বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সরকারি কর্মজীবীর অবসরের বয়সসীমা

  • মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু   
  • ২৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:৪২

দেখা যায় কিছু সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবসরে যাওয়ার বয়স হওয়া সত্ত্বেও তাদের চাকরির মেয়াদ চুক্তি করে বাড়ানো হয়। এ ধরনের এক্সটেনশনের ফলে অন্যান্য কর্মকর্তা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও মনে মনে অসন্তুষ্ট হন। কারণ, এতে করে তাদের পদোন্নতি আটকে থাকে।

দেশে এখন প্রতি বছর গড়ে সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ প্রার্থী বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করে থাকে।

দেশের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা বাংলাদেশের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত। বিসিএস বিভিন্ন ক্যাডারে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তবে পররাষ্ট্র, প্রশাসক, পুলিশ, কর, কাস্টমস নিয়ে বেশিরভাগ প্রার্থী উৎসাহী বেশি।

বিসিএস পরীক্ষাকে প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- প্রাথমিক পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভা অর্থাৎ সাক্ষাৎকার। তারপর নেয়া হয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। উত্তীর্ণদের সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পোস্টিং দেয়া হয়।

স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রথম বিসিএস পরীক্ষা চালু করে। সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটাপ্রথা সংযোজন করা হয়। এই কারণে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিসিএস পরীক্ষাকে এখনও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা বিসিএস বলে আখ্যায়িত করেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই কোটায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদেরও যুক্ত করা হয়। পরে নাতি নাতনিদেরকেও এর আওতায় আনা হয়। ফলে সরকারি চাকরিতে যে ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।

এই ৩০ শতাংশ কোটা কমিয়ে আনার দাবিতে ২০১৮ সালে বিক্ষোভ হয়। এমন পরিস্থিতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারাক্রান্ত কণ্ঠে সংসদে দাঁড়িয়ে পুরো কোটাপ্রথা বাতিলের ঘোষণা দেন। তবে সরকারি চাকরিতে নিম্নস্তরে এখনও কোটাপ্রথা ধরে রাখা হয়েছে।

এখন সরকারি চাকরিতে অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা নির্ধারণের বিষয়টি সরকারের নতুন করে ভেবে দেখা উচিত। কারণ, গড় অনুপাতে বাংলাদেশে মানুষের আয়ু এখন ৭২ বছর, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।

ভারতীয়দের গড় আয়ু এখন ৬৯ ও পাকিস্তানের ৬৭ বছর। সে দুটি দেশে অবসরে যাওয়ার বয়স ৬০, তবে বাংলাদেশে তা এখন ৫৯ বছর।

বর্তমানে সুইডেনে গড় অনুপাতে মানুষের আয়ু ৮৩, নরওয়ে ৮২, ফিনল্যান্ড ৮২, ডেনমার্ক ৮১ ও ব্রিটেনে ৮১ বছর। ব্রিটেনে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স ৬৫ বছর সাত মাস। তবে ২০২৯ সালে ৬৭ ও ২০৪৬ সালে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৮ বছর।

সুইডেনে এটা ৬৫ বছর, তবে ইচ্ছা করলে ৬২ থেকে ৬৫-এর মধ্যে যেকোনো সময় অবসরে যাওয়া যায়। তবে ১০০ শতাংশ অবসর ভাতা পাওয়া যায় ৬৫ বছর পূর্ণ হলে। অন্যদিকে ২০২০ সালে যাদের বয়স ৬৫ পূর্ণ হয়েছে তারা চাইলে ৬৮ বছর পর্যন্ত চাকরি করতে পারবেন।

ফিনল্যান্ডে একই নিয়ম। তবে সেখানে ৬৩ বছর বয়সে অবসরে যাওয়ার সুযোগ নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও সেখানে ২০২৭ থেকে ৬৫ বছরের আগে কেউ অবসরে যেতে পারবে না।

ডেনমার্কে অবসরের বয়স ৬৬, যদিও ৬৭ পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ আছে। ২০২২ সাল থেকে সেখানেও অবসরের বয়স হবে ৬৭ বছর।

নরওয়েতে অবসরের বয়স ৬৭ হলেও ঐচ্ছিক ৬২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত নির্ধারিত।

একসময় বাংলাদেশে চাকরির বাজারের যে দুরবস্থা ছিল, সেটার অনেকটা উন্নতি হয়েছে। ফলে অবসরে যাওয়ার পরও অনেককে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে দেখা যায়।

