বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রাণ ফিরুক ক্লাসরুমে

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:৫৪

করোনার আগের পৃথিবী আর কখনো ফিরে পাবো না আমরা। আমরা এখন ‘নিউ নরমাল’ জীবনে অভ্যস্ত হবার চেষ্টা করছি। সব ক্ষতিই হয়তো কোনো না কোনোভাবে পূরণ করা যাবে। কিন্তু করোনা শিক্ষায় যে প্রভাব ফেলেছে, তা সত্যিই অপূরণীয়।

করোনা ভাইরাস ওলটপালট করে দিয়েছে গোটা বিশ্বকেই। এমন কোনো খাত নেই যেখানে করোনার প্রভাব পড়েনি। করোনার মধ্যেই চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চলছে জোরেশোরে। করোনার আগের পৃথিবী আর কখনো ফিরে পাবো না আমরা। আমরা এখন ‘নিউ নরমাল’ জীবনে অভ্যস্ত হবার চেষ্টা করছি। সব ক্ষতিই হয়তো কোনো না কোনোভাবে পূরণ করা যাবে। কিন্তু করোনা শিক্ষায় যে প্রভাব ফেলেছে, তা সত্যিই অপূরণীয়। এরইমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ ১০ মাস পেরিয়েছে। খুলতে খুলতে ১১ মাস হয়ে যাবে।

তার মানে আসলে একটি শিক্ষাবর্ষ হারিয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বেই শিক্ষাখাতে এত বড় বিপর্যয় আর কখনো আসেনি, হয়তো আসবেও না। বন্ধের সময় অনলাইন, টেলিভিশন, মোবাইল নানা মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। ঘোলে কিছুটা হলেও দুধের স্বাদ হয়তো মেলে, তবে অনলাইনে কখনো স্কুলের ক্ষতি পোষানো যায় না। শিক্ষাখাতে এমনিতে নানারকমের বৈষম্য আছে। শহরের স্কুল-গ্রামের স্কুল, সরকারি স্কুল-বেসরকারি স্কুল, ইংলিশ মিডিয়াম-বাংলা মিডিয়াম, ভালো শিক্ষক-মন্দ শিক্ষক- বৈষম্যের কোনো শেষ নেই। কোচিং, টিউটর তো আছেই। করোনার সময় অনলাইন ক্লাসে এই বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬৯ ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেনি। কারণ দেশের সব জায়গায় হাইস্পিড ইন্টারনেট বা অনেকের স্মার্ট ডিভাইস ছিল না। তাই অনলাইনে ক্লাস একটা চেষ্টা হতে পারে, তবে তা সর্বজনীন ছিল না।

করোনার কারণে গতবছর পিইসি, জেএসসি, এইচএসসি পরীক্ষাসহ নিয়মিত সব পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। তার মানে পড়াশোনা ছাড়া, পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা অটোপাস করবে। এই অটোপাসের তালিকায় আছে মহাগুরুত্বপূর্ণ এইচএসসি পরীক্ষাও। জেএসসি এবং এইচএসসির ফলাফল গড় করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। তবে পরীক্ষা ছাড়া ফল প্রকাশের বিধান ছিল না বলে সংসদে আইন সংশোধন করতে হয়েছে। এইচএসসি মহাগুরুত্বপূর্ণ, কারণ উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের আগে শেষ পরীক্ষা এটি। এই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি, দেশ-বিদেশে স্কলারিশিপ নির্ধারিত হয়। এসব ক্ষেত্রে এবার অনেক যোগ্য শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে। তবে সরকারের কিছুই করার ছিল না। শিক্ষার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। করোনায় যখন সারাবিশ্ব কাবু, তখন শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর আমরা সবাই অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম, কবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে। বন্ধের মেয়াদ যখন ১১ মাসে পড়েছে, তখন যৌক্তিক কারণেই আমরা এখন অস্থির, কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে? শিক্ষার্থীরা সাধারণত ছুটি পছন্দ করে। কিন্তু নজিরবিহীনভাবে এবার শিক্ষার্থীরাও স্কুলে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে গেছে। এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী স্কুল খোলার পক্ষে। আসলে বাসায় সারাক্ষণ অভিভাবকের কড়া নজরদারিতে থাকতে থাকতে শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে গেছে। তাই তারা এখন স্কুলে যেতে চায়। সরকারও অবশেষে স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুল তৈরি করতে বলা হয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহেই খুলে যাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে শুরুতেই আগের মতো সব স্বাভাবিক হবে না। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আগের মতো নিয়মিত ক্লাস হলেও অন্য সব শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে একদিন। করোনাও আছে, পাশাপাশি গোটা বিশ্ব এখন ‘নিউ নরমাল’ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যদিও অভিভাবকদের কেউ কেউ এখনও ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো শুধু ক্লাসরুমে নির্দিষ্ট কিছু বই মুখস্থ করানো নয়। স্কুল হলো আসলে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান। স্কুলে তারা একাডেমিক শিক্ষা যেমন পাবে, পাবে জীবনের শিক্ষাও। সামাজিকতা, নেতৃত্ব, নৈতিকতা, বন্ধুত্ব- স্কুলে এমন সব গুণের বিকাশ ঘটে।

বাসায় বসে কেউ সব বই মুখস্থ করে ফেললে পরীক্ষায় হয়তো অনেক নাম্বার পাবে, কিন্তু জীবনের পরীক্ষায় পাস করা মুশকিল হবে। এখন যেমন শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানার শিক্ষাটাও স্কুল থেকেই পাবে। তবে স্কুল খুললেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বরং স্কুল খোলার পর থেকে শুরু হবে শিক্ষার ক্ষতি পোষানোর নতুন চ্যালেঞ্জ। স্কুল বন্ধ থাকায় শুধু যে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার গতি নষ্ট হয়েছে তাই নয়; এই সময়ে অনেকের মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেছে, জীবনের লক্ষ্য বদলে গেছে। দরিদ্র পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীর হয়তো আর কখনোই স্কুলে ফেরা হবে না। এই সময়ে বাল্যবিবাহ বেড়েছে, শিশুশ্রম বেড়েছে। তাই শিক্ষাকে আবার গতিতে ফিরিয়ে আনা সত্যি কঠিন। কঠিন হলেও সেই চেষ্টাটা আমাদের করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ক্লাসরুমে ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষার্থীরা ফিরলেই প্রাণ ফিরে পাবে ক্লাসরুম।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর