বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সম্পদে নারীর অধিকার

  • মাজহারুল ইসলাম   
  • ২০ মার্চ, ২০২১ ১৪:২৭

‘মুসলিম আইনে নারীদের সম্পত্তির যে অধিকার রয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে কোনো নারী উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। আমাদের দেশে বেশির ভাগ মুসলিম নারী আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অধিকার পায় না। এতে স্বামী মারা গেলে বা বিবাহবিচ্ছেদ হলে তাদের অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। এখনও গ্রামের অনেক নারী, এমনকি শহরেও বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয় নারীরা।’

আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত ধারণা যে, নারীদেরকে ধর্মে সম্পদের বেলায় ছেলের অর্ধেক অধিকার দিয়েছে। নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন একটি ৮০’র দশক থেকে সব ধর্মের নারীর পারিবারিক জীবনে সমতা, সমানাধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছে। সম্পদে নারীর সম অধিকারের দাবির পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়, নারীর ক্ষমতায়নের প্রথম ও প্রধান শর্ত, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। আর এ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই সম্পদে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এক নারীনেত্রীর মতে, ‘পারিবারিক আইন এখনও ধর্মভিত্তিক রয়ে গেছে- এটা বৈষম্যমূলক। এ ক্ষেত্রে সব রাজনৈতিক দলেরই দায়বদ্ধতা রয়েছে। সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র সবক্ষেত্রে সমানভাবে ক্ষমতায়িত হলে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব’।

আমরা যারা সম্পদে নারীদের সমান অধিকার দাবি করি, তাদের অনেকেরই ইসলামি উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে প্রকৃত ধারণা অস্পষ্ট। কারণ ফারায়েজ কোনো সহজ বিষয় নয়– এটা সকল জ্ঞানের অর্ধেক। হাদিসে বর্ণিত আছে- “তোমরা ইলমে ফারায়েজ শিক্ষা কর এবং মানুষকে তা শিক্ষা দাও কেননা এটা জ্ঞানের অর্ধেক (১/২); (তিরমিযি ২০৯১)।”

‘উত্তরাধিকার’ হচ্ছে মৃতের রেখে যাওয়া সম্পদে জীবিতদের অধিকার। এটাকে আরবিতে মিরাস বলা হয়। এই অধিকার স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নির্ধারণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদের অংশ আছে। তা কম হোক অথবা বেশি, তা নির্ধারিত অংশ” (সূরা আন নিসা ৭)।

আল্লাহ কেন এমন বিধান দিয়েছেন তা বোঝার জন্য উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আইন ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। কোনো বিষয় ভালোভাবে না জেনে মন্তব্য করা উচিত নয়।

যারা নারীর সম্পদে সমান অধিকারের দাবি করেন, তারা নারী-পুরুষের অর্থনৈতিক দায়িত্বের সমতা আছে কি না– তা বিবেচনা করেন না। অর্থনৈতিক খরচের দায়িত্ব বিবেচনায় না নিয়ে শুধু সম্পদে অধিকারের ক্ষেত্রে সমান দাবি ন্যায়ভিত্তিক দাবি নয়। ন্যায়ভিত্তিক বণ্টন মানে সমানভাবে বণ্টন বোঝায় না। অধিকার এবং দায়িত্বের ভিত্তিতে ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টনের নীতি হলো ন্যায়ভিত্তিক নীতি। ইসলামি উত্তারাধিকার আইন একটি বৈষম্যহীন ইনসাফভিত্তিক বণ্টন ব্যবস্থা।

কন্যাসন্তান যদিও পুত্রের অর্ধেক পায়, সবকিছু মিলিয়ে হিসাব করলে দেখা যায় – কন্যার সম্পত্তির পরিমাণ পুত্রের চেয়ে কম নয়।

প্রথমত, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তিতে নারী বিভিন্ন অবস্থায় যেমন- স্ত্রী, কন্যা, মাতা, বোন, বৈমাত্রেয় বোন, পৌত্রী, দাদি ও নানি হিসেবে উত্তরাধিকার লাভ করেন। অবস্থাভেদে এ অংশ ও অধিকারের হেরফের হয়। কিন্তু কারো বঞ্চিত হওয়ার কোনো উপায় নেই।

দ্বিতীয়ত, নারী শুধু বাবা-মা থেকে সম্পদ পায় না– আরও অনেক খাত থেকে তারা সম্পদ পায়; যেমন একজন নারী তার –মাতা, দাদা, স্বামী ও বৈপিত্রেয় ভাই অবস্থা বিশেষে অন্যান্য আত্মীয়– থেকেও মিরাস লাভ করে।

তৃতীয়ত, পুরুষ তার সম্পদ থেকে স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা, নাবালেগ বা অক্ষম ভাই-বোনের খরচ বহন করতে বাধ্য।

পক্ষান্তরে, নারী যে সম্পদ অর্জন করে বা পায় তা সংসারে কিংবা অন্যের জন্য খরচ করতে সে বাধ্য নয়। আয় এবং ব্যয়ের খাত বিবেচনা করলে পুরুষের তুলনায় নারী কম নয়, বরং বেশি সম্পদ পায়। যেমন–

ক. বাবা-মা’র নিকট থেকে:

মৃত ব্যক্তির শুধু একজন কন্যা থাকলে ১/২ পাবে। ২ বা ততধিক কন্যা হলে ২/৩ অংশ (সম্মিলিত) পাবে যদি পুত্র না থাকে। যদি ‘পুত্র এবং কন্যা’ উভয়ই থাকে তখন ২:১ হারে বা ‘প্রত্যেক পুত্র প্রত্যেক কন্যার দ্বিগুণ’ পাবে। শুধু একজন পুত্র থাকে সম্পূর্ণ সম্পদ পাবে।

খ. দাদার নিকট থেকে:

বাবা না থাকলে, দাদার সম্পদের অংশ নারী পায়। মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ- ১৯৬১-এর ধারা ৪ অনুযায়ী “কোন ব্যক্তির দাদার মৃত্যুর পূর্বে যদি পিতা মারা যায় তবে ঐ ব্যক্তি (নারী/পুরুষ) তার পিতা জীবিত থাকলে যে অংশ পেত, সেই অংশই পাবে।” এক্ষেত্রে দেখা যায় কন্যা পুত্রের সমান অংশ পাচ্ছে কারণ সে পিতা যা পেত, তাই পায়। এছাড়াও, শরিয়া আইন অনুযায়ী, দাদার মৃত্যুর আগে পিতা মারা গেলে নাতি বঞ্চিত হয়। কিন্তু, পুত্রের কন্যা (নাতনি) (মৃতের অন্য কোনো পুত্র বা দুই কন্যার অবর্তমানে) অংশ পায়।

গ. স্বামীর নিকট থেকে:

স্ত্রীর স্বামী মারা গেলে তার সম্পদের ১/৮ পায়, যদি সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে। আর সন্তান বা পুত্রের সন্তান না থাকেলে ১/৪ পায়। এছাড়াও, বিয়ের সময় স্বামীর নিকট থেকে দেনমোহর এবং বিয়ের পর ভরণপোষণ (খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদান) পাওয়ার অধিকারী। ভরণপোষণের অধিকার আদালতের মাধ্যমে আদায় করতে পারে। যদি কোনো স্বামী পর্যাপ্ত পরিমাণে তার স্ত্রীকে ভরণপোষণে ব্যর্থ হয়, মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ- ১৯৬১-এর ধারা ৯(১) অনুযায়ী স্ত্রী (যেকোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি) স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নিকট আবেদন করতে পারে এবং জনপ্রতিনিধি এই উদ্দেশ্যে একটি সালিশি কাউন্সিল গঠন করে আইনগত প্রতিকার দিতে পারেন। সংক্ষুব্ধ পক্ষ সংশ্লিষ্ট সহকারী জজ আদালতে রিভিশনের জন্য আবেদন করতে পারে। ভরণপোষণের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ স্বামী যথাসময়ে প্রদান করতে না পারলে জমির মাধ্যমে আদায়যোগ্য হবে [ধারা ৯(৩)]।

শুধু তাই নয়, ২ বছর ভরণপোষণ না দিলে বা দিতে ব্যর্থ হলে The Dissolution of Muslim Marriages Act, 1939-এর ধারা ২ অনুযায়ী আদালতের মাধ্যমে তালাকের ডিক্রি পাবার অধিকারী। পক্ষান্তরে, স্বামীপক্ষ যৌতুক দাবি বা গ্রহণ করলে যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮-এর অধীনে একটি অপরাধ এবং এ জন্য তিনি ১-৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

বিবাহ বিচ্ছেদের পরও স্বামী তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ইদআতের সময় পর্যন্ত ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। এই বিধানটি বাংলাদেশসহ প্রায় সব মুসলিম দেশেই প্রচলিত রয়েছে। এমনকি ১৯৮৫ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট Mohd. Ahmed Khan v. Shah Bano Begum মোকদ্দমায় সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন যে, তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী পুনরায় বিবাহ না করা পর্যন্ত ভরণপোষণ পাবার অধিকারী, এমনকি মুসলমানদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।

নির্জনবাস হয়ে থাকলে তালাকের পরও দেনমোহরের টাকা পাবে। তালাকের সময় এককালীন (‘Mataa’- কিছু সুবিধা, উপহার) পাবে। কোরআনে এরশাদ হচ্ছে-

“তালাকপ্রাপ্তা নারীদের সম্মানজনকভাবে ভরণপোষণ করা ধর্মভীরু স্বামীদের কর্তব্য’ (সুরা বাকারা ২৪১)।

এই আয়াত অনুসরণ করে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ Md. Hefzur Rahman Vs. Shamsun Nahar Begum 15 BLD 34 মামলার রায়ে মতপ্রকাশ করেছিল যে, স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর ইদআতের সময়ের বাইরেও অন্য একজনের সঙ্গে পুনরায় বিবাহ হওয়া (বিবাহবিচ্ছেদের মর্যাদা হারানো) পর্যন্ত যুক্তিসংগত ভরণপোষণ (maintenance) দিতে বাধ্য। আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত রায়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি এবং ১৯৯৮ সালে এই রায় বাতিল করে দেয়। সুরা বাকারা ২৪১ নং আয়াত থেকে প্রাপ্ত আরবি শব্দ ‘মা’তা’ (‘Mataa’) ব্যাখ্যার জন্য হাইকোর্ট বিভাগ ভরণপোষণ হিসেবে বিবেচনা করেছিল যা আপিল বিভাগ মোটেই গ্রহণ করেনি। ‘Mataa’ হলো ভরণপোষণের পাশাপাশি অন্য কোনো সুবিধা যা এককালীন দিতে হয়। নারীদের ন্যায্য ও যথাযথ সম্মানের সঙ্গে আচরণ করা শরিয়তের শিক্ষা।

ঘ. ভাইয়ের নিকট থেকে:

ভাইয়ের মৃত্যুর পর (পিতা, পুত্র বা পৌত্রের অবর্তমানে) সহোদর বোন একজন থাকলে অবস্থাভেদে সমস্ত সম্পদের ১/২ অংশ পায়। সহোদর বোনদের সমপর্যায়ে তাদের ভাই থাকলে তারা আসাবা হয়ে যাবে এবং ‘একজন পুরুষ দুজন নারীর সমান’ (২:১) নিয়মানুযায়ী অংশ পাবে। মৃত ব্যক্তির কন্যাদের সঙ্গে কিংবা পুত্রের কন্যার সঙ্গে সহোদরা বোন আসাবা হিসেবে অবশিষ্ট অংশ পায়।

মৃতের বৈমাত্রেয় (মা ভিন্ন) বোনেরাও (মৃতের পিতা, সহোদর ভাই, পুত্র বা পৌত্রের অবর্তমানে) তার সম্পদের অংশীদার হয়। যেমন, সহোদর বোন না থাকলে, একজন ১/২ অংশ, একজন সহোদরা বোনের সঙ্গে বৈমাত্রেয় বোনেরা ১/৬ অংশ এবং মৃত ব্যক্তির কন্যা বা পুত্রের কন্যার সঙ্গে বৈমাত্রেয় বোনেরা আসাবা হয় (অবশিষ্ট অংশ পায়)।

বৈপিত্রীয় (ভিন্ন পিতা) বোনেরাও (মৃতের পিতা, দাদা, সন্তান, সন্তানের সন্তানের অবর্তমানে) তার সম্পদের অংশীদার হয়। যেমন, একজন থাকলে ১/৬ অংশ; দুই বা ততধিক থাকলে ১/৩ অংশ পায়। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বৈপিত্রীয় ভাই বৈপিত্রীয় বোনদের দ্বিগুণ পায় না; একই পরিমাণ পায়।

পক্ষান্তরে, সহোদর ভাই সাধারণত আসাবা হিসেবে অবশিষ্টাংশ পায়। অবশিষ্ট না থাকলে বঞ্চিত হয়। এমনও ক্ষেত্র আছে যখন বৈপিত্রীয় ভাই-বোন সম্পদ পায় কিন্তু সহোদর ভাই বঞ্চিত হয়। যেমন, কোনো ক্ষেত্রে যদি স্বামী/স্ত্রী, মাতা, ২/৩ বৈপিত্রীয় ভাই-বোন সহোদর ভাই থাকে, সেক্ষেত্রে ভাই নিকটাত্মীয় হিসেবে আসাবা হওয়ার কথা। কিন্তু এমন ক্ষেত্রে সহোদর ভাই বঞ্চিত হবে অথচ বৈপিত্রীয় ভাই-বোন দুই/তিন জন হলে তারা নির্ধারিত ১/৩ অংশ পায়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে যখন সহোদর ভাই বঞ্চিত, তখনও বৈপিত্রীয় বোন/ভাই সম্পদ পায়। এজন্য এই অবস্থাকে Donkey/Himariyya case বলে।

