বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কাঁদে নিরুপায় ভোক্তার প্রাণ

  • মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী   
  • ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ১০:৫৬

শুধু আলু নয়। ধান নিয়ে ধান্ধাবাজি, চাল নিয়ে চালবাজি, লঙ্কা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড, আর পেঁয়াজে প্যাচ মারা আমাদের দেশে এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

কয়েক দিন ধরে আলু নিয়ে মহা হৈচৈ চলছে। সরকার পদক্ষেপ নিয়ে আলুর মূল্য বেধে দিয়েছে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। কিন্তু মহাজন আড়তদাররা এ দরে আলু দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ব্যাস! আলুর বাজারে আগুন! আলু নাই কোথাও। কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেল আলু নাই, বাজারে হাহাকার! জানা গেল মুন্সিগঞ্জ ও রংপুর থেকে ঢাকায় আলু আসছে না। ভিসা পাওয়া যায়নি নাটেরগুরু সিন্ডিকেট থেকে। মাঝে মাঝে কৃষিপণ্যের এই মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদক কৃষকদের কিন্ত কোনো লাভ হয় না। এসব ঘটনায় চিরকালই আমাদের অসহায় চাষীদের সর্বনাশ আর পোয়াবার হয় সিন্ডিকেট বাহাদুরদের। কিন্তু এর কি কোনো সমাধান নেই!

আমাদের দেশে চিরকালই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা রাখে সিন্ডিকেট নামক এক অদ্ভূত চিজ, যাদেরকে দেখা যায় না! ধরা যায় না! এরা থাকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। করোনাভাইরাস মহামারী পৃথিবীকে কুপোকাত করতে পারলেও সিন্ডিকেট নামক অদৃশ্য এই সামাজিক ভাইরাসকে কিছুই করতে পারেনি। বরং তাদের তেজ আরো বেড়ে গেছে। মহামারীতে মানসিকতার পরিবর্তনের বদলে জোয়ার এসেছে অসৎ ব্যবসায়। এদেরকে মাঝে মাঝে দেখা যায় মন্ত্রী-বাহাদুরদের আলোচনার টেবিলে। এদের কেউ কেউ আবার নিজেরাও মন্ত্রী-এমপি, না হলে অন্তত কোনো না কোনো দলের হোমড়া-চোমড়া। এরা র্নিদয়! এদের মন, বিবেক বলে কিছু আছে কিনা জানা যায়নি। তবে তাদের কাছে ত্রকটি জিনিস খুব প্রিয়, তা হলো- টাকা। সরকারও প্রায়শ বিব্রত হয় এদেরকে নিয়ে। টাকা কামাতে এরা একটার পর একটা কৌশল ব্যবহার করে, প্রয়োজনে কৌশল আমদানি করে। এইতো সেদিন ভারত যেই না বলল, পেঁয়াজ দেওয়া যাবে না। অমনি যেখানে যার যতটুকু পেঁয়াজ ছিল লুকিয়ে ফেলল। কবে কখন কত দিয়ে কেনা হয়েছিল তার বিচার না করে হুড়হুড় করে বাড়িয়ে দিল দাম।

শুধু আলু নয়। ধান নিয়ে ধান্ধাবাজি, চাল নিয়ে চালবাজি, লঙ্কা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড, আর পেঁয়াজে প্যাচ মারা আমাদের দেশে এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব কাজের কাজি আমাদের প্রিয় ‘বাজার নিয়ন্ত্রক’ সিন্ডিকেট। প্রিয় বলছি এ জন্য যে, এরা যদি তাদের সাগরেদ মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দয়া করে আমাদের জন্য রাজধানীতে এসব কৃষিসামগ্রী না নিয়ে আসতো! তাহলে যে অমরা উপোস থাকতাম! আমরা নিজেরা তো আর খেতে-খামারে গিয়ে এসব সংগ্রহ করতে পারি না। একজন কৃষি বিশেষঞ্জ যুগের পর যুগ চিৎকার করতে করতে টেলিভিশনের পর্দা ফাঁটিয়ে ফেলছেন প্রায়। অনেক রকম পথ দেখাতে চেষ্টার অন্ত নেই তার। সারা পৃথিবী চষে বেড়াচ্ছেন, নিয়ে আসছেন নতুন নতুন কৃষি ফর্মুলা। কে শোনে কার কথা।

চীনে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ্য রেল পথ, প্রায় ৩৩০০ কিলোমিটার আর আমাদের দেশে ৩০০ কিলোমিটার। প্রতিদিন ঢাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে আসা কোনো ব্যাপার নয়। প্রয়োজন শুধু রাজনৈতিক সদিচ্ছা। আপাতত, কি করা যায় এ আপদ থেকে মুক্তি পেতে?

চীন পারে, অন্যান্য দেশ পারে, অমরা পারবো না কেন? শুধু একটু কমাতে হবে হুজুগ। উন্নত দেশগুলোতে দ্রব্যের মূল্য বাড়লে, নাগরিকরা ক্রয় কমিয়ে দেয়, আর অমরা দেই বাড়িয়ে। ফলে উচ্চমূল্যের ঘোড়া আরো সজোরে দৌড়ায়। আমরা গো অ্যান্ড স্টক করি। প্রয়োজন ১ কেজি, কিনি ৫-১০ কেজি, এমনকি আস্ত বস্তা নিয়ে বাড়ি ফিরি, পরে যদি না পাই! এটাই হুজুগ। শুধু তাই নয়, তারপর, সে খবর আবার ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়ে সবাইকে আহ্বান জানাই, দাম বেড়েছে জলদি কিনে ফেলুন, নইলে পরে গেলে পাবেন না। আর আমরা সব কাজ ফেলে দৌড় দেই বাজারে।

আমরা ভোক্তারা অহসায়। যেহেতেু আমাদের কেউ নাই, আসুন আমরা নিজেরাই এ জুলুমের একটা স্থায়ী বিহিত করি। আসুন, আমরা ভোক্তা সিন্ডিকেট করি। আপাতত আগামী ১৫ দিন বাজারে কম যাই, যতটা সম্ভব কম আলু কিনি। বিষ দিয়ে যেমন বিষ তোলা যায়, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়। তেমনি সিন্ডিকেট দিয়ে সিন্ডিকেট মোকাবিলা করতে হবে।

 

মেজর (অব.) আমীন আহমেদ আফসারী: কলাম লেখক

এ বিভাগের আরো খবর