বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বঙ্গবন্ধু ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

  •    
  • ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:২৩

ছয় দফা আন্দোলনকে ঘিরে অভূতপূর্ব সংগ্রামের দাবানল পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর ভীতকে কঠিন নির্বীজ নড়বড়ে করে তোলে। ভীত-সন্ত্রস্ত শাসকগোষ্ঠী ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য’ নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করে বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।

এটি সর্বজনবিদিত যে, মুক্তির মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফা ছিল বাঙালি মুক্তির ম্যাগনাকার্টা। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলসমূহের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সাংবাদিকদের ছয় দফার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘আমার প্রস্তাবিত ছয় দফা দাবীতে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি শোষিত, বঞ্চিত আদম সন্তানের অন্তরের কথাই প্রতিধ্বনিত হইয়াছে, তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই।’

জাতীয় কবি নজরুলের ‘মানুষ’ কবিতার পঙক্তিগুলোর যেন জোরালো অনুরণন ছিল বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্যে - ‘গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান/ নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,/সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন ও ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে পাকিস্তানি নিকৃষ্ট শাসকগোষ্ঠী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবেই চিহ্নিত করে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামরিক সকল ক্ষেত্রে প্রচণ্ড অমানবিক শোষণ-দমন ও নিপীড়নের পন্থা বেছে নিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে অনগ্রসর-পশ্চাৎপদ অঞ্চলে পরিণত করার কুৎসিত কৌশল অবলম্বন করে।

বাঙালি জাতীয়তাবাদের অভিনব বিকাশমানতায় পূর্ণাঙ্গ পরিপুষ্ট এই ছয় দফা ছিল দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌলিক বৈতরণী। ছয় দফার পক্ষে অদমনীয় বাঙালির প্রগাঢ় সমর্থনে তীব্র গণআন্দোলন সূচনা ও দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে শহীদ মনু মিয়া-শফিক-শামসুল হকসহ ১০ বাঙালির প্রাণ বিসর্জন আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি করে।

তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ছয় দফা আন্দোলনকে ‘বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন’ হিসেবে কলুষিত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক মামলা করে ১৯৬৬ সালের ৮ মে তাকে গ্রেপ্তার করা হলে ৬ জুন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুসহ রাজবন্দীদের মুক্তি ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে হরতাল আহ্বান করা হয়। ৭ জুন ১৪৪ ধারা জারি করে কঠোর গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের কারণে ৮ জুনের পত্রিকায় এ সম্পর্কিত কোনো সংবাদই প্রকাশিত হয়নি। ১৫ জুন ইত্তেফাক সম্পাদক শ্রদ্ধাভাজন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার ও ইত্তেফাক পত্রিকা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

এই ছয় দফা আন্দোলনকে ঘিরে অভূতপূর্ব সংগ্রামের দাবানল পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর ভীতকে কঠিন নির্বীজ নড়বড়ে করে তোলে। ভীত-সন্ত্রস্ত শাসকগোষ্ঠী ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে কথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য’ নামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করে বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।

এর বিরুদ্ধে হিংস্র স্বৈরশাসকের নরপশুতুল্য বাহিনীদের সমস্ত রক্তচক্ষু-কুৎসিত আক্রমণ-গুলি বর্ষণের ভয়কে জয় করে হাজার হাজার ছাত্র জনতা আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য বজ্রকঠিন শপথ গ্রহণ করে। ‘জেলের তালা ভাঙ্গব, শেখ মুজিবকে আনব। তোমার নেতা, আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব’ স্লোগানের প্রতিপ্রভায় উজ্জীবিত আন্দোলন নতুন মোড় নেয়। ছাত্রনেতা আসাদ, শিক্ষক ড. সামসুজ্জোহা, স্কুল ছাত্র মতিউর, সার্জেন্ট জহুরুল হকের রক্তে রঞ্জিত আন্দোলনের তীব্রতা অনুভব করে শাসকগোষ্ঠী ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

এর পরের দিন অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বিশাল ছাত্র জনতার অকুণ্ঠ সমর্থনে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হন। কথিত এই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ‘জবানবন্দি’ ছিল বিশ্ব ইতিহাসের সর্বোচ্চ নন্দিত অসাধারণ অন্যতম দলিল। এই জবানবন্দিতে বঙ্গবন্ধু বিদ্যালয় জীবনের সূচনা থেকেই ভারতীয় ও বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার নিরলস সংগ্রামে তার অংশগ্রহণ এবং শিক্ষা জীবন বিসর্জনের কথাও ব্যক্ত করেছেন।

১৯৪৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ গঠন, ১৯৫৪ সালে প্রথমে প্রাদেশিক পরিষদ ও পরে জাতীয় বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত এবং দুইবার পূর্ব পাকিস্তান সরকারে মন্ত্রিত্ব লাভের কথাও উল্লেখ করেন।

সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর ১৯৬৪ সাল থেকে পাকিস্তানের উভয় অংশে আওয়ামী লীগকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা, পাকিস্তানের সম্মিলিত বিরোধী দলের অঙ্গ দল হিসেবে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট পদে ফাতেমা জিন্নাহকে সমর্থন, ১৯৬৫ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে ভারতীয় আক্রমণের বিরুদ্ধে গভীর নিন্দা প্রকাশ।

সরকারের যুদ্ধ প্রচেষ্টার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপনের কথা বঙ্গবন্ধু অকপটে উক্ত জবানবন্দিতে সুস্পষ্ট করেন, যুদ্ধাবসানে অন্যান্য রাজনীতিকের সঙ্গে আমন্ত্রিত হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণে আইয়ুব খানের সঙ্গে সাক্ষতের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও যুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতার আলোকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বয়ংসম্পূর্ণ সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আবেদন জানান।

সকল আন্তর্জাতিক বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে মীমাংসা হওয়া উচিত বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর দল ‘তাসখন্দ ঘোষণা’ সমর্থন করেন। অত্যন্ত সুনিপুণ বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তাঁর এই জবানবন্দিতে ছয় দফা কর্মসূচি প্রণয়ন-উপস্থাপন এবং এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রদেশের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের বক্তব্যে অবিস্মরণীয় গৌরবগাঁথায় নিজেকে অভিষিক্ত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এবং তাঁর দলের কর্মীদের নিপীড়ন-নির্যাতন-গ্রেফতারি পরোয়ানা-কারাবরণ ইত্যাদির দুঃসহ দিনলিপির ঘটনাও তুলে ধরেন।

বঙ্গবন্ধু তার জবানবন্দিতে যাদের নাম উল্লেখ করেছেন; তারা হলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শীর্ষে থাকা তাজউদ্দিন আহমদ, খোন্দকার মুশতাক আহাম্মদ, মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রামের আজিজ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, জহুর আহমদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, মোমেন অ্যাডভোকেট ও ওবায়দুর রহমান।

এছাড়াও রয়েছেন ঢাকার শামসুল হক, হাফিজ মোহাম্মদ মূসা, মোল্লা জালালউদ্দিন আহম্মদ অ্যাডভোকেট, ক্যাপটেন মনসুর আলী, আমজাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আহম্মদ, পাবনার অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জের মুস্তফা সরোয়ার, মহিউদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদুল্লাহ ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। বঙ্গবন্ধুর এই তালিকায় আরও রয়েছেন ঢাকার সিরাজউদ্দিন আহমদ, হারুনুর রশীদ, শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, আবদুল হাকিম, রশীদ মোশারফ, সুলতান আহম্মদ, নুরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের আবদুল মান্নান, পাবনার অ্যাডভোকেট হাসনাইন, মোমেনশাহীর আবদুর রহমান সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধুর দুই নিকট আত্মীয় শেখ ফজলুল হক মণি ও শেখ শহীদুল ইসলাম; সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, চট্টগ্রামের ইদ্রিসসহ বিপুলসংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, ছাত্রনেতা ও শ্রমিক নেতা।

বঙ্গবন্ধু বিচারকার্য শুরুর একদিন আগে ১৯৬৮ সালের ১৮ জুন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে অন্যতম কৌঁসুলি নিয়োগ করেন। অত্যন্ত জ্ঞানাঙ্কুর মেধাবী অভিজ্ঞ রাজনীতিক বঙ্গবন্ধু অন্যান্য নেতাকর্মীর এই মামলা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে তাঁদের সঙ্গে কোনো ধরনের সাক্ষাৎ হয়নি মর্মে জবানবন্দিতে বক্তব্য প্রদান করেন। এদের মধ্যে ছিলেন লে. ক. মোয়াজ্জেম হোসেন, লে. মোজাম্মেল হোসেন, এক্স-করপোরাল আমির হোসেন, এল. এস. সুলতান উদ্দিন আহম্মদ, কামালউদ্দিন আহাম্মদ, স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান, ফ্লাইট সার্জেট মাহফুজ উল্লাহ্ ও এই মামলায় জড়িত অন্যান্য স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সরকারি আমলা বিশেষ করে আহম্মদ ফজলুর রহমান, রুহুল কুদ্দুস ও খান মোহাম্মদ শামসুর রহমানের সঙ্গে কখনো কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা বা ষড়যন্ত্রেও ব্যাপৃত হননি মর্মে জবানবন্দি দেন। চট্টগ্রামের ডাক্তার সাঈদুর রহমান ও মানিক চৌধুরীকে এই কথিত ষড়যন্ত্রে সাহায্য করতে বলেননি এবং তারা চট্টগ্রামের অন্যান্য সাধারণ কর্মীর নামমাত্র উল্লেখ করে অভিযুক্ত সব নেতাকর্মীর এই মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানকল্পে জবানবন্দিতে প্রাণান্ত প্রচেষ্টার অমর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

বঙ্গবন্ধু তার প্রদত্ত জবানবন্দির শেষপর্যায়ে বলেন, ‘বর্তমান মামলা নিষ্পেষণ ও নির্যাতননীতির পরিণতি ছাড়া আর কিছুই নহে। অধিকন্তু স্বার্থবাদী মহল কর্তৃক শোষণ অব্যাহত রাখার যে ষড়যন্ত্রের জাল বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিস্তার করিয়াছে এই মামলা তাহারই বিষময় প্রতিক্রিয়া। আমি কখনো পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান হইতে বিছিন্ন করিবার জন্য কোনো কিছু করি নাই কিংবা কোনদিনও এই উদ্দেশ্যে কোনো স্থল, নৌ বা বিমানবাহিনীর কোনো কর্মচারির সংস্পর্শে কোনো ষড়যন্ত্রমূলক কার্যে আত্মনিয়োগ করি নাই। আমি নির্দোষ এবং এ ব্যাপারে পরিপূর্ণরূপে অজ্ঞ। তথাকথিত ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।’

স্বল্প পরিসরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিস্তারিত বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে পারছি না বলে আমি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে আমার লেখায় ঘটনার নেপথ্যে ভূমিকা পালনকারী নেতাকর্মীদের সামগ্রিক বর্ণনা লিপিবদ্ধ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

অতিসম্প্রতি দেশের সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় জনগণ অনুধাবন করছে যে; মুখোশধারী অসৎ-দুর্নীতিবাজ-অযোগ্য-অপদার্থ অনুপ্রবেশকারীরা অবৈধ-অনৈতিক পন্থায় তদবির-লবিং বাণিজ্যের নষ্ট আশ্রয়ে ছলচাতুরি-মিথ্যাচার-শঠতা-প্রতারণা-নিপুণ অভিনয়শৈলির অপপ্রয়োগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পদ-পদবি দখলে নিয়েছে।

কেন্দ্র থেকে প্রান্তিকপর্যায়ে কথিত কিছু গণ-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু সিন্ডিকেটেড সাংবাদিকতার নিরাভরণ ও ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রতিবেদনে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। ত্যাগী ও পরীক্ষিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক লড়াকু সৈনিকদের চরিত্রহনন-বশীভূত মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে সত্যনিষ্ঠ মূল্যায়নের পরিবর্তে চরম অবমূল্যায়নে তাঁদেও কোণঠাসা করার দুর্দৈব পরিণাহ অবলম্বন করে চলেছে।

নির্লোভ-নির্মোহ-সৎ-যোগ্য-দেশপ্রেমিক মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক প্রেরণায় পরিদৃষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত দল ও তদন্তের তথ্য-উপাত্তের পুনঃবাছাই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করতে হবে। অন্যথায় অন্ধকারের পরাজিত-মানসিক বিকারগ্রস্ত অশুভ শক্তি তাদের গোপন এজেন্ডা কার্যকরণে অভয়ারণ্য প্রস্তুত করতেই থাকবে। নিষ্ফল নির্দয় সেনা শাসকদেও দেশ শাসনকালে সুবিধাভোগী-বাদিরা ‘সরকার ও দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা তাদের অপশক্তির খুঁটি’ অপপ্রচার চালিয়ে সংগোপনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দেশ ধ্বংসের পরিকল্পনা করে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে সকল কদর্য কর্মকৌশল বিনাশ করে বঙ্গবন্ধুর পবিত্র স্বপ্নের দৃশ্যমান সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সুদৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেই। এই প্রত্যাশায় বিশ্বকবি রবিঠাকুরের ‘প্রান্তিক’ কাব্যগ্রন্থে রচিত পঙক্তি ‘নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,/শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস-/ বিদায় নেবার আগে তাই ডাক দিয়ে যাই/ দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।’ উপস্থাপনে নিবন্ধের ইতি টানছি।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিভাগের আরো খবর