বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এ মুহূর্তের দায়

  •    
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২০ ২১:০৫

এ মুহূর্তের পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধু থাকলে যে আহ্বানটি জানাতেন, সেটিই শেখ হাসিনা জানিয়েছেন। দরিদ্রের জন্যে বিনামূল্যে কোভিড টিকা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে পৃথিবী যে ভয়াবহ দুর্দিনে, সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিবেদিত সংসদ অধিবেশেনে এটাই ছিল তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন।

আমেরিকার নির্বাচনে বাইডেনের বিজয়ে সারা পৃথিবীতে আমেরিকার নীতির যে খুব বেশি কোনো পরিবর্তন হবে, তা কেউ মনে করছে না। তবে এ মুহূর্তে পৃথিবীর সব থেকে বড় লাভ হলো, বাইডেন কোভিড-১৯কে গুরুত্ব দিচ্ছেন সর্বোচ্চ, যা ট্রাম্প দেননি। আর এর ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শক্তিশালী হবে। সেখানে অন্যান্য ধনী দেশ এগিয়ে এলে পৃথিবীর দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে কোভিড-১৯ এর টিকা পাবে। ট্রাম্প থাকলে এ কাজে তিনি প্রত্যক্ষ না হোক পরোক্ষভাবে বাধা দিতেন।

দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দেবার বিষয়টি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেয়া তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন যাতে বিনামূল্যে পৃথিবীর দরিদ্র মানুষ কোভিড টিকা পান।

শেখ হাসিনা সংসদের যে অধিবেশনে এই আহবান জানিয়েছেন, সেটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে আহবান করা বিশেষ অধিবেশন। সেই অধিবেশনে অংশ নেয়া সকলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তার জীবন নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তুলে ধরেছেন অনেক সত্য। তবে সকলের কথা মূল্যায়ন করলে বলা যেতে পারে, এ মুহূর্তের পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধু থাকলে যে আহ্বানটি জানাতেন, সেটিই শেখ হাসিনা জানিয়েছেন। দরিদ্রের জন্যে বিনামূল্যে কোভিড টিকা। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে পৃথিবী যে ভয়াবহ দুর্দিনে, সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিবেদিত সংসদ অধিবেশেনে এটাই ছিল তার প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন।

শেখ হাসিনার এই আহ্বানে যাতে গোটা বিশ্ব সাড়া দেয়, সে কাজ এখন বিশ্বের অন্যান্য জননেতাদের এগিয়ে নিতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে পৃথিবীর সব থেকে বেশি সংখ্যক দরিদ্র মানুষের বাস। তাদের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীরও আদর্শ ছিল দরিদ্রের জন্যে সবার আগে হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাই সে দেশের নেতা নরেন্দ্র মোদিরও এখন দায়িত্ব তিনি যেন বিশ্ব ফোরামে শেখ হাসিনার এ বক্তব্যকে সমর্থন করেন। শেখ হাসিনাকে যেমন তার দেশের দরিদ্র মানুষ সমর্থন দেন, নরেন্দ্র মোদিকেও কিন্তু সেদেশের দরিদ্র মানুষ বার বার সমর্থন দিচ্ছেন।

সর্বশেষ বিহারের রাজ্যসভা নির্বাচনে সেখানকার দরিদ্র মানুষ নরেন্দ্র মোদির জোটকেই সমর্থন দিয়েছে। বিহার ভারতের দরিদ্র জনগোষ্ঠিকবলিত রাজ্যগুলোর একটি। নরেন্দ্র মোদির প্রতি সেখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির এ সমর্থনে এও প্রমাণিত হয়, কোভিডের এই দুঃসময়ে সে দেশের দরিদ্র মানুষ তার নেতৃত্বের প্রতিই আস্থা রেখেছে। স্বাভাবিকভাবেই দরিদ্র মানুষের প্রতি তার দায়িত্ব এ নির্বাচনের পরে আরও বেড়ে যায়।

আর একটা বিষয় এখন তৃতীয় বিশ্বের নেতাদের মনে রাখা দরকার, কোভিড পরবর্তী দারিদ্র্য কিন্তু সকলের সামনে উঁকি দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় মন্দা শুরু হয়ে গেছে। পাশাপাশি নিউজবাংলা টোয়েন্টি ফোরে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে সরকারি সরবরাহ থেকে নিত্যপণ্য নেবার জন্যে মানুষের দীর্ঘ সারি। এ সবই কিন্তু সারা বিশ্বের জন্যে ‘ওয়েক-আপ কল’। ইন্দোনেশিয়ার এই মন্দা থেকে গোটা বিশ্বেরই সর্তক হতে হবে। এ মুহূর্তে কোভিডের ধাক্কা যেটা অর্থনীতির ওপর আসছে, তা পৃথিবীতে একটা মন্দার সৃষ্টি করবেই।

নিউজবাংলায় মানুষের দীর্ঘ সারির ছবি শুধু বাংলাদেশের ছবি নয়, এটা সারা পৃথিবীর দরিদ্রের ভবিষ্যতের একটা সতর্কবার্তা। তাই বিশ্বের সব দেশকে এখন দুটো বিষয় নিয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক, কীভাবে তারা আসন্ন এই মন্দা মোকাবিলা করবে। দুই, দরিদ্র মানুষ যাতে তীব্র খাদ্যাভাবে না পড়ে। পৃথিবী এখন এত বেশি একে-অপরের সঙ্গে সংযুক্ত, কোনো একটি দেশ বিচ্ছিন্নভাবে এই মন্দা মোকাবিলা করতে পারবে না। সকলকে এক হয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর মন্দার সঙ্গে যাতে কোনোমতেই পৃথিবীর কোনো দেশে চরম খাদ্যাভাব না নেমে আসে, সে জন্য এখনই সর্তক হতে হবে। এ নিয়ে সময় নষ্ট করার মত কোনো সময় হাতে নেই।

পৃথিবীর সামনে যখন এই চরম দুর্দিন আসেছে, তখন আরেকটি বড় কাজ হলো প্রতিবেশী দেশগুলোর পারস্পারিক সমস্যা মিটিয়ে ফেলা। কারণ যে কোনো দুর্যোগে প্রতিবেশী দেশই সব থেকে বেশি প্রয়োজনীয়। এ বিবেচনায় এ মুহূর্তে মেক্সিকোর মানুষ অনেক খুশি। কারণ গত চার বছর প্রতিবেশী আমেরিকার সঙ্গে তাদের যে সমস্যা পোহাতে হয়েছে, বাইডেনের বিজয়ের পরে এটা নিশ্চিত, সে সমস্যা আর অতটা তীব্রভাবে পোহাতে হবে না।

ভারত ও চীনের বৈরিতার মধ্যেও একটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে: তারা লাদাখকে বাদ দিয়ে অনান্য সীমান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। পৃথিবীর যে কোনো কূটনীতিতে এটাই সব থেকে বড় দিক: যে কোনো একটি সমস্যাকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকা নয়। বরং সেটাকে তার গতিতে চলতে দিয়ে বাদবাকি সমস্যার সমাধানের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

অর্থনীতির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম দেখা যায়। যেমন এ মুহূর্তে সামরিক খাতের চীনের যে কোনো উৎপাদনে বিনিয়োগ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু পাশাপাশি চীনের টেক কোম্পানিগুলো বাইডেনের বিজয়ের পরে মনে করছে, তারা এখন আমেরিকাতে অনেক বেশি ব্যবসা করতে পারবে। এমনিভাবে ভারত ও চীন শুধু তাদের সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় নয়, অর্থনীতির যে ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সম্ভব সেগুলো তাদের করতে হবে। কারণ একটি বিশ্ব মন্দাকে সামনে রেখে কোনো প্রতিবেশী দেশেরই অর্থনৈতিক লড়াই মানায় না। বরং এ ধরনের লড়াই অনেক সময় আরেক দুর্যোগ ডেকে আনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতি মনে রেখে কোভিড মহমারীর এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পৃথিবীর নেতাদের তাই আরো প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

