করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে, ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের উপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হবে। এখন পরীক্ষা নেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ- সন্দেহ নেই। তাই সরাসরি পরীক্ষা না নিয়ে উত্তীর্ণের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা যৌক্তিক ও সময়োচিত। এই মুহূর্তে এছাড়া আমাদের হাতে আর বিকল্প নেই।
সরকার জানিয়েছে, পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এ মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু কেবল জেএসসি-এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন কতটা যথার্থ হবে তা বিবেচনার দাবি রাখে। শিক্ষার্থীদের আগের দুই পরীক্ষার ফলাফলে তাদের পাঠক্রমের ধারাবাহিকতার পরিচয় থাকলেও, ‘যতটা সম্ভব মূল্যায়ন’-এর জন্য তা যথেষ্ট নয়। কেননা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণি-পরীক্ষার (Class Test) ও নির্বাচনী পরীক্ষার (Test Exam) মূল্যায়ন রয়েছে। যা এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতির ‘চূড়ান্ত’ হিসেবেই বিবেচিত। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগেই যা সম্পন্ন হয়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ১ এপ্রিল। এর ১৫ দিন আগে অর্থাৎ ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগেই শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, বসেছে শ্রেণি-পরীক্ষাতেও। কে না জানে, পাবলিক পরীক্ষার আগে এসব পরীক্ষা গুরুত্ব কত।
সুতরাং এইচএসসির ফল নির্ধারণ পদ্ধতিতে জেএসসি-এসএসসির গড়ের সঙ্গে কলেজপর্বের শ্রেণি-পরীক্ষা ও নির্বাচনী পরীক্ষার মূল্যায়ন যুক্ত করা অত্যাবশকীয়। এসএসসির যে পাঠক্রম, তারই বিস্তৃত পাঠ শিক্ষার্থীরা নেয় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে। দুই বছর ধরে যে বিদ্যা শিখন-অর্জন, তাকে বাদ রেখে এই ‘যতটা সম্ভব’ যথার্থ মূল্যায়ন সম্ভবপর নয়। শিক্ষার্থীদের এইচএসসি-উত্তর ক্যারিয়ার ভাবনাতেও এ বিদ্যাশিক্ষার প্রভাব বিপুল। ফলে এ পাঠক্রমের মূল্যায়ন ছাড়া শিক্ষার্থীর যে কোনো ধরনের মূল্যায়নই খণ্ডিত হতে বাধ্য ।
জানি, এটা তো আদতে একটি আপৎকালীন সিদ্ধান্ত, উপায়ান্তরও নেই। তবু মূল্যায়নগত একটি গলদ এড়াবার উপায় হিসেবে দ্বাদশ শ্রেণিতে বছরের শেষে নেওয়া নির্বাচনী পরীক্ষার গড়ও যুক্ত করা দরকার। এতে সেই ছাত্রটিও বঞ্চিত হবে না, যে এসএসসির ফল-বিপর্যয়ে ভেঙে না পড়ে নতুন উদ্যমে এইচএসসিতে ভালো করতে প্রস্তুতি নিয়েছিল। শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, একজন শিক্ষার্থীর নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের তেমন বড় পরিবর্তন ঘটে না। শিক্ষার্থীর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুই বছর ধরে পড়া-পাঠক্রমের মূল্যায়নস্বার্থে এ বিষয়টিকে বিবেচনা করতে হবে, এবং এ বিবেচনা জরুরি।
উন্মেষ ধর: প্রভাষক, সেন্ট যোশেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়