বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উন্নয়নশীলে পদার্পণ: গৌরব ও আত্মমর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ

  •    
  • ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৮:২০

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলাদেশের আত্মমর্যদা। এখন কেউ আর বাংলাদেশকে অবজ্ঞার চোখে দেখতে পারবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। বিদেশি অনেক বড় বড় কোম্পানি বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। যার ফলে সংগত কারণেই ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব কমে যাবে। রাজস্ব আয় অনেক গুণ বেড়ে যাবে। সরকারের বিনিয়োগও বাড়বে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাবে। ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার কারণে বিদেশি সংস্থাগুলোর অর্থায়নের প্রবাহ বাড়বে। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। খুব দ্রুত প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ সূচকসহ সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নতি হবে।

বাংলাদেশ একটি মাহেন্দ্রক্ষণ পার করছে। একদিকে হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, অপরদিকে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। এমন একটি সময় বাংলাদেশের জনগণের জন্য এসেছে আত্মমর্যাদার বিশ্ব স্বীকৃতি। জাতিসংঘ কর্তৃক এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের আপামর জনগণের মনোবলকে নিঃসন্দেহে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছিল স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা, ঠিক ৪৩ বছর পর তারই সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) চূড়ান্ত সুপারিশে বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে এলো। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য একটি দেশের মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার হতে হয়, সেখানে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকের মানদণ্ড যেখানে ধরা হয় ৬৬ পয়েন্ট, সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬-এর বেশি হলে স্বল্পোন্নত এবং ৩২ পয়েন্টে নামলে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করবে বলে ধরা হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২।

বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ করোনা মহামারিতে সারা বিশ্বের অর্থনীতিই বিপর্যস্ত, বাংলাদেশেও সেই ঢেউ কিছুটা হলেও চলছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত জানুয়ারিতে জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছিল যে, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতিমূলক সময়সীমা বাড়িয়ে তিন বছরের স্থলে যেন পাঁচ বছর করা হয়, সেটিও গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। সেই হিসেবে ২০২৬ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ। কোনো দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার পর তিন বছর পর্যন্ত বাণিজ্য-সুবিধা অব্যাহত থাকে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক নিয়মে ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কাছে আবেদন করে রেখেছে যে, বৈশ্বিক করোনা মহামারি দীর্ঘায়িত হলে পরবর্তীকালে মহামারি উন্নতি হওয়ার পরও যাতে বাণিজ্য-সুবিধাগুলো ১২ বছর পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হয়।

দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের এই আবেদনও অবশ্যই বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বিবেচনা করবে। এখানে হতাশাবাদীদের চিন্তার কোনো কারণ নেই।

মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অর্থনীতির ভঙ্গুরতা এই তিনটি সূচকের মধ্যে অন্তত দুটি সূচকে মানদণ্ড পূরণ করতে পারলে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়া যায়। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ ২০১৮ এবং ২০২১ সালে তিনটি সূচকের সবগুলো পূরণ করেছে, যার কারণে উত্তরণের সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার গৌরব এসেছে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘ সময় বেঁধে দিয়েছিল যে, পরপর তিন বছর সময় অর্থাৎ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সূচক মানদণ্ড ধরে রাখতে পারলে তাহলেই কেবল সুপারিশপ্রাপ্ত হবে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্প-কারখানা সচল রাখা, মেগা প্রকল্পগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন সচল রাখাসহ অর্থনীতির সূচকগুলোর মজবুত অবস্থানের কারণে সকল প্রকার অনিশ্চয়তার মধ্যেও বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ পেয়েছে।

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা। এখন কেউ আর বাংলাদেশকে অবজ্ঞার চোখে দেখতে পারবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। বিদেশি অনেক বড় বড় কোম্পানি বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। যার ফলে সংগত কারণেই ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব কমে যাবে। রাজস্ব আয় অনেক গুণ বেড়ে যাবে। সরকারের বিনিয়োগও বাড়বে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাবে। ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার কারণে বিদেশি সংস্থাগুলোর অর্থায়নের প্রবাহ বাড়বে। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। খুব দ্রুত প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ সূচকসহ সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নতি হবে।

কিছু কথিত পণ্ডিত আছেন, যারা কখনও বাংলাদেশের ভালো চান না, ভালো দেখতে পান না। বিশেষ করে দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাফল্যের সঙ্গে ‘কিন্তু’ জুড়ে দিয়ে তারা বলতে শুরু করেছেন, এর কারণে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা হারাবে। তৈরি পোশাকশিল্প ঝুঁকিতে পড়বে। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু আমরা শুল্ক দিয়েই পোশাক রপ্তানি করি, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজারই যুক্তরাষ্ট্র। ফলে শুল্ক হারালেই বাজার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। ঝুঁকিমুক্ত হওয়ার সক্ষমতা এর মধ্যেই বাংলাদেশ অর্জন করে ফেলবে। তারা আবার বলছে, বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থা থেকে সহজ শর্তে ঋণ ও সাহায্য পাওয়া যাবে না। বিএনপি সরকারের সময় একজন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশ উন্নত হলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না। সাহায্য পাওয়ার জন্য ওরা গরিব থাকতে চায়, এটাই ওদের চিন্তা-চেতনা। কিছু জ্ঞানপাপী আছেন যারা বিদেশিদের পদলেহন করে বেঁচে থাকেন। তাদের হয়তো সাহায্য-সহযোগিতা কমবে, আয় উপার্জন কমবে। এরা মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভিক্ষুক জাতির কোনো মর্যাদা থাকে না। সে লক্ষ্য পূরণে তারই সুযোগ্য কন্যা দেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। একসময়ের আমদানিকারকের তকমা পাওয়া দেশটি খাদ্য রপ্তানিরও সক্ষমতা অর্জন করেছে। ধান, মাছ-মাংস, দুধ, ডিম, ফল, সবজিসহ সকল খাদ্য উৎপাদনে সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

২০০৮ সালে যেখানে বিদ্যুতের সুবিধাভোগী মানুষ ছিল ৪৭ শতাংশ সেখানে বর্তমানে গিয়ে দাঁড়িয়েছ ৯৯ শতাংশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গড় আয়ু, শিশু ও মাতৃমৃত্যুহারসহ প্রতিটি সূচকেই ঈর্ষণীয় সাফল্যে বিশ্ব নেতৃত্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক ও আইটি ভিলেজসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের স্বপ্নপূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

করোনা মহামারি, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেকের সংশয় ছিল বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কি না। সকল নৈরাশ্যবাদীর আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দাঁড়াল বাংলাদেশ। মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মানবসম্পদ সূচকের অগ্রগতিই প্রমাণ করে বাংলাদেশ আর ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’ নয়, এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার। এই অর্জন বিশ্বমঞ্চে উন্নয়নের জন্য রোল মডেল হিসেবে খ্যাতি পাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।

বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন সোনার বাংলা গড়ার, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যার সঠিক নেতৃত্বের কারণেই আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে উন্নয়নের এক নতুন অভিযাত্রা শুরু হলো। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের জনগণের কাছে এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে? আজ গৌরব ও মর্যাদার আসনে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। আর এ অর্জনের একমাত্র রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তিনি স্বপ্ন দেখেন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার।

লক্ষ্যমাত্রা ২০৪১ সালের আগেই বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বেই উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ।

লেখক: সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।

এ বিভাগের আরো খবর