বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিজয় দিবসের আনন্দ, বেদনা ও ভয়ের ভাবনা

  •    
  • ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ২১:৪৮

রণাঙ্গন থেকে ফেরা লাখো মুক্তিযোদ্ধা তখনও জীবিত, কিন্তু দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া এত বড় অপরাধ ও বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে আমরা কোনো প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারিনি। ভয়, নেতৃত্বের অভাব কিংবা সমন্বয়হীনতার অভাব যেটাই হোক না কেন, সত্যিটা হলো আমরা ঘাতকদের ও পর্দার আড়ালের দোসরদের বিরুদ্ধে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারিনি।

বিজয়ের ৪৯তম বছর পেরিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের পানে। যুগ যুগ ধরে বাঙালি স্বপ্ন দেখেছে নিজেদের একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ঠিকানার। একবারের জন্য পাওয়া জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিতে পারে এমন একজন মুজিবের দেখা পায়নি বাঙালি বহু যুগ, আর তাই স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন ও কল্পনার কারাগারেই ছটফট করেছে। অবশেষে জন্ম হলো শেখ মুজিবের। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য দুই যুগ ধরে প্রস্তুত করলেন তিনি বাঙালিকে। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।

’৭১ এর ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা দিলেন বাঙালি জাতির প্রাণভোমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি হায়েনারা তাদের দুই পরাশক্তি বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের সঙ্গে নিয়ে নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার নতুন নজির স্থাপন করল। ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নির্মমতার ঘৃণ্য রেকর্ড গড়ল। স্বপ্ন যেখানে স্বাধীন বাংলা, কোনো বাধাই বাঙালির কাছে অজেয় নয়। পরাশক্তি আর বাঙালির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী দোসরদের বলে বলীয়ান পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজিত করে এলো বহু কাঙ্ক্ষিত সে বিজয়ের ক্ষণ ‘১৬ ডিসেম্বর’।

লাল-সবুজের এ বিজয় উদযাপনে ছিল বেদনার সুর। বিজয়ের যে বাধভাঙা উৎসব, যে উল্লাস তা কোথায় যেন থমকে ছিল। ঠিক উদযাপনটা হচ্ছিল না। জাতির জনক, বাঙালি জাতির পরম আত্মীয়, স্বাধীনতার প্রাণভোমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন কোথায় আছেন তা সঠিক করে তার পরিবার, সহযোদ্ধা, দেশের মানুষ জানতে পারেনি। বিজয়ের পরেও তাই ঠিক উদযাপনটা হচ্ছিল না।

২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর পকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরুর কথা ঘোষণা করে ও পরবর্তীতে ইসলামাবাদের আরেক ঘোষণায় বলা হয় যে, শেখ মুজিবের বিচার সমাপ্ত হয়েছে। এখন শুধু রায় ঘোষণা বাকি। এমন ঘোষণা উৎকণ্ঠিত করে, শঙ্কিত করে তোলে।

১৯৭১ সালের ২৩ ডিসেম্বর পত্রিকায় বিবিসির বরাত দিয়ে প্রকাশিত হয়, পাকিস্তানের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে গৃহে অন্তরীণ রেখেছেন। এটি নতুন কোনো চক্রান্ত কিনা তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দেয়। এরূপ উৎকন্ঠা-শঙ্কার যৌক্তিক কারণও ছিল।

বালুচ স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা আব্দুল করিম খানের অনুসারী জেহার উপজাতীয়দের প্রধান নওরোজ খান মিরঘাট পাহাড়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের প্রতি অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানান। তারা কোরআন হাতে নিয়ে এই প্রতিশ্রুতি দেন যে অস্ত্রবিরতি করলে নওরোজ খান ও তার সহযোগীদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে এবং সবাই সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পাবেন।

কিন্তু বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তান সরকার নওরোজ খান ও তার দুই ছেলে অস্ত্রসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর ১৯৬০ সালের জুলাইতে নওরোজের দুই ছেলেকে ফাঁসি দেওয়া হয়। আর ১৯৬২ সালে কোহলু জেলে নওরোজ খানের আকস্মিক ও রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার পাশাপশি বিজয়ের আনন্দে বিষাদ ভর করে যখন জানাজানি হতে থাকে পকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসরা ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছে। কন্যা-জায়া-জননীর ওপর অবর্ণনীয় পাশবিক অত্যাচার করেছে।

বিজয়ের আনন্দের মাঝেই চাউর হয় বিজয়ের দু’দিন আগে এদেশের সূর্যসন্তান শত শত বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে জানোয়ারের হিংস্রতা নিয়ে ভয়ংকর নির্যাতন করে হত্যা করেছে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা। বিজয়ের দিনটিতেও অনেক বুদ্ধিজীবীর ক্ষত-বিক্ষত শবদেহ খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিল। বিজয়ের আনন্দ তাই বেদনা মিশ্রিত ছিল।

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জাতি ৪৯ তম বিজয় উদযাপন শেষে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে বিজয়ের ৫০তম বছর উদযাপনের জন্য।

