বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের মতো বিশ্বমোড়লের প্রলোভন, খবরদারি ও হুমকি উপেক্ষা করে যেভাবে পদ্মা সেতুর মতো এতো বৃহৎ একটি ভৌত কাঠামো নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে নির্মাণ করতে পারলেন, এটি শুধু দক্ষিণ এশিয়া কিংবা এশিয়া মহাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে একটি মাইলফলক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
বিশ্বব্যাংককে বাদ দিয়ে নিজের উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের কী অর্জন হয়েছে আর এর বৈশ্বিক বা আন্তর্জাতিক প্রভাব কী- এই বিষয়ে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। মোটা দাগে বলতে গেলে, আমাদের জাতীয় স্বার্থে এই প্রকল্প নিজেদের উদ্যোগে সফলভাবে সম্পন্ন করার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা প্রায় ৫০ বছর এগিয়ে গেলাম। অন্যদিকে, বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক এর নানা অযাযিত হুমকি ও প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এই ধরনের একটি বিশাল কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার কারণে বিশ্বব্যবস্থায়ও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।
এই ঘটনার ফলে বিশ্বব্যাংকসহ বহুপাক্ষিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (Multilateral Lending Institutions) বিপরীতে উন্নয়নশীল বিশ্বের দরকষাকষির ক্ষমতা (Bargaining Power) উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে এই বিশ্বমোড়লদের নানামুখী শোষণ আর খবরদারির (Hegemony) উপর এক বড় ধরনের আঘাত। এর ফলে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বে বহুপাক্ষিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জাতীয় স্বার্থবিরোধী প্রভাব কমতে শুরু করবে। অর্থাৎ শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থই রক্ষা করেনি, তার এই অসীম সাহসী সিদ্ধান্ত বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও এক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
আর্থিক ও অর্থনৈতিক, কারিগরি ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক নিজস্ব উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে পাঁচটি ফলাফল দৃশ্যমান হচ্ছে। ১) নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো এতো বৃহৎ ভৌতকাঠামো সফলভাবে নির্মাণের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে; ২) বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে দারিদ্র বিমোচন, দেশি- বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশের উন্নয়নকে আভ্যন্তরীণভাবে সব অঞ্চলে সুষম বণ্টনসহ দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক (Macro economy) উন্নয়নে এই সেতুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে; ৩) সেতু নির্মাণ, এর মালিকানা ও পরিচালনায় বিদেশি নির্ভরতা না থাকায় জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত হয়েছে; ৪) বাংলাদেশের এই উদ্যোগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের দরকষাকষির ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়ন হয়েছে এবং ৫) শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় এক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব উন্নয়নশীল দেশ, এমনকি উন্নত বিশ্বের কিছু দেশও বৃহৎ ভৌত কাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বহুপাক্ষিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র কিংবা আন্তর্জাতিক সংস্থার উপর নির্ভরশীল ছিল। ইতোপূর্বে নির্মিত বাংলাদেশের সব বৃহৎ ভৌত কাঠামোই বিভিন্ন বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তায় এবং কখনও কখনও তাদের অংশীদারিত্ব সম্পন্ন হয়েছে। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এই প্রথম বাংলাদেশ কোনো উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তা ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে এবং অর্থায়নে একটি বিশ্বমানের ভৌত কাঠামো নির্মাণ করল।
বৃহৎ সেতুর মতো ভৌত কাঠামো নির্মাণ ও এর মালিকানার বিষয়ে বিগত তিন দশক ধরে পৃথিবীর অনেক দেশেই নিজস্ব অর্থায়ন ও মালিকানার পরিবর্তে দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীর অর্থায়ন এবং ভৌত কাঠামোগুলোতে তাদের মালিকানাই রাখা হয়। এই ভৌত কাঠামোগুলোতে রাষ্ট্রীয় কোনো মালিকানা থাকে না। মূলত BOO (Build Own and Operate) এবং BOT (Build, Own and Transfer) এই দুই পদ্ধতিতে এই ধরনের বৃহৎ ভৌত কাঠামো নির্মাণ, এর মালিকানা, পরিচালনা ইত্যাদি বিষয় নির্ধারিত হয়। পৃথিবীর দেশে দেশে সরকারের সীমিত আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতার কারণেই এসব পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে ভৌত কাঠামোতে রাষ্ট্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এই ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রেই জনসাধারণ ও ভোক্তাগণের পক্ষে প্রকৃত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতার সৃষ্টি হয়। এই পদ্ধতিতে ক্ষেত্রবিশেষে জাতীয় স্বার্থও বিপন্ন হওয়ার আশংকা থাকে। শেখ হাসিনার উদ্যোগে নির্মিত পদ্মা সেতুর উপর কেবল বাংলাদেশেরই মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এই সেতুর উপর কোনো বিদেশি কর্তৃপক্ষের কোনো মালিকানা বা কর্তৃত্ব থাকবে না। চীন শুধু ঠিকাদারি কাজ করছে; দেশের দুই প্রান্তের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর উপর চীনসহ কোনো বিদেশি কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংকের জন্ম ১৯৪৪ সালে হলেও মূলত আশির দশক থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়নশীল বিশ্বের অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বিশ্বব্যাংক মূলত তাদের Structural Adjustment Programme এর মাধ্যমে তৎকালীন তৃতীয় বিশ্বে তাদের এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এটি অনস্বীকার্য যে, বহুপাক্ষিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যেই মূলত কাজ করছে। এক্ষেত্রে তাদের অনেক ইতিবাচক ভূমিকাও রয়েছে। তবে এটি ভুলে গেলে চলবে না, পৃথিবীর অনেক দেশেই এই সব উন্নয়ন সহযোগীর প্রেসক্রিপশনে সে দেশের জনগণ উপকৃত হয়নি; এর সুবিধাভোগী হয়েছে অন্য পক্ষ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সব উন্নয়ন সহযোগীর পরামর্শ কিংবা অংশীদারিত্ব সংশ্লিষ্ট দেশের স্বার্থবিরোধী ছিল। যেমন, ১৯৯৮ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিল, সরকার যাতে ২০০১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে গ্যাস রফতানি শুরু করে। এই পরামর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক নানামুখী কৌশল অবলম্বন করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্বার্থে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত সেটি করতে দেননি। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে দেশবিরোধী এই পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল, যদিও জননেত্রী শেখ হাসিনার জোরাল বিরোধিতার কারণে খালেদা জিয়া এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
২০১১ সালের জুন এবং ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সরকারের এক প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে আমি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক সদরদফতরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সভা করেছিলাম, যা মূলত দুই পক্ষের মধ্যে দরকষাকষির সভা ছিল। এ ছাড়াও বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময়ে সভা হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, বিশ্বব্যাংক বরাবরই ঋণ/সহায়তা গ্রহণকারী দেশগুলোর প্রকৃত কল্যাণের চেয়ে নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিতেই বেশি আগ্রহী। তাদের সিদ্ধান্ত সেই রাষ্ট্রের জন্য লাভজনক কিনা সেটি তারা দেখতে আগ্রহী নয়। তাদের নীতিমালার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতেই তারা বেশি আগ্রহী। বিভিন্ন দেশে তাদের খবরদারি (Hegemony) প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে অনেক সময় তারা স্ববিরোধী অবস্থানও নেয়। অনেক সময় তারা রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে নামে। পৃথিবীব্যাপী অনেক গবেষণায় উন্নয়ন সহযোগীদের এই ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি বিশ্বব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে কেউ কেউ (যেমন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্টিগলিটস ) তাদের লেখায় এটি তুলে ধরেছেন।
বিশ্বব্যাংক বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা করেছিল। ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় তারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, বাংলাদেশে দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে ঐ ভয়াবহ বন্যায় একটি মানুষও না খেয়ে মরেনি। ২০০৯-১০ সালে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যখন দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করার জন্য জরুরিভিত্তিতে ও জোরালোভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছিলেন, তখন বিশ্বব্যাংক বলেছিল- ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করতে গিয়ে দেশের ম্যাক্রো ইকোনমি ধসে পড়বে। তাদের সেই ভবিষ্যদ্বাণী আমরা ভুল প্রমাণ করেছিলাম। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতসহ সব খাতে শেখ হাসিনার সাহসী ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিস্ময়করভাবে উন্নতি লাভ করেছে।
পদ্মা ব্রিজ নিয়ে বিশ্বব্যাংক কতো কিছুই না করল। তারা দুর্নীতির কথা বলে এই প্রকল্পে প্রতিশ্রুত অর্থায়ন বন্ধ রাখল। পদ্মা ব্রিজের পাশাপাশি দুটি বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র (বিবিয়ানা ১ ও বিবিয়ানা ২ প্রকল্প) নির্মাণ প্রকল্পেও বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে তাদের প্রতিশ্রুত ঋণ প্রত্যাহার করল। এই প্রকল্প দুটিতে তাদের অনেক আগ্রহ ছিল। শুধু তাই নয়, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করল। এ দেশের কিছু কুলাঙ্গার বাংলাদেশ যাতে বিশ্বব্যাংক থেকে প্রতিশ্রুত ঋণ না পায়, তার জন্য অনেক অপপ্রচার করল। তারপর এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের প্রতিশ্রুত ঋণ প্রত্যাহারের বিষয় নিয়ে কতোই না মায়াকান্না করল তারা। তারা এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করল- এতে দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল। পরে কানাডার আদালতে প্রমাণিত হলো পদ্মা ব্রিজ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
বিশ্বব্যাংকের ঋণের তোয়াক্কা না করে শেখ হাসিনা আমাদের নিজেদের অর্থেই আজ পদ্মা ব্রিজ নির্মাণ করেছেন। এই বিশ্বব্যাংক একই সময়ে তাদের নিজেদের পলিসির ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেও বাধা দিয়েছিল। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এই নিয়ে আমাদের বেশ তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল। আমার এখনও মনে আছে, ঐ সভায় আমি তাদের দেখিয়ে দিয়েছিলাম বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক কীভাবে তাদের নিজেদেরই পলিসির ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছিল। শেখ হাসিনার সাহসী উদ্যোগ ও সফল কূটনীতির কারণে বাংলাদেশ যখন এই প্রকল্পগুলো স্থাপনে কয়েকটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের সহযোগিতা পেয়ে গেল, তখন বিশ্বব্যাংক ইউ-টার্ন নিয়ে এ দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা করতে আবার ফিরে আসল। আমার কাছে মনে হয়েছে, বিশ্বব্যাংক অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা কৌশলী পদক্ষেপ নিয়েছে। এই সব পদক্ষেপ ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে লবিইস্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই কাজগুলো করা হয়েছিল।
২০১৬ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংকের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে একই মঞ্চে বসে বাংলাদেশের যে প্রশংসা করেছিলেন তার মর্মার্থ হচ্ছে, আর্থসামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পৃথিবীর অনেক দেশ বাংলাদেশকে মডেল হিসেবে অনুসরণ করতে পারে। তার বক্তব্যে মনে হয়েছে, আর্থসামাজিক সব সূচকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র। উক্ত অনুষ্ঠানে দর্শক হিসেবে আমিও উপস্থিত ছিলাম। মঞ্চে উপবিষ্ট রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেদিন তার উপস্থিতি, ভাষণ, এমনকি তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে এটি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র- বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। ২০১৩ সালের অক্টোবরের ওয়াশিংটন সফরে আমি একটি বিষয় উদ্ঘাটন করেছিলাম যে, ড. ইউনূস মাসিক ফি’র ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে দুটো লবিইস্ট ফার্ম নিযুক্ত করেছিলেন যার কাজই ছিল স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ক্যাপিটেল হিল আর বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করা। একই সময়ে বিএনপি এবং যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীও যুক্তরাষ্ট্রে লবিইস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল। স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার আত্মবিশ্বাস, মনোবল আর সুদক্ষ নেতৃত্বের কাছে এসব কিছুই টেকেনি।
লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