বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোভিড পরবর্তী অর্থনীতি

  •    
  • ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২২:৩৮

ব্যবসা-বাণিজ্যে চীন হয়তো বাংলাদেশের দিকে আরও বেশি ঝুঁকবে। এমনকি তারা ভারতের সঙ্গে তাদের সামরিক সমস্যা মিটিয়ে নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে আবারও বেশি ভারতে প্রবেশ করবে।

কোভিড পরবর্তী বিশ্বের বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলো কোন দিকে যাবে, তার একটা ঈঙ্গিত ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এশিয়ার সব থেকে বড় অর্থনীতি চীন অর্থনৈতিক এলাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও সামরিক আধিপত্যর দিকে নজর দেবে। বেশ কিছুটা সময় তাদের নষ্ট হবে মিয়ানমারকে নিয়ে। কারণ, মিয়ানমারে সু চির সরকার তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের যতটা সুবিধা দিয়েছিল, এই সামরিক সরকার ততটা সুবিধা অন্তত আগামী এক বছরে দিতে পারবে না। বরং আরো বেশি সময় হতে পারে সেটা। কারণ, মিয়ানমারের সার্বিক অবস্থা যা চলছে, তাতে সেদেশের জনগণকে আগামী এক বা দুই বছরের মধ্যে সামরিক সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে মনে হয় না। বরং সেখানে চীনবিরোধী মনোভাব আরও বাড়তে পারে। এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে চীন হয়তো বাংলাদেশের দিকে আরও বেশি ঝুঁকবে। এমনকি তারা ভারতের সঙ্গে তাদের সামরিক সমস্যা মিটিয়ে নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে আবারও বেশি ভারতে প্রবেশ করবে।

অন্যদিকে পৃথিবীর বড় দেশ আমেরিকায় বাইডেন প্রশাসন ইতোমধ্যে তার মধ্যপ্রাচ্য নীতি অনেকখানি পরিবর্তন করেছে। তারা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে আসতে চাচ্ছে। ওবামা ও ট্রাম্পের আমলের মধ্যপ্রাচ্য নীতি থেকে সরে আসারই ঈঙ্গিত দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য হয়তো আগের থেকে অনেকখানি শান্ত হতে পারে। পাশাপাশি কোভিডপরবর্তী সময়ে সব দেশই নতুন করে তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চাইলে বিশ্বে আবার তেলের দাম একটু হলেও বাড়তে পারে। তাতে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি হয়তো খানিকটা চাঙ্গা হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি কিছুটা চাঙ্গা হলে সেখানে আবার বাংলাদেশের শ্রমিকদের কাজের সুযোগ বাড়তে পারে।

অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্য ও চীনের অর্থনীতির সুযোগ কোভিডপরবর্তী বাংলাদেশ যে বেশ কিছুটা পাবে, তাতে কোনো সন্দেহ থাকছে না। তবে ইউরোপীয় অর্থনীতি আগের অবস্থায় যেতে তাদের কিছুটা সময় লাগবে। এক দুই বছরে যেতে পারবে না। কারণ, কোভিডে তারাই সব থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছে। এ কারণে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদার পরিমাণ কোভিডের আগের অবস্থায় যেতে সময় লাগবে। তেমনি ইউরোপের শ্রম বাজারেও বাংলাদেশিদের সুযোগ কিছুটা হলেও সংকুচিত হতে পারে।

এর পরে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি। দক্ষিণ এশিয়ায় কোভিডে সব থেকে কম ক্ষতি হয়েছে ভুটানের। তবে ভুটানের অর্থনীতি এখনও অনেক বেশি কৃষিনির্ভর। ভুটানের এই কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে বাংলাদেশ বেশ সুবিধা পায়। কোভিড পরবর্তীতে ভুটানের ও নেপালের অর্থনীতি থেকেও বাংলাদেশকে সুবিধা পেতে হবে। আর এই সুযোগের জন্যে সব থেকে বড় দরকার বাংলাদেশ ও ভারতের ভেতরকার নৌ এবং স্থল ট্রানজিট। এই ট্রানজিটগুলো যত সাবলীল ও সুষ্ঠু হবে, ততই নেপাল ও ভুটানের অর্থনীতি থেকে বাংলাদেশ সুবিধা পেতে পারবে।

অন্যদিকে মিয়ানমারের অশান্ত অবস্থার কারণে যদি চীন আরও বেশি আকারে বাংলাদেশ ও ভারতে তাদের অর্থনীতির অনেক কিছু স্থানান্তর করে, তখন বাংলাদেশ ও ভারতকে অনেক কিছু একযোগে করতে হবে। এবং অনেক খাত এই দুই দেশের মধ্যে রয়েছে, যেখানে একযোগে কাজ করলে উভয় দেশই অর্থনীতিতে লাভবান হবে।

চীন থেকে ভারত ও বাংলাদেশ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভালো করবে এই কোভিডপরবর্তী অর্থনীতিতে। এ কারণে এই দুই দেশের বেসরকারি খাত আরও বেশি শক্তিশালী হবে। গত সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি তার দেয়া ভাষণে তার দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বেসরকারি খাতকেই উল্লেখ করেছেন। এবং সেভাবেই তার সরকার কাজ করবে বলে জানিয়েছেন। বাস্তবে ষাটের দশক থেকে উন্নয়নশীল গণতান্ত্রিক দেশগুলো একটা ডিলেমায় ছিল। এই ডিলেমায় ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই ভুগেছে। অর্থাৎ দেশের কোন খাতটি বড় হবে? সরকারি খাত না বেসরকারি খাত? এক সময়ে দুই দেশেরই চেষ্টা ছিল, সরকারি খাতকে বড় করা। তারপরে সামাজতান্ত্রিক বিশ্বের পতনের পরে ধীরে ধীরে বেসরকারি খাত বড় হয়েছে ঠিকই, তবে বেসকারি খাতের স্বভাব এখনও বেসরকারি হয়নি। বাংলাদেশ ও ভারত, উভয় দেশের বেসরকারি খাত অনেক বেশি ক্ষেত্রে সরকারের ওপর নির্ভরশীল। আর যে কারণে দুর্নীতিও অনেক বেশি।

কোভিড-উত্তর পৃথিবীতে প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়ের আধিপত্য বাড়বে বেশি। এবং সব ব্যবসা প্রযুক্তিনির্ভর হবে। প্রযুক্তি স্বাভাবিকভাবেই দুর্নীতি কমিয়ে আনবে। এবং সরকারের আধিপত্য করার সুযোগও কমিয়ে দেবে। তাই স্বাভাবিকই দেখা যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের অনেকটা স্বচ্ছ বেসরকারি খাতের মতোই বেসরকারি খাত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে শুরু হবে। এমনকি রাশিয়ার মতো একটি অস্বচ্ছ অর্থনীতির দেশেও যদি বেশ কিছুটা স্বচ্ছতা আসে, তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

তাই স্বাভাবিকই বলা যায়, কোভিড-উত্তর বাংলাদেশের বেসরকারি খাত ধীরে ধীরে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করবে। সরকার ও কিছু দীর্ঘদিনের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীরা এটাকে টেনে ধরে রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু শেষ অবধি পারবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো হবে, সরকার যদি এই সত্যটি উপলব্দি করে যে, কোভিড-উত্তর নতুন পৃথিবীতে বাংলাদেশে নতুন বেসরকারি খাত গড়ে তোলা দরকার। তাছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য যেগুলো শুরু হবে, তার বড় অংশের নেতৃত্বে থাকবে তরুণ ব্যবসায়ীরা। এই তরুণেরা যদি সত্যি সত্যি তাদের সেক্টরগুলো গড়ে তোলায় মনোযোগী হয়, তখন সরকারও তাদের পুরনো অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসবে।

আর বিদেশি বিনিয়োগ যখন বেসরকারি খাতে হবে, তখন সেখানে ঘুষ দুর্নীতির সুযোগ কমে যাবে। সরকারকে শুধু তাদের মুঠো আলগা করতে হবে বেসরকারি খাতের জন্যে। দীর্ঘদিনের যে লাগাম টেনে ধরার অভ্যাস, আমলাতন্ত্রের যে খবরদারি করার অভ্যাস, এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবে তারা বের হয়ে না আসতে চাইলেও পরিস্থিতি ও পরিবেশ তাদেরকে নতুন মানুষ হতে বাধ্য করবে। আবার অনেকে হবেও।

অন্যদিকে বেসরকারি খাত যত বড় হবে, ততোই নানাভাবে সরকারের স্টেইক কমে যাবে। রাজনীতির চরিত্রও তখন বদলে যাবে। রাজনীতিতেও তখন স্বাভাবিকই নতুন যুগের শুরু হবে।

এসব মিলে তাই স্বাভাবিক ধারণা করা যায়, কোভিড-উত্তর বেসরকারি খাতের এবং প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসার আধিপত্যের একটা যুগ আসতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। এবং এই যুগ বা ট্রেন মিস করার কোনো সুযোগ বাংলাদেশের নেই। এটাকে গ্রহণ করতেই হবে।

এ বিভাগের আরো খবর