গত ১৫ বছরে জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তিতে বিশ্ব দরবারে অভূতপূর্ব সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিতে কয়েক দশক ধরে তৈরি হয়েছে এসব মামলার জট।
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক এবং সংঘাতপূর্ণ আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লিবিয়া, নাইজেরিয়ার সরকার এমন মামলার বিচার কাজ শেষ করা থেকে যোজন-যোজন দূরে রয়েছে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিচার এখনও শেষ হয়নি। সহস্রাব্দের প্রথম জঙ্গি হামলার বিচার দুই দশকেও শেষ করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ২০তম বার্ষিকীর ঠিক আগে মার্কিন সামরিক বিচারক এই মামলার বিচার ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেন।
গত বছর ১৮ ডিসেম্বর সামরিক আদালত জানায়, সেনা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বিচারক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর।
অন্যদিকে, নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও বাংলাদেশের বিচার বিভাগ দীর্ঘসূত্রতা ছাড়াই জঙ্গি হামলার মামলাগুলো অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে নিষ্পত্তি করতে পেরেছে।
২০০৫ সালে সারা দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলা ও ঝালকাঠিতে বিচারক হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় এসেছিল তিন বছরের মধ্যেই।
মূলত নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে ১৫ মিনিট সময়ের ব্যবধানে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ-ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা।
এসব হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ ছয়জনের বিচার শেষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ৩০ মার্চ ২০০৭ সালে।
তাদের মৃতদেহ নিজ নিজ বাড়িতে স্বজনদের কাছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ও কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় প্রতীক্ষিত রায় আসে দীর্ঘ ১৪ বছর ৫০ দিন পর।
২০০৪ সালে, তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশে চালানো ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহত হন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ ২৪ জন।
হামলার মূল লক্ষ্য ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ গোটা আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।
রাষ্ট্রের মদদে মামলার আলামত নষ্টের পাশাপাশি ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল এক যুবককে স্বীকারোক্তি আদায় করে জজ মিয়া নাটকের জন্ম দিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে সময়ক্ষেপণ করা হয়।
দীর্ঘ সময় পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলার চূড়ান্ত রায় আসে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিস চৌধুরীসহ ১৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
১২ বছর ধরে চলা বিচার কাজ সম্পন্ন হবার পর দুর্ধর্ষ জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নান ও তার দুই সহযোগীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ১২ এপ্রিল ২০১৭ সালে।
১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে হান্নানের নেতৃত্বে জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদের (হুজি) হামলায় অন্তত ৩০০-এর বেশি মানুষ প্রাণ হারান। রমনা বটমূলে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে হামলা, ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলাসহ অন্তত ১৩টি হামলার নেপথ্যে ছিল হুজি।
সফলতার সঙ্গে আরেকটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় জড়িতের বিচার শেষ করতে পেরেছে বাংলাদেশ ।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় চালানো ওই জঙ্গি হামলা ও জিম্মির ঘটনায় প্রাণ হারায় দুই পুলিশসহ ২২ জন। পরে সেনা অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।
নিহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জন ছিলেন বিদেশি নাগরিক। এই মামলার রায় আসে তিন বছরের মধ্যে।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর বহুল আলোচিত এই মামলার রায়ে রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলমসহ সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
জনগণ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে নিহতের স্বজনেরা এই রায়কে নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের বিজয় বলে প্রশংসা করেন।
বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলার মামলায় দীর্ঘসূত্রতা
গত দুই দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালানো ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার মামলাগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায়, অধিকাংশ মামলা দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলে আছে। বিচার প্রক্রিয়ায় দেখা দিয়েছে দীর্ঘসূত্রতা, দোদুল্যতা ও অনিশ্চয়তা।
১৩০ বছরের মার্কিন ফেডারেল আদালত ৯/১১-এর হামলায় দুই দশক ধরেও রায় দিতে পারেনি।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ১৯ জঙ্গি ছিনতাই করা চারটি উড়োজাহাজ নিয়ে হামলা চালায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদরদপ্তর পেন্টাগনসহ অন্তত পাঁচটি লক্ষ্যবস্তুতে। এতে নিহত হন অন্তত ৩ হাজার মানুষ।
হামলার পর দায় স্বীকার করে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয় জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দা। এটি ছিল সহস্রাব্দের প্রথম জঙ্গি হামলা। তবে এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র।
গত বছর ১৮ ডিসেম্বর জানানো হয়, সেনা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বিচারক নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর।
স্পেনের মাদ্রিদে ২০০৪ সালে ট্রেনে বোমা হামলায় জড়িত তিন জঙ্গিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় দেশটির আদালত। ইউরোপের ইতিহাসে ভয়াবহ এই হামলায় নিহত হন অন্তত ১৯১ জন।
দুঃখজনকভাবে, জঙ্গিদের মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত ওই হামলার মূল হোতাসহ তিনজনকে মুক্তি দেয়। নিহতদের স্বজনেরা এতে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিসে জঙ্গি হামলায় নিহত হন অন্তত ১৩০ জন। কনসার্টের হল, স্টেডিয়ামসহ একাধিক স্থানে চালানো এই বন্দুক হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)।
হামলার চার বছর পর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে মামলার তদন্ত শেষ হয়। এরপর সবাইকে হতাশ করে ফ্রান্সের আইনজীবী জানান, আটক ১৪ জঙ্গিসহ অভিযুক্ত ২০ জঙ্গির বিচার শুরু হবে ২০২১ সালে। তবে এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি শুনানির দিনক্ষণ।
কূটনৈতিক এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার দুই দিনের মধ্যে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে গাড়িবোমা হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। শপিং মলের কাছে সেই ভয়াবহ হামলায় নিহত হন ৩০০-এর বেশি মানুষ। সংঘাতপূর্ণ দেশটির সরকার এখনও এই হামলার বিচারের কাজ শুরু করতে পারেনি।
সন্ত্রাসী হামলার মামলার বিচার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভারতের বিচার বিভাগ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা, ২০১৬ সালের উরি হামলা।
তবে, দক্ষিণ-এশিয়ার অন্যান্য দেশ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান জঙ্গি হামলার মামলা নিষ্পত্তিতে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
জঙ্গিসংক্রান্ত মামলার সুরাহা করতে পাকিস্তান সরকারের অনীহা, মামলা নিষ্পত্তিতে ধীর গতি ও রাজনৈতিক কারণে সন্ত্রাসীদের প্রতি একধরনের ছাড় দেয়ার প্রবণতা দেশটিকে জঙ্গিদের চারণভূমিতে পরিণত করেছে।
২০১৪ সালে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী একটি আদালত মুম্বাই হামলায় জড়িত জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার শীর্ষ কমান্ডার জাকিউর রেহমান লাখভিকে জামিন দেয়ার ঘটনায় ভারতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ২০০৮ সালে মুম্বাই হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ১৬৬ জন।
প্রতিবেশী দেশের প্রতিবাদ ও স্বজনহারাদের আহজারি তোয়াক্কা না করে পরের বছর ১৫ জুলাই, লাহোরের সন্ত্রাসবিরোধী আদালত মুম্বাই হামলার মূল হোতা হাফিজ সায়ীদ ও তার সহযোগী হাফিজ মাসুদসহ তিনজনকে জামিনে মুক্তি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের করা বিশ্বব্যাপী কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের অন্যতম ছিল এই হাফিজ সায়ীদ। তার সম্পর্কে তথ্য দিতে যুক্তরাষ্ট্র ২০১২ সালে ১ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
মার্কিন সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্ল হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত চার ব্যক্তিকে চলতি বছর ২৯ জানুয়ারি মুক্তি দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। একে বিচারের নামে প্রহসন উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এই সাংবাদিকের পরিবার।
