করোনাভাইরাসের কারণে দেশ যখন থমকে ছিল, তখনও ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন খুলনার নার্সারি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। তারা বলছেন, সে সময় অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির থাকলেও জেলায় বেড়েছে গাছ বিক্রি। নার্সারির সংখ্যাও বেড়েছে।
খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে জেলায় নার্সারি বেড়েছে শতাধিক। ২০২০ সালে বৃক্ষরোপণের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার ৫৪০ থাকলেও লাগানো হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৪৭৮টি গাছ। এ সংখ্যাটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রশ্ন ছিল করোনার কারণে গত বছর বৃক্ষমেলা না হওয়ায় চারা বিক্রি হয়েছে কি না। কিন্তু আমরা দেখছি করোনার সময়ে মানুষ আরও উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
‘করোনা প্রতিরোধে নিজেদের পুষ্টির চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ ফল ও সবজির আবাদ করছে। আর ফলদ চারার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নার্সারির সংখ্যাও বেড়েছে। আগে আমাদের নিবন্ধিত দুই শতাধিক নার্সারি থাকলেও গত বছর এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯৩টি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নার্সারির সংখ্যা চারশর বেশি।’
তিনি জানান, খুলনার ফুলতলা ও পাইকগাছায় বেশ কিছু নতুন নার্সারি হয়েছে। সেখান থেকে বেশিরভাগ চারা সারা দেশে সরবরাহ হয়।
রূপসার করিম নার্সারির মালিক আব্দুল করিম বলেন, তিনি ৫২ বছর ধরে খুলনায় গাছ বিক্রি করছেন। করোনার মধ্যেই গাছ বেশি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ফলের চারা। সেই সঙ্গে মরিচ, বেগুন, টমেটোসহ নানা সবজির চারাও বেশি বিক্রি হয়েছে।
চারা কিনতে আসা রূপসা স্ট্যান্ড রোডের শাহনাজ আক্তার জানান, বাড়িতে আম-জামসহ বেশ কিছু ফুলের গাছ ছিল। করোনার সময় অবসর পাওয়ায় লাগিয়েছেন লালশাক, পালংশাকসহ বেশ কিছু সবজি।
খুলনার বয়রা এলাকার নয়নতারা নার্সারির মালিক আলতাফ হোসেন জানান, করোনায় ফলের গাছই বেশি বিক্রি হয়েছে। গত বছর বেশ কেনা-বেচা বেড়েছে।
নার্সারিতে গাছ কিনতে আসা খুলনার মুজগুন্নি এলাকার রুমি আক্তার জানান, শোভাবর্ধনকারী গাছের পাশাপাশি ঔষধি গাছও লাগিয়েছেন তিনি।
‘আমাদের প্রয়োজনীয় একটি গাছ নিম, এটা বাড়িতে লাগিয়েছি। এ ছাড়া অ্যালোভেরা, গোলাপ, ক্যাকটাস ও বেশ কিছু ফলের গাছও লাগিয়েছি…আমার সংগ্রহে যেসব গাছ আছে তাতে বাড়িতে ছোট একটা নার্সারি তৈরি হয়েছে। আর করোনায় অবসর পেয়ে বেশি গাছ লাগানোর সুযোগ পেয়েছি।’
নার্সারিতে দেখা মিলল খুলনা সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সরদারের।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকলেও আমরা কলেজ চত্বরে বেশ কিছু শোভাবর্ধনকারী গাছের পাশাপাশি কিছু ফলদ গাছও লাগিয়েছি। আজও আমরা এসেছি কিছু শোভাবর্ধনকারী গাছ কিনতে।
‘সিটি কলেজের রয়্যাল চত্বরের মূল ক্যাম্পাস ও নিরালা ছাত্রাবাস ক্যাম্পাসেও বৃক্ষরোপণ করেছি এবং আমাদের যে মালি রয়েছে, সেসহ আমরা সকলেই এই গাছের পরিচর্যা করে থাকি।’
তিনি মনে করেন, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ করলে সরকারের সবুজ বনায়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন হবে।
নগরীর টুটপাড়া তালতলা এলাকার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘যেটুকু জায়গা আছে তাতে আমাদের সবজির চাহিদা অনেকটাই পূরণ হয়। আর নিজের লাগানো ফল-সবজি খেতে আলাদা আনন্দ। আর করোনার সময় বাইরে বের না হওয়ায় বাগান পরিচর্যায় সময় কেটে গেছে।’
গত বছর বৃক্ষমেলা না হওয়ায় শোভাবর্ধনকারী গাছের বিক্রি কমেছে বলে জানান জেলার নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি এস এম বদরুল আলম রয়েল। তবে ফলদ গাছের বিক্রি বাড়ায় নার্সারি শিল্পে করোনার কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানান তিনি।
খুলনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাফিজুর জানান, খুলনাবাসীর বৃক্ষরোপণের আগ্রহ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার বেড়েছে। ছাদবাগানের দিকেও ঝুঁকছেন অনেকে। এভাবে গাছ লাগানো চলতে থাকলে পুরো খুলনা সবুজে ভরে উঠবে।