একসময় বাড়ির উঠান ও আঙিনায় চাষ হতো বিভিন্ন সবজির। থাকত নানা রকমের ফলের গাছ। কিন্তু ইট-পাথরের শহরগুলোতে সেই সুযোগ এখন নেই।
রাজধানী ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলাতেও এখন গড়ে উঠছে আকাশচুম্বী ভবন। মাটি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সবুজের সমারোহ। সবুজ ফেরাতে এবং নিরাপদ সবজি পেতে তাই ছাদই ভরসা।
কুমিল্লাও এর বাইরে নয়। এই নগরীতে তাই কয়েক বছর ধরেই জনপ্রিয় হচ্ছে ছাদবাগান। এসব বাগানে উৎপাদিত কীটনাশকমুক্ত ফল ও সবজি একদিকে যেমন পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে। অন্যদিকে সুযোগ করে দিচ্ছে নির্মল অবসর কাটানোর।
নগরীর ঝাউতলা, কান্দিরপাড়, হাউজিং স্টেট, পুলিশ লাইন, ফৌজদারি ও ঠাকুরপাড়া এলাকার প্রায় সব ভবনের ছাদেই এখন দেখা মেলে সবুজ বাগান। যেখানে ফুল ও ফল চাষের পাশাপাশি অনেকে গড়ে তুলেছেন কৃষিখামার। এসব বাগানে নানা জাতের ফলের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সবজিও। শোভা পায় নানা ধরনের ফুলও।
নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার ঠিকাদার মোজাম্মেল আলম প্রায় সাত বছর ধরে গড়ে তুলেছেন তার ছাদবাগান। এই বাগানে রয়েছে শাকসবজিসহ অন্তত ৩০০ ধরনের ফল ও ঔষধি গাছ।
মোজাম্মেল আলম জানান, তার ছাদবাগানে রয়েছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শিম, ব্রকলি, সাত ধরনের টমেটো, লেটুস, স্ট্রবেরিসহ নানান সবজি। এ ছাড়া তুন ফল, চিরতা, অ্যালোভেরাসহ বিভিন্ন ঔষধি গাছও রয়েছে।
তিনি বলেন, ঠিকাদারি কাজের অবসরে তিনি এই বাগান গড়ে তুলেছেন। বাগানের ফল ও সবজি তিনি পরিবারের জন্য রাখেন। পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের বাসায় পাঠান।
মোজাম্মেল জানান, ছাদবাগান বা ছাদকৃষি নিয়ে কুমিল্লায় সাত থেকে আটটি সংগঠন গড়ে উঠেছে। তিনি নিজেও গার্ডেন লাভারস অব বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠনের উপদেষ্টা।
নগরীর ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা রাসেল আহমেদ বলেন, ‘কুমিল্লায় দিন দিন সবুজ উদ্ভিদ কমে যাচ্ছে। সতেজ বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গাই নেই। এ জন্য নিজের বাড়ির ছাদে একটি বাগান গড়ে তুলেছি।’
রাসেল জানান, তার বাগানে নানা ধরনের শাকসবজি, ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে। বিকেলে তিনি বাগানে কাজ করেন। এতে তার অবসর সময় ভালো কাটে। অন্যদিকে বাগানের সতেজ সবজি ও ফল পরিবারের সদস্যদের ভিটামিনসহ অন্যান্য পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।
নিজের ছাদবাগানে কাজ করছেন একজন। ছবি: নিউজবাংলানগরী ছাড়িয়ে ছাদবাগানের জনপ্রিয়তা উপজেলাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার সদর এলাকার উঁচু ভবনগুলোর ছাদে এখন দেখা যায়, ড্রাগন ফল, লাউ, টমেটো, মরিচ, কুমড়া, ধনিয়াপাতা, ক্যাপসিকামসহ নানা শাকসবজি ও ফল।
জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলা সদরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, তিনি শখের বসে ছাদবাগান গড়ে তুলেছেন। বাড়ির ছাদে উৎপাদিত কীটনাশকমুক্ত সবজি তার পারিবারে পুষ্টির জোগান দেয়। পাশাপাশি বিকেলে সুন্দর সময় কাটানো যায়।
নাঙ্গলকোট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, কৃষি বিভাগ থেকে ছাদবাগান করা ব্যক্তিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি উন্নত জাতের কৃষিবীজ সরবরাহ করে তাদের ছাদকৃষিতে উৎসাহ দেওয়া হয়।