বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশের ভাবমূর্তি

  •    
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২০ ১৯:০৫

আমেরিকার নিজস্ব ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে মিয়ানমার থেকে চীনের একাধিপত্য সরানো তার দরকার। তাই মি. ব্লিনকেন তার প্যাকেজে রোহিঙ্গা সমস্যা রাখবেন। অবশ্য এর জন্যে বাংলাদেশকে যথাকাজ করে যেতে হবে।

আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি আমেরিকার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করবেন। যে কোনো দেশের বড় সম্পদ ওই দেশের ভাবমূর্তি। এটা নানান ভাবে গড়ে ওঠে। যেমন ম্যারোডোনা ফুটবল দিয়ে আর্জেন্টিনার ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছিলেন দেশে দেশে মানুষের কাছে। মানুষ ম্যারোডোনার সঙ্গে সঙ্গে আর্জেন্টিনাকেও ভালোবাসতে শুরু করে। তেমনি এক সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো একটি দ্বীপ রাষ্ট্রের সারা পৃথিবীতে পরিচিতি ছিলো সেরা ক্রিকেটের জন্যে। সে সময়ে যদি কোনো সপ্তম নৌবহর বা বিংশতি নৌবহর নিয়ে কেউ ওয়েস্ট ইন্ডিজ আক্রমণ করতে যেত, তাহলে পৃথিবীর দেশে দেশে রাস্তায় মানুষ নেমে আসতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে। আর সেই জনমতকে উপেক্ষা করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আক্রমণ করা বা জয় করা যে কোনো পরাশক্তির জন্যেও দুঃসাধ্য ছিল। অর্থাৎ যে কোনো পরাশক্তির বিরুদ্ধে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১১ জনের আর্মিই যথেষ্ট ছিল।

অবশ্য আমেরিকার ভাবমূর্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার রাজনৈতিক আধিপত্য ও বাণিজ্য। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা আর্জেন্টিনা পৃথিবীতে যেভাবে নিজেকে উপস্থিত করতে চায়, আমেরিকার চাওয়া তার থেকে ভিন্ন। আবার এবার একটু বেশি ভিন্ন হবে এ কারণে যে, ট্রাম্পের একটা ভিন্নধর্মী শাসন ও পররাষ্ট্রনীতি থেকে জো বাইডেন আরেকটি বাস্তবতা সৃষ্টি করতে চান। সে লক্ষ্যেই তিনি এন্থনি ব্লিনকেনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছেন (তাদের দেশে অবশ্য সেক্রেটারি বলা হয়)। ইহুদি বংশোদ্ভুতের কারণে হোক আর নিজস্ব মানবিকতার গুণে হোক, ব্লিনকেন ব্যক্তিগতভাবে পৃথিবীতে শরণার্থী সমস্যার সমাধান চান। এ লক্ষ্যে তিনি সব সময়ই কাজ করে এসেছেন। পৃথিবীতে যে ক’জন ব্যক্তি জোরালোভাবে রিফিউজি সমস্যার সমাধান চান মি. ব্লিনকেন তাদের একজন। তাই এবার আমেরিকা ও ব্লিনকেনকে ঘিরে পৃথিবীর অনেক দেশ ও মানুষ রিফিউজি সমস্যার অনেক বেশি সমাধান হবে এ আশা করতে পারে।

আর এই আশা যারা করবে এবং এ সুযোগ যাদের নিতে হবে বাংলাদেশকে তাদের ভেতর থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশের ওপর এখন চেপে আছে দশ লাখ মিয়ানমারের শরণার্থী। তাদেরকে দেশে পাঠাতে বাংলাদেশকে এখন তাই আমেরিকার সাহায্য নিতে হবে। এখনই শুরু করতে হবে ব্লিনকেনের সঙ্গে যোগাযোগ। তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল বিষয়টি। মিয়ানমারের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগত সমস্যা ও চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের বিষয়টি। বাংলাদেশ যে আবেগ দিয়ে এই সমস্যাটি দেখে, সে আবেগের মাধ্যমে নয়, বাস্তব বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। এবং এখানে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যে এশিয়ার অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, এবারের নির্বাচনে সু চি ল্যান্ডস্লাইড ভিক্টরি পেলেও মিয়ানমারে বিনিয়োগে আসবে না। কারণ দেশটির ভাবমূর্তি। রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও তাদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করার ফলে দেশটি ভাবমূর্তি সংকটে আছে। এ অবস্থায় পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারে বিনিয়োগ করতে আসবে না। ওই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ শতভাগ সঠিক। তবে এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় আছে যা হলো, সু চিকে পশ্চিমা বিনিয়োগ নিতে হলে বা বিশেষ করে গণতান্ত্রিক বিশ্বের বিনিয়োগ নিতে হলে তাকে চীনের একাধিপত্য থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ একটি অটোক্রেটিক দেশের একাধিপত্যের ভেতর থেকে কোনোক্রমেই গণতান্ত্রিক বিশ্বের সর্বাত্মক সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

মিয়ানমার সামরিক শাসন থেকে বের হলেই সেখানে প্রথম ল্যান্ড করেছিলেন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। সেখান থেকেই তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। মি. ব্লিনকেন ওই প্রশাসনেও ছিলেন। তাই সে সময়ে সফলতা ব্যর্থতা সবই তার জানা। তাই এবার তাকে মিয়ানমারে ল্যান্ড করতে হবে নতুনভাবে। সেখানে তার অনেকগুলো কাজের মধ্যে বড় কাজটি থাকবে মিয়ানমারকে চীনের একক কবল থেকে মুক্ত করার পথটির সূচনা করা। এরপরে যাতে ব্লিনকেন মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ আসে সে জন্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। আর মিয়ানমার থেকে হিলারি বাংলাদেশে এসেছিলেন যতটা না আমেরিকার স্বার্থে ও বাংলাদেশের স্বার্থে, তার থেকে অনেক বেশি ছিল ড. ইউনূসের ব্যক্তি স্বার্থ দেখার জন্যে। কিন্তু এবার মি. ব্লিনকেন যাতে মিয়ানমারে আমেরিকার স্বার্থ ছাড়াও গোটা বিশ্বের মানবিক সমস্যা অর্থাৎ শরণার্থী সমস্যা নিয়ে কথা বলে একটি জানালা অন্তত খুলেই তবে বাংলাদেশে আসতে পারেন, সে কাজটি বাংলাদেশকে এখনই শুরু করতে হবে।

আমেরিকার নিজস্ব ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে মিয়ানমার থেকে চীনের একাধিপত্য সরানো তার দরকার। তাই মি. ব্লিনকেন তার প্যাকেজে রোহিঙ্গা সমস্যা রাখবেন। অবশ্য এর জন্যে বাংলাদেশকে যথাকাজ করে যেতে হবে। অন্যদিকে মি. ব্লিনকেন ও জো বাইডেন সকলে মিলে আমেরিকার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের জন্যে যতই রিফিউজি সমস্যার সমাধান করুন না কেন, তাতে প্যালেস্টাইনের গাজা এলাকার একটি রিফিউজি শিশু যে তার রিফিউজি জীবন থেকে মুক্তি পাবে না, এটা নিশ্চিত বলা। কারণ রাজনীতিতে মানবতাও স্বার্থের স্রোতেই চলে। রাজনীতি কখনই মানবিকতার শত পাপড়িকে জড়িয়ে ধরে চলে না। যে পাপড়িটি তার প্রয়োজন, ফুল থেকে সে শুধু ওটাই নেয়। তাই প্যালেস্টাইনের রিফিউজি সমস্যার সমাধান ব্লিনকেন বা বাইডেনের মানবিকতায় ও আমেরিকার ভাবমুর্তি পুরুদ্ধারের মধ্যে পড়ে না। বরং বাস্তবতা হলো নেতানিয়াহুর পুরনো বন্ধু হিসেবে শুধু নয়, জো বাইডেন তার পররাষ্ট্রনীতিতে ইসরাইল নীতি মোটেই পরিবর্তন করবে না। বরং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যা মনে করছেন, সেটাই সত্য হবে, আমেরিকা ও ইসরাইল সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে। আমেরিকার এই ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বের থেকে তার নিজ দেশে আরো বেশি প্রয়োজন।

তবে আমেরিকা বর্তমানে যে নীতি গ্রহণ করেছে অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের অনান্য দেশের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক সহজীকরণ – এই ধারাই সেখানে চলতে থাকবে। পাকিস্তান অবশ্য এখানে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশকে এক্ষেত্রে তার নিজ অবস্থানেই থাকতে হবে। আর মধ্যপ্রাচ্যে সৌদির সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, বিশেষ করে বর্তমান সরকারের যে সম্পর্ক, সে পথেই বাংলাদেশকে যেতে হবে। কারণ, সৌদি আরব রাজতন্ত্রের মধ্যে বসেও অনেক পরিবর্তনের বাতাস আনতে শুরু করেছে। কিন্তু সৌদির সঙ্গে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশকে আরও যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে। সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে আটটি মডেল মসজিদ নির্মাণের টাকা দেবার ঘোষণা দিয়েছেন। এর পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয় এমন বিনিয়োগ বাংলাদেশকে সৌদি থেকে আনতে হবে, যাতে সৌদিতে যে পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছে, তার প্রতিফলন ঘটে তাদের বিনিয়োগের ধারার মধ্যে।

বাংলাদেশ যে এই মুহূর্তে বিনিয়োগের জন্যে একটি ভালো অবস্থানে আছে, সেটা এশীয় অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন। তারা মনে করছেন, আমেরিকার আবার এশিয়ায় মনোযোগী হওয়াতে চীন তার একাধিপত্য শুধু হারাবে না বিনিয়োগও হারাবে। আর সে বিনিয়োগের জন্যে বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক স্থানে আছে। তবে এর জন্যে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে গতি আনতে হবে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে অনেক বাধার মধ্যে একটি হলো দশ মিনিটের ফাইল বিশ দিন আটকে থাকে। মন্ত্রী আন্তরিক হলেও এখানে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। আর এটা এখন বিনিয়োগকারীদেরও অজানা নয়। এ কারণে বাংলাদেশের জন্যে এ মুহূর্তে বিনিয়োগকারী দেশগুলোর কাছে এই ভাবমূর্তিই গড়ে তুলতে হবে যে, বাংলাদেশে রকেট গতিতে বিনিয়োগের ফাইল চলে। এ জন্যে প্রয়োজনে রাজনৈতিক নিয়োগ দিয়েও প্রশাসনে গতি আনতে হবে। কারণ এ সময়ে এ ভাবমূর্তি না গড়তে পারলে ট্রেন মিস হয়ে যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর