বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গণপ্রতিরোধের এখনই সময়

  •    
  • ৫ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৬:০২

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ নিয়ে দেশের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নিজেদের অস্তিত্ব জানিয়েছিল অনেক আগেই। বেশকিছুদিন জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা শিথিলতা থাকলেও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো আবার মাথাচাড়া দেয়ার শঙ্কা সামনে এসেছে। যদিও জঙ্গি নির্মূলে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে, তবু একটি অপশক্তি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদেরকে সচেতনতার সঙ্গে মোকাবিলার সময় এসেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে কিছুটা উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু রাজনৈতিক ঘটনা বিশ্লেষণ করলে এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। যে কয়েকটি বিষয় আমাদের সামনে আসে সেগুলোর মধ্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিবেদনে নানা কারণে মৌলবাদের উত্থান সম্পর্কিত বিষয়টি আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ধর্মভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রকাশ্যে এবং গোপনে নতুন করে তৎপরতা চালানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

অতি সম্প্রতি প্রকাশ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে বাংলাদেশে দৃশ্যমান হচ্ছে। তাদের আস্ফালনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টিসহ রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব তৈরির অপচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে মৌলবাদি ধর্মভিত্তিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলাম ছাড়াও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন এবং হেফাজতে ইসলামের মতো রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো ইদানীং ব্যাপক দাপট দেখাতে শুরু করেছে। তাদের কর্মী সংগ্রহের হার অনেক বেশি। নতুন করে মৌলবাদি এবং স্বাধীনতা বিরোধীরা জোটবদ্ধ হচ্ছে। তারা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। সরকারের জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই স্বাধীনতা-বিরোধী অপশক্তি। বিশেষ করে হেফাজতের সম্মেলনের পর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি নতুন করে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগোতে চাইছে।

বাংলাদেশে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। টানা তিন মেয়াদে এই সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। এই সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং একটি অসম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাংলাদেশ নির্মাণের চেষ্টা করছে সরকার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ধীরে ধীরে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলো জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে আঁতাত করে নতুন করে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার চেষ্টা করছে। যেসব ইস্যু নিয়ে তারা আবার ঐক্যবদ্ধ হতে চাইছে তার মধ্যে রয়েছে ভাস্কর্য বিতর্ক এবং ব্লাসফেমি আইন।

এ প্রেক্ষাপটে গত কিছুদিন ধরেই জঙ্গিবাদের বিস্তার, নাগরিকদের শঙ্কা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের ইস্যুতে গণমাধ্যমে নানাবিধ প্রতিবেদন ও সংবাদ পাচ্ছি। অবশ্য জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকারের সাম্প্রতিক নানাবিধ উদ্যোগও প্রশংসার দাবি রাখে। তা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত এই শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার ইস্যুটি সবার মাথায় প্রতিনিয়ত ঘুরপাক খাচ্ছে।

বেশ কিছুদিন আগে বিএনপি অফিসের সামনে গাড়ি পোড়ানোর ইস্যুসহ খেলাফত মজলিসের ভাস্কর্যবিরোধী হুমকি- কোনোটিই যে বিচ্ছিন্ন নয়, সেটি বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয়। প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পিতভাবেই দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা থেকেই এগুলো হতে পারে বলে অনুমান করা যায়।

আমরা জানি, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার সুযোগ নিয়ে দেশের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো নিজেদের অস্তিত্ব জানিয়েছিল অনেক আগেই। বেশকিছুদিন জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা শিথিলতা থাকলেও জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো আবার মাথাচাড়া দেয়ার শঙ্কা সামনে এসেছে। যদিও জঙ্গি নির্মূলে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে, তবু একটি অপশক্তি গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদেরকে সচেতনতার সঙ্গে মোকাবিলার সময় এসেছে।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশে জেএমবি নামক জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বাংলা ভাই নামক জঙ্গিরা প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা শুরু করে। এরপরই হরকাতুল জিহাদসহ আরও কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন মাঠে নামে। ২০০৪ সালের ১৭ ও ২১ আগস্ট এর মতো ভয়াবহ অবস্থারও সৃষ্টি হয় জঙ্গিদের দ্বারা।

বর্তমানে জঙ্গিবাদের তৎপরতায় এসেছে ভিন্নতা। কয়েক বছর আগে লেখক, বুদ্ধিজীবী ও বিদেশি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘৃণ্য পদক্ষেপ আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছিল। বাংলাদেশে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কোনো বিদেশি নাগরিককে হত্যা বা টার্গেট করা হয়নি। সবশেষ এমন ঘটনা ঘটেছিল ২০০৪ সালে। তখন বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ছিলেন আনোয়ার চৌধুরী। তার ওপর সিলেটে হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী। তারপর থেকেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরপরও অতি সম্প্রতি নাগরিকদের মনে মৌলবাদি তৎপরতার বিষয়টি শঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। এর অন্যতম কারণ, জঙ্গিরা তাদের হামলার কৌশল পরিবর্তন করছে প্রতিনিয়ত। আর এটিও কোনো কৌশল কিনা সে বিষয়টি নিয়ে ভাববার সুযোগ এসেছে।

একটি কুচক্রি মহল বাংলাদেশকে যে কোনোভাবে অনিরাপদ প্রমাণ করতে মরিয়া। বাংলাদেশে আইএস আছে, জঙ্গি আছে এ ধরনের একটি পরিবেশকে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার প্রয়াস অনেকদিন থেকেই ওই কুচক্রি মহলের লক্ষ্য।

দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থাহীনতা এবং দোষারোপের সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিনিয়ত যেকোনো ঘটনার ইস্যুতেই একদল আরেক দলকে দোষারোপে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর এই সুযোগে জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যস্ত হয়ে উঠে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অন্যতম নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অনেক সময় নিরাপত্তার শঙ্কা হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে প্রতিনিয়ত সরকারকে বিপাকে ফেলার টার্গেট নিয়ে থাকে বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। তাতে যদি সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্নও হয় তাতে তাদের মাথা ব্যথা থাকে না। এখানে ক্ষমতায় যাওয়ার ঘৃণ্য প্রতিযোগিতাই বেশি লক্ষ করা যায়। ফলে জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধে বিরোধী দলের ভূমিকা আশা করা অলিক কল্পনামাত্র। বিরোধী দলগুলোর নীরবতা জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়।

হানাহানি ও বিদ্বেষ পরিত্যাগ করে মৌলবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্র নির্মূলের এখনই সময়। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অনৈক্য ও বিভেদ ভুলে সবাইকে দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এখনই আমরা জঙ্গি আশঙ্কার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে না পারলে এর বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। শুধু সরকার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এর মূলোৎপাটন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মূলত ষড়যন্ত্র নির্মূলে সামাজিকভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনসচেতনতার ভিত্তিতে গণমানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে গণপ্রতিরোধ গড়ার কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

এ বিভাগের আরো খবর