বলা হয়ে থাকে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষক হলো মেরুদণ্ড সচল-সুস্থ রাখার তথা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকরা জ্ঞানের আলো দ্বারা যুগের সব অন্ধকার দূর করে মানুষের জন্য সভ্য পৃথিবী সৃজন করেন। মানুষের আর্থসামাজিক অগ্রগতি ও নৈতিক বিকাশ অব্যাহত রাখতে সমাজে শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম।
সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষকরা মানুষের ভেতর সত্যিকারের মানুষ সৃজন করেন। তাই শিক্ষককে বলা হয় সন্তানের দ্বিতীয় জন্মদাতা। সত্যি তো, জন্মদাতা পিতা শুধু জন্ম দিয়েই থাকেন; কিন্তু তাকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তোলেন তার শিক্ষক। জ্ঞান বা বিদ্যার্জনের জন্য শিক্ষকদের ভূমিকাকে দ্বিতীয় জন্মদাতার সঙ্গে তুলনা করে শাহ মুহম্মদ সগীর কবিতার ছন্দে লিখেছেন,
‘ওস্তাদে প্রণাম করো পিতা হন্তে বাড়,
দোসর জনম দিলা তিঁহ সে আহ্মার।’
শিক্ষকের মর্যাদা নামে কবি কাজী কাদের নেওয়াজের কবিতা পড়েছি ছেলেবেলায়। বাদশা আলমগীরের শিক্ষকের মর্যাদা দেবার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই কবিতা। শিক্ষকের প্রতি বাদশাহর অপরিসীম শ্রদ্ধার প্রতিফলন ঘটেছে কবিতায়।
একদিন বাদশাহ দেখলেন তার সন্তান শিক্ষকের চরণে শুধু পানি ঢেলে দিচ্ছেন। এটা দেখে বাদশাহ শিক্ষককে ডেকে পাঠালেন। শিক্ষক ভয়ে অস্থির, বাদশাহর ছেলেকে দিয়ে চরণে পানি ঢালার সেবা নিয়েছেন। গর্দান বুঝি যায় এবার। চরণে শুধু পানি ঢেলে দিচ্ছে, হাত দিয়ে কেন পা ধুয়ে দিচ্ছে না, তা সন্তানের শিক্ষার মধ্যে আনা উচিত ছিল; এটা বোঝানোর জন্যই তিনি শিক্ষককে ডেকেছিলেন। শিক্ষকের প্রতি সন্তানের এটুকু অবহেলাও মেনে নিতে পারেননি বাদশাহ আলমগীর।
সভ্য মানুষ তথা প্রকৃত মানুষ তৈরির মহান কারিগর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদা শুধু কবিতায় সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদা জাতিসংঘের শিক্ষাবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও সনদেও স্বীকৃত। যারা শিক্ষকতার মহান পেশায় জড়িত বা শিক্ষাদান করেন তাদের জন্য জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও যৌথ উদ্যোগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মর্যাদাবিষয়ক সনদ তৈরি করেছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তরাষ্ট্রীয় সম্মেলনে ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এই মর্যাদাবিষয়ক সনদটি গৃহীত হয়।
প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষাকাঠামোর একটি ভিন্ন চিত্র ছিল। শিক্ষকের অপরিসীম মর্যাদা ছিল। তখনও বইপত্রের যুগ শুরু হয়নি। প্রাথমিক শিক্ষার একটি ধারা ছিল গুরুগৃহে জ্ঞানচর্চা।
রাজা-মন্ত্রীর ছেলেরা গুরুগৃহে বিদ্যাচর্চা করতেন। গুরু অর্থাৎ সন্ন্যাসীরা বনের ভেতর কুটিরে জীবন-যাপন করতেন। ধর্মচর্চা করতেন। রাজা-মন্ত্রী তাদের ছেলেদের নিয়ে এসে করজোড়ে প্রার্থনা জানাতেন। অনুনয় করতেন গুরু যাতে তাদের সন্তানদের দায়িত্ব নেন। রাজপুত্র, মন্ত্রিপুত্ররা গুরুর কুটিরে থেকে গুরুর সেবা করে জ্ঞানার্জন করতেন। এখন সেই সত্য যুগও নেই, শিক্ষকের মর্যাদাও নেই।
যুগে যুগে, কালে কালে স্মরণীয়, নমস্য ব্যক্তিরা তাদের শিক্ষকদের প্রতি সবিনীত শ্রদ্ধাশীল থেকেছেন। ইমাম আযম আবু হানিফা (রাহ.) শিক্ষকের প্রতি তার শ্রদ্ধার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমার শিক্ষক ইমাম হাম্মাদ (রাহ.) যত দিন বেঁচেছিলেন, তত দিন আমি তার বাড়ির দিকে পা মেলে বসিনি। আমার মনে হতো, এতে যদি শিক্ষকের প্রতি আমার অসম্মান হয়ে যায়।
বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুও শিক্ষকদের সম্মানের চোখে দেখতেন। প্রসঙ্গক্রমে দুটো ঘটনা উল্লেখ করছি। চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান প্রফেসর ইন্নাস আলী স্মৃতিচারণায় লিখেছেন ‘বঙ্গবন্ধু উপাচার্যদের প্রায়ই ডাকতেন। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত চাইতেন। বঙ্গবন্ধু আমাকে খুব সম্মান দেখাতেন। ওনার রুমে ঢুকলেই দাঁড়িয়ে যেতেন। অনেক সময় হয়তো মিটিং চলছে তখনও এ রকম দাঁড়িয়ে সম্মান করতেন।’ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হওয়ার পর অধ্যাপক আবুল ফজল ‘শেখ মুজিবকে যেমন দেখেছি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। শিক্ষা ও শিক্ষকের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ শ্রদ্ধার কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক আবুল ফজল লিখেছেন ’৬৯-এর নভেম্বর মাসে ইত্তেফাক পত্রিকায় ‘শক্ত কেন্দ্র কেন ও কার জন্য’ শিরোনামে প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে বঙ্গবন্ধু অভিনন্দন জানিয়ে তাকে পত্র লিখেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পত্রের জবাবে অধ্যাপক আবুল ফজল যে পত্র লিখেছিলেন তার উত্তরে বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন আপনার মতো জ্ঞানী, গুণী ও দেশপ্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে পারলে খুবই আনন্দিত হতাম। আবার যখন চট্টগ্রামে যাব, সাহিত্য নিকেতনে যেয়ে নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে দেখা করব। অধ্যাপক আবুল ফজলকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের আগে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ফোন করে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক আবুল ফজলের অনুমতি নিয়েছিলেন বলে আবুল ফজল তার লেখায় উল্লেখ করেছেন।
ভবিষ্যৎ বংশধরদের যোগ্য-দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত দেশগুলোতে তাই বেতন ও সামাজিক অবস্থানে শিক্ষককে অনেক উপরে রাখা হয়।
নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, একটি দেশের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ হচ্ছে একটি লাভজনক বিনিয়োগ। শিক্ষায় বিনিয়োগ হলে শিক্ষিত ও চৌকস জনগোষ্ঠী তৈরি হবে। নতুন নতুন গবেষণার ফলে দেশ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গন আলোকিত হবে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষকদের অবস্থা তার উলটো। এ দেশের শিক্ষকরা সমাজে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। দেশে বহুল আকাঙ্ক্ষিত চাকরির অন্যতম হলো বিসিএস। বিসিএসের ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে শিক্ষা ক্যাডার প্রথম পছন্দ দিয়েছেন এমন প্রার্থী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দেখা গেছে, প্রার্থীরা শেষ পছন্দ হিসেবে শিক্ষা ক্যাডার দিয়ে থাকেন। ফলে যারা এখন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে বিভিন্ন সরকারি কলেজে চাকরি করছেন, তাদের অধিকাংশই অন্য ক্যাডারে প্রতিযোগিতায় স্থান না পেয়ে অনিচ্ছা নিয়ে শিক্ষকতায় এসেছেন। শিক্ষকতা পেশার কেন এ অবস্থা? দেশে অন্যান্য পেশার তুলনায় শিক্ষকতা পেশা মোটেও আকর্ষণীয় নয়।
বিসিএস পরীক্ষায় একই সিলেবাস ও একই প্রশ্নের পরীক্ষায় পাস করেও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্তদের সুযোগসুবিধা অন্যান্য ক্যাডারের সুযোগসুবিধার তুলনায় আকাশপাতাল পার্থক্য। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আগের চেয়ে বাড়লেও মর্যাদায় এগোচ্ছে না। প্রাথমিকের শিক্ষকরা এখনও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, যা বিশ্বে বিরল। মাধ্যমিকের শিক্ষকরা দুই-দিন বছর আগে দ্বিতীয় শ্রেণির পর্যাদা পেয়েছেন। তার মানে তারাও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন। সামরিক-বেসামরিক যেকোনো পেশায় যোগ দিলে তার সিনিয়র সচিব বা তদূর্ধ্ব মর্যাদা উন্নীত হওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের মর্যাদা রাষ্ট্রীয় পদক্রমে যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদায় সিল করে দেওয়া হয়েছে। এর ওপরে ওঠার সুযোগ নেই। শিক্ষকের মর্যাদা যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা কেবল মুখে আর বই পুস্তকে। কবি কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ কবিতাটি আজকাল শিক্ষকের সম্মানের বিষয়ে এখন রূপকথামাত্র। আগে বলা হতো শিক্ষক সেবিলে উন্নতি হয়, আর এখন শিক্ষক ছেঁচিলে উন্নতি হয়। হামেশাই শিক্ষকরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন। বাদশাহ আলমগীরের ছেলে শিক্ষকের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন, এখন পুরো গা ধুয়ে দিচ্ছে। পাঁজাকোলো করে পুকুরে ফেলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। আমাদের দেশে একজন প্রভাষকের মূল বেতন ২২ হাজার টাকা, সহকারী অধ্যাপকের ৩৫ হাজার ৫০০ এবং অধ্যাপকের ৬৪ হাজার ৬০০ টাকা। ভারতে শিক্ষকতা শুরু সহকারী অধ্যাপক দিয়ে। সহকারী অধ্যাপকদের বেতন স্কেল ৫৫ হাজার টাকা, সহযোগী অধ্যাপকের ৯০ হাজার টাকা এবং অধ্যাপকের ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। পাকিস্তানে সহকারী অধ্যাপকের মূল বেতন ১ লাখ ৪ হাজার টাকা, সহযোগী অধ্যাপকের ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং অধ্যাপকের ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এর বাইরে গবেষণা, আবাসন, যাতায়াতের জন্য গাড়িসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা পান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আর উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর শিক্ষকদের বেতন আরও কয়েক গুণ বেশি। ভারত সরকার মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় টানতে বেতনকাঠামোতে সুযোগসুবিধা বৃদ্ধি ও উপযুক্ত মর্যাদা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। ভারতের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশে শিক্ষকের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘Teachers in various categories should be given incentives by way of advance increments and higher grade pay to compensate them for higher qualifications at the entry point. Also, it would be a significant incentive for more meritorious scholars to join the teaching profession, particularly at this juncture when both the corporate sector and foreign educational institutions are luring the young talented persons away with higher salaries and better pay packages’.
ভারতের বেতন কমিশন যেখানে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে, শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা ও বৃদ্ধিতে অবস্থান নিয়েছে সেখানে বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি সুযোগসুবিধার ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে লিখে দেয়া হয় ‘তবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।’
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতনকাঠামোর কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি গত ১১ বছরেও। ফলে শিক্ষকদের অনেকেই বঞ্চনার ঘাটতি পুষিয়ে নিতে নিজ পেশায় মনোযোগ না দিয়ে অন্যান্য কাজে ঝুঁকে পড়ছেন। আর এভাবে শিক্ষা ও গবেষণা দুটিই পিছিয়ে পড়ছে।
১৮৫০-এর দশকে বাঙালিদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি বেতন পেতেন, বিদ্যাসাগর তাদের অন্যতম। তা সত্ত্বেও কেবল শিক্ষানীতিতে সরকারের সঙ্গে একমত হতে পারলেন না বলে, আদর্শের কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। সাধারণ লোকেরা তখন নাকি তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বিদ্যাসাগর চাকরি ছাড়লে খাবেন কী করে?’ তার উত্তরে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, তিনি আলু, পটোল বিক্রি করবেন, তা-ও ভালো। কিন্তু আপস নয়।
একটা সময় ছিল যখন অন্যের সন্তানকে মানুষ করার অদম্য প্রয়াস ছিল শিক্ষকের মাঝে। পেশা ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা ছিল না। পেশাই ছিল ধ্যান-জ্ঞান আর নেশা। তাদের নীতি ও আদর্শ সব কিছুর ঊর্ধ্বে ছিল। বই-পুস্তকে সর্বদা ডুবে থাকতেন। জানার পরিধি বাড়ানোর এক অনমনীয় নেশায় ব্যস্ত থাকতেন। ছাত্রের মাঝে নিজের জ্ঞানটুকু ছড়িয়ে দিতে কত না আন্তরিক ছিলেন। দিনে দিনে শিক্ষককে নানা দুর্নাম পেয়ে বসেছে। নোট-গাইডের বদনাম। কোচিং-বাণিজ্যের বদনাম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বদনাম। প্রশ্নফাঁসের বদনাম। বই-পুস্তকের সঙ্গে অনেক শিক্ষকের কোনো সখ্যই নেই। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেটুকু পড়ে এসেছেন, তা দিয়েই শিক্ষকতা চালিয়ে নিতে চান। খুব কম শিক্ষক পাওয়া যায় যারা বই পুস্তকে লেগে থাকেন।
চাণক্য শ্লোকে রয়েছে, ‘শিক্ষককে কখনো অবহেলা করা উচিত নয়। সৃষ্টি ও ধ্বংসের দুয়েরই বীজ লুকিয়ে রয়েছে শিক্ষকের মধ্যে।’ জাতিকে ভাবতে হবে যে, জাতির মেরুদণ্ডের চালিকাশক্তিকে বঞ্চিত করে, সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করে, সমাজ-রাষ্ট্রে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা যায় না। যেদিন এমন হবে ব্যাংকার ব্যাংকের চাকরি বাদ দিয়ে, পুলিশ পুলিশের চাকরি বাদ দিয়ে এমনকি লোভনীয় প্রশাসন ক্যাডার ছেড়ে শিক্ষক হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে যাবে; সেদিন বুঝব অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশন, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো এডুকেশন সার্ভিস কমিশন করে মেধাবী শিক্ষকদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকের তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা বিলুপ্ত করতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
ডেইলি মেইলের খবর অনুযায়ী দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের ব্যান্ডন হিল প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসাবেল রামসের বার্ষিক বেতন ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৯৮ পাউন্ড আর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বেতন ১ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ পাউন্ড। মুসলিম মনীষী ইবনে খলদুনের তার ‘আল মুকাদ্দিমা’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘শিক্ষকও একজন মানুষ। সমাজের আর দশজন মানুষের মতো শিক্ষকেরও ব্যক্তিগত জীবনে বেঁচে থাকার উপকরণের প্রয়োজন আছে।’ মেধাবীদের শিক্ষকতায় ফিরিয়ে আনা গেলে, শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি করা গেলে, গবেষণা বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে, অবকাঠামো আরও উন্নত হলে, জবাবদিহি বৃদ্ধি করা গেলে এবং রাষ্ট্র শিক্ষা ও শিক্ষকদের প্রতি আরও মনোযোগী হলে শিক্ষা ও ঘাটতি অনেকখানিই পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।