বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাত্রলীগে আমার এক যুগ

  • হামজা রহমান অন্তর   
  • ৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:০১

আমার ক্যাম্পাস লাইফের প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে সংগ্রাম করে। হয় ছাত্রদল বা শিবির অথবা বামদের না হয় ঘরের শত্রু বিভীষণকে মোকাবিলা করে। এদের দ্বারা এমন কোনো অপবাদ নেই যে কপালে জোটেনি! কতো যে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছি!

২৫ ডিসেম্বর ২০০৮, জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ সেদিন সবচেয়ে বড় সভা করবেন ভোলার দৌলতখান উপজেলায়। সকাল থেকেই আমাদের বাড়িতে দলীয় নেতাকর্মীদের আনাগোনা।

একটু পরেই ভবানীপুর ইউনিয়ন থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে দৌলতখান বাজারের দক্ষিণ মাথা দিয়ে মিছিল ঢুকবে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে তৈরি করা মঞ্চের দিকে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্ম আমার, বাবা মাকসুদুর রহমান ছিলেন বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক। মামারা সবাই ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। জয়বাংলার সাথে পরিচয় রক্তের মাধ্যমে হলেও তখন পর্যন্ত কখনও মিছিল করা হয়নি। কতোই বা বয়স তখন, কেবল ক্লাস টেনের ছাত্র!

সে সময় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন মায়ের আপন চাচাতো ভাই ফয়েজউল্লাহ। দৌলতখান আবু আবদুল্লা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আপন মামা মাকসুদুর রহমান বাহার।

মামারা মিছিলের নেতৃত্বে, আমার কিশোর মন আনচান করছে সমাবেশে যাব; যোগ দিলাম ছাত্রলীগের মিছিলে। বাজার থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্ব ভবানীপুর ইউনিয়নের। ফরাজি কান্দির চার রাস্তার মোড় হয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে মিছিল ঢুকলো দৌলতখান বাজারে।

২৯ তারিখ শুভ দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন!

ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তোফায়েল ভাইকে শুভেচ্ছা!

বাংলা ও বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের অগ্নিবীণা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৭ হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগে, গণতান্ত্রিক সকলে লড়াই-সংগ্রামে বাংলাদেশকে বারবার ঋণী করে দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে এই ছিল, আমার প্রথম প্রণয়ের ছোটগল্প। এর কয়েকদিন পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যক আসনে জয়লাভ করে প্রায় সাড়ে ৭ বছর পর রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে।

আমি ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদ কেন্দ্রে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমের সদস্য হিসেবে ভোর রাত থেকে পরের দিন সন্ধ্যায় বিজয় নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত মাঠে ছিলাম। আমাদের দৌলতখান উপজেলায় বিপুল ভোটে বিজয়ের মাধ্যমে ভোলা-২ আসন থেকে জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদের বিজয় নিশ্চিত হয়, কারণ বোরহানউদ্দিন উপজেলায় তিনি চারদলীয় জোট মনোনীত বিজেপির প্রার্থীর নিকট পরাজিত হয়েছিলেন।

মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলাম ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে চোখেমুখে রাজধানী ঢাকায় উচ্চ মাধ্যমিকের স্বপ্ন তখন। সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ও বিএএফ শাহীন কলেজে চান্সও হলো।

কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়াল পরিবার। এই বয়সে কোনোভাবেই তারা আমায় ঢাকায় ছাড়বেন না। অগত্যা ভর্তি হতে হলো স্থানীয় দৌলতখান আবু আবদুল্লা কলেজে।

ক্লাস শুরু করেছিলাম সম্ভবত জুন মাসে, কলেজের পশ্চিম প্রান্তে মানবিক গ্রুপের টিনশেডের ক্লাসরুমে ছাত্রলীগের নবীনবরণে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়েজ মামাকে একাদশ শ্রেণির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছিলাম আমি।

আমাদের প্রথম সহযোদ্ধা ছিলেন বন্ধুদের মধ্যে আমি (উপজেলার সহ-সভাপতি) রায়হান (উপজেলার দপ্তর সম্পাদক), হারুন (উপজেলার সদস্য), রমজান (উপজেলার অর্থ সম্পাদক), মনির (শুকদেব), জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (উপজেলার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সম্পাদক), ইসমাইল, ফাহাদ (উপজেলার সমাজসেবা সম্পাদক), নোমান (উপজেলার স্কুলছাত্র সম্পাদক), মনির (হেলিপ্যাড), রোকন (ইউনিয়ন সভাপতি ও পৌর সহ-সভাপতি), সোহাগ। পরবর্তীতে যোগ দেয় বন্ধু সাকিব (উপজেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক), লিপন (উপজেলার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক), রাকিব (পরবর্তীতে কলেজ সভাপতি ও আহবায়ক) প্রমুখ। সিনিয়রদের মধ্যে সুমন মামা (উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক), মিরাজ ভাই (উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক), ফরাজি নীরব ভাই (কলেজের আহবায়ক), মিজু ভাই (সরকারি হাইস্কুলের সভাপতি), নীরব ভাই (সাইক্লোন শেল্টার), মাহাবুব ভাই (কলেজের যুগ্ম আহবায়ক), নবু ভাই, সজীব ভাই, মুহিত মামা তারা ছিলেন।

২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ব্যান্ড বাজিয়ে মিছিল/শোভাযাত্রা নিয়ে প্রদক্ষিণ করেছি পুরো দৌলতখান বাজার।

আমার এখনও মনে আছে, একটা রিকশায় আমি আর রায়হান দুটো ড্রাম বাজাচ্ছিলাম হাতে স্টিক নিয়ে। আমাদের সামনে পেছনে কয়েকশ ছাত্রের শোভাযাত্রা।

কলেজের দুইটা বছর ছাত্রলীগের রাজনীতি আর সাংস্কৃতিক সংগঠন করেই কেটেছে, যারা প্রভাব পড়েছিল উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে। যুক্ত ছিলাম বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটসের সঙ্গেও।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও তৎকালীন শিক্ষক শ ম ফারুক স্যারের সহায়তায় ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক শাখা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলাম ‘দৃক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’ নামের একটি সংগঠন।

আমরা নাটক করতাম, গান গাইতাম, আবৃত্তি করতাম, পহেলা বৈশাখে মেলার আয়োজন করতাম, বনভোজন আয়োজন করতাম, আবার প্রয়োজন হলে ছাত্রদলের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বজ্র হয়ে ঝড়ে পড়তাম।

কেন জানি কলেজ ছাত্রদলের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী ছাত্র হিসেবে অত্যন্ত কুছাত্র ও মানুষ হিসেবে বখাটে ছিল। আর ইসলামী ছাত্রশিবির বরাবরের মতোই কাপুরুষের মতো গোপনে থাকত, ভুলেও সামনে আসত না।

কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করিনি, কলেজ ছাড়ার আগে দুই যৌন নিপীড়ক শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করেছি। আমার ফলাফল খারাপের পেছনে সেই দুই শিক্ষকও দায়ী। কারণ তারা সেই ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নের ব্যবহারিক নম্বরে।

কখনও যে ভুল করিনি, তা নয়, গ্রুপিং ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোলেও জড়িয়ে পড়েছিলাম। এখন এসব মনে পড়লে লজ্জা পাই।

কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, তৃণমূল ছাত্রলীগের রাজনীতিতে এই ছিল আমার প্রাপ্তি। আমাদের সংসদ সদস্য ছিলেন জননেতা তোফায়েল আহমেদ। বর্তমান সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল তখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সদ্য নির্বাচিত পৌর মেয়র ছিলেন।

২০১১ সাল। স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উঁকিঝুঁকি থাকার কারণে খুব সহজেই চান্স হয়ে যায় নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন স্যারের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে।

২০১১ সালের ২১ ডিসেম্বর ক্লাস শুরু হয়, শুরুর কয়দিন গণরুমে বেশ রোমাঞ্চকরভাবেই কাটছিল। আমার এখনও মনে আছে আমাদের হলে (শহীদ রফিক-জব্বার) শুরুর দিকে আমাদের ফাপড় দিতেন ৩৯ ব্যাচের আরিফ ভাই আর নাজমুল ভাই। তারা আমাদের ভয় দেখাতেন, তাদের কথা না শুনলে ৪০ ব্যাচের সাড়ে চারশ ছাত্র আছে, ওদের হাতে ছেড়ে দেবেন। খুবই হাসি পায় সেসব মনে পড়লে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর মাত্র ১৮ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগ কর্মী ও ৩৭ ব্যাচের ছাত্র জুবায়ের ভাইকে খুন করে আরেকটা গ্রুপ। এই ঘটনার পর আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তৎকালীন উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির।

এসব দেখে বাসা থেকে চাপ আসতে থাকে। আবাসিক হলে থাকা যাবে না, মতিঝিল থেকে মামার বাসায় থেকে ক্লাস করতে হবে বাসে আপ-ডাউন করে।

এভাবে গেল দুই মাস। এরপর একদিন বেডপত্র নিয়ে হলে চলে আসলাম মামাকে না জানিয়েই। সাংগঠনিক তৎপরতা না থাকলেও ততদিনে সবাই পলিটিক্যাল ব্লকে (দোতলায়) উঠে গেছে। আমি রয়ে গেছি ২০১ নম্বর গণরুমে। আমার রুমমেট ছিল নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের সাব্বির, পরে আরও কয়েকজন।

লেখালেখির ঝোঁক থাকার কারণে এই সুযোগে কিছুদিন সাংবাদিকতা ও ফটোগ্রাফি করলাম, এভাবে চলল আরও কয়েক মাস।

তখন ছাত্রলীগ বলতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐক্যবদ্ধ কোনো সংগঠন ছিল না। যা ছিল আদতে তা ভিসিলীগ, ভাইলীগ ও তথাকথিত পলিটিক্যাল ব্লকে থাকার আদিখ্যেতা।

২০১০ সালে সাফিন ভাই-সাম্য ভাইয়ের কমিটি ভাঙার পর থেকে এই অচলায়তন চলছিল। আলো হয়ে আসে জনি ভাই-রাজিব ভাইয়ের কমিটি।

২০১২ সালে সেপ্টেম্বরের দিকে ২৫ সদস্যদের কমিটি হয়। আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই, সাবেক ছাত্রলীগকর্মী ও সাংবাদিক গোলাম মুজতবা ধ্রুব ভাইয়ের হাত ধরে রাজিব আহমেদ রাসেল ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়।

তিনি আমাকে জায়গা দিলেন, পলিটিক্যাল ব্লকে উঠতে বললেন, না চাইতে পদও দিলেন, এমনকি তার নিজের হলেও (শহীদ সালাম-বরকত) উঠতে বললেন।

দুটো ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগ প্রজন্ম চত্ত্বরে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের রাজপথে ও কিবোর্ড হাতে সক্রিয় কর্মী ছিলাম।

২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের শাপলা চত্ত্বর অবরোধের দিন আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ অবস্থান নিয়েছিলাম জয়বাংলা গেটে (প্রান্তিক)। উত্তরবঙ্গ ও খুলনা অঞ্চল থেকে শতশত ট্রাকভর্তি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক যাচ্ছিল ঢাকার দিকে, আমরা তাদের বাধা দিচ্ছিলাম।

এ সময়ে জামায়াতপন্থি এক শিক্ষক এসে আমাদের বাধা দেন। আমরাও তাকে উপযুক্ত জবাব দেই। তিনি আমাদের চিনতেন না, শুধু জানতেন আমরা সবাই রাজিব ভাইয়ের অনুসারী।

এক পর্যায়ে রাজিব ভাইয়ের সঙ্গেও তার বাকবিতণ্ডা হয়। এই ঘটনাকে সেই জামায়াতপন্থি শিক্ষক প্রচার করতে থাকে শিক্ষক লাঞ্ছনা হিসেবে। বিএনপি-জামায়াতের শিক্ষকদের চাপের মুখে রাজিব ভাইকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৌখিকভাবে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন তৎকালীন উপাচার্য আনোয়ার হোসেন।

আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেইসব শিক্ষক নামধারী স্বাধীনতাবিরোধীদের মোকাবিলা করে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও দেই। উপাচার্য তার মৌখিক আদেশ ফিরিয়ে নেন।

২০১৪ সালে ভর্তি পরীক্ষার সময়ে বিরিয়ানির দোকানে এমএইচ হলের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রের ফাও খাওয়াকে কেন্দ্র করে এমএইচ হলের সঙ্গে সেক্রেটারি গ্রুপের গণ্ডগোল হয়। এই ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে ২৮ দিন বহিষ্কৃত থাকেন রাজিব ভাই।

দুটো ঘটনা তার নীতির প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দেয়। যদিও পরবর্তী সময়ে তিনি ও জনি ভাই সঠিক নেতৃত্বের হাতে আমাদের রেখে যাননি, যার ফল ভোগ করছে গোটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। জাবি ছাত্রলীগের উপর চলে হাইব্রিড ও প্রশাসনিক দুর্বৃত্তায়ন।

কয়েকটি পরপর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল হওয়ায় তৎকালীন উপাচার্য আনোয়ার হোসেন এক পর্যায়ে জাকসু নির্বাচনের প্রস্তাব দিলেন। তফসিল ঘোষণা দিয়ে শাহনেওয়াজ স্যারকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানিয়ে ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলো।

আমি সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মানসিক প্রস্তুতিও নিলাম। কিন্তু সেই নির্বাচন আর আলোর মুখ দেখেনি। এক পর্যায়ে আন্দোলনের মুখে সরে যেতে হয় তৎকালীন উপাচার্য আনোয়ার হোসেনকেও।

২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১৬১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এক নম্বর কার্যকরী সদস্য হিসেবে নিজেকে খুঁজে পেলাম। বন্ধুদের মধ্যে সহযোদ্ধা হিসেবে আমি (সদস্য), রইস (উপ-সম্পাদক), অভিষেক (সদস্য), সমর (সদস্য), কামরুল (সদস্য), পংকজ, আলাওল, ইমরান, পিয়াল, আনন্দ, রাসেল, শোভন, শুভ, সিনিয়রদের মধ্যে মিঠুন দাদা (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), সেতু ভাই (সহ-সভাপতি) আরিফ ভাই (উপ-দপ্তর), নাজমুল ভাই (পরিবেশ সম্পাদক), সজিব দাদা (আন্তর্জাতিক সম্পাদক), অনিক ভাই (উপ-আইন সম্পাদক), লিংকন ভাই (হল সেক্রেটারি), সীমান্ত ভাই (নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক), নোমান ভাই (সদস্য), জাহিদ ভাইকে (সহ-সম্পাদক) পেয়েছি।

দুই মাস ছাত্রদলের ককটেল ও আগুন সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আমার ভবানীপুর ইউনিয়নের সাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে গ্রামে আসি।

তৎকালীন মেয়র আলী আজম মুকুল ভাইকে ভোলা-২ আসনের এমপি পদে নৌকায় ভোট দেয়ার মুহুর্তটা ক্যামেরাবন্দি করে রেখেছিলাম। অনেকগুলো আসনে ভূমিধ্বস বিজয় ও ওয়াকওভারে আমরা আবারও ক্ষমতায় আসি। কিন্তু এবার দেখতে থাকি ক্ষমতার রাজনীতির কুৎসিত রূপ।

নির্বাচনের আগে আমি আর পংকজ (বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক, জাবি) একটা তালাবদ্ধ রুমে উঠেছিলাম। কিন্তু দল আবার ক্ষমতায় আসার পর হঠাৎ করে শুনতে পাই রুমটা নাকি হল শাখার সভাপতির ছিল।

ছাত্রদলের বিরুদ্ধে এত লড়াই সংগ্রাম হলো, আর এতদিন পরে তার মনে পড়ল উনি হলের সভাপতি ছিলেন! যাই হোক তাকে রুম ছেড়ে দিয়ে আমরা বন্ধুদের সাথে অন্য রুমে উঠলাম।

কিছুদিন পরে তিনি চাঁদাবাজির দায়ে বহিষ্কার হলেন ছাত্রলীগ থেকে, হল শাখার নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন অনিক ভাই। উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্রেটারি রাজিব ভাইয়ের সৃষ্টি হলেও হলের মধ্যে নিজের স্বতন্ত্র গ্রুপ গড়ে তোলেন, তার সঙ্গে আমার ঝামেলা শুরু হলো।

এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিঠুন কুন্ডু দাদা (বর্তমানে এএসপি) আমাকে তার রুমে ওঠালেন। আমি শর্ত দিলাম তার সঙ্গে রাজনীতি করতে পারব না, আমি বেইমান না।

তিনি রাজিও হলেন, তাই রুমে উঠেছিলাম। পরে উনার কথা না শোনায় আমার বিরুদ্ধে তার প্রেমিকাকে (এখন সাবেক) ব্যবহার করে রঙচঙ মাখিয়ে অভিযোগ ও মিডিয়া ট্রায়ালের অপপ্রচার করেছিলেন।

আপুর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। ২০১৫ সালের মার্চ মাসের শুরুতে সেদিন ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ছিল, আমরা কেউই তা জানতাম না। আপু হল থেকে সেজেগুজে ট্রান্সপোর্টে আমাদের ‘রঙ উৎসব’ এর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন।

আমরা ভেবেছিলাম, তিনি উৎসবে যোগ দিতে এসেছেন। আমি ‘আপু’ বলে চিৎকার দিয়ে বোতলে রঙ ছুড়ে মেরেছিলাম।

এই ঘটনায় মিঠুন দাদা সুযোগ পেয়ে গেল আমাকে ঘায়েল করতে। তিন মাসের জন্য বহিষ্কার হলাম আমি। মিঠুন দাদার প্ররোচনায় বড় বোনের মতো যেই আপু আমার বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল ঘটালেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করালেন। সেই আপুকে অবশ্য মিঠুন দাদা পরে আর বিয়ে করেননি।

আমি রাজিব ভাইয়ের সাথে বেইমানি করতে পারিনি। অনিক ভাইয়ের শত বঞ্চনা সহ্য করেও কমিটির শেষ দিন পর্যন্ত রাজিব ভাইয়ের সঙ্গে ছিলাম।

অনিক ভাই প্রায়ই আমার রুমে জুনিয়র পাঠাতেন বিরক্ত করার জন্য। ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার সময়ে অনিক ভাই শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে নিজের নামে ব্যানার করলেন। প্রচারে আমাদের ব্যাচের বন্ধুদের নাম দিলেন, যার মধ্যে ছাত্রদলকর্মী মুসার নাম।

আমি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করি এবং অনিক ভাইয়ের সঙ্গে বাগযুদ্ধে জড়িয়ে যাই। রফিক ব্লকের দোতলার পলিটিক্যাল ব্লক ছেড়ে দিয়ে চলে যাই জব্বার ব্লকে। প্রায় এক বছর নির্বাসিত জীবন কাটাই সেখানে।

২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হলো। নেতা হলেন ৩৯ ব্যাচের তুলনামূলকভাবে অপরিচিত জুয়েল রানা ও আবু সুফিয়ান চঞ্চল। নেতৃত্বের যোগ্যতায় এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও বাদ গেলেন ৩৮ ব্যাচের মুরশিদ ভাই (সাংগঠনিক সম্পাদক), মিঠুন দাদা (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), আরিফ ভাই (সহ-সভাপতি), ৩৯ ব্যাচের সাদ্দাম ভাই (উপ-গণযোগাযোগ সম্পাদক), তারেক ভাই (গণযোগাযোগ সম্পাদক), মিনহাজ ভাই (সমাজসেবা সম্পাদক), নোলক ভাই (কামালউদ্দিন হল সেক্রেটারি), তাজ ভাই (ক্রীড়া সম্পাদক), ৪০ ব্যাচের সজিব দাদা (আন্তর্জাতিক সম্পাদক), ইশতিয়াক ভাই (উপ-পরিবেশ সম্পাদক), অনিক দাদা (সহ-সম্পাদক) সহ অনেক পোড়খাওয়া ছাত্রলীগ।

৪ মাসের মাথায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়। দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে থাকার স্বীকৃতিস্বরূপ জোটে ২৯ নম্বর সহ-সভাপতি পদ! এর বছর খানেক পর অবশ্য সোহাগ ভাই-জাকির ভাই সাক্ষরিত একটি কেন্দ্রীয় সদস্য পদের চিঠি পেয়েছি। কিন্তু ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের মাত্র কয়েকদিন আগের ডেটের হওয়ায় তা আর প্রকাশ করিনি কোনদিন।

২১৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে অনেকের নাম দেখি যারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ছাত্রদল করেছে, শিবির সংশ্লিষ্টতাও ছিল কয়েকজনের।

২০১২-১৩ সেশন (৪২ ব্যাচ) পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত ছিল সেই নির্বাচনের আগে। সেই হিসেবে ৪২ ব্যাচ, ৪১ ব্যাচ, ৪০ ব্যাচ, ৩৯ ব্যাচসহ উপরের দিকের ব্যাচগুলোর যাদের দুঃসময়ের জনি ভাই-রাজিব ভাইয়ের কমিটিতে পদ অথবা সক্রিয় ছিল না, তারা কী করেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তাদের অনেকেই ২০১৭ এর শুরু থেকে ২০১৯ এর শেষ পর্যন্ত টানা ৩ বছর ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়িয়েছে সরকারি দলের হাইব্রিড হিসেবে।

ছাত্রলীগের প্রকৃত আদর্শ তারা কখনই ধারণ করেনি, তাদের কেউ কেউ আবার পরের কমিটির জন্য প্রার্থীও হয়েছেন। নেতৃত্ব এতোই নাকি সস্তা আজকাল!

আমার ক্যাম্পাস লাইফের প্রায় পুরোটা সময় কেটেছে সংগ্রাম করে। হয় ছাত্রদল বা শিবির অথবা বামদের না হয় ঘরের শত্রু বিভীষণকে মোকাবিলা করে। এদের দ্বারা এমন কোনো অপবাদ নেই যে কপালে জোটেনি! কতো যে মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হয়েছি!

কেউ টুক করে প্রক্টর বরাবর একটা অভিযোগ দিলে আর প্রমাণের অপেক্ষা করতে হয় না। জাতির বিবেকদের হাত ধরে মিডিয়ায় ট্রায়াল হয়ে যায়। তারপরও হারিয়ে যাইনি আদর্শিক চর্চার কারণে।

জাফর ইকবাল স্যারের উপর সিলেটে জঙ্গি হামলা হলো, আমি জুয়েল ভাই-চঞ্চল ভাইকে অনুরোধ করলাম প্রোগ্রাম ডাকতে, তারা কানের মাছিও নাড়ল না। আমি সাংস্কৃতিক কর্মীদের জড়ো করে ‘প্রতিবাদী গান ও সমাবেশ’ করলাম শহীদ মিনারে। ক্যাম্পাসের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুবিরোধী ওপেন কার্যক্রম চালাত শিবির। আমি অল্প কিছু সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়তাম।

জুয়েক ভাই-চঞ্চল ভাইকে কখনোই পাশে পাইনি, উলটো আমি আইনানুগ কিছু করতে গেলে তারা আমায় থামিয়ে দিত। আমার আদর্শিক কাজে সবসময় পাশে পেতাম বিজয় (সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য), সঞ্জয়, নিশু, সম্রাট, সামিউল ও রাজকে। ভালোবাসা ছাড়া ওদের আমি কিছুই দিতে পারিনি কখনও।

২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের সময়ে ছাত্রশিবির-ছাত্রীসংস্থার মাধ্যমে এক ভাড়াটে যৌনকর্মীর দ্বারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা হুমকির অভিযোগের নাটক সাজানো হয়। তাদের পালে হাওয়া দিয়েছিল ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, বাম ও সাংবাদিক সংগঠন এবং সাংস্কৃতিক জোট।

বলার অপেক্ষা রাখে না সবগুলো সংগঠনেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের এজেন্ট ছিল, তারাই এসব ঘটিয়েছে। মিডিয়া ট্রায়াল ঘটাতে পারলেও তারা এ যাত্রায় আর বহিষ্কার করাতে সক্ষম হয়নি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন আইন বিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয় ভাই (বর্তমান সভাপতি) আমার জন্য দুই জন আইনজীবী পাঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিন বোর্ডে। আইনি প্রক্রিয়ায় সমঝোতা করে আমাকে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে বাঁচালেও ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।

কোনোদিন সুযোগ হলে অবশ্যই আদালতে গিয়ে ক্ষতিপূরণ চাইব। পরে সেই পেশাদার যৌনকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষককে ফাঁসাতে গিয়ে তার সকল অপকর্ম প্রকাশ পায়।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর আবার জাতীয় নির্বাচন এল। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী টিমের সদস্য, আইটি সেল, মিডিয়া সেল, স্লিপার সেল, রাজপথ, কিবোর্ড সব জায়গায় দাপিয়েছি নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে।

এ সবই ছাত্রলীগের প্রতি ভালোবাসা আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি প্রতিজ্ঞার জায়গা থেকে, বিন্দুমাত্র লাভের আশা কখনো করি নাই। ঢাকা-১৯ আসন থেকে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন এনামুর রহমান।

বাম-ডান, শিবির, ছাত্রদল, হাইব্রিড ছাত্রলীগ, সুশীল, সুবিধাবাদী, নিরাশাবাদী, সবার একটাই কমন টার্গেট ছিল হামজা রহমান অন্তর। আমাকে প্রতিহত করতে তারা যেনো একাট্টা!

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে ৪ আগস্ট ৩/এ পার্টি অফিসের সামনে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করে সহযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করেছি, পার্টি অফিসকে রক্ষা করেছি অনাকাঙ্ক্ষিত গুজব দুর্ঘটনা থেকে। ক্যাম্পাসের পোস্ট অফিসে ফটোগ্রাফার শহিদুলের ছবি মুছে দিয়ে জাতির পিতার তর্জনী উঁচানো ছবি এঁকে দিয়েছি, বড় করে জানান দিয়েছি জয়বাংলার জয়ধ্বনী।

বিনিময়ে কী পেয়েছি? বঙ্গবন্ধু আদর্শ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রশ্নে কখনো আপোষ করিনি, বিনিময়ে কী জুটেছে?

প্রিয় বন্ধু যাকে আমি বিশ্বাস করতাম, রাজনীতির মাঠে দৃষ্টান্ত স্থাপন অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান গাইতাম, সেই প্রিয় বন্ধুও বন্ধুত্ব ভুলে গিয়ে পেছন থেকে ছুরি মেরেছে হাইব্রিড ও সাম্প্রদায়িক লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে দুরত্ব ও খারাপ সময়ের সুযোগ নিয়ে রুম লুটপাট ও চুরি করিয়েছে, দখল করিয়েছে আরেক হাইব্রিড দিয়ে।

অবশ্য এর জন্য আমিও কিছুটা দায়ী, ২০১৭ সালের শুরুর দিকে সেদিন যদি বন্ধুকে ছাড় না দিয়ে হাইব্রিডদের ভিড়তে না দিতাম, যারা কোনোদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতি করে নাই, তাহলে ছোবল দেয়ার সুযোগ পেতো না।

আমার হলে আমি বিশুদ্ধ ছাত্রলীগ গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম, ছাত্রদের বইমুখী করতে চেয়েছিলাম। আর ওরা হাতে তাদের তুলে দিয়েছিল মাদক। মাদকের সামনে বইয়ের রাজনীতি তাই সাময়িকভাবে পরাজিত হয়েছিল। আমি পরাজিত হয়েছিলাম।

শুধু একজন ছাত্রনেতা হিসেবে না থেকে নিজের এলাকার মানুষের কথাও ভেবেছি। মেঘনার নদী ভাঙন থেকে দৌলতখান উপজেলাকে রক্ষায় প্রভাবশালী মহলের সামনে দাঁড়িয়েছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১০ হাজার সাক্ষর ও ৫ হাজার চিঠি পাঠিয়েছি। সেই কাজ বাস্তবায়নে আন্দোলন করেছি, আমার পরিবারকে বিপদে ফেলেছি অশুভ শক্তির সামনে; যারা চাইত না দৌলতখান উপজেলা রক্ষা পাক।

প্রিয় নেত্রীর কাছে আবারও চিঠি লিখেছি, নেত্রী আমাকে রক্ষা করেছিলেন। সেই অশুভ শক্তি আমাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে আমার পরিবারের উপর সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে আঘাত করেছে বারবার।

আমার বিরুদ্ধে নব্য তালেবান হেফাজত-জামায়াতি মোল্লাদের নামিয়েছে, হাইব্রিড দিয়ে নোংরামো করিয়েছে, তবুও আমি দমে যাইনি। গ্রিক রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বারবার পুনর্জন্ম নিয়ে ফিরে এসেছি। যতবার ভুল করেছি ততবার আমি নতুন কিছু শিখেছি। ব্যার্থতার গ্লানি মুছে নবোদ্যমে আশায় বুক বেঁধেছি।

সোহাগ ভাই-জাকির ভাইয়ের কমিটিতে বঞ্চিত, শোভন ভাই-রাব্বানী ভাইয়ের কমিটিতে বঞ্চিত, মাঝখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রার্থী হিসেবেও বঞ্চিত, জামায়াত-বিএনপি-হেফাজতের মৌলবাদীরা আমার পটেনশিয়ালটি বুঝতে পেরে বারবার আক্রমণ করলেও আমার পার্টি কখনও আমার পটেনশিয়ালটির গুরুত্ব দেয়নি। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা উল্টিয়েও অনেকে আমার নাম খুঁজে পায়নি। একমাত্র আশা ভরসার জায়গা আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনা, আমাদের আপা।

আজ ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আপার সামনে ছাত্রলীগের সমবেত গানের দলের শিল্পী ছিলাম। আজ আবার প্রথম ও শেষ প্রেমের লাল-নীল গল্পের কথাগুলো মনে পড়ে, বারবার মনে পড়ে।

ছাত্রলীগ আমাকে শিখিয়েছে প্রগাঢ় দেশপ্রেম, অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ না করার স্পর্ধা। ছাত্রলীগ আমায় শিখিয়েছে ভালোবাসতে, রাজপথের কবিতা হতে, জ্বলে উঠতে, প্রয়োজনে জ্বালিয়ে দিতে।

স্বপ্ন দেখি ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মী প্রগতিশীল রাজনীতির ভাবধারায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় নিয়োজিত থাকবে, ছাত্রলীগের নেতারা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দ্যুতি ছড়াবে।

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয়তু শেখ হাসিনা। জয়তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

লেখক: সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এ বিভাগের আরো খবর