বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিকায় আস্থা ও প্রশংসিত ভারত

  • শাহীন রেজা নূর   
  • ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৭:০৬

করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই বন্ধু দেশটির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে ভারত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেমন কোনো স্বার্থ ছাড়াই ভারত বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তেমনভাবেই করোনাযুদ্ধেও ঢাকার পাশে দিল্লি। বিনা পয়সায় উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দিয়েছে করোনার টিকা। বাংলাদেশ সরকারও সেটি গ্রহণ করে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছে।

ভারতের দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি করোনা প্রতিরোধের টিকার প্রতি আস্থা দেখাচ্ছে বেশির ভাগ দেশ। এরই মধ্যে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট জানিয়ে দিয়েছে ভারতে তৈরি কোভ্যাক্সিনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। সাফল্যের হারও অনেক বেশি। এ তথ্য এখন পুরনো।

একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম্যের খবর, করোনা টিকা তৈরির খরচ চেয়ে চীন বন্ধু দেশগুলোর কাছেও নিজেদের বেনিয়া স্বভাবেরই পরিচয় দিচ্ছে। অন্যদিকে, ভারত প্রতিবেশীদের অতিমারির সময় মানবিক দৃষ্টিতে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

ব্রাজিল প্রথমে চীন থেকে টিকা কিনে এখন পস্তাচ্ছে। কারণ চীনের ভ্যাক্সিনের গুণমান খারাপ। তাই তারা বাধ্য হয়ে ভারত থেকেই আমদানি করছে ভারতের তৈরি টিকা।

শুধু ব্রাজিলই নয়, গোটা দুনিয়ার ৯২টি দেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে ভারতীয় টিকায়। নিজেদের দেশের ১৩০ কোটি মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখেও অন্য দেশকে টিকা দিয়ে সাহায্য করতে বিন্দুমাত্র ঢিলেমি দেখাতে নারাজ নয়াদিল্লি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশসহ বহু দেশ ভারত থেকে টিকা নিয়েছে।

টিকা কূটনীতিতে চীন থেকে অনেকটাই এগিয়ে ভারত। তাই প্রশ্ন উঠছে, কেন এত সফল ভারত?

প্রথম কথা, ভারতের নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি কোভ্যাক্সিনের গুণগত মান নিয়ে গোটা দুনিয়া নিশ্চিত। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনেই সেটা স্পষ্ট। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) সহযোগিতায় ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এই ভ্যাক্সিন তৈরি করছে। ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি স্ট্রেন থেকে দেশীয় পদ্ধতিতে এই টিকার আবিষ্কার করেছে। এ ছাড়া ইক্সপোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনকোর পদ্ধতিতেও ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনেতে সিরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ড নামে আরও একটি করোনা টিকা তৈরি করছে। গুণগত মানের কারণে বিশেষজ্ঞরা দুটি টিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

অন্যদিকে, চীনা টিকায় কোনো কাজ হচ্ছে না বলে এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে। আগাম খরচ দিয়ে চীন থেকে টিকা আমদানি করেছিল ব্রাজিল। কিন্তু দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর খবর, চীনা টিকার সাফল্যের হার মাত্র শতকরা ৫০ দশমিক ৪৫। ফলে ব্রাজিল এখন চীন ছেড়ে ভারত থেকেই নিয়ে যাচ্ছে কোভিডের টিকা। ২০ লাখ টিকা নিয়েছে ব্রাজিল ও মরক্কো।

ভারতের কোভ্যাক্সিন নিয়ে ল্যানসেট লিখেছে, সাফল্য ৯২ শতাংশ ধরা পড়েছে সমীক্ষায়। ৩৭৫ জনের শরীরে ১৩ থেকে ৩০ জুলাই পরীক্ষা চালানো হয়।

প্রথম টিকার ১৪ দিন পর দেয়া হয় দ্বিতীয় ডোজ। কারো শরীরে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং বেড়ে গিয়েছে প্রতিরোধক্ষমতা। ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে কোভ্যাক্সিনের।

অন্যদিকে, চীনের টিকার প্রতি দ্রুত আস্থা হারাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। চীন বলেছিল, কম দামে সহজেই বহনে সক্ষম তাদের টিকা। চীনা সরকারি সংস্থায় তৈরি টিকা সংরক্ষণেও ঝামেলা কম। কিন্তু দেখা গিয়েছে, চীনা টিকায় কোনো কাজই হচ্ছে না তেমন। তাই তুরস্কের মতো চীনের বন্ধু দেশও টিকার জন্য আস্থা রাখছে ভারতের ওপরই। এ ছাড়া চীনের করোনা নিয়েও ব্যবসায়িক মনোভাব ধরা পড়েছে। ভারত যেখানে বিনা অর্থে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সেখানে চীন তাদের বন্ধু দেশগুলোর কাছ থেকেও অর্থ চাইছে। আল-জাজিরা বলছে, চীনের বর্ডার রোড ইনিশিয়েটিভের সদস্য দেশগুলোকেও কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। নেপাল, ভুটান থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের কাছে আগাম দাম চেয়েছে চীন। অথচ, এসব দেশে পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে অর্থনীতিকেই চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অনেকটা ডমিনেট করছে।

ভারত নিজের দেশে করোনা টিকা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোকে বন্ধুত্বের বার্তা দিতে নিজের খরচে করোনা টিকা পৌঁছে দিয়েছে। বাংলাদেশকে সবচেয়ে ভালো বন্ধু মনে করে ভারত। তাই বাংলাদেশে পৌঁছেছে ২০ লাখ করোনা ডোজ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ নিজেরা তৈরি করতে চাইলে ভারত প্রযুক্তি দিয়েও তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত।

করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই বন্ধু দেশটির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে ভারত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যেমন কোনো স্বার্থ ছাড়াই ভারত বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, ঠিক তেমনভাবেই করোনাযুদ্ধেও ঢাকার পাশে দিল্লি। বিনা পয়সায় উপহার হিসেবে পাঠিয়ে দিয়েছে করোনার টিকা। বাংলাদেশ সরকারও সেটি গ্রহণ করে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছে।

শুধু বাংলাদেশকেই নয়, ভারত প্রতিবেশী প্রায় সব দেশকেই করোনার টিকা পাঠিয়েছে। এই নিবন্ধ লেখার সময় চলছে শ্রীলংকা ও আফগানিস্তানে কোভিড টিকা পাঠানোর প্রস্তুতি। তবে পাকিস্তানকে টিকা পাঠাচ্ছে না দিল্লি।

এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানের তরফে টিকার ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। তাই বিষয়টি তাদের বিবেচনাতেই আসেনি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে ১৪ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডোজ কোভিড টিকা দিয়েছে। প্রতিবেশীদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও নেপালে ১০ লাখ, মালদ্বীপে ১ লাখ, মিয়ানমারে ১৫ লাখ, মরিশাসে ১ লাখ এবং ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র সিচেলসে পৌঁছেছে ৫০ হাজার ভারতীয় করোনা টিকা।

নিজের দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতের এই মহান উদ্যোগকে দুনিয়ার বহু দেশ প্রশংসা করছে। বিশেষজ্ঞরা যেমন ভারতীয় বিজ্ঞানীদের ভূয়সী প্রশংসা করছেন, তেমনি কূটনীতিকরাও ভারতের মানবিক ভূমিকার প্রশংসায় সরব। চীনের স্বার্থপর ভূমিকাও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফুটে উঠেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো পত্রিকাতেও সমালোচিত হয়েছে চীনের সরকারি সংস্থা সিনোফার্মার তৈরি করোনাভ্যাক। সবমিলিয়ে সংগত কারণেই টিকা কূটনীতিতে চীনকে অনেকটা পিছনে ফেলে ভারত নিজেদের মানবিক অবস্থান আরও স্পষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।

লেখক : সাংবাদিক, সাবেক সভাপতি, প্রজন্ম ’৭১।

এ বিভাগের আরো খবর