চীনও ভারতের মতো সামরিক যুদ্ধাবস্থা না হলেও আরেক ধরনের যুদ্ধ করতে হচ্ছে প্রতিবেশী মিয়ানমারকে নিয়ে বাংলাদেশকে। তারা তাদের দশ লাখের বেশি মানুষকে বাংলাদেশে উদ্বাস্তু হিসেবে ঠেলে দিয়েছে। তিন বছর ধরে এই মানুষদের ভার বহন করে চলেছে বাংলাদেশ। এক মিলিয়ন মানুষের প্রতিদিনের খাবার জোগানো কত বড় যুদ্ধ তা নিশ্চয়ই বলে বোঝানোর দরকার নেই। যে কোনো ছোটখাট যুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় হয়ে গেছে বাংলাদেশের গত তিন বছরে। বাংলাদেশের মতো দেশের এই ভার বহন করা সত্যিই সম্ভব নয়। তাছাড়া কেন এ ভার বহন করবে?

মিয়ানমারের নেতা সু চি আন্তর্জাতিক আদালতে যাই বলুন না কেন, বাস্তব সত্য নিশ্চয়ই তার বিবেকের কাছে প্রশ্ন করলে তিনি পাবেন। ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির এনএলডি জোট ৩৬৮ আসন পেয়েছে। ৮০ ভাগ আসনে বিজয়ী হয়েছে তার দেশে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির দলগুলো পেয়েছে ৪১টি আসন, সামরিক শাসক সমর্থিত জোট পেয়েছে মাত্র ২৫টি।

এর থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সু চির পা এখন মিয়ানমারে অনেক শক্ত। অন্যদিকে সামরিক বাহিনী সমর্থিত জোট এক ধরনের বিলুপ্তির দিকে এগুচ্ছে। তাই এবারের সু চির সরকার নিঃসন্দেহে অনেক শক্তিশালী সরকার হবে। তাছাড়া সেদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সু চি এবার তার দেশের জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমস্যাগুলোর দিকে চোখ দেবেন। সমস্যা সমাধানের জন্যে কাজ করবেন। সু চিকে এটা করতে হবে। কারণ জাতিগত সংখ্যালঘু সমস্যা নিয়ে একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবেও এগুতে পারে না। সু চি লক্ষ্য করতে পারেন, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগেই বাংলাদেশের জাতিগত সংখ্যালঘুদের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমস্যা শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছিলেন, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক  উন্নয়নের পথে একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিলো। সু চিকেও সেটা করতে হবে। আর এই জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে প্রথমেই এখন আসে আরাকানের নাগরিক রোহিঙ্গাদের সমস্যার সমাধান ও তাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়া।

মিয়ানমারের এবারের নির্বাচন স্পষ্ট করছে, সেখানে সামরিক বাহিনীর আধিপত্য কমেছে। তাই রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানে এখন সামরিক বাহিনী বড় বাধা হবে না। সু চির জন্যে তার দেশের মধ্যে এই মুহূর্তে বাধা হলো রাখাইন প্রদেশে আরাকান ন্যাশনাল পার্টির বিজয়। এরা কট্টর সাম্প্রদায়িক ও রোহিঙ্গা বিরোধী। তবে প্রাদেশিক এই দলটি যতই বাধা দিক, বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠের কেন্দ্রীয় সরকার আন্তরিক হলে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান খুব সহজেই সম্ভব। আর সেটা তাকে করতে হবে। কারণ যে কোনো দেশের জনগণের ভোটের রায়ের পরে অবশ্যই কিছু সমস্যার সমাধানের দায় পড়ে নির্বাচিত নেতাদের। সেটা বাইডেন থেকে সু চি সবার জন্যেই। 

এ বিভাগের আরো খবর