বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ

  •    
  • ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ১৮:৪১

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে এবং ২০১৮ তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে তৃতীয় মেয়াদের দুই বছরও অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ খাতে সাড়ে বারো বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

এক দশক আগেও বিদ্যুতের অভাবে দেশের অর্থনীতি ছিল পর্যুদস্ত, শিল্প-বাণিজ্য ছিল স্থবির এবং জনজীবনে লোডশেডিং ছিল অসহনীয়। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তৃতীয় মেয়াদের দুই বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বিদ্যুৎ খাতে সাড়ে বারো বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদ্যুৎ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে নানাবিধ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। সবার জন্য বিদ্যুৎ, যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতের সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে চলতি বছরের মধ্যে সকলের জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট এবং প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। সে সময় নতুন সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এ খাতের সার্বিক ও সুষম উন্নয়নে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে।

একইসঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, কয়লা, ডুয়েল ফুয়েল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার এনার্জি-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মায়ানমার হতে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এ সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের সাড়ে বারো বছরে ২০০৯ থেকে ১০ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

পাওয়ার সেলের তথ্য, সরকারের ১২ বছরের চেষ্টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭ থেকে ১২৮টিতে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। ২০০৯ সালে মোট ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলোর মোট ক্ষমতা ৩৫৬ মেগাওয়াট। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৭৭৫ মেগাওয়াট।

একইভাবে ২০১১ সালে এক হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২২টি, ২০১২ সালে ৯৫১ মেগাওয়াটের ১১টি, ২০১৩ সালে ৬ শ’ ৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি, ২০১৪ সালে ৬ শ’ ৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৩৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার সাতটি, ২০১৬ সালে ১ হাজার ১৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি এবং ২০১৭ সালে দেশে ১ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয় ।

ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সরকারি খাতে ৬ হাজার ৭০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৬টি এবং বেসরকারি খাতে ৪ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ মোট ১১ হাজার ৩৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে । বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চলতি বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারি খাতে ২ হাজার ৭৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি এবং বেসরকারি খাতে ২ হাজার ৮৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সর্বমোট ৪ হাজার ৯১৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে সরকারি খাতে ৭ হাজার ৬১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ২০২৪ সালের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় আমূল পরবর্তন ঘটবে। এক নজরে ২০০৯ থেকে ১৮ জুলাই ২০২০ সাল পর‌্যন্ত সাড়ে ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতের উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩ হাজার ১০০ মেগাওয়াট থেকে ২১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট থেকে ১৩ হাজার ৩৮৭ মেগাওয়াটে উন্নীত করা, বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭% থেকে ৯৭ %-এ উন্নীত করা; মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২২০ কিলোওয়াট আওয়ার হতে ৫৬৪ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত করা। ৯৯ লাখ নতুন গ্রাহক সংযোগের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহককে বিদ্যুৎসুবিধা প্রদান।

বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনার লক্ষ্যে যে ভার্টিকাল সেপারেশনের মাধ্যমে সঞ্চালন খাতকে উৎপাদন ও বিতরণ খাত থেকে পৃথককরণের জন্য কোম্পানি আইনের আওতায় ১৯৯৬ সালে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড গঠন করা হয়।

পিজিসিবি সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন সিস্টেম নেটওয়ার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন, পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সঞ্চালন গ্রিড নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে থাকে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সঙ্গে সংগতি রেখে বিদ্যুতের গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি, দক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি বৃদ্ধির মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, তাহলো:

অনলাইনের মাধ্যমে নিয়োগ ব্যবস্থাপনা চালু , সেচকাজে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ; কেপিআই ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠাকরণ; ই-টেন্ডারিং, ই-ফাইলিং ও সমন্বয় সভার জন্য অনলাইন-ভিত্তিক সফটওয়্যার চালুর মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন; অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, মোবাইল ফোন ও অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ; পিএমআইএস সফটওয়্যার পদ্ধতি চালুকরণ, অডিট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার বাস্তবায়ন, অনলাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন ব্যবস্থাপনা, ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎসেবা প্রদান, প্রি-পেইড মিটারিং পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবিদার।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি কার্যক্রম

বাংলাদেশে গ্যাসের মজুদ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আর বিদ্যুৎ খাতের বড় যে প্রকল্পগুলো এখন বাস্তবায়নের পথে তা শেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতেও সময় লাগবে। এই সময়ে দেশের সম্পদ কাজে লাগিয়ে তুলনামূলক কম অর্থ বিনিয়োগ করে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য খাত থেকে ৪ শ’ ৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সরকার চলতি বছরের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে ৮ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ জন্য রোডম্যাপও প্রণয়ন করেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিই আমাদের ভবিষ্যৎ। কারণ এই খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় অন্য যেকোনো পদ্ধতির চেয়ে কম। ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ঘিরে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তি বা জ্বালানির ব্যবহার ও এর উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২০০৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিনীতি কার্যকর করা হয়। নীতিমালায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির মূল উৎস হিসেবে সৌর শক্তি, বায়ুশক্তি, বায়োমাস, হাইড্রো, বায়ো ফুয়েল, জিও থার্মাল, নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদিকে শনাক্ত করা হয়েছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালায় চলতি বছর এবং তার পরবর্তী বছরগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তি হতে ১০% বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার নবায়নযোগ্য শক্তি হতে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে পাবলিক সেক্টর ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট এবং বাকি অংশ বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হবে।

জ্বীবাশ্ম জ্বালানির সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা শক্তির মূল পার্থক্য হলো শক্তির উৎসটির নবায়নযোগ্যতা, তথা যে উৎসটি ব্যবহার করা হবে, সেটি যাতে সহজে নিঃশেষ না হয়ে যায়।

জীবাশ্ম জ্বালানির বিভিন্ন উৎস যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল ইত্যাদির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সহজে নিঃশেষ হয়ে যায়। অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস যেমন সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সহজে নিঃশেষ হয়ে যায় না। বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি উৎপাদনক্ষম নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয় গত শতকের ষাটের দশকে। যা পূর্ণ কর্মক্ষমতা অর্জন করে নব্বইয়ের দশকে। বিংশ শতকের শেষেরদিক থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্যান্য উৎস যেমন, সৌরশক্তি বাংলাদেশে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। বেসরকারি উদ্যোগে ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রামীণশক্তি নামে একটি প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা দিতে কাজ শুরু করে। তবে সৌরশক্তির অধিকাংশ ব্যবহারই শুরু হয় ব্যক্তিপর্যায়ে, যা জাতীয় গ্রিডের বাইরে।

১৯৬২ সালে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সমাপ্ত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ইউনিটে ২ শ’ ৩০ মেগাওয়াটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর স্থাপন করা হয়। পানির প্রবাহ ছাড়া আর কোনো জ্বালানি না লাগায় কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটে খরচ হয় ২৫ পয়সারও কম। কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রেটিকে ২০১৫ সালের জাতীয় শ্রেষ্ঠ বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা ছিল সর্বোচ্চ ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্বীকৃতি।

দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত হয় ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্টে। মুহুরী প্রজেক্ট হলো দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। মুহুরী প্রজেক্ট বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০০৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হয়েছিল। বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবস্থিত ৪টি ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন দিয়ে প্রায় এক মেগাওয়াাট (০.৯) বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে, ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায় চালু হয় ১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ২য় বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ২০ কিলোওয়াাট ক্ষমতার ৫০টি টারবাইন দ্বারা ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত উৎপাদনে যাওয়া ৫ শ’ ৪ দশমিক ৪৬ মেগাওয়াটের বেশি সৌর বিদ্যুতের মধ্যে ২ শ’ ১দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতই জাতীয় গ্রিডের বাইরে। এর মধ্যে রয়েছে ৬০ লাখের বেশি সোলার হোম সিস্টেম, যার পরিমাণ প্রায় ১ শ’ ৯৮ দশমিক ৮৪ মেগাওয়াট। আরও রয়েছে প্রায় ৫শ’টি সোলার পাম্প যাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ৬.৪৩ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৫৫০টি সোলার ইরিগেশন পাম্প স্থাপন করেছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লি.। এছাড়াও সারা দেশের সরকারি অফিস বাণিজ্যিক ভবন, শপিংমলসমূহে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অসংখ্য সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হচ্ছে। বায়োগ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, হাইড্রো ভিত্তিতে ২৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সারা দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে ৫ থেকে ৫শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিমাসে প্রায় ৬৫ হাজার বাড়িতে নতুন করে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপিত হচ্ছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারা, কক্সবাজার, কুতুবদিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ু‚ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। ইতিবাচক বিষয় এই যে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে এটি দ্রুত ও সফলতম নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্মসূচি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কোস্টারিকা ২০১৭ সালের প্রায় পুরোটাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিয়ে পার করেছে। তেল-গ্যাস-কয়লার মতো পরিবেশবিধ্বংসী জ্বালানি ছাড়াও যে বিদ্যুৎচাহিদা মেটানো সম্ভব, তা ভালোমতোই প্রমাণ করেছে মধ্য আমেরিকার এই দেশটি। কোস্টারিকার মোট চাহিদার ৯৯ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে নবায়োনযোগ্য শক্তির মাধ্যম থেকে। এছাড়া বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও ভারতসহ বিশ্বের ৪৩ দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন বিষয়ক সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যানুযায়ী সরকার দেশের সব মানুষকে বিদ্যুৎসুবিধা দিতে বদ্ধপরিকর। সে অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে ৪ হাজার ৬৭৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। একইভাবে ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৮৩৩, চলতি বছরে ৪ হাজার ৭২ এবং ২০২১ সালে ৩ হাজার ৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা। এ চার বছরে যুক্ত হওয়া বিদ্যুতের মধ্যে সরকারি খাত থেকে আসবে ৮ হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং বেসরকারি খাত থেকে ৭ হাজার ৪৯৫ মেগাওয়াট। পিডিবির মতে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুতের যে মহাপরিকল্পনা করেছে, তাতে চলতি বছরের মধ্যে দেশের মানুষ শতভাগ বিদ্যুৎ পাবেন। বিদ্যুতের উৎপাদন যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে চাহিদাও। সে চাহিদাপূরণে সরকারও বদ্ধপরিকর। মহাপরিকল্পনা অনুসারে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এবার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পালা। সেখানে আছে বড় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ বছর বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। বর্তমানে মাতারবাড়ি, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট । সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কয়েকটি বড় কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এখন পর্যন্ত নির্মাণকাজ শুরু হওয়া বড় কেন্দ্রের সবক’টিই কয়লাভিত্তিক। এ কাজে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ কেন্দ্রগুলোর ৯০ ভাগের মতো কাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশকে চলতি বছরের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে চলতি বছরের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কয়লাভিত্তিক বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের ঘোরতর আপত্তি রয়েছে।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক

এ বিভাগের আরো খবর