প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিকটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান ড্যানিয়েল পার্লকে ২০০২ সালে করাচি থেকে অপহরণ ও পরে তার শিরোচ্ছেদের ভিডিওচিত্র যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয় জঙ্গিরা।
হামলায় দায় স্বীকার ও পরবর্তীতে কালক্ষেপণ
হামলার পরপরই নিজেদের সক্ষমতার জানান দিতে দায় স্বীকার করে ভিডিও বার্তা, বিবৃতি দেয় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো। আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন ৯/১১-এর হামলার দুই মাস পর দায় স্বীকার করেন।
সুস্পষ্ট প্রমাণাদি থাকা সত্ত্বেও বিচার কাজে এমন দীর্ঘসূত্রতায় নিহতের স্বজনেরা হতবাক প্রকাশ করেছেন। তারা জানতে চেয়েছেন স্বীকারোক্তি দেয়ার পরও কেন কেবল অভিযুক্তদের মানবাধিকারের প্রশ্নে বিচারের দাবি কেঁদে মরছে।
একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত জঙ্গিদের জন্মগত মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত, অন্যদিকে পরাক্রমশালী দেশটির নির্বাহী বিভাগ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে জঙ্গিদের উৎস দেশে সেনা অভিযান চালিয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে।
২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত ব্রাউন ইউনিভার্সিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে চালানো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ১৭ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন ৫ লাখ ৭ হাজার বেসামরিক মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন দ্বৈতনীতিতে হতবাক প্রকাশ করেছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহতদের স্বজনেরাও। সন্ত্রাসী নির্মূলের অজুহাতে অন্য দেশে হামলা চালানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ভাবিয়েছে বিশ্বের মানবাধিকার কর্মীদের।
অন্যদিকে, তাদের দেশে বিভিন্ন কারাগারে আটক জঙ্গিদের বিচার নিষ্পত্তির বিষয়ে ফেডারেল আদালতের অনীহাও হতবাক করেছে বিশ্ববাসীকে।
স্বঘোষিত জঙ্গিদের বছরের পর বছর বিনা বিচারে আটকে রেখে আবারও বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
৯/১১-এর ওপর দেয়া মার্কিন সামরিক কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার মূল হোতা খালিদ শায়খ মোহাম্মদসহ আরও চারজন ২০০৬ সালের পর বিনা বিচারে গুয়ান্তানামো বে-তে আটক রয়েছেন।
৯/১১-এর পরবর্তী সময়ে ‘শত্রু যোদ্ধা’দের আটক রাখতে কিউবায় অবস্থিত মার্কিন সেনাঘাঁটিতে অবস্থিত এই কারাগারটিকে অবিচারের প্রতীক, নির্যাতন আর আইনের শাসনের পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করেছে মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা মার্কিন প্রতিষ্ঠান আমেরিকান সিভিল লিবারটিস ইউনিয়ন।
চাঞ্চল্যকর মামলা বিশেষত জঙ্গি হামলার ঘটনায় দীর্ঘসূত্রতাকে এড়িয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবমুক্ত বিচারিক রায় একটি দেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পরিচয় বহন করে। একই সঙ্গে, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার বিচারে ধীর গতি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রযন্ত্রের অনীহার পাশাপাশি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জেল হত্যা, বিনা বিচারে দীর্ঘ কারাভোগ এমন সব অপ্রত্যাশিত অপরাধ ও নৈরাজ্যকে উসকে দেয়।
রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, গুলশান ক্যাফে হামলার মতো চ্যালেঞ্জিং জঙ্গি হামলা মামলার গ্রহণযোগ্য বিচারিক নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক দক্ষতা বিশ্বে উজ্জল হয়েছে। এমন বিচারিক রায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো-টলারেন্স নীতির বাস্তব প্রকাশ।
সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এমন দৃষ্টান্তমূলক রায় জঙ্গিদের কাছে সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেয়।
এই ধরনের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মামলা নিষ্পত্তির বিষয় সরকারের সদিচ্ছা ও বিচারব্যবস্থার সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো সন্ত্রাসীদের বিচারব্যবস্থার আওতায় না এনে হামলার ঘটনাকে পুঁজি করে অন্য দেশে সামরিক অভিযান চালিয়ে হাজারো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে।