ময়েজুল ইসলাম ময়েজ পেশায় সফল আইনজীবী হলেও একজন গাছপাগল মানুষ। তবে প্রথাগত গাছপালা নয়, একটু ব্যতিক্রমী চাষাবাদে আগ্রহী তিনি।
এ কারণেই আবাদের জন্য বেছে নিয়েছেন ক্যাপসিকামকে। এক বিঘা জমিতে ক্যাপসিকামের চাষ করছেন তিনি। ফলনও ভালো। বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা কেজি দরে।
লালমনিরহাটের আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ী হরিদাস টেপারহাট এলাকায় শখের বশে ক্যাপসিকাম চাষ করে চমক দেখিয়েছেন ময়েজ।
ক্যাপসিকামের চাষাবাদ লালমনিরহাট জেলায় নাই বললেই চলে। প্রচারও কম। জেলার বহু কৃষক এর নামও শোনেননি। ক্যাপসিকামের এটি মূলত একটি সালাদজাতীয় সবজি। যা টমেটোর মতো কাঁচা বা পাকলেও খাওয়া যায়। খেতেও সুস্বাদু।
গত বুধবার অ্যাডভোকেট ময়েজের ক্যাপসিকামের বাগান ঘুরে দেখা যায়, একটি বিশেষ শেডের নিচে শ শ গাছে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম ঝুলে আছে। তিনি উচ্চফলনশীল জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। পরিচ্ছন্ন বাগানজুড়েই পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ক্যাপসিকাম। শেডের ভেতরে কাজ করছেন কয়েকজন কর্মী। ময়েজ নিজেও গাছের পরিচর্যায় কাজ করছেন।
বাগানের ভেতর অসংখ্য ছোট ছোট কালো রঙের পানির নল। সেগুলো থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছড়িয়ে পড়ছে গাছে গাছে। কর্মীরা কেউ কেউ ঝুড়ি নিয়ে বাগান ঘুরে পরিণত ক্যাপসিকাম তুলে রাখছেন।
বাগানে দাঁড়িয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে নিউজবাংলাকে ময়েজ বলেন, ‘এরই মধ্যে আমি প্রায় ৮ থেকে ১০ মণ ক্যাপসিকাম তুলে বিক্রি করেছি।’
‘ক্যাপসিকাম লাগাতে গিয়ে আমাকে মালচিং পেপার সংগ্রহ করতে হয়েছে। মালচিং পেপারের অনেক গুণাগুণ আছে। এটি মাটিকে ঠান্ডা রাখে। মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখে। এ পেপার যেকোনো প্রকার আগাছার উপদ্রব থেকে অনেকটা রক্ষা করে। এই পেপারের কারণে পানিও কম লাগে। অর্থাৎ মালচিং পেপার দিয়ে চাষ করলে সবদিক থেকেই লাভবান হবে কৃষক। এটি কোনো সাধারণ পলিথিন না। এর ভেতরটা কালো বাইরেরটা সিলভার কালার। এটি আলো নিরধক ও তাপকে শোষণ করতে পারে।’
নিউজবাংলাকে তিনি আরও বলেন, উচ্চফলনশীল জাতের ক্যাপসিকাম চাষে এক বিঘা জমিতে চার হাজার গাছ লাগানো যায়। এক কেজিতে তিনটা থেকে চারটা ক্যাপসিকাম ধরে। কিন্তু অন্য জাতেরগুলো এক কেজিতে ছয় থেকে আটটা ধরে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার এসব ক্যাপসিকামে পানিতে দ্রবনীয় সার লাগে। আমি সেটা পাইনি। তবে তারপরও যথেষ্ট ভালো ফলন হয়েছে। একটি গাছ থেকে তিন থেকে চার কেজির মতো ফলন পাওয়া যায়। এপ্রিল, মে, জুন পর্যন্ত গাছ থেকে ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। একটি গাছ ছয় থেকে আট ফুট লম্বা হয়।’
এই জাতের ক্যাপসিকাম বর্তমানে বাজারে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এক গাছে তিন কেজি ক্যাপসিকাম ধরলে তার দাম পড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা। একটি গাছের দাম মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকা। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে একটি গাছের পেছনে খরচ হয় ১৫০ টাকার মতো। তাহলে বুঝতেই পারছেন কেমন লাভবান হবে কৃষকরা যদি তারা চাষাবাদ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ফলের চাষ করে আসছি। বাংলাদেশে যে সমস্ত ফল হয় তার প্রায় সবই আমার বাগানে রয়েছে। এ ছাড়াও বিদেশি অনেক ফলমূল রয়েছে। এর মধ্যে আছে ডুরিয়ান, লুকেট, এফ্রিকট, ডুমুর যেটা মিসরীয় ডুমুর, টিনাট, ম্যাংগোস্টিন, জাপানের জাতীয় পার্শিমন, কফি, সুরিনাম চ্যারি, জাবাটি কাবা, কোরাসল, সিগ্রেভসহ বহু জাতীয় দেশি ও বিদেশি ফল। আমি খুবই আশাবাদী। আমাদের এই আবহাওয়ায় বিদেশি ফলের উৎপাদন ভালো হবে।’
লেবার মজমুল বলেন, ‘আমরা ক্যাপসিকাম লাগাইছি। এখানে বহুদিন থাকিয়া কাজ করি দিন হাজিরায়। দিন হাজিরা পাই ৩০০ টাকা।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক, কৃষিবিদ মো. শামীম আশরাফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের লালমনিরহাটের ময়েজ আড়াই একর জমিতে মিশ্র ফল বাগান করেছেন এবং দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফলের চাষ করেছেন। আমি মনে করি, এই এলাকার চাষিদের জন্য এটি উৎসাহব্যঞ্জক হবে।’
আরও পড়ুন:জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকলে হাত, দাঁত ও চাপার হাড্ডি ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপের হুমকিদাতা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে (আনারস) শো-কজ করেছেন জেলা রিটার্ননিং কর্মকর্তা।
শনিবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জেলা প্রশাসক মো. শফিউর রহমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আটককৃতরা হলেন সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ও সুজাত আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান সাইদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়।
লিখিত বক্তব্যে শানিয়াজ্জামান তালুকদার জানান, চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে তার দুই কর্মী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা উস্কানিমূলক ও হুমকিস্বরূপ। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে হুমকিদাতা দু’জনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন সরিষাবাড়ী থানায় মামলা করেন।
মামলা হওয়ার পর শনিবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশ সাইদুল হাসান সাইদ ও খন্দকার মোতাহার হোসেন জয়কে গ্রেপ্তার করে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে বলেও জানানো হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের নির্বাচনী পথসভায় অধ্যক্ষ সাইদুল হাসান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের জবান আমরা বন্ধ করে দেব। আমরা আগামী ৮ মে'র নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকবো। আমরা অন্য কোনো মার্কার কোনো এজেন্ট দিতে দেবো না। রফিক সাহেবকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আজকেই ঘোষণা দিলাম।’
প্রতিপক্ষের লোকদের হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘সাবধান হয়ে যান, আমাদের মাঝে অসন্তোষ ও হানাহানির চেষ্টা করবেন না। আপনাদের দাঁত ভেঙে দেয়া হবে। যাদের দাঁত নেই, তাদের চাপার হাড্ডি ভেঙে দেয়া হবে।’
এরপর পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোতাহার হোসেন জয় একই সভায় বলেন, ‘অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট কোনো কেন্দ্রে দিতে দেব না। এজেন্ট দিলে তার হাত বাড়ি দিয়ে ভেঙে আমরা যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করবো।’
এ সময় সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে রফিকুল ইসলাম (আনারস) ও তালেব উদ্দিন (দোয়াত-কলম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরে অগ্রণী ব্যাংকের শাখা থেকে ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগে শাখা ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে শনিবার দুপুরে জানান অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হোসেন।
বরখাস্ত হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তারা হলেন- কাশিনাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার) হারুন বিন সালাম, সিনিয়র অফিসার আবু জাফর ও ক্যাশ অফিসার সুব্রত চক্রবর্তী।
আফজাল হোসেন বলেন, ‘ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা খোয়া যাওয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। পরে পুলিশে অভিযোগ দিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত দল পুরো বিষয়টির তদন্ত করছে। দলটির প্রধান হলেন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর অভিযুক্ত ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের শুক্রবার বিকেলে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক আনোয়ার হোসেন সাগর গ্রেপ্তারকৃতদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন:তীব্র গরম থেকে বাঁচতে ও বৃষ্টির আসায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় নেচে গেয়ে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা। লোকজন।
উপজেলার চন্দ্রখানা বালাটারি গ্রামে শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিয়ের অনুষ্ঠান চলে।
ওই এলাকার বাসিন্দা সাহাপুর আলীর স্ত্রী মল্লিকা বেগমের আয়োজনে বিয়েতে অসংখ্য নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। নাচ গানের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙের বিয়ে শেষে বরণ ডালায় ব্যাঙ দুটিকে নিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়ান তারা। এ সময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাল ডাল সংগ্রহ করে বিয়েতে অংশগ্রহণকারীদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।
বিয়ের আয়োজনকারী মল্লিকা বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তীব্র গরম। তাপমাত্রা বেশি হওয়ার কারণে আমরা