সরকারি প্রশাসনকে বিভিন্ন দিক দিয়ে বর্ধিতও করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অবসরে যাওয়ার বয়স ৫৯ থেকে বাড়িয়ে ৬২ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

দেখা যায় কিছু সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবসরে যাওয়ার বয়স হওয়া সত্ত্বেও তাদের চাকরির মেয়াদ চুক্তি করে বাড়ানো হয়। এ ধরনের এক্সটেনশনের ফলে অন্যান্য কর্মকর্তা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও মনে মনে অসন্তুষ্ট হন। কারণ, এতে করে তাদের পদোন্নতি আটকে থাকে।

এ ক্ষেত্রে সরকার ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ৫৯ থেকে ৬২ বছরের মধ্যে অবসরে যাওয়ার সুযোগ দিতে পারে।

শারীরিক, পারিবারিকসহ বিভিন্ন কারণে কেউ কেউ হয়তো ৬২ পর্যন্ত কাজ করতে না-ও পারেন। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে কোনো কর্মকর্তাকে প্রাধান্য দেয়া মানে চাকরিতে বৈষম্য সৃষ্টি করা।

১৮০৬ সালে ব্রিটেনে প্রশাসকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য চার্লস গ্রান্টের অধীনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লন্ডনের নিকটবর্তী হেইলিবারিতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। কলেজটি চীনা কর্মকর্তাদের সুপারিশে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সব চীনারা তখন রাজকীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তাদেরই পরামর্শে ব্রিটিশ সরকার একটি সিভিল সার্ভিস সিস্টেম স্থাপনের জন্য চীনা ব্যবস্থার অনুরূপ পরীক্ষার পরামর্শ দেয়।

১৮৫০ সালে লিবারেল পার্টি থেকে নির্বাচিত বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য উইলিয়াম ইওয়ার্ট গ্ল্যাডস্টোন পক্ষপাতিত্বের পরিবর্তে দক্ষতার ভিত্তিতে প্রশাসনে নিয়োগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন। তিনি পরে ১২ বৎসর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গ্ল্যাডস্টোনের একান্ত সচিব স্টাফর্ড নর্থকোটের কাছে ক্যাডার সার্ভিস-সংক্রান্ত একটি মডেল সরবরাহ করেন, যা পরবর্তীকালে ১৮৫৪ সালে চার্লস ট্র্যাভিলিয়ানকে দিয়ে মূল খসড়া তৈরি করা হয়।

পরে নর্থকোট ট্র্যাভিলিয়ান রিপোর্ট অনুসারে সরকারি প্রশাসনে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের ও রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ সিভিল সার্ভিস সিস্টেম চালু করার সুপারিশ করা হয়। তবে এই সুপারিশটি সে সময় কার্যকর করা না হলেও ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আইন পাস করার মধ্যে দিয়ে নিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতা পর্যবেক্ষণের জন্য সর্বপ্রথম একটি সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠন করা হয়। ১৯৬৮ সালে ওয়েলস ও সাসেক্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর লর্ড জন স্কট ফুলটন কমিটি একটি রিপোর্ট পেশ করে।

রিপোর্ট অনুসারে লক্ষণীয় যে, প্রশাসকরা যথেষ্ট পেশাদার নয় এবং রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতার অভাব। এই কারণে তিনি ১৫৮ সুপারিশের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এগুলো হলো সকল বিভাগের কর্মচারীর জন্য একটি গ্রেডিং সিস্টেম, একটি সিভিল সার্ভিস কলেজ এবং একটি কেন্দ্রীয় নীতি-পরিকল্পনা ইউনিট চালু করা।

একসময় যে ব্রিটেনে সরকারি প্রশাসনে সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল বর্তমানে আর ততটা নেই। বিশেষ বিশেষ প্রশাসনকে এখন অনেকটা পরিবর্তন করে ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে থেকেও লোক নিয়োগ দেয়া হয়। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা কিংবা বয়সের কোনো গুরুত্ব এখানে দেয়া হয় না। মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সরাসরি নিয়োগ দেয়া হয়। তবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস এখনও ব্রিটেনের সেই পুরানো মডেলেই ধরে রাখা হয়েছে।

লেখক: জুরি, স্টকহোম আপিল কোর্ট ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্ট

এ বিভাগের আরো খবর