ঙ. সন্তানের নিকট থেকে

সন্তান মারা গেলে মা উক্ত মৃত সন্তানের সম্পদ থেকে কখনও বঞ্চিত হয় না। যেমন, মৃত ব্যক্তির সন্তান (ছেলে-মেয়ে) কিংবা পুত্রের সন্তান (নাতি-নাতনি) বা যেকোনো ধরনের দুই বা ততধিক ভাই-বোন বর্তমান থাকলে, মাতা মৃত ব্যক্তির সমস্ত সম্পদের ১/৬ অংশ পাবেন। উল্লিখিত কেউ না থাকলে ১/৩ অংশ। আর মৃতের পিতা, স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে মাতা জীবিত থাকলে, স্বামী/স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদের ১/৩ অংশ পাবেন (শর্ত হচ্ছে, মাতার সঙ্গে পিতা জীবিত থাকতে হবে)।

শরিয়া আইনের মূল ভিত্তি হলো আল-কোরআন। কোরআনে নির্ধারিত অংশের উত্তরাধিকারী হলো ১২ জন, যার মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জনই মহিলা। তাই কোরআনে নির্ধারিত অংশে অংশীদারের সংখ্যা বিবেচনায়ও নারীর সংখ্যা পুরুষের দ্বিগুণ। একপ্রকার ওয়ারিশ আছে যারা কখনও বঞ্চিত হয় না যারা primary heir (প্রাইমারি এয়ার) বলে পরিচিত। যেমন- স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা। অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও অংশীদারত্বের বিচারে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ সমান।

আসলে নারীদের অধিকার যতটুকু ইসলাম দিয়েছে ততটুকুও তারা অনেক ক্ষেত্রে আদায় করতে পারেন না। অর্থাৎ, নারীর প্রাপ্য অধিকারের অংশ থেকে বঞ্চিত করা হয়। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রধানের মতে, উত্তরাধিকার সম্পত্তি পাওয়ার বিষয়টিতে অনেক নারীও সচেতন নন। সম্পর্কের কথা চিন্তা করে নারীরা প্রাপ্য সম্পত্তি পেতে বঞ্চিত হলেও আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন না।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বলেছেন, ‘মুসলিম আইনে নারীদের সম্পত্তির যে অধিকার রয়েছে তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হলে কোনো নারী উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। আমাদের দেশে বেশির ভাগ মুসলিম নারী আইন অনুযায়ী প্রাপ্য অধিকার পায় না। এতে স্বামী মারা গেলে বা বিবাহবিচ্ছেদ হলে তাদের অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়। এখনও গ্রামের অনেক নারী, এমনকি শহরেও বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয় নারীরা।’

উত্তরাধিকার সম্পদ থেকে নারীদের বঞ্চিত করা গোনাহের কাজ। উত্তরাধিকার বণ্টনের বিষয়টিকে গুরুত্ব কম দেয়া হয়। অথচ আল্লাহ এই দায়িত্বকে ফরজ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে, “আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের উত্তরাধিকারগত সম্পদ সম্পর্কে নির্দেশ দিচ্ছেন”… (সুরা নিসা ১১)।

আল্লাহ শুধু নির্দেশ দিয়েই শেষ করেননি; এই নির্দেশ অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিন শ্রেণির মানুষ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও চির জাহান্নামি হবে তার মধ্যে একশ্রেণি হলো– যারা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টন করবে না বা করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করবে। ইরশাদ হচ্ছে- “আর কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের অবাধ্য হলে এবং তার নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করলে তিনি তাকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সুরা নিসা ১৪)

পক্ষান্তরে যারা এই নির্দেশ মান্য করবে তাদের জন্য মহা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, “এটা আল্লাহর সীমানা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলকে মান্য করবে তিনি তাকে চিরকালের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশে পানির অসংখ্য ঝরনা ও নদী প্রবাহিত। আর এটাই মহা সফলতা”। (সুরা নিসা ১৩)

প্রকৃতপক্ষে নারী-পুরুষ সৃষ্টিগতভাবে যেমন আলাদা, পরিবার ও সমাজে তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য, অধিকারও আলাদা। তাই ন্যায়ভাবে সম্পদ বণ্টন মানে সমানহারে সম্পদ বণ্টন বোঝায় না; বরং প্রয়োজনীয়তা, ব্যয়ের খাত ও দায়িত্ব অনুসারে সম্পদ বণ্টন করাই ন্যায়বিচার। উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আইন ভালোভাবে জানার পরও যদি কেউ বুঝতে না চায়, তাহলে বুঝতে হবে এটা তার সীমাবদ্ধতা, কারণ মানুষের জ্ঞান সীমিত। ন্যায়ভিত্তিক বণ্টন মানে equally বণ্টন নয়, equitably বণ্টন। কোনো বিষয়কে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দেখলে গোলাকার মনে হবে; ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দেখলে অর্ধেক গোলাকার মনে হবে।

লেখক: আইনজীবী, কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর