বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর লগ্নে আল-জাজিরার নীলনকশা

  •    
  • ১৬ মার্চ, ২০২১ ১৭:৪২

আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কিংবা বিরোধী দলে যখনই যে জায়গায় থেকেছে তাদেরকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই পথ চলতে হয়েছে। অতীতের অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই দলটি আজ মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের ষড়যন্ত্র হয়তো চলমান থাকবে। কুচক্রী মহলের কখনও জনগণের ভোটের প্রতি আস্থা ছিল না, ষড়যন্ত্রই যাদের পুঁজি, তারা তো আর বসে থাকবে না।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর যখন শুরু হলো, এর একমাস যেতে না যেতেই একটি কুচক্রী মহলের নোংরা ষড়যন্ত্র জাতি দেখতে পেয়ে হতভম্ভ। এ মহলটি জানান দিল তারা থেমে নেই। চলমান মুজিববর্ষ, মহান ভাষা শহিদদের স্মরণের মাস- এসব চেতনা ও অনুভূতিকে তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এটাই প্রমাণ করল, তারা তাদের অতীত কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসেনি। হিংস্রতা, পরাজয়ের প্রতিশোধপরায়ণতা, দেশ ও স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান থেকে তারা সরে আসেনি।

‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে আল-জাজিরা যে বিতর্কিত প্রামাণ্য চিত্রটি গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রচার করেছে সেটিই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম কোনো ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ নয়। এর আগেও একাধিকবার বাংলাদেশকে নিয়ে এ ধরনের বিতর্কিত সংবাদ প্রকাশের ইতিহাস আল-জাজিরার আছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের সময়ও ষড়যন্ত্রকারীরা এই গণমাধ্যমটি ব্যবহার করে একাধিক বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিচার কার্যক্রমকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে।

আল-জাজিরা ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রামাণ্য চিত্রটি প্রচার করলেও এটি যে তারা তৈরি করেনি, সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়েই আল-জাজিরা শুধু প্রচার করেছে।

লন্ডনে পলাতক দন্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়া গংরা যুদ্ধাপরাধী ব্যক্তিদের সন্তানদেরকে নিয়ে বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করতেই আল-জাজিরাকে দিয়ে ধারাবাহিকভাবে বিভ্রান্তমূলক অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাবের প্রশংসিত কার্যক্রমকে বিতর্কিত করতে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুম ও খুনের কল্পকাহিনি তৈরি করে অপপ্রচার করেছে। এখন দেশের গর্ব সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতেই এই প্রতিবেদন। প্রামাণ্য চিত্রটিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোহম্মদপুরের আহমেদ পরিবারের রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে যে ড্রামা তৈরি করা হয়েছে সেখানে মূলত সেনাবাহিনী প্রধানকেই টার্গেট করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে এ ধরনের ধৃষ্টতা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।

আল-জাজিরা বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরির জন্য একাধিক প্রপাগান্ডা চালিয়েছে। বিশ্বের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে মুসলিম নেতাদের ওপর প্রহসন বলে উপস্থাপন করেছে। একাধিক প্রতিবেদনে ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকার সাফাই গাওয়া হয়েছে। নরঘাতক গোলাম আজম, নিজামী, কাদের মোল্লা, মীর কাশেম, কামারুজ্জামানদেরকে ইসলামি চিন্তবিদ সাজিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করতে নানাবিধ নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করেছে। তখন অনেক ক্ষেত্রেই গণমাধ্যমটিকে জামায়াতে ইসলামির মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করেছে।

২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর ‘দ্য পলিটিকালাইজেশন অব বাংলাদেশ’স ওয়ার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল’ নামে এক প্রতিবেদনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ঘৃণ্য অপচেষ্টা চালিয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়া, হেফাজতের আন্দোলন, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ প্রতিটি সময়ই গণমাধ্যমটি বিতর্কিত নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।

২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে শত শত লোক মারা গেছে বলে মিথ্যা গুজব রটিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার মদত দিয়েছিল । আল জাজিরা শুধু যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই নেতিবাচক খবর প্রকাশ করছে তা কিন্তু নয়। মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশের সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে সেসব দেশের আইনি রোষানলে পড়ে, দেশগুলোতে অনু্ষ্ঠানও সম্প্রচার বন্ধ হয়েছে। মিশরের উগ্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বার বার মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছে। ভারতবিরোধী সংবাদ ও তথ্য উপস্থাপনের কারণে ২০১৫ সালে দেশটির সরকার সেদেশে গণমাধ্যমটির সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। ২০০৭ সালের ৭ জুলাই লন্ডনে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা একমাত্র আল-জাজিরাতেই প্রচার করে প্রমাণ করেছিল, তাদের সঙ্গে জঙ্গীদের যোগাযোগ ছিল । পশ্চিমা দেশগুলো তো আল-জাজিরাকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উৎসাহদাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রামণ্যচিত্রের প্রধান উপস্থাপক ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গমেন, যিনি ড. কামাল হোসেনের জামাতা। এই বিতর্কিত ব্যক্তিটি শ্বশুরের প্রভাবে এদেশে এসে বারংবার দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শহিদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত ও দণ্ডিত হয়েছেন। এই ব্যক্তির সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু পতিত কুলাঙ্গার। নেত্র নিউজ এডিটর ইন চিফ হলুদ সাংবাদিক তাসনিম খলিল, পর্নোগ্রাফি মামলায় পলাতক আসামি কনক সারোয়ার, পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত গুজব রটনাকারী তথাকথিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ও বরখাস্তকৃত দুই সেনাসদস্য শহীদ উদ্দিন খান ও দেলোয়ার হোসেন। প্রামাণ্য চিত্রটিতে যার বরাতে অভিযোগ উঠেছে তার নাম সামিউল আলম সামি। যিনি ইউরোপ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের অন্যতম সহযোগী ও ওয়ান ইলেভেনে মোস্ট ওয়ানটেড দুর্নীতিবাজদের অন্যতম। এসব লোকদের তালিকা দেখে কারো বুঝতে বাকি থাকে না নেপথ্যের ব্যক্তিটি কে? কে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি ও প্রচার করেছে। যে পরিমাণ বিপুল অর্থ খরচ করে এই ড্রামাটি তৈরি ও প্রচার করা হয়েছে, সেই অর্থের জোগানদাতাদের উৎস সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। এত টাকা ওরা কোথায় পায়?

আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় কিংবা বিরোধী দলে যখনই যে জায়গায় থেকেছে তাদেরকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই পথ চলতে হয়েছে। অতীতের অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই দলটি আজ মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের ষড়যন্ত্র হয়তো চলমান থাকবে। কুচক্রী মহলের কখনও জনগণের ভোটের প্রতি আস্থা ছিল না, ষড়যন্ত্রই যাদের পুঁজি, তারা তো আর বসে থাকবে না।

বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদনকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করা হয়েছে। এটি যে বিএনপির নির্বাসিত নেতা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক জিয়ার মস্তিস্কপ্রসূত নীলনকশা, সেটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। কিছু দণ্ডিত অপরাধী ও উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী কল্পিত স্বপ্নপূরণের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে প্রপাগান্ডা চালিয়ে সরকারের ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। তাদের সে স্বপ্ন পূরণ হবে না, স্বপ্নই থেকে যাবে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় না, হয়তো কিছু সময়ের জন্য বিভ্রান্ত করা যায়।

প্রতিবেদনটি যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবে এটি মিথ্যার বেসাতিতে ভরা, এডিটিং কাটিং করা, বিভ্রান্তিকর কল্পকাহিনি। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য সরকার ও সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন। দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সারা বিশ্বে প্রশংসিত ও সমাদৃত। এটাই পতিত পরাজিত শক্তিরা মেনে নিতে পারে না। এজন্য তারা দেশবিরোধী চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ দেশরত্ন শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে, থাকবে। কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। সত্যের জয় হবেই।

লেখক: সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা

haldertapas80@gmail.com

এ বিভাগের আরো খবর