ভাষা আন্দোলন, ভাষাশহিদ, ভাষাসংগ্রামীদের তত্ত্বতালাশ যতটুকুই করা হোক না কেন, বিধাতা যেন সারা বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ফেব্রুয়ারির ২৮-২৯ দিনকেই নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। অন্তত আমাদের আচরণে তেমন ধারণাই জন্মে।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি-জুড়ে আমরা ঢাকা-পাবনা তথা দেশজুড়ে বইমেলার আয়োজন করি। কোথাও মাসজুড়ে আবার কোথাওবা দশ, সাত বা তিন দিনের জন্যে। বিদেশে পর্যন্ত এমন আয়োজনের কমতি নেই।
কিন্তু কমতি অবশ্যই আছে ভাষাশহিদ ও ভাষাসৈনিকদের তত্ত্বতালাশ নেওয়ার, ভাষা আন্দোলনের অবিকৃত ইতিহাস আলোচনার-পর্যালোচনার, ভাষাসংগ্রামীদের অবদানের ঐতিহাসিক কাহিনিগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেয়ার এবং তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে ভাষাসংগ্রামীদের সম্মানিত করার ক্ষেত্রে। এ রোগ ও পীড়া থেকে কত দিনে মুক্তি পাওয়া যাবে, তা বুঝে ওঠা কঠিন।
যে ঘাটতিগুলোর কথা বললাম, সে ঘাটতি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, সেহেতু তা আমাদের অনেকটা যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে। তাই এগুলো নিয়ে আমাদের কারও তেমন একটা মাথাব্যথা নেই। রাষ্ট্রের তো নেই-ই। তবে রাষ্ট্রের কর্ণধাররা তাদের বক্তব্য-ভাষণে ভাষাসংগ্রামী ও শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদন, ভাষার উন্নয়ন এবং জনগণের ইতিহাস নিয়ে তাদের মতো করে আলোচনা করে থাকেন। সেই আলোচনায় ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব, এর তাৎপর্য, তার লক্ষ্য ও আদর্শ- তেমন একটা স্থান পায় না। ইতিহাসের বাস্তবতাও খুব একটা উঠে আসে না।
ভাষা আন্দোলন কেবলই মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা, ভাষা আন্দোলন না হলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্ভব হতো না- এমনতরো কথাবার্তা অবশ্য ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে সবাই বলে থাকি। কিন্তু তেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের যারা নির্মাতা, যারা সংগঠক, যারা অংশগ্রহণকারী তাদের খোঁজখবর রাখার উদ্যোগ তেমন একটা চোখেই পড়ে না।
মাত্র দিন কয়েক আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেখছিলাম ভাষাশহিদ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী। এরা তো শহিদ হয়েছিলেন বায়ান্ন সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বা রাত্রে। কিন্তু এদের পরিবারদের আর্থিক সাহায্য দিলেন বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় এসে ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর। সেই আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল, ওই তথ্যমতে, পরিবারপ্রতি ২০০০ টাকা করে। আজ হয়তো ওই ২ হাজারের দাম ২০ হাজার টাকার সমতুল্য। কিন্তু আর কি দেয়া হয়েছে পরবর্তীকালে, এই ৪৭ বছরে? হয়ে থাকলে খুব ভালো, নতুবা নিন্দা করার ভাষা নেই।
শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত
ইতিহাস বলে, শহিদ ধীরেন দত্তই প্রথম পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য হিসেবে ১৯৪৮ সালের ফেরুয়ারিতে করাচি অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরেন। অধিবেশনটি বসেছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮। কিন্তু ধীরেন দত্ত ওই প্রস্তাব উত্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে সংসদে হইচই শুরু হয়। সরকারি প্রস্তাব ছিল পাকিস্তানির রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। কিন্তু তার পাশাপাশি, পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ বাঙালি এবং তাদের মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি জানাতে শুধু অস্বীকৃতিই জানানো হয়নি, প্রস্তাবক ধীরেন দত্তকে ‘ভারতের দালাল’, ‘পাকিস্তানের দুশমন’ প্রভৃতি আখ্যায় আখ্যায়িত করলেন পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানসহ মুসলিম লীগের অপরাপর বাঙালি-অবাঙালি নেতারা।
ওই অধিবেশনেই ২৯ মার্চে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়ে আনীত বিল পাস করা হয়। প্রতিবাদ করেন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত একক কণ্ঠে।
অতঃপর দ্রুত তিনি ফিরে আসেন পূর্ববাংলায়। ঢাকা বিমানবন্দরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্ররা তাকে মাল্যভূষিত করেন, সশ্রদ্ধ সংবর্ধনা জানান। ভাষা আন্দোলন অতঃপর জনতার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া শুরু করে ছাত্রসমাজ। যার শুরু ১৯৪৮-এ। অবশ্যই এই বিশাল তাৎপর্যময় আন্দোলনের সূচনা করেন ধীরেন দত্ত। ফলে তাকেই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রথম দাবিদার ও অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব কিন্তু এ ক্ষেত্রে যদি দলবাজি-নেতাবাজি-ব্যক্তিবাদ প্রভৃতি এনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়, তবে নিশ্চিভাবেই এই বীরের অবমূল্যায়ন করা হবে।
