বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে আবারও থমকে গেছে ইউরোপ

  • তারেক হাবিব, ক্রিশ্চিয়ানসান্দ, নরওয়ে   
  • ৫ নভেম্বর, ২০২০ ১৮:৪৭

ইউরোপের প্রায় সব দেশেই আবার কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। এই মহাদেশে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর বেশিরভাগ দেশ ‘লকডাউন’ এবং সীমান্ত পারপারে বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করেছিলো। অনেক দেশেই জীবনযাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ের দিকে যেতেও শুরু করেছিলো। কিন্তু বিধিবাম, আবারও সংক্রমণ বেড়েছে করোনাভাইরাসের, আবারও মানুষের চলাফেরায় কড়াকড়ি নেমেছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও বেড়ে যাওয়ায় ইউরোপের অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলে ওঠার প্রক্রিয়া হুমকিতে পড়েছে। ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) মহাদেশের বাস্তব জিডিপি কমেছে ১১.৪ শতাংশ। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাড়ানো শুরু করেছিল।

ইউরোপের দেশগুলোতে উৎপাদন খাত কিছুটা সামলে উঠলেও পর্যটন, ভ্রমণ ও আতিথেয়তা খাতে দুরাবস্থা চলছেই। সংকটে পড়েছে মহাদেশটির নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী।

ইউরোপের প্রায় সব দেশেই আবার কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে। এই মহাদেশে গ্রীষ্মের মাঝামাঝি পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর বেশিরভাগ দেশ ‘লকডাউন’ এবং সীমান্ত পারপারে বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করেছিলো। অনেক দেশেই জীবনযাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ের দিকে যেতেও শুরু করেছিলো। কিন্তু বিধিবাম, আবারও সংক্রমণ বেড়েছে করোনাভাইরাসের, আবারও মানুষের চলাফেরায় কড়াকড়ি নেমেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ বেলজিয়ামে। সেখানে প্রতি লাখে ১৬ হাজার করোণায় সংক্রমিত।

ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কনট্রোল ৩০ অক্টোবর বেলজিয়ামকে ইইউতে করোনায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেলজিয়াম সরকার অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে পরের চার সপ্তাহের জন্য আংশিক লকডাউন শুরু করেছে। সুযোগ থাকলে ঘরে থেকে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঘনিষ্ট আত্মীয় ছাড়া পারস্পরিক মেলামেশাতেও বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে পাব, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসায়।

ইতালিতেও ২৬ অক্টোবর থেকে এক মাসের জন্য জনসাধারণের চলাচলে নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শরীর চর্চা কেন্দ্র, সুইমিং পুল, সিনেমা হল ও থিয়েটার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জাদুঘর খোলা রাখা হয়েছে। নাগরিকদের অনুরোধ জানানো হয়েছে তারা যাতে তাদের এলাকার বাইরে প্রয়োজন ছাড়া যাতায়াত না করেন। ব্যাপটাইজ করার অনুষ্ঠান, শেষকৃত্য ও বিয়ের আয়োজনে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গ্রিসের সরকার বার, রেস্তোরাঁ, শরীর চর্চা কেন্দ্র, থিয়েটার ও সিনেমা হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্রিয়াকোস মিৎসোতাকিস জানান পুরো নভেম্বর মাস জুড়ে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। তিনি মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেন এবং জানান মধ্যরাত থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ থাকবে।

স্পেনে জারি করা হয়েছে নৈশকালীন কারফিউ। কড়া লকডাউন বলবৎ হয়েছে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে। ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও পরিস্থিতি সুবিধার না। নাগরিকদের সুরক্ষায় স্বাভাবিক চলাফেরা অনেকটাই সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ। আর এর ধাক্কা পড়েছে অর্থনীতিতে। সংকটে পড়েছেন অভিবাসী শ্রমিকেরা। বিশেষ করে যেসব শ্রমিক যথাযথ অনুমতি ছাড়া কাজ নিয়োজিত ছিলেন।

এ বছরের এপ্রিলে ওইসিডিভুক্ত ১১টি দেশে জরিপের ফলে দেখা গেছে এসব দেশে আয়সীমার শেষ ২৫ শতাংশে যাদের অবস্থান সেই জনগোষ্ঠীর শতকরা ৩০ জনেরই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ, নারী ও তরুণরাই মূলত এই অংশের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। যাদের একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে পর্যটন শিল্প, নির্মাণ শিল্প, কৃষিখাতসহ বিভিন্ন খাতে নিয়োজিত অভিবাসী কর্মীদের একটি বড় অংশই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন করোনা মহামারির কারণে। জুলাই-অগাস্টে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও, করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ বড় ধরনের সংকটে ফেলতে যাচ্ছে এসব অভিবাসী শ্রমিকদের।

বিশ্ব ব্যাংক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বাভাস বলছে, করোনা মহামারির আঘাতে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি সংকুচিত হতে পারে। যার ফলাফল হবে সুদূর প্রসারী। অর্থনীতির সংকোচন সংঘাতের হার বাড়িয়ে দিতে পারে যার কারণে অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন। ইউরোপের সীমান্তে শরণার্থী সংকট বেড়ে যেতে পারে। ধনী ও উদার দেশগুলো মহামারির কারণে সীমান্তে কড়াকড়ি বজায় রাখলে এসব অভিবাসন প্রত্যাশী ও শরণার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়ের সুযোগ কমবে।

ইউরোপের দেশগুলোতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের চাপ বাড়লেও সেসব দেশে নিজেদের নাগরিকদের কর্মসংস্থান সুরক্ষিত রাখার জন্য অভিবাসীদের বিষয়ে কঠোর নীতি ও আইন চালু হতে পারে। করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে বড় ধরনের সংকটে পরেছে ইউরোপের পরিবহন সেবা খাত।

এছাড়া রেস্তোরাঁ ব্যবসা, বিনোদন কেন্দ্রগুলো সরকারি সহায়তার আবেদন জানিয়েছে। সবমিলিয়ে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ ইউরোপের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়েই দেখা দিয়েছে।

লেখক: সংবাদিক

এ বিভাগের আরো খবর