বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কল্যাণব্রতী

  • এম. নজরুল ইসলাম   
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৯:০৩

ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ আমরা পাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারে। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর তার জীবিত দুই কন্যার রাজনীতির প্রতি বিমুখ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের প্রতি ভালবাসার টানে দেশসেবাকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন তারা।

তার পারিবারিক পরিচয় কারও কাছে অজানা নয়। তিনি যে পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য সেই পরিবারটির রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্য। তার মাতামহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মা বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাবা প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ও ওয়াজেদ মিয়া।

কাজেই পাদপ্রদীপের আলোয় এসে রাজনৈতিক জীবন বেছে নেওয়ার সব সুযোগ তার ছিল। কিন্তু সে পথে গেলেন না সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। বেছে নিলেন অন্য এক জীবন। সে জীবনও মানুষের আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কল্যাণব্রতে নিবেদিত। বাঙালি নারী হয়েও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজেকে এই সাধনায় নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছেন পারিবারিক সংস্কৃতি থেকে অর্জিত ইচ্ছাশক্তির গুণে।

ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ আমরা পাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারে। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর তার জীবিত দুই কন্যার রাজনীতির প্রতি বিমুখ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশের প্রতি ভালবাসার টানে দেশসেবাকেই ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন তারা।

এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের সদস্য সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজেকে তার পরিসরে যোগ্যতার সঙ্গে তুলে ধরতে চেয়েছেন। তিনি তা পেরেছেনও। তিনি শুধু নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেননি, নিজেকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলেছেন। যেখানে চ্যালেঞ্জ নেওয়া থেকে তাকে পিছিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

বাঙালি নারী জাগরণ সম্পর্কে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘ঘরের মেয়েরা প্রতিদিন বিশ্বের মেয়ে হয়ে দেখা দিচ্ছে। এই উপলক্ষে মানুষের সৃষ্টিশীল চিত্তে এই-যে নূতন চিত্তের যোগ, সভ্যতায় এ আর-একটি তেজ এনে দিলে। আজ এর ক্রিয়া প্রত্যক্ষে অপ্রত্যক্ষে চলছে। একা পুরুষের গড়া সভ্যতায় যে ভারসামঞ্জস্যের অভাব প্রায়ই প্রলয় বাধাবার লক্ষণ আনে, আজ আশা করা যায় ক্রমে সে যাবে সাম্যের দিকে। প্রচণ্ড ভূমিকম্প বার বার ধাক্কা লাগাচ্ছে পুরাতন সভ্যতার ভিত্তিতে। এই সভ্যতায় বিপত্তির কারণ অনেক দিন থেকে সঞ্চিত হয়ে উঠছিল, অতএব ভাঙনের কাজ কেউ বন্ধ করতে পারবে না। একটিমাত্র বড়ো আশ্বাসের কথা এই যে, কল্পান্তের ভূমিকায় নূতন সভ্যতা গড়বার কাজে মেয়েরা এসে দাঁড়িয়েছে- প্রস্তুত হচ্ছে তারা পৃথিবীর সর্বত্রই। তাদের মুখের উপর থেকেই যে কেবল ঘোমটা খসল তা নয়- যে ঘোমটার আবরণে তারা অধিকাংশ জগতের আড়ালে পড়ে গিয়েছিল সেই মনের ঘোমটাও তাদের খসছে। যে মানব সমাজে তারা জন্মেছে সেই সমাজ আজ সকল দিকেই সকল বিভাগেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠল তাদের দৃষ্টির সম্মুখে। এখন অন্ধসংস্কারের কারখানায় গড়া পুতুলগুলো নিয়ে খেলা করা আর তাদের সাজবে না। তাদের স্বাভাবিক জীবপালিনী বুদ্ধি, কেবল ঘরের লোককে নয়, সকল লোককে রক্ষার জন্যে কায়মনে প্রবৃত্ত হবে।’

কবিগুরুর এই কথাগুলো কী চমৎকারভাবে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর জোট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) দূত নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। সায়মার সঙ্গে দূত হিসেবে আরও রয়েছেন মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ, ফিলিপাইনের জাতীয় সংসদের উপস্পিকার লরেন লেগার্দা ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর প্রধান জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ তোসি এমপানু-এমপানু। সিভিএফের সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর আকাঙ্ক্ষার, সংস্কৃতি, অর্থায়ন, সংসদ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ঝুঁকিকে ছয়টি মূল বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ঝুঁকির বিষয়ে ‘থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিএইচও) মহাপরিচালকের উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

মানুষের ধর্ম নিবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘মানুষের দায় মহামানবের দায়, কোথাও তার সীমা নেই। অন্তহীন সাধনার ক্ষেত্রে তার বাস। জন্তুদের বাস ভূমণ্ডলে, মানুষের বাস সেইখানে যাকে সে বলে তার দেশ। দেশ কেবল ভৌমিক নয়, দেশ মানসিক। মানুষে মানুষে মিলিয়ে এই দেশ জ্ঞানে জ্ঞানে, কর্মে কর্মে। যুগযুগান্তরের প্রবাহিত চিন্তাধারায় প্রীতিধারায় দেশের মন ফলে শস্যে সমৃদ্ধ। বহু লোকের আত্মত্যাগে দেশের গৌরব সমুজ্জ্বল। যে-সব দেশবাসী অতীতকালের তাঁরা বস্তুত বাস করতেন ভবিষ্যতে। তাঁদের ইচ্ছার গতি কর্মের গতি ছিল আগামীকালের অভিমুখে। তাঁদের তপস্যার ভবিষ্যৎ আজ বর্তমান হয়েছে আমাদের মধ্যে, কিন্তু আবদ্ধ হয় নি। আবার আমরাও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ করছি। সেই ভবিষ্যৎকে ব্যক্তিগতরূপে আমরা ভোগ করব না। যে তপস্বীরা অন্তহীন ভবিষ্যতে বাস করতেন, ভবিষ্যতে যাঁদের আনন্দ, যাঁদের আশা, যাঁদের গৌরব, মানুষের সভ্যতা তাঁদেরই রচনা। তাঁদেরই স্মরণ করে মানুষ আপনাকে জেনেছে অমৃতের সন্তান, বুঝেছে যে, তার দৃষ্টি, তার সৃষ্টি, তার চরিত্র, মৃত্যুকে পেরিয়ে। মৃত্যুর মধ্যে গিয়ে যাঁরা অমৃতকে প্রমাণ করেছেন তাঁদের দানেই দেশ রচিত। ভাবীকালবাসীরা, শুধু আপন দেশকে নয়, সমস্ত পৃথিবীর লোককে অধিকার করেছেন। তাঁদের চিন্তা, তাঁদের কর্ম, জাতিবর্ণনির্বিচারে সমস্ত মানুষের। সবাই তাঁদের সম্পদের উত্তরাধিকারী। তাঁরাই প্রমাণ করেন, সব মানুষকে নিয়ে; সব মানুষকে অতিক্রম করে, সীমাবদ্ধ কালকে পার হয়ে এক-মানুষ বিরাজিত। সেই মানুষকেই প্রকাশ করতে হবে, শ্রেষ্ঠ স্থান দিতে হবে বলেই মানুষের বাস দেশে। অর্থাৎ, এমন জায়গায় যেখানে প্রত্যেক মানুষের বিস্তার খণ্ড খণ্ড দেশকালপাত্র ছাড়িয়ে-যেখানে মানুষের বিদ্যা, মানুষের সাধনা সত্য হয় সকল কালের সকল মানুষকে নিয়ে।’

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সেই মানুষের ধর্ম পালন করে চলেছেন। পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচিতির বাইরে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজেকে ভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত করেছেন একজন প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ হিসেবে। বিশ্বব্যাপী অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য। ১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল মনস্তত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।

তিনি ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়ুবিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ করছেন। স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব সংস্থা ২০০৪ সালে তাকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৯ সালে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সৃষ্টিশীল নারী নেতৃত্বের ১০০ জনের তালিকায় স্থান করে নেন নিজ যোগ্যতাগুণে।

তার উদ্যোগেই ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজমের মতো অবহেলিত একটি বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী অংশগ্রহণ করেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশে ‘নিউরোডেভলোপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট ২০১৩’ পাস হয়।

আজ তার জন্মদিনে আমাদের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।

 

লেখক: সর্ব ইউরোপিয়ায়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক।

এ বিভাগের আরো খবর