বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গণতন্ত্রের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি

  •    
  • ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৮:১৩

থান্ট মিন্টের নিজের দেশ। তাই তার এই অভিব্যক্তির মধ্যে কোনো অসততা বা কোনো স্বার্থ নেই। শুধুই একজন সৎ ও জ্ঞানী ব্যক্তি কীভাবে তার দেশ নিয়ে হতাশ হচ্ছেন, তার প্রমাণ মিলছে। এবং থান্ট মিন্ট ইউয়ের এই অভিব্যক্তির পরে আর কোনো মতেই মিয়ানমারে যে সামরিক শাসন এসেছে, তার স্বপক্ষে কিছু বলার থাকে না।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব উত্থান্টের পৌত্র লেখক ও ঐতিহাসিক থান্ট মিন্ট ইউ, মিয়ানমারের এই সামরিক অভ্যুত্থ্যানের পরে এক টুইট বার্তায় বলেছেন, মিয়ানমারের এই সামরিক অভ্যুত্থান দেশটিকে সম্পূর্ণ এক ভিন্ন ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিল। আমার অনুভূতি এ মুহূর্তে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত। কারণ কেউই জানে না দেশটি কোন দিকে যাচ্ছে। এবং ভবিষ্যতে যা আসছে দেশটির জন্যে, তা কেউই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কারণ, দেশটিতে প্রচুর অস্ত্র। তার ওপর নানান নৃগোষ্ঠীতে বিভক্ত, তাদের মধ্যে সম্পর্কও বৈরী। এছাড়া অধিকাংশ মানুষ সেখানে ক্ষুধা নিয়ে বাস করে।

থান্ট মিন্টের নিজের দেশ। তাই তার এই অভিব্যক্তির মধ্যে কোনো অসততা বা কোনো স্বার্থ নেই। শুধুই একজন সৎ ও জ্ঞানী ব্যক্তি কীভাবে তার দেশ নিয়ে হতাশ হচ্ছেন, তার প্রমাণ মিলছে। এবং থান্ট মিন্ট ইউয়ের এই অভিব্যক্তির পরে আর কোনো মতেই মিয়ানমারে যে সামরিক শাসন এসেছে, তার স্বপক্ষে কিছু বলার থাকে না।

কিন্তু তারপরেও এই সামরিক শাসনের পক্ষে এখন প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে গেছে বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ ও মিয়ানমারের নিকট প্রতিবেশী চীন। তারা মিয়ানমারের এই ঘটনাকে মোটেই সামরিক শাসন বলছে না। তাদের বক্তব্য হলো, সেখানে সরকারের ভেতর একটি সংকট চলছে, যা তাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব। এবং সেটা মিয়ানমার নিজেরাই ঠিক করে নিতে পারবে। এ নিয়ে বিশ্বের কারো কোনো মাথা ঘামানো উচিত নয়। শুধু তাই নয়, তারা আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সরাসরি বলেছে, তিনি মিয়ানমারের বর্তমান সরকারের পরিবর্তনকে ‘সামরিক অভ্যুত্থান’ বলে ভুল করছেন। এবং আমেরিকাসহ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো মূলত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তারা যেন এটা না করে।

চীনের এই বক্তব্যের সমর্থনে তারা বেশি করে উপস্থিত করছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী প্রণীত সংবিধান, যেখানে সেনাবাহিনীর প্রধানকে দেশের অবস্থাকে যে কোনো মুহূর্তে খারাপ উল্লেখ করে জরুরি অবস্থা জারি করার ক্ষমতা দেয়া আছে। তাদের সংবিধানের এই ৪৭ অনুচ্ছেদকেই চীণ ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। পাশাপাশি এটা বলছে, নতুন সরকার অর্থাৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সরকার আগামী এক বছরের মধ্যে নির্বাচন দেবে। চীন অবশ্য পশ্চিমা গণতন্ত্রকে দোষারোপও করছে এই বলে যে, পশ্চিমা দেশগুলোর রীতি হলো যে কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় বা পূর্ব এশীয় দেশগুলো তা কখনও করে না।

চীন তাদের এই উদ্যোগের বা সামরিক শাসনকে সমর্থনের সঙ্গীও ইতোমধ্যে জোগাড় করেছে। ১০ দেশের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশান অফ সাউথ এশিয়ান নেশানসের (আসিয়ান) মিয়ানমারও সদস্য। গত সোমবার একটি বিবৃতি দিয়ে তারা বলেছে, তারা চায় মিয়ানমার নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দেশের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনুক। অর্থাৎ আসিয়ানও এটাকে সামরিক অভ্যুত্থান বলছে না। তারাও মূলত চীনের অনুরূপ বক্তব্য রাখছে।

পূর্ব এশীয় দেশ জাপান অবশ্য এখানে সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে। এমনকি তাদের অবস্থান মিয়ানমারের প্রতিবেশী সব থেকে বড় সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের থেকেও স্পষ্ট। তারা একে সামরিক অভ্যুত্থানই বলছে। এবং অবিলম্বে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবার পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সার্বিক বিবৃতি ও বক্তব্য পর্যালোচনা করলে বলা যায়, এশিয়ায় আমেরিকার দুই বৃহৎ মিত্র জাপান ও ভারতের মধ্যে জাপান বেশি শক্তভাবে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে।

এখানে অবশ্য একটা অর্থনৈতিক লাভ লোকসানের বিষয় কাজ করছে। মিয়ানমারে গণতন্ত্রায়ন হবার পর সেখানে জাপান অনেক বিনিয়োগ করেছে, এখন যা স্পষ্ট হচ্ছে। মিয়ানমারে সামরিক শাসন থাকলে তাদের প্রতি আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো আবার পূর্বের সামরিক শাসনামলের মতো অর্থনৈতিক অবরোধে যাবে। আর সে অবস্থায় চীন হয়তো তার বিনিয়োগ সেখানে ঠিক রাখতে পারবে, তবে জাপানের পক্ষে সম্ভব হবে না। এমনকি সম্ভব হবে না পশ্চিমা দেশগুলো সেখানে যে বিনিয়োগ করেছে, সে বিনিয়োগ রাখা। এ ক্ষেত্রে ভারত মনে করছে, মিয়ানমারে যদি সামরিক শাসন থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবে এ বিনিয়োগগুলো ভারতে স্থানান্তর হবে। হয়তো ভারত এই অর্থনৈতিক লাভের কথা চিন্তা করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়েও গণতন্ত্রের জন্যে ততটা সরব নয়।

তবে মিয়ানমারের এই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া বা লড়াই করা এখন বাইডেনের জন্যে তার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রথম এবং শক্ত পরীক্ষা। বাইডেন এখানে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে যেমন ভারতকে শতভাগ পাশে পাচ্ছে না, তেমনি আসিয়ানভুক্ত অন্তত পাঁচটি দেশ আমেরিকার মিত্র রাষ্ট্র হলেও তারা এখানে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের পক্ষে যাবে না। কারণ, তাদের নিজ দেশেও সামরিক শাসন বা স্বৈরশাসন। আর অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো কখনই কোনো দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সহয়তা করে না। অবশ্য দুই পরাশক্তিতে যখন পৃথিবী বিভক্ত ছিল, তখনকার কথা ভিন্ন।

যেমন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সব থেকে বেশি দরকার ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গি দমন। এই দুই কাজে মধ্যপ্রাচ্যের অগণতান্ত্রিক দেশ শুধু নয়, পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রও বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল। তখন তুরস্ক, কাতার, পাকিস্তান, ইরান সকলেই যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ছিল। এবং তারা যে এখন ফিরে এসেছে, একথা বলার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি বাংলাদেশ সরকার যদি মনে করে তারা এখন বন্ধু, তাহলে ভুল করবে। বাংলাদেশ সরকার যখনই এমনটি কিছুটা মনে করা শুরু করেছিল, তখনই কিন্তু কাতারভিত্তিক ইসলামিক ব্রাদারহুডের অর্থায়নে পরিচালিত টেলিভিশন আল জাজিরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য, বাংলাদেশকে আরেকটি মিয়ানমার বানানোর জন্য উস্কানিতে নেমে পড়েছে। মিয়ানমারের সামরিক অভ্যূত্থানের পরের দিন রাতেই তারা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধানের চরিত্রকে কলঙ্কিত করার জন্যে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অনুষ্ঠান প্রচার করে।

তাদের উদ্দেশ্য অতি পরিষ্কার। কারণ, তারা জানে বর্তমান সরকার গণতন্ত্রকে একটি সুষ্ঠু কাঠামোতে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে, যে কারণে সিভিল সরকারকে মিলিটারি প্রশাসন শতভাগ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আর এটাই গণতান্ত্রিক সরকারের সকল সার্ভিসের নীতি। আল জাজিরা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শত্রুরা বুঝতে পেরেছে, বর্তমান সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে গোটা বাহিনী একটি নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে দিয়ে চলছে। এই নিয়মতান্ত্রিকতা নষ্ট করা ছাড়া বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ক্ষতি করার কোনো উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে অতীতের বহু ইতিহাস সাক্ষী দেয়, নিয়মতান্ত্রিকতা নষ্ট করতে গুজব ও মিথ্যা সংবাদ অনেক বেশি কাজ করে। আল জাজিরা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শত্রুরা সেই কাজই করেছে।

এখন বাংলাদেশকে শুধু যে এই ধরনের অপশক্তিগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে, তা-ই নয়, যে সকল অগণতান্ত্রিক দেশ মিয়ানমারের সামরিক শাসনকে সমর্থন করে যাচ্ছে, তাদের সম্পর্কেও বাংলাদেশকে সজাগ থাকতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর