বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বপ্নপূরণের পথে দেশ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

  •    
  • ১ মার্চ, ২০২১ ১৭:১৪

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর কুচক্রী মহল স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ইতিহাস বিকৃতি, জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা এমনকি ১৯৭৫ সালে সপরিবারে হত্যার বিচার আইন করে বন্ধ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সাম্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আমাদের যৌথ স্বপ্ন ছিঁড়ে দিয়েছিল মুষ্টিমেয় স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানের পরাজিত শত্রু, গুটিকতক উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তার নৃশংসতায়।

শুরু হলো স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক মার্চ। ৫০ বছর আগে এমনই এক মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে পাকিস্তানের ২৩ বছরের জেল, জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন, শোষণ ও নির্যাতনের ইতিহাস বর্ণনা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলন। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ঘোষণা করেছিলেন: ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। তিনি বলেছিলেন: ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল।’

এরপর এলো ২৫ মার্চ। ভয়াবহ কালরাত্রি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে পাকিস্তানি সামরিক শাসক তার বর্বর বাহিনী নিয়ে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ঢাকাসহ সারা দেশে গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২.২০ মি. অর্থাৎ ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের স্বাদ লাভ করে স্বাধীন এই বাংলাদেশ।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই শুভক্ষণে খুব স্বাভাবিকভাবেই পেছনে চোখ যায়। দু শ বছর ব্রিটিশদের এবং ২৪ বছর পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণকে আমরা কখনওই ভুলতে পারি না। ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত, সাহায্যনির্ভর, ঋণনির্ভর স্বাধীন দেশটি আর্থিক উপার্জনের কৌশল বাড়িয়ে আজ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়েছে। জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে।

কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশ জাতীয় আয়ের প্রধান উৎসকে কৃষি থেকে তৈরি পোশাক আর জনশক্তিতে রূপান্তর ঘটিয়ে ব্যাপক উন্নয়নের দ্বার খুলেছে। বহুগুণে বেড়েছে মাথাপিছু আয়। ১৯৭১ সালের দেশের বার্ষিক রপ্তানি বাড়িয়ে আকাশছোঁয়া করেছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা ও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। স্বাধীনতার পাঁচ দশকে শিক্ষা ক্ষেত্রে নানা সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশে প্রাথমিক শিক্ষার হার বেড়েছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, সাক্ষরতার হার বেড়েছে, নারী শিক্ষার হার বেড়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক হয়েছে, ঝরে পড়ার হার কমেছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বেড়েছে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ বেড়েছে প্রকৌশল, কৃষি, মেডিক্যাল, বস্ত্র, চামড়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে।

বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় পেছন ফিরে তাকালে আমাদের স্বস্তির অনেক কারণ পাওয়া যায়। বিগত ৫০ বছরে আমাদের অর্জন অসামান্য। এখন বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সম্মানজনক দেশ ও রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আমাদের আরও গভীর মনোযোগ দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে সেটিও বলার অপেক্ষা রাখে না।

১৯৭১ থেকে ২০২১। বাংলাদেশের এ ৫০ বছরকে নানা সূচকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইতিবাচক দিক খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৭০ সালে স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল শুধু ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে এসে তা বহুগুণে বেড়েছে। ইতিমধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির ৫ দিনব্যাপী বৈঠকের সমাপনী দিনে এলডিসি থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণের সুপারিশ করা হয়। ফলে জাতিসংঘের বিচারে চূড়ান্তভাবে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

১৯৭২-১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি, ২০১৮-২০১৯-এ ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি, ২০১৯-২০২০-এ ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি এবং ২০২০-২০২১ সালের বাজেট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ১৯৭২-১৯৭৩ সালের তুলনায় বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৭২২ গুণ।

সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আমাদের ৫০ বছরের অগ্রগতি স্বস্তিদায়ক। যেমন সার্বিক সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য তথা শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু, গড় আয়ু, ইপিআই, নারীর ক্ষমতায়ন, জন্ম ও মৃত্যুহার হ্রাস ইত্যাদিতে অগ্রগতির উল্লেখ করা যেতে পারে। দুর্নীতির ধারণা সূচকে আমরা গত ২০ বছরের তুলনায় ভালো করেছি বলা যায়। একসময় দুর্নীতিগ্রস্ততায় পরপর চারবার ১ নম্বরে (২০০১-২০০৪) থাকার পর যেহেতু দেশের সংখ্যা বেড়েছে, তাই স্কোরের বড় উন্নয়ন না করেও আমাদের অবস্থান ওপরে উঠে আসে। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক পরিচালিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নিচের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম অবস্থানে আছে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর কুচক্রী মহল স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ইতিহাস বিকৃতি, জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা এমনকি ১৯৭৫ সালে সপরিবারে হত্যার বিচার আইন করে বন্ধ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সাম্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আমাদের যৌথ স্বপ্ন ছিঁড়ে দিয়েছিল মুষ্টিমেয় স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানের পরাজিত শত্রু, গুটিকতক উচ্চাভিলাষী সেনা কর্মকর্তার নৃশংসতায়। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাসে এসে এক কথায় বলা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দৃশ্যমান অর্জনও করেছে।

বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল ও সম্ভাবনার অপার বিস্ময়কর একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলাম; আর এখন বাংলাদেশই হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য ও নির্ভয়ে জীবনযাপনের জোগানদাতা। ইতিমধ্যেই নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের উন্নততর জীবনযাপনের মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করে বর্তমান সরকার আরেকটি বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। বিশ্বের আর কোনো দেশে এভাবে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর আশ্রয়ের নজির যেমন নেই, তেমনি দীর্ঘ সময়ে অবস্থানের নজির নেই।

পদ্মা সেতু নির্মাণ বর্তমান সরকারের আরেকটি বড় সাফল্য। এ সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ সহজতর হবে। ঢাকা শহরে যানজট নিরসনের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকায় প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল স্থাপন করার যুগান্তকারী পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয় সত্যি। তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ, প্রসার, ব্যবহারে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে।

বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশে বিচরণ করছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। স্বাধীনতা-পরবর্তী কল্পিত ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’র দেশ বাংলাদেশ, এখন ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যচাহিদা পূরণ করছে। উপরন্তু সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়মিত তিন বেলা খাওয়ানোর পরও খাদ্যে উদ্বৃত্ত রয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন সব অর্জন আমাদের জন্য স্বপ্নময় প্রাপ্তি।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

এ বিভাগের আরো খবর