বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রগতির রাজনীতি ও সংস্কৃতির চর্চা হোক শব্দময়

  •    
  • ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ২০:০৩

নতুন এমন অভিজ্ঞতা সবার হচ্ছে না। কারণ সবার আর্থিক অবস্থা এমনটা নয়। বেহাল স্বাস্থ্যখাতের মতো ডিজিটাল দেশে ডিজিটাল বিভাজন কত ব্যাপক সেটিও দেখলাম আমরা। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, কিন্তু দেশজুড়ে মাদ্রাসা খোলা। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সন্তানেরা হয় মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে, নয়ত কাজে কর্মে ঢুকে শিশুশ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর কন্যা শিশুদের অনেককেই মেনে নিতে হচ্ছে বাল্যবিয়ের খড়গ।

নাজেহাল করোনায় ২০২০ সাল আমাদের ভালো যায়নি। আমোদ, ফুর্তি, সুখে থাকা, স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা এসব দূরে রেখে মানুষের লড়াই ছিল বেঁচে থাকার। নতুন বছর চলে এলো, কিন্তু সে লড়াই থামেনি। আমাদের ভালো লাগার চারপাশ থেকে নির্মম ভাবে সরে যেতে যেতে আমরা যেন সবাই একা হয়ে পড়েছি। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের আশঙ্কা নিয়েই শুরু হলো নতুন বছরটা। তবে নতুন বছরের আশা এখানেই যে, রোগকে পরাজিত করার টিকা আসছে।

গত বছরের শেষ সময়ে চীনে আবির্ভাব হয়েছিল এই রোগের। তারপর খুব দ্রুতই তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। নতুন রোগের সঙ্গে যুঝে ওঠা গেল না। উন্নত দেশগুলোতে মানুষ মরল বেশি, বিশেষ করে বয়স্করা। আমাদের মতো দরিদ্র তথা উন্নয়নশীল দেশে সমাজের ধনী অংশের অনেকেই মারা গেছেন। তুলনামূলক কম মারা যাচ্ছেন শ্রমিক, কৃষক আর সাধারণ মানুষ। কারণ হয়ত বা এটাই যে, তারা সারা বছর প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করেই চলে। ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, তাই মৃত্যু হার কম।

মহামারি বা অতিমারি কালের নিয়মে নিজেই এক সময় শক্তি হারিয়ে ফেলে। এটিও হারাবে বা মানুষের উদ্ভাবনী শক্তির কাছে সে পরাজিত হবে।

আরও একটি নতুন বছর। আবারও চাওয়া-পাওয়াগুলো বড় হয়ে সামনে আসছে আমাদের। ২০২০ সাল আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। কারও চাকরি চলে গেছে, কারও ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে, কারও বেতন কমে গেছে। অসংখ্য মানুষের স্বজন চলে গেছে। বাংলাদেশে ব্যবসা, বাণিজ্য দোকানপাট সবই খুলেছে, আদালত আবার সরগরম, সরকারি বেসরকারি অফিস পাড়া আবার চাঙা। কিন্তু নিরবতা আর নিস্তব্ধতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক ক্লাস শুরু হয়নি। তার বদলে ক্লাস ও যাবতীয় পড়াশোনা চলছে অনলাইনে। এমনকি পরীক্ষা ব্যবস্থাও অনলাইনেই হচ্ছে।

নতুন এমন অভিজ্ঞতা সবার হচ্ছে না। কারণ সবার আর্থিক অবস্থা এমনটা নয়। বেহাল স্বাস্থ্যখাতের মতো ডিজিটাল দেশে ডিজিটাল বিভাজন কত ব্যাপক সেটিও দেখলাম আমরা। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, কিন্তু দেশজুড়ে মাদ্রাসা খোলা। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সন্তানেরা হয় মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে, নয়ত কাজে কর্মে ঢুকে শিশুশ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছে। আর কন্যা শিশুদের অনেককেই মেনে নিতে হচ্ছে বাল্যবিয়ের খড়গ।

প্রায় একটা বছর নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত নেই পড়ুয়াদের। তাই তাদের উদ্বেগটা সবচেয়ে বেশি। নতুন বছরে দুর্ভোগ কেটে যাওয়ার প্রত্যাশা করছে শিক্ষার্থীরা। বার বার বলেছি জীবনের চেয়ে বড় কিছু নেই, এমনকি লেখাপড়াও। আর সে বিবেচনায় সরকারের কাছে অগ্রধিকার পেয়েছে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাকদের নিরাপত্তা। এখানে ভাবনাচিন্তা থাকলেও করার কিছু ছিল না। পরিস্থিতিটা অনুকূলে ছিল না বলেই দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সবাই সরকারের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে।

বছরের শেষে এসে সরকার ঠিকই নতুন বছরের শুরুতে স্কুল শিক্ষার্থীদের নতুন বই দেওয়ার প্রস্তুতি শেষ করেছে। বই জানুয়ারির ১ তারিখেই পেয়ে যাবে শিশুরা। কিন্তু স্কুল কবে খুলবে সেটা কেউ জানে না। সব কিছুই নির্ভর করছে সংক্রমণের অবস্থা কোন দিকে যায় তার ওপর।

সরকার ঠিক সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে এটা হলো প্রত্যাশা। অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার দাবি করতে শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা অনেক বেশি সীমিত।

সবকিছু বিবেচনায় টিকা ঠিকমতো পেলে এবং প্রয়োগ শুরু হতে হতে মে-জুন মাস চলে আসবে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ততদিন বন্ধ থাকছে বলেই ধারণা করছি। ততদিন পর্যন্ত স্তব্ধ স্কুল ঘর।

রাজনীতির মাঠে একচ্ছত্র আধিপত্য আওয়ামী লীগের। কিন্তু তারও কোনো রাজনীতি নেই। শাসন কাজ পরিচালিত হচ্ছে প্রশাসন আর পুলিশ দিয়ে। অন্য বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি বিপর্যস্ত। রাজনীতির মাঠে, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এসে দেখা গেল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর গলাবাজি। তাই নতুন বছরের শুভারম্ভে আমরা মনের প্রার্থনাগুলো একত্রিত করে প্রার্থনা করি এদের হাত থেকে জাতি মুক্তি পাক।

করোনা রোগ, সাম্প্রদায়িক রোগ আমাদের নাগরিক মন বিষণ্ণ করে রাখছে অনেকখানি। নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন। একটু নতুনত্বের জন্য হাপিত্যেশ। হয়ত এবার অন্যসব বছরের মতো নতুন ইংরেজি বছর সশব্দে আসবে না। বর্ষবরণের নাচ-গান-আলো জমকালো হবে না। হৈচৈ বা হট্টগোল আমরা করব না।

শুধু চাইব আমরা নতুন করে বাঁচতে শিখি, নতুন করে পুরনো ও পশ্চাৎপদ ধ্যানধারণাকে পেছনে ফেলে নতুন করে আলোর পথ ধরি। প্রগতির রাজনীতি, প্রগতির সংস্কৃতির চর্চা হোক শব্দময়, আলোকিত ও প্রকাশ্য। আজ গোটা দেশের যে রাজনৈতিক আবহ তাতে এটুকুই চাওয়া।

লেখক: সাংবাদিক

এ বিভাগের আরো খবর