বঙ্গবন্ধু ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে মর্যাদা দিয়েছেন অকুণ্ঠচিত্তে। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবি জোরেশোরে উত্থাপন করে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেন।
সেই ধীরেন দত্ত কুমিল্লার সন্তান এবং কংগ্রেস নেতা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও দেশত্যাগ তো দূরের কথা, নিজের বাড়ি ছেড়েও যাননি। বলতেন, ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গদপি গরীয়সী’ -অর্থাৎ জননী ও জন্মভূমি স্বর্গাপেক্ষা গৌরবের। তাই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তাঁকে জীবন দিতে হলো- তিনি শহিদ হলেন দেশ মাতৃকাকে ভালোবেসে।
দুঃসংবাদ : ধীরেন দত্তের বাড়ি
সেই ধীরেন দত্তের কুমিল্লার গ্রামের বাড়িটি দেখাশোনার আজ আর কেউ নেই। বাড়িটি কার্যত জরাজীর্ণ। এর ছবিটি দিন কয়েক আগে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে সরকার ‘ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র’ হিসেবে ওই বাড়িটিকে গড়ে তুলে ধীরেন দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখাতে ও তাকে স্মরণীয় করে রাখতে পারে।
হারিয়ে যাওয়া নেতারা
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে ধীরে ধীরে সবার অলক্ষ্যেই অনেক নেতা হারিয়ে যাচ্ছেন। স্মৃতি হাতড়ে যাদের নাম পাচ্ছি তারা হলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, অলি আহাদ, গাজীউল হক, আবদুল মতিন, ইমাদুল্লাহ, হাসান হাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সুলতান, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস, কেজি মোস্তফা প্রমুখ হারিয়ে গিয়েছেন।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পর তেপ্পান্ন সালে প্রধানত আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, প্রবন্ধ, ছোট গল্প ও একগুচ্ছ কবিতা নিয়ে ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেন ওই সময়ে মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের বিপরীতে অবস্থিত ‘পুঁথিপত্র’ প্রকাশনা কেন্দ্র থেকে। প্রকাশের পর পরই মুসলিম লীগ সরকার বইটিকে বে-আইনি ঘোষণা করেন। অতঃপর ১৯৫৬ সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন সরকার বেআইনি ঘোষণার আদেশটি প্রত্যাহার করে। অতঃপর জনপ্রিয় ওই বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
১৯৫৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। সামরিক আইন জারি হলে বইটি আবারও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং তারপর থেকে বইটি বাজারেও পাওয়া যায় না। ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ সংকলনটির ঐতিহাসিক মূল্য থাকায় বাংলা একাডেমির উচিত নতুন একটি সংস্করণ প্রকাশ করা।
স্মৃতিরক্ষায় অবহেলা
ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে বাঙালি জাতি অত্যন্ত গর্বিত দলমতধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে। বায়ান্নর পরে দীর্ঘ ৬৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও গ্রাম থেকে শহর-বন্দর-নগর পর্যন্ত একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকে অন্তত বেলা ১১টা পর্যন্ত শহীদ মিনারগুলোতে মানুষের ঢল নামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। এ এক কল্পনাতীত ব্যাপার, সন্দেহ নেই।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিরক্ষায় একমাত্র বাংলা একাডেমি ব্যতিরেকে তার গবেষণা কেন্দ্র, ইতিহাস সংরক্ষণ কেন্দ্র, ভাষাসংগ্রামীদের বাড়িঘর সংরক্ষণ, তাদের পরিবার-পরিজনদের (অনেক ভাষাসংগ্রামী যেহেতু আজ লোকান্তরে) খোঁজখবর রাখা, ভাষাসংগ্রামীদের ছবি জেলায় জেলায় সংরক্ষণ, তাদের তালিকা উপজেলাপর্যায়ে প্রণয়ন ও যত দ্রুত সম্ভব তাদের নামের তালিকা সরকারিভাবে গেজেট আকারে প্রকাশ ও মর্যাদাপূর্ণ ভাতাদি প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। একশ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাদের চলাফেরার জন্য কোটি টাকার গাড়ি বরাদ্দ হচ্ছে, কিন্তু ভাষাসংগ্রামীরা যারা বাঙালি জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির নব উন্মেষ ঘটালেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করলেন, দেশ ও জাতিকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি করলেন, তাদের প্রতি অবহেলা কষ্টের কারণ। এর অবসান হওয়া জরুরি।
ভাষাসৈনিকদের প্রতি সম্মান জানাতে তাদের নামে স্টেডিয়াম, রাস্তা, পাঠাগার, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা করা যেতে পারে।
ভাষা আন্দোলন ও ভাষাসৈনিকদের শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে অবহেলার তালিকা আর দীর্ঘ না করি। ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সুসংবাদ তুলে ধরছি:
