বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্বাচন ও বিএনপির নির্বাচনি আন্দোলন

  •    
  • ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ১৬:২১

দেশজুড়ে এখন নির্বাচন চলছে। এ নির্বাচন স্থানীয় সরকারের। ধাপে ধাপে চলছে পৌরসভার নির্বাচন। এরই মধ্যে দুই ধাপ নির্বাচন হয়েছে। আরও তিনধাপ হবে।

পাশাপাশি চলছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা। একসময় বাংলাদেশে নির্বাচন মানেই ছিল উৎসব, বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন গ্রামে-গঞ্জে আনন্দের ফোয়ারা ছোটাতো। উৎসবের সেই রং বিবর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন, একতরফা নির্বাচন এখন আর মানুষকে টানে না।

আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কেমন হচ্ছে? আমি তাকে বলব, আগের মতোই। মানে গত একযুগে বাংলাদেশে নির্বাচনের একটা অভিনব স্টাইল দাঁড়িয়ে গেছে। যেখানে বিরোধী দলের ভূমিকা নেই বললেই চলে। ব্যাপারটা হতে হতে যেন সবার গা সওয়া হয়ে গেছে। এখন আর খুব বেশি প্রতিবাদও হয় না। যেন নির্বাচন এমনই হওয়ার কথা। বাংলাদেশের একটা প্রজন্ম আসলে জানেই না সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন কী এবং কেমন? গণতন্ত্রের জন্য এ বড় বেদনাদায়ক। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের ধন্যবাদ। তারা ছিলেন বা আছেন বলেই নির্বাচন এখনও আলোচনায় থাকে, উত্তাপ ছড়ায়, মারামারি হয়। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে সব এলাকাতেই তাদের একাধিক প্রার্থী থাকে।

সবাই মনে করছেন, এখন আওয়ামী লীগের মার্কা পেলেই নির্বাচনে জয় অবশ্যম্ভাবী। তাই দলের মনোনয়নের জন্য তারা যতটা ব্যাকুল থাকেন, জেতার জন্য ততটা নয়। তারা জানেন, নির্বাচন এখন যেমন সিস্টেমে পড়ে গেছে, মনোনয়ন পেলে জয় কোনো সমস্যানয়। মনোনয়ন কেনাবেচা নিয়েও অনেক গল্প শুনি।

কয়েকবছর আাগে, আমার মামাবাড়ি এলাকার এক লোক আমার অফিসে এসেছিলেন। জানালেন তিনি দীর্ঘদিন সৌদি আরবছিলেন। এখন ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করতে চান। আমি ভেবেছি, কাভারেজ চাইবেন। কাভারেজের কথা বলতেই, তিনি হেসে উঠলেন, বললেন, কাভারেজ লাগবে না, মনোনয়ন দরকার। তিনি যা বললেন, তা পিলে চমকানোর মতো, মনোনয়ন পেতে টাকা লাগবে। টাকা দিতে তার আপত্তি নেই। তিনি শুধু চান, টাকা দেয়ার পর তিনি যেন মনোনয়ন পান, তা যেন আমি নিশ্চিত করে দেই। কারণ টাকা আরও অনেকে দেবে। মনোনয়ন না পেলেও টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। তাই টাকা যা-ই লাগুক, তিনি মনোনয়নের গ্যারান্টি চান। শুনে আমি চমকে গেছি। আমার পক্ষে সম্ভব নয় বলে দ্রুত তাকে বিদায় করেছি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেই জয়, এই নিশ্চিন্তিতে বাগড়া দিয়েছেন, দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরাই। মারামারি, কাটাকাটি যা হয়, সব নিজেদের মধ্যেই। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ। তবে ধন্যবাদ পাবে বিএনপিও।

বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন এবং আওয়ামী লীগ গোপনে হলেও বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাতে পারে। কারণ বিএনপি নিয়ম করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। তাতে অন্তত ইতিহাসে লেখা থাকবে, বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হলেও অংশগ্রহণমূলক ছিল।প্রধম দুই ধাপের ৮৪টি পৌরসভার মধ্যে বিএনপি মনোনীত মেয়র জিতেছেন ৮টিতে। আর আওয়ামী লীগ জিতেছে ৬৪টিতে। এখন বিএনপিকে মেনে নিতে হবে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির ব্যবধান এখন ৬৪-৮। আর নইলেনির্বাচনের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু বিএনপি কোনোটাই করছে না।

দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘যেভাবে সারা দেশে নির্বাচন হচ্ছে, তাতে জনগণের মতামত প্রকাশিত হয় না। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই, কথা বলার অধিকার নেই। তারপরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। কারণ, নির্বাচনে অংশ নেয়াটা বিএনপির আন্দোলনের একটা অংশ। আমরা দেশে গণতন্ত্র চাই, দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই।’ বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে কীভাবে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে, দেশে মানুষের অধিকার ফিরে আসবে জানি না। কিন্তু একটা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়াটা অবশ্যই ধন্যবাদযোগ্য। কিন্তু নির্বাচনের দিন বিকেলে ‘প্রমাণিত হলো এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’ এটুকু বলার জন্য নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোনো মানে হয় না।

বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়ার যুক্তিগুলো আমি জানি। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী, ক্ষমতামুখী দল। তাই দিনের পর দিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং নির্বাচন বর্জন করে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন। তাছাড়া সরকারি দলের মামলা-হামলার মুখে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঠিকমতো মাঠেই নামতে পারে না।

নির্বাচনের সময়টায় তারা নির্বিঘ্নে মাঠে নামতে পারে, থাকতে পারে। তাই হারজিতের চেয়ে মাঠে নামার এই সুযোগটা তারা কাজে লাগাতে চায়। তাই নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে বিএনপির নির্বাচনের অংশ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া নির্বাচনে অংশ নিলে নেতাদের মনোনয়ন বাণিজ্যটাও জমে ওঠে। ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকেই বিএনপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ অনেকটা ওপেন সিক্রেট। তবে শুধু মাঠে নামা নয়, বিএনপি যদি জেতার জন্য মাঠে নামতো, তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচনের আমেজ আবার কিছুটা হলেও ফিরে আসতো।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপি জেতার জন্য অংশ নেয়নি। নির্বাচনের পাঁচদিন আগেও তাদের ছন্নছাড়া মনে হয়েছে। কোনো প্রস্তুতি, সমন্বয় কিছুই দেখা যায়নি। অথচ কারচুপি করার সুযোগ আছে, পুলিশ-প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে জেনেও আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দারুণ প্রস্তুতি নিয়েছিল; গবেষণা-টিম ওয়ার্কও ছিল দুর্দান্ত। এমন প্রস্তুতি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনেও একটি দলকে অনেক এগিয়ে রাখতে পারে। সে তুলনায় বিএনপি কিছুই করেনি। তাদের দেখে মনে হয়েছে, তারা অপেক্ষা করছে, কখন নির্বাচন শেষ হবে, কখন তারা হারবে এবং কখন ব্রিফিং করে সরকারি দলকে দোষ দেবে।

মির্জা ফখরুল যে বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়া তাদের আন্দোলনের অংশ। সেটা বুঝলাম। অংশটা তো দেখি, আন্দোলনটা কোথায়?বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচনের একটি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন। কিন্তু কিছু কথা বলা ছাড়া বিএনপি সেই নির্বাচনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। না রাজপথে, না আদালতে, না নির্বাচন কমিশনে। শুরুতে সংসদকে অবৈধ বললেও পরে তাতে যোগ দিয়ে বৈধতাও দিয়েছে। এখন কিন্তু বিএনপিও ২০১৮ সালের নির্বাচন মেনে নিয়েছে। ইতিহাসে তাই লেখা থাকবে।

গত ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের পৌর নির্বচনের পরদিন প্রথম আলোর শিরোনাম ছিল, ‘প্রচারে থাকলেও ভোটে সক্রিয় ছিল না বিএনপি’। এখন আপনারাই বলুন, ভোটে সক্রিয় না থাকলে বিএনপি জিতবে কীভাবে? বিএনপি এজেন্ট দেয় না বা দিলেও তারা কেন্দ্রে যান না। কিন্তু অভিযোগ করা হয়, বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। শুধু অভিযোগের জন্য নির্বাচনে যাওয়াটা হাস্যকর। বিএনপির মধ্যে কারো নির্বাচনে জেতা বা ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো তাগিদ নেই। তারা যেন কিছু একটার অপেক্ষায় বসে আছে। কেউ একজন তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।

ক্ষমতায় যেতে হলে আন্দোলন করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে, নির্বাচন করতে হবে, নির্বাচনে জিততে হবে। আমরা চাই বাংলাদেশে আবার সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ফিরে আসুক।

আমি জানি, এই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপির কিছু ছদ্মবেশী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে ঘুরে বলবে, সাংবাদিকরাই এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। সাংবাদিকদের তেলবাজির কারণেই সরকার টিকে আছে। তাদের কথা শুনে মনেহয়, বিএনপি বা এর নেতাকর্মীদের কিছু করতে হবে না। সাংবাদিকরা সমর্থন তুলে নিলেই সরকারের পতন ঘটবে। সেই ছদ্মবেশী, ফেক আইডির বিএনপি সমর্থকদের বলে রাখি, ভাইয়েরা আপনারা ছদ্মবেশে নিরাপদ ফেসবুকিং রেখে একটু মাঠে নামুন।

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর