বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রসুন বুনবো একুশেও

  •    
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৪:১৬

বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীর কোথাও মানুষ হত্যা থামেনি। নদী, গাছ হত্যা চলেছে অবাধে। দুর্বলের ওপর সবলের শাবলের আঘাত চলছে অবিরাম। নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ কমেনি বরং সঙ্গনিরোধকালে বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। আয়ের অবৈধ সড়কে মানুষের পদচারণা বেড়েছে। মানুষকে কাজ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে নানা অজুহাতে।

ভেঙে পড়েছে ঝাড়বাতিটা। খসে পড়েছে দেয়ালের পলেস্তরা। ভাঁজ পড়েছে অবয়বে। ব্যক্তি আমার ঘরে যে হাল, একই হাল বাইরের পৃথিবীর। মুখে মুখোশ তুলে অবয়বের ভাঁজ লুকোতে যেমন পারছি না, তেমনি নানা জয় যাত্রার ডঙ্কা বাজিয়েও পৃথিবীর নুয়ে পড়া আড়াল করা যায়নি। বরং আরও প্রকাশ্য হচ্ছে পরাজয়।

আজ মহাকালের যে ধূলিকণাটি উড়ে যাবে জীবন থেকে, তার দুই পিঠেই পরাজয়ের সিলমোহর দেয়া। গোড়াতে ভাবা হয়েছিল, আমরা পরিশোধিত হবো, কিন্তু বছরের বিদায় লগ্নে দেখছি পরিশোধনের যোগ্যতাটুকুও হারিয়ে বসে আছি আমরা। প্রকৃতি আমাদের জীবনে একটা বিরতি চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল, সেই চিহ্নটিকে আমরা শুধরে নেবার মন্ত্র হিসেবে নেইনি। বরং আরও কত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা যায়, লোভের জিব আরও কত বিস্তৃত করা যায় সেই প্রতিযোগিতার দৌড়ে এখন আমরা।

বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীর কোথাও মানুষ হত্যা থামেনি। নদী, গাছ হত্যা চলেছে অবাধে। দুর্বলের ওপর সবলের শাবলের আঘাত চলছে অবিরাম। নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ কমেনি বরং সঙ্গনিরোধ কালে বেড়েছে জ্যামিতিক হারে। আয়ের অবৈধ সড়কে মানুষের পদচারণা বেড়েছে। মানুষকে কাজ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে নানা অজুহাতে। কাজ হারা মানুষের মিছিল ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে।

পরিবার পরিজন স্বজন হারানোর তালিকাটির অঙ্ক ঘূর্ণায়মান। আমরা জানি না কে কখন চলে যাচ্ছি, যাব। এই অনিবার্যতার মধ্যেই আমরা ২০২০ জুড়েই দূর ও নিকটজন বা আমাদের লালনকারীদের বিষ দাঁত দেখতে পাচ্ছি।

আচমকা এটা আজ ২০২১ সালের প্রথম প্রহরে সেই দন্ত প্রসারিত হবে খিলখিল হাসিতে এমন প্রত্যাশা করছি না। তবে মানুষের একটি শক্তি অবশ্যই আছে, যে শক্তির ওপর ভর করে টিকে আছে পৃথিবী। এটা নিজেকে প্রবোধ দেয়া নয়, পরাজয়ের শেষ বিন্দু থেকেই জয়ের পুনর্জন্ম।

মানুষ হারছে মানুষের লোভের কাছে, বিভৎসতার কাছে। এটা সত্যি। তাই বলে এখানেই শেষ নয়। মানুষ আবার জয় রথের সওয়ার হবে। রথ চালিয়ে পৌঁছবে সুন্দরের কাছে। কারণ মানুষ প্রকৃত অর্থে প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতি নিজেকে উদার করে দিয়ে পৃথিবীকে সুন্দর করে তোলে। মানুষও তাই। পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সুন্দর। সুন্দরের ধ্যানে তাদের জীবন উৎসর্গ করা। কোভিড-১৯ নামের দানবের তাণ্ডব কালেও আমরা দেখতে পাচ্ছি শেষ পর্যন্ত মানুষই দাঁড়িয়েছে মানুষের পাশে।

রাজনৈতিক সংগঠনের বদলে বিভিন্ন পেশা ও তরুণদের নিয়ে গড়া সংগঠন ধরেছে বিপন্ন মানুষের হাত। সেই আশ্চর্য দরদি। স্পর্শেই বেঁচে আছে মানুষ। প্রতি বছরান্তে আমরা আশা করি পৃথিবী জুড়ে রাজনৈতিক দলগুলো ও শাসকেরা মানবিক হবে। শোষক রূপ খানিকটা হলেও নমনীয় হবে। জনবান্ধব হবে শাসকেরা। কিন্তু প্রতিবারই করতলে জমা হয় দীর্ঘশ্বাস। পৃথিবী যতটা না জলবায়ু বিপর্যয়ে উষ্ণ হয়ে উঠছে তার চেয়েও বেশি তার উষ্ণতা বাড়ছে অধিকার বঞ্চিত মানুষের দীর্ঘশ্বাসে।

পরিসংখ্যানের, গণিতের প্রহলিকার পেছনে ছুটছি আমরা। সমৃদ্ধির অঙ্ক সূচক দেখে ঢেঁকুর তুলছি। অথচ ঘরে আমাদের উনুনে ভাত বাড়ন্ত। পৃথিবীর সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ কতিপয় মানুষের হাতের মুঠোতে। বাকিরা মুঠো চুইয়ে পড়া সম্পদের দিকে হাত পেতে থাকি। ২০২০-এ এমন পৃথিবী থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি, বরং ঘনিভূত হয়েছে সংকট।

তবে কেউ কেউ বলছেন ২০২০ ছিল বিচ্ছিন্নতার বছর। আমি তা মনে করি না। কারণ সম্পদের অসম বণ্টন ও অসাম্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব বাড়ানোর খেলা শুরু তো অনাদিকালের। দিনে দিনে শুধু সেই খেলা জমজমাট হয়েছে। কোভিড-১৯ এসে বাহ্যিক ভাবে সঙ্গনিরোধে বাধ্য হতে প্ররোচিত করেছে মানুষকে। বিচ্ছিন্ন হয়েছি হয়ত দৃশ্যত। কিন্তু আমি মনে করি বঞ্চিত মানুষের আত্মিক যোগাযোগ বেড়েছে এ সময়টায়। মনযোগাযোগে তারা জোটবদ্ধ হয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই দুর্যোগকালে মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠ বারবার প্রকম্পিত করেছে পৃথিবীকে।

২০২১-এ আমরা তালি মেরে সেই সংকট উড়িয়ে দেব তা বলছি না। সেই কবে থেকেই তো বর্ষ সালতামামি করতে বসে শুধু স্বপ্ন আর প্রত্যাশার রসুন বুনেছি, কিন্তু কোনোবারই ফলন প্রত্যাশা মতো হয়নি। এবার তো বিশ্বজুড়েই স্বপ্ন ফলনে মঙ্গা। খেটে খাওয়া মানুষদের জন্যও তাই। ফলন যাই হোক কৃষক পরাজয় মানে না, কোনো খরা, অতিবর্ষণ তাকে থামাতে পারে না। ফসল বুনেই যাবে সে। অপরাজিত সেই কৃষকের মতো আবারও স্বপ্ন বুনতে চাই। ২০২১ হোক শুদ্ধতার।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী

এ বিভাগের আরো খবর