জাতীয়তা- এ দুটো বিষয় নির্ধারণ করে। আপনি মাথা নেড়ে জানালেন যে আপনি আসলে বাংলাদেশি, ভারতীয় নন। বাংলাদেশে আগে ভ্রমণ করেছে এমন কারও সঙ্গে যদি কথা হয় তাহলে তাদের কাছে আপনার পরিচিতি হবে আপনি একটি গরিব দেশ থেকে প্রবাসী হয়েছেন।
কেউ কেউ বৈশ্বিক বিভাজনের লেন্স লাগিয়ে আপনাকে দেখবে তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হিসেবে। অন্যদিকে, আপনার বন্ধু মেসেঞ্জারে লিখে বসবে, ‘কী খবর প্রথম বিশ্বে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক?’ অথচ আপনি তখন বিশ্ব বাজারে আপনার অবস্থান নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। দুই-চারজন এই বাহাসে তাল ঠুকবে, ‘প্রবাসেই শান্তি। রাজনৈতিক হানাহানি নেই। রাস্তায় বের হলে মরে পড়ে থাকার আশঙ্কা নেই। নিজের বাড়ি রাত পোহালে বেহাত হবার ভয় নেই।’
বন্ধুরা এসব বলেই খালাস অথচ আপনি মাঝবয়সে বিদ্যাবুদ্ধি দিয়ে অর্জিত একটা চাকরি ও সামাজিক অবস্থান ফেলে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে প্রবাসে এক একটি দিন পার করছেন আর ভাবছেন ‘কতদূর আর কতদূর…?’
চেনাপরিচিতদের দেশের প্রতি মায়া-মমতা-প্রেম নিয়ে বরং টানাপোড়েন হয় আমার। এই দেশপ্রেমিকেরা ‘প্রথম বিশ্বের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক’ বলে প্রবাসে বসবাসকারীদের গায়ে রং চাপান ঠিকই, কিন্তু নিজ দেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর তৃতীয়, চতুর্থ অথবা শ্রেণিগোত্রহীন নাগরিক হয়ে পড়ার ব্যাপারে কোনো খোঁজখবরই রাখেন না কিংবা খোঁজখবর করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না।
বাংলাদেশে শ্রেণি ক্রমোচ্চতার যে চিন্তা ও চর্চা পরিবার, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানে গভীরভাবে প্রোথিত সেসব নিয়েও তারা কখনও কোথাও প্রশ্ন তোলেন না। সবার সম্মিলিত উন্নাসিকতা ধীরে ধীরে নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণি-গোত্র-জাতিকে অদৃশ্য করে দিচ্ছে, ‘উপজাতি’ করে তুলছে এবং বাদপড়াদের কাতারে ফেলে দিচ্ছে, কিন্তু সেসব নিয়েও তাদের ভাববার অবকাশ হয় না।
কিছুদিন আগে এক নারী চিকিৎসক যখন একজন নরসুন্দরকে বিয়ে করলেন তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এক কর্তা বলে দিলেন, ‘এ হতে পারে না।’
কেন হতে পারে না, কারণ সামাজিক অবস্থানের পাল্লায় এ দুই ব্যক্তি অসম। তবে কী হতে পারে? দিনদুপুরে ধর্ষণ, সেটির ভিডিও ধারণ, সেই ভিডিও অনলাইনে ছেড়ে দেয়া এবং এসবের অভিঘাতে কোনো নারীর আত্মহত্যা?
অল্প কিছুদিন আগে ভাড়া না থাকার কারণে একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারীকে বাস থেকে ফেলে দেন চালক ও হেলপার। বাসাবাড়িতে, স্কুল-কলেজে, মাদ্রাসায় শিশুদের মারধর-খুন-ধর্ষণ নিয়মিত ঘটনা। আদিবাসী নারী অপহরণ, ধর্ষণ অথবা তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ অনাদিকালের চর্চা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
অল্প কিছু চেনাপরিচিত ছাড়া কাউকেই প্রশ্ন রাখতে দেখি না কেন আমার দেশের নারী, শিশু, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ নিজ রাষ্ট্রে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে না? কেন আমাদের রাষ্ট্র সবার বসবাসের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে পারে না? অথচ রাষ্ট্র নামক প্রতিষ্ঠানেরই একমাত্র সামর্থ্য ও এখতিয়ার আছে সবার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবাইকে সংঘবদ্ধ রাখার। তা কি হচ্ছে? যে দেশে বিদ্যাধারী বঙ্গ পণ্ডিতেরা দলবাজি ও দুর্নীতির অনন্য নজির রেখে চলেছেন, শিল্পী, সাহিত্যিক মতপ্রকাশের দায়ে রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়ে জীবন হারাচ্ছেন, সেই দেশে প্রতিদিন কত মানুষ নিজভূমে পরবাসী হয় তা দৃষ্টিগোচর না হলেও অননুমেয় নয়।
দেশ ও প্রবাস নিয়ে যে ভাগাভাগি তা মূলত ইনসাইডার ও আউটসাইডার- এই দ্বৈত বিভাজনকে ধারণ করে। এটি সাধারণভাবে স্থান ও পরিসরকেন্দ্রিক হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সূক্ষ্ম অথচ গভীর কিছু বিষয়। বিভাজন/বিভাজিতের বৈশ্বিক সম্পর্ক। উত্তর-দক্ষিণ, উন্নত-অনুন্নত-উন্নয়নশীল প্রভৃতি বিভাজনের সঙ্গে যুক্ত থাকে সীমানা, ভূমি, নিরাপত্তার ধারণা, প্রবেশের অনুমোদন ইত্যাদি গুঢ় কিছু বিষয়।
আমাদের ইনসাইডার চোখ বিদেশি, প্রবাসীকে মাপতে শুরু করে নানান গজ-ফিতায়, আর নিভৃতে বুনতে থাকে বিভাজনের দেয়াল। এই ভাবনায় এক পাশে থাকে ‘ক্ষমতাধর’ রাষ্ট্র, যারা তাদের নাগরিকদের ‘নিরাপত্তা’ দিতে সচেষ্ট এবং অন্য পাশে থাকে ‘ক্ষমতাহীন’ রাষ্ট্র, যাদের নাগরিকের নিরাপত্তা অনেকটাই নাজুক।
তবে এসব অদৃশ্য ভাগাভাগি একই সঙ্গে বহুবিধ, অন্তঃপ্রবিষ্ট ও সংযুক্ত। সীমানা, বৈশ্বিক রাজনীতি, (ভাষা, জাতীয়তা, গায়ের রং এর ভিত্তিতে), জ্ঞান, ক্ষমতা প্রভৃতি প্রবাস ধারণার সঙ্গে যুক্ত হয়ে একে ‘দুষ্প্রাপ্য’ ও ‘অমূল্য’ করে তোলে। যেখানে প্রবাস একইসঙ্গে অথরিটেটিভ ও পরাক্রমশালী। এখানে প্রবেশ, বসবাস, ও অনুপ্রবেশ সবই কঠোর ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রিত।
দেশ বনাম প্রবাস এ রকম বিভাজন করতে চাওয়া বৈশ্বিক সংযুক্ততার এই সময়ে খানিকটা বরং বিড়ম্বনারও। কেননা, আবু সুফিয়ান যখন পশ্চিমে বসে কোনো এক বরফঢাকা সকালে চা খেতে খেতে চাঁদপুরে পদ্মার ভাঙন দেখেন, আপনি হয়তো তখন বন্ধুদের নিয়ে ঘুরছেন সাজেকের পাহাড়ে। যখনকার ঘটনা তখনই জানুন সংবাদ ও মিডিয়া সেকেন্ডে সেকেন্ডে উপস্থাপন করছে খবরের নানা দিক। ধুন্ধুমার ফলো ও সাবক্রিপশনের এই সময়ে আপনার আগেই প্রবাসী সুফিয়ান জেনে যেতে পারেন তার জন্মভূমিতে কী ঘটে চলেছে। সুফিয়ান হয়তো বন্ধুবান্ধবের কাছে থেকে কিছু অর্থকড়ি জোগাড় করে দেশে পাঠিয়েও দিলেন, কিন্তু আপনি দেশের আরও দশটি নদীভাঙনের মতো একে নিয়মিত ঘটনা হিসাবে দেখে একে পাশ কাটিয়ে সাজেক থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হলেন।
এ-বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন দেশ-বিদেশ সবই অন্তঃপ্রবিষ্ট নয় কি? বিভাজনের দেয়াল ঠেলে যত দূরে ঠেলতে চান, দেয়াল আরও শক্তিধর হয়ে উঠবে শুধু। কেননা, কেবল পরিসরের বিভাজন হিসেবে দেশ ও প্রবাসকে দেখলে আর চলে না। অন্যতার বোধ, রাজনীতি ও মতাদর্শ প্রভৃতি বিষয়-আশয় এর সঙ্গে ভীষণভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে এবং দেশ, বিদেশ, প্রবাস ধারণাকে সম্পর্কিত ও আকৃতি দান করে।
এ-বিশ্ব সব মানবের। এর যে কোনো স্থানেই তো আমার-আপনার বসবাসের অধিকার থাকার কথা। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, জাতীয়তাবোধ আমাদের সেই অধিকারকে বরং হরণ করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস বদলে গেছে দ্বিজাতি-তত্ত্বের ভিত্তিতে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনাকে পুঁজি করে তৈরি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দেশ, সীমানা, পরিচিতি। ঔপনিবেশিক হস্তক্ষেপে অখণ্ড ভূমি, আকাশ, জল হয়েছে বিভাজিত। ‘আমার সোনার বাংলা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন বাংলার রূপ বুকে ধারণ করে লিখলেন? অখণ্ড উপমহাদেশের, নাকি জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বিভাজিত বাংলার? অথচ পৃথিবীর যেকোনো কোণে বসে সবাই গেয়ে উঠি ‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি।’
এ বিশ্বের সব সত্তা একে অপরের পরিপূরক। দেশের গুরুত্ব বিদেশের চেয়ে কম নয়, নারীর গুরুত্ব পুরুষের চেয়ে কম নয়। আদিবাসীর গুরুত্ব সমতলের বাসিন্দার চেয়ে কম নয়। কি দেশি, কি প্রবাসী সবাই যার যার মতো করে জীবন পরিচালনায় নিয়োজিত।
বিভাজনের দৃষ্টি সরিয়ে আসুন বরং জীবন দেখি। সাদা-কালো, নীল-বেগুনি, সস্তা-দামি, আসল-নকল, অমূল্য সব জীবন। দেশ কিংবা প্রবাস সেই নানান রঙের জীবনের এক একটি রংমাত্র। যে রং আপনার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ভান্ডারকে একটু একটু করে আরও সমৃদ্ধ করবে। সন্দেহ নেই।
নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক