বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসে আগুন: চরিত্র বদলায়নি বিএনপির

  • তাপস হালদার   
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২০ ২২:৪২

বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের কথা দেশবাসী ভুলে যায়নি। কিভাবে নিরপরাধ মানুষজনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল, সবাই মনে রেখেছে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে গনহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যখন বিচার শুরু হয় তখনই এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু হয়।

করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ একটি অস্থির সময় পার করছে। সারা বিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকলেও এখনও আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে একটি সুন্দর সময় যখন চলছে, মানুষের জীবন যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, ঠিক তখন আবার বিএনপি জামায়াত জোট আগুন সন্ত্রাসের খেলায় মেতে উঠেছে।

গত ১২ নভেম্বর দুপুর থেকে ধারাবাহিকভাবে ব্যস্ততম রাজধানী শহরের নয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাসে আগুন দেয়া হয়। ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন ছিল। সেখানে যুবদলের এক নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দু প্রার্থীর মধ্যে আগেই কয়েক বার হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি বিএনপির মহাসচিবের বাসায় হামলা ভাংচুর করা হয়েছিল। বিএনপির প্রার্থীর নিশ্চিত পরাজয় জেনে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে এবং জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে পরিকল্পিতভাবে বাসে আগুন সন্ত্রাস চালানো হয়েছে।

বিএনপি উপনির্বাচনগুলোতে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও শুধু নির্বাচন পদ্ধতি ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতেই অংশগ্রহণ করে থাকে। ঢাক ঢোল পিটিয়ে নির্বাচনে নেমে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ জন্য এখন জনগণ তো নয়ই, কর্মী সমর্থকদের মধ্যেও তাদের প্রতি ন্যূনতম আস্থা নেই। নইলে বিএনপির মতো একটি দলের প্রার্থী একটি কেন্দ্রে একটি ভোটও পাবে না, এমনটি হতে পারে না।

বিএনপি প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী জুড়ে বাসে আগুন দেয়া শুরু হয়ে গেল। এটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত হামলা। বিএনপি জামায়াত চক্র কী কখনও মানুষের অনুভুতি বুঝবে না? এখন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকার ভালোভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে – এটাই তাদের সহ্য হচ্ছে না। শুধুমাত্র সরকারের ভালো কাজ সহ্য করতে না পেরে দেশকে অস্থিতিশীল করতে আবারও আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের কথা দেশবাসী ভুলে যায়নি। কিভাবে নিরপরাধ মানুষজনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল, সবাই মনে রেখেছে। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতি শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে গনহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যখন বিচার শুরু হয় তখনই এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুরু হয়। সে সময় ৪১৯টি ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয় ৪৯২ জন, আহত আড়াই হাজারের কাছাকাছি। এক একটি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেত হত্যা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি জোটের ভয়াবহ সন্ত্রাসের রাজত্ব কেউ ভোলেনি। তখন শত শত যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়। পেট্রোল বোমার আঘাতে দগ্ধ মানুষের আহাজারিতে হাসপাতালগুলোর বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। পবিত্র উপাসনালয় মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জায়ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি লাখ লাখ গাছও। নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ হত্যা করা হয় ২৬ জন নিরীহ মানুষকে। সারাদেশে ৫৮২টি ভোটকেন্দ্রে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

এসব বাধা অতিক্রম করে সেদিন জনগণ গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিল। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তির দিনও বিএনপি জামায়াত চক্র আবার জ্বালাও-পোড়াও করে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, সরকারি স্থাপনাগুলোতে পেট্রোল বোমা মেরে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। ওই সময় ২৩১ জনকে হত্যা করা হয়। প্রায় ১২শ লোক মারাত্মকভাবে আহত হয়। ২ হাজার ৯০৩টি বাস-ট্রাক, ১৮টি ট্রেন, আটটি যাত্রীবাহী লঞ্চ, সাতটি ভূমি অফিসসহ ৭০টি সরকারি অফিসে আগুন দেয়। একাত্তর সালের পাকিস্তানি হানাদারদের মতো ভয়াবহতা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সেদিন জনগণকে সাথে নিয়ে দুর্বৃত্তদের পরাভূত করে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছিল। বিজয়ী হয়েছিল গণতন্ত্র, যার পথ ধরে আজ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিজেরাই বাসে আগুন দিয়েছে। কী হাস্যকর কথা? মির্জা সাহেব, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। তারা কেন নিজেদের সুন্দর সময়কে অস্থিতিশীল করবে? এ কথা কি পাগলেও বিশ্বাস করবে? আপনি এমন সব আজগুবি কথা বলে নিজেকে সার্কাসের জোকারে পরিণত করেছেন। আপনি বলতে পারেন, ভাই রে আমি তো ‘কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ মার্কা মহাসচিব। আমি কি ভাবে জানবো? দলটা তো চালায় লন্ডনে থাকা যুবরাজ আর জামায়াত।

বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী দল, সেটা যে শুধু প্রতিপক্ষ দল হিসেবে আওয়ামী লীগই বলছে, সেটাই নয়। কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপির একজন নেতার রাজনৈতিক আশ্রয় মামলার (সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন ২০১৭ এফসি ৯৪) রায়ে বলেছে যে, বিএনপি প্রকৃতপক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। বিএনপি এমন একটি দল যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরনে সশস্ত্র সংগ্রাম বা সহিংসতার আশ্রয় নেয়। হাতবোমা, পিস্তল ও অস্ত্র ব্যবহার করে নেতৃস্থানীয় এবং জনগণের ওপর হামলা চালায় বিএনপি। এমনকি অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটায় দলটি।

হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম, তাই তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কখনও বিশ্বাস করে না। বিএনপির আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে তাদেরকে জিম্মি করে রাখা। এ জন্যই তারা জনগণ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। এখন কার্যত জামায়াতের বি-টিমে পরিণত হয়েছে।

২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি -জামায়াত যে নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়েছে, তার সাথে কেবল পাকিস্তানি হায়েনাদের নির্মমতারই তুলনা চলে। এরা হয়তো কৌশলগত কারণে সাময়িকভাবে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখে। তবে সময়-সুযোগ পেলে যে আসল চরিত্রে বেড়িয়ে আসবে, সেটার মহড়া তারা দিয়ে দিল। সময় বদলালেও চরিত্র বদলায়নি বিএনপির। এদেরকে কোনো ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। দুষ্কৃতকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এদেরকে রাজনৈতিকভাবেও চিরতরে বিদায় করতে হবে।

 

লেখক: সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ও সাবেক ছাত্রনেতা।

এ বিভাগের আরো খবর