স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের ৫০তম বছর উদযাপন যে কোনো জাতির জন্যই আনন্দের, গর্বের। আর বাঙালির জন্য তা বিশেষ তাৎপর্যের এ জন্য যে, বিজয়ের ৪৯তম বছর উদযাপন হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে। ৫০তম বিজয় উদযাপনও বঙ্গকন্যার নেতৃত্বে হবে এ অপেক্ষায় বাংলার জনগণের। ৪৯তম বিজয় দিবস বাঙালির জন্য আনন্দ-অহংকারের ভিন্ন মাত্রা নিয়ে এসেছে।

জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে সমীহ আর রোল মডেলের নাম এখন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে সফলভাবে স্থাপনের মাধ্যমে পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে পা দিয়েছে মহাকাশ জগতে। পৃথিবীর ৪১ টি দেশের সাবমেরিন আছে। সাবমেরিন শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান যৌথভাবে ৩৫তম।

পৃথিবীর অন্যতম দীর্ঘতম পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সক্ষমতার এক নতুন বার্তা পৌঁছে দিয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। ধান, মিঠাপানির মাছ ও ফল উৎপাদনে বিশ্বের প্রথম সারির রাষ্ট্রসমূহের একটি বাংলাদেশ।

আশা করা যায় ৫০তম বিজয় দিবসে বিশ্ববাসী উপহার পাবে বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডের মোটর গাড়ি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিস্ময়কর তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশের নাম।

কোভিড আক্রান্ত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় বড় অর্থনীতির উন্নত দেশগুলোর যখন লণ্ডভণ্ড অবস্থা, তখনও বাংলাদেশ নাক উঁচু করে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে।

গত ১০ ডিসেম্বর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) তরফ থেকে জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়েও ভালো করছে। সংস্থাটির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রত্যাশার চেয়েও শক্তিশালী ভাবে পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে বাংলাদেশে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বিদেশি বিনিয়োগগুলো পাইপলাইনে আছে এসব বিনিয়োগ শুরু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন যুগের সূচনা হবে।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে ৪৯তম বিজয় দিবসের আনন্দের এ ক্ষণে ভয় কিসের? পিছন ফিরে দেখুন, যে বঙ্গবন্ধু তার জীবনের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি করলেন, সেই স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় তাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। হত্যাকাণ্ডের বিচার আইন করে বন্ধ করে দেয়া হলো। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে যাদের অনবদ্য ত্যাগ, সাহসিকতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হল তাদের কারাগারের অভ্যন্তরে হত্যা করা হলো। লাখো শহিদের রক্তমূল্য আর কন্যা-জায়া-জননীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের-মূল্যবোধের বিষয়গুলো কাটাছেঁড়া করে বাদ দেয়া হলো।

রণাঙ্গন থেকে ফেরা লাখো মুক্তিযোদ্ধা তখনও জীবিত, কিন্তু দুয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া এত বড় অপরাধ ও বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে আমরা কোনো প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারিনি। ভয়, নেতৃত্বের অভাব কিংবা সমন্বয়হীনতার অভাব যেটাই হোক না কেন, সত্যিটা হলো আমরা ঘাতকদের ও পর্দার আড়ালের দোসরদের বিরুদ্ধে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারিনি।

হয়তো অনেকেই যুক্তি দেবেন ঘাতকদের বিচার হয়েছে, অনেকের ফাঁসি হয়েছে আর কারো কারো জন্য ফাঁসির রজ্জু অপেক্ষা করছে। চিন্তা করে দেখুন তো যদি বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা সেদিন ৩২ নম্বরে থাকতেন কিংবা অভিমান করে রাজনীতিতে না আসতেন তাহলে সংবিধানের কলঙ্ক ইনডেমনিটির বিধান কি বাতিল হতো? বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা ও মানবাতাবিরোধী অপরাধের বিচার হতো? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের বংলাদেশকে বিসর্জন দিয়ে পাকিস্তানি তাহজীব-তমুদ্দুনের যে ‘বাংলাস্তান’ প্রবর্তন হয়েছিল তার কি পরবির্তন হতো?

এখনও ভয়ংকর বিদ্বেষ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রতি। ইন্টারনেটে ব্লগ, পেইজ খুলে নানা কুৎসা রটনা করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।

আমাদের এ প্রাচীন বঙ্গীয় জনপদে অসংখ্য ব্যক্তি ইসলামের শাশ্বত বাণী নিয়ে আসেন। তাদের অধিকাংশই আরব ও পারস্য থেকে নানা সময়ে এ ভূখণ্ডে আগমন করেন। তন্মধ্যে অনেকে ছিলেন মহানবী (সা.)-এর সাহাবি। পরবর্তীতে আসেন সুফি, দরবেশ, অলি ও বুজুর্গ। বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ শেখ আউয়াল নামে এমনই একজন দরবেশের আগমন ঘটে এ দেশে।

জানা যায়, ইসলাম প্রচারের মহান ব্রত নিয়ে শেখ আউয়াল ইরাক থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে বিশ্বখ্যাত অলি হযরত বায়েজিদ বোস্তামির (রহ.) সফর সঙ্গী হয়ে বঙ্গে আগমন করেন। বঙ্গবন্ধু দরবেশ শেখ আউয়াল এর সপ্তম বংশধর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রক্তে আছে ইসলামের প্রচার-প্রসারের তাগিদ। আর তাই বঙ্গবন্ধু সাংবিধানে মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

তিনি তার সংক্ষিপ্ত শাসনামলে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার স্থান বরাদ্দ, হজ পালনের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা, সীরাত মজলিশ প্রতিষ্ঠা, বেতার-টেলিভিশনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), শবেকদর, শবেবরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা, মদ জুয়া নিষিদ্ধকরণ ও শাস্তির বিধান, রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা, ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধিবেশনে যোগদান করে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করা।

বঙ্গবন্ধুর ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ইসলাম ও আলেম সমাজের জন্য যা কিছু করেছেন, অন্য কোনো সরকার তা করে নাই।

বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে। দেশে প্রায় এক লাখ মসজিদভিত্তিক মকতব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খতিব-ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের জাতীয় স্কেলে বেতন নির্ধারিত হয়েছে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আলেমদের দীর্ঘ সময়ের দাবি কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

অথচ বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত মদ-জুয়া নিষিদ্ধের বিধান যারা বাতিল করলেন, হজের সরকারি অনুদান বন্ধ করলেন তারা ইসলামের সেবক বলে পরিচিত আর বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার ইসলামবিরোধী বলে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র চলছেই।

সম্প্রতি হেফাজতের নেতারাই বলছেন, ২০১৫ সালের ৫ মে বাবুনগরী তৎকালীন আমীর শাহ আহমদ শফীকে না জানিয়ে হেফাজতের নেতাকর্মীদের রাতভর শাপলা চত্বরে রেখে দেন। তার ধারণা ছিল, সারারাত শাপলা চত্বরে অবস্থান নিতে পারলে যে পরিস্থিতি তৈরি হবে তাতে সেনাবাহিনী নামতে বাধ্য হবে। সম্প্রতি হেফাজতের কতিপয় নেতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলার যে হুমকি-হুংকার দিয়েছেন, তা যতটুকু না ইসলামের জন্য তার চেয়ে বেশি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ক্ষমতাচ্যুত করার রাজনীতি সম্পৃক্ত। আরেক শ্রেণির ষড়যন্ত্রী ক্রমাগতভাবে সেনাবহিনীকে উসকানি নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। উসকানির অপপ্রচার এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে কিছুদিন আগে সেনাবাহিনীকে এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি তাকে অন্তত ১৯ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। বারবারই অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন তিনি। বার বার কেন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যার ষড়যন্ত্র? কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের অন্তরে দাগা দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন, আর তার কন্যা ‘বাংলাস্তানকে’ আবার মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের আদর্শে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। এসব ষড়যন্ত্রের সাথে নতুন একটি মাত্রা যুক্ত হয়েছে। একসময় ইসলামের নামে উগ্রবাদীদের শ্লোগান ছিল, ‘আমরা সবাই তালেবান/বাংলা হবে আফগান’।

সম্প্রতি অন্য ধর্মের একটি নতুন শ্লোগান উচ্চারিত হচ্ছে, ‘কুরুক্ষেত্রের হাতিয়ার? গর্জে ওঠুক আরেকবার’। এরা কারা, কি উদ্দেশ্য এদের, কারা ইন্ধন জোগাচ্ছে?

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর ঠেকাতে ভারতীয় কয়েকটি গণমাধ্যম হলিউডের সিনেমার সুনামির দৃশ্য কাট করে ভাসানচরের বলে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। কেন এমন মিথ্যার আশ্রয়? কারা আছে এর পিছনে?

অতি সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রচার করছেন আগামি বছরের শুরুতেই নতুন সরকার আসবে। এটা কি কেবলই লন্ডন-মধ্যপ্রাচ্যের ষড়যন্ত্র, না এর পিছনে অন্য কেউ আছে?

বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ও মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ টিকে থাকার ক্ষেত্রে এসব ভয়ংকর চ্যালেঞ্জ ভয়ের কারণ বৈকি। গ্রেফতারকৃত এক আলবদর দাবি করেছিল আরও কিছু দিন সময় পেলে সকল বুদ্ধিজীবীদেরকেই হত্যা করে ফেলা হত। এমন মতাদর্শ যারা ধারণ করেন তাদের সংখ্যা কমেছে কি? তাদের মতাদর্শ তারা বিসর্জন দিয়েছে কি? অবশ্যই না। বরং একটি বড় রাজনৈতিক দল তাদের সঙ্গে মিলে-মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। বিজয় দিবসে তাই ভাবি আগামী বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে হবে তো?

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

এ বিভাগের আরো খবর