সুসংবাদ
ভাষাসৈনিক ‘আবদুল মতিনের গ্রামে শহীদ মিনার: খুশি এলাকাবাসী’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটিতে বলা হয়। প্রতীক্ষার ৬৮ বছর পর ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের নিজ গ্রাম গুধিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নবনির্মিত শহীদ মিনারে ব্যাপক আয়োজনে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহিদ দিবস। সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের অর্থায়নে দিবসটি পালন করা হয়। এর ফলে আশা মিটেছে আবদুল মতিনের জন্মভূমির সর্বস্তরের মানুষের।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কালো ব্যাজধারণ করে জামিরতা ডিগ্রি কলেজ, জামিরতা জহুরা খাতুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, জামিরতা উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাতুনি ও স্তপিয়াখালি উচ্চ বিদ্যালয়সহ মোট তিনটি ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গুধিবাড়ি সরকারি প্রাথমিকবিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। এরপর বিকেলে আলোচনা সভা ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আবদুল মতিনের ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া হান্নান। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মতিনের জন্মভূমি চৌহালিতেও নবনির্মিত শহীদ মিনারেও দিসটি পালন করা হয় যথাযোগ্য মর্যাদায়। চৌহালি উপজেলার দুর্গম মৌলজানা গ্রামটি (আবদুল মতিনের মূল জন্মস্থান) নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার কারণে তার বাবা বসতি গড়ে তোলেন নদীর পশ্চিম পাড় গুধিগড়ি গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই গ্রামে স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার ছিল না। ফলে অস্থায়ীভাবে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ওই এলাকার মানুষ শহিদ দিবস পালন করছিলেন।
ওই এলাকার মানুষ এই অভাবটি মোচনের জন্য দীর্ঘকাল ধরে দাবি জানাচ্ছিলেন স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের। এ দাবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফের উদ্যোগে জেলা পরিষদের অর্থায়নে সম্প্রতি দুই গ্রামে দুইটি শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেন।
ভাষাসৈনিক প্রয়াত আবদুল মতিনের জন্মভূমি সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী-শাহনাজপুর জনপদে রয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির দীর্ঘকাল পরও অনেক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ীভাবে নির্মিত কোনো শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহিদদের প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধা জানাতে পারতেন না। তাদের বাঁশ ও কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাতে হতো। বিশেষ করে আজীবন সংগ্রামী, ভাষাসৈনিক ও কৃষক নেতা আবদুল মতিনের জন্মভূমি চৌহালির ধুবুলিয়া-শৈলজানা চরে কোনো শহীদ মিনার নির্মিত না হওয়ায় এলাকাবাসী ব্যথিত ছিল।
পরিশেষে, ব্যাপক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে প্রশিকার চেয়ারম্যান কাজী ফারুকের সহযোগিতায় শৈলজানা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে জাতীয় নকশার শহীদ মিনার ও লাইব্রেরি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন। এরপর থেকে চরাঞ্চলের মানুষ এই শহীদ মিনারে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছিলেন।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১৫ সালের ১ জুন ভাষাসৈনিকের গ্রামের সেই শহীদ মিনারটি যমুনাগর্ভে বিলীন হয় এর পর থেকে আবারও বাঁশ-কলাগাছ দিয়ে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারেই প্রতিবছর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছিল।
অতঃপর সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নতুন শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিলে জনদাবি আবারও পূরণ হয়। ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের সহধর্মিণী গুলবদন নেছা মনিকা ও ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া হান্নান বলেন, এই শহীদ মিনার দুটি অনেক প্রতীক্ষার ফল।
এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, ‘ভাষাসৈনিক মতিন ভাইকে নিয়ে আমরা কতই না গর্ব করি। তার জন্মভূমি ও গ্রামে শহীদ মিনার নেই জেনে আমিও ব্যথিত ছিলাম- তাই গ্রাম দুটিতে দুটি শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
খবরটি নিশ্চয় একটি সুসংবাদ। সারা দেশে জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা শিক্ষা নিলে সারা দেশে ভাষাসৈনিকদের স্মরণে অনেক বড় কিছু হতে পারে।
লেখক : কলাম লেখক ও সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত