বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে কী কাজে লাগাবে আ. লীগ

  • মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু, স্টকহল্ম   
  • ১ জানুয়ারি, ২০২১ ২০:০৬

সাবেক এই দক্ষ সরকারি কর্মকর্তার পরিবারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সম্পর্ক অনেক দিনের। সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবার হিসেবে তার একটা পরিচিতি আছে। তার বড় ভাই ফারুক আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুব স্নেহের মানুষ ছিলেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী মূলত একজন সরকারি আমলা। শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি কখনও রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। একজন দক্ষ আমলা হিসেবে পাকিস্তান আমল থেকেই তিনি সকলের কাছে সুপরিচিত।

ইনাম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯৬৪ সালে। তখন তিনি সিরাজগঞ্জের মহকুমা প্রশাসক। আর আমি সিরাজগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাই স্কুলের ছাত্র।

সিরাজগঞ্জ বি এ কলেজের মাঠে একটি অনুষ্ঠানে কাছাকাছি দেখার সৌভাগ্য হয়। তিনি ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ করেন তার স্ত্রী নাগিনা এনাম চৌধুরী।

১৪ বছর পর ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয়বার দেখা হলো সুইডেনে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত বিচারপতি মোকসুমুল হাকিম সাহেবের বাসভবনে।

এরও ২৪ বছর পর ২০০৪ জুন মাসে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ঢাকায় আবার দেখা। তখন তিনি সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের উপদেষ্টা।

তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা বছর তিনেক আগে। তখন তিনি ব্যক্তিগত সফরে স্টকহোল্ম বেড়াতে আসেন। ছিলেন আমার বাসায়।

এখানে এসে স্থানীয় সুইডিশ এমপি ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দেখা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

ইনাম আহমেদ চৌধুরী একজন সিএসপি অফিসার হওয়া সত্ত্বে কেন আসলেন রাজনীতিতে? এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এখন আওয়ামী লীগে কেন এলেন?

যতটুকু জানা যায়, তিনি বিএনপি করলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি ছিল তার এক অগাধ শ্রদ্ধা। এই কারণেই হয়ত বিএনপি তাকে সঠিক মূল্যায়ন করেনি।

আমার সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি বলেন, আমি বেগম খালেদা জিয়াকে ১৫ আগস্ট তার জন্ম দিন ঢাকঢোল বাজিয়ে পালন না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জন্মদিন এভাবে পালন না করে ঘরোয়াভাবে পালন করলেই তো হয়। কিন্তু তিনি শুনেননি এ কথা।

প্রশ্ন আসতে পারে এতদিন বিএনপিতে থাকা সত্ত্বেও তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হলেন কী করে?

সাবেক এই দক্ষ সরকারি কর্মকর্তার পরিবারের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সম্পর্ক অনেক দিনের। সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবার হিসেবে তার একটা পরিচিতি আছে। তার বড় ভাই ফারুক আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুব স্নেহের মানুষ ছিলেন।

বিএনপিতে যাওয়ার বিষয়ে ২০০৪ সালে ইনাম আহমেদ চৌধুরী আমাকে বলেন, ১৯৯৪ সালে জেদ্দা থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসে সরাসরি রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করলেন। তখন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। আমি তার নেতৃত্বের উপর আস্থা রেখে বিএনপিতে যোগদান করেন।

তিন বৎসর আগে দেখা হলে বলেন, ‘আমার সিদ্ধান্তটা আসলেই তখন ভুল ছিল।’

ইনাম আহমেদ চৌধুরী একজন শিক্ষিত মার্জিত ভদ্র নেতা হওয়ার কারণে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের তোষামোদী ও চাটুকারিতা করেননি কোনোদিন।

আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার দিন তারেক রহমানের সমালোচনা করেন। তাহলে বিএনপিতে কেন পরে আছেন- এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করো, দেখো কী হয়?’

কথাটা ঠিকমতো বুঝতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করাতে বললেন, ‘এখন আর বেশি কিছু বলব না।’

সম্ভবত তার বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসার আভাসটাই তিনি পরোক্ষভাবে আমাকে সেদিন দিয়েছিলেন।

ইনাম আহমেদ চৌধুরীর অতীত ও বংশ পরিচয় সিলেটের সকলের কাছে সুপরিচিত।

বাবা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিভাগের কমিশনার ছিলেন। বড় ভাই ফারুক আহমেদ চৌধুরী সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে অবসর নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত হন। ছোটো ভাই মাসুম আহমেদ চৌধুরী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।

ছোট বোনের স্বামী কর্নেল হাই একজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা। যশোর ক্যান্টনমেন্টে পাকসেনাদের সঙ্গে এক সম্মুখযুদ্ধে তিনি শহীদ হন। আরেক বোনের স্বামী সেনা সমর্থিত অস্থায়ী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমেদ।

পরিবারের সবচেয়ে ছোটো ভাই ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীও সেনা সমর্থিত অস্থায়ী সরকারের আমলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও ইনাম আহমেদ চৌধুরী দুই জনই যোগ্যতার মাপকাঠিতে অনন্য। দুই জন মধ্যে আছে অন্তরঙ্গতা। সিলেটের রাজনীতি হাতের হাতে যৌথভাবে দিলে আওয়ামী লীগের লাভ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

জেনে শুনে আওয়ামী লীগ নিশ্চই ভুল করবে না। কারণ, সিলেট এখন অনেকটাই নেতা শূন্যl এক সময় আব্দুস সামাদ আজাদ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত ও দেওয়ান ফরিদ গাজীদের প্রাধান্য থাকলেও বর্তমানে আর সেই অবস্থা নেই।

সুইডিশ আইনে বয়সে বৈষম্যতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হয়। এ দেশের পার্লামেন্ট বা রিজিওন ও ইউনিয়ন কাউন্সিলে ৭৫ থেকে ৮০ বছর বয়সের প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে।

মানুষ কর্মঠ থাকলে তার দায়িত্ব পালনে বাধা থাকার কথা নয়। আওয়ামী লীগের সাবকে অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিত যদি এতদিন সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তাহলে ইনাম আহমেদ চৌধুরীর না পাড়ার কথা নয়। তবে শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ থাকলে অন্য কথা।

লেখক: জুরি স্টকহোম আপিল কোর্ট ও এডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্ট

এ বিভাগের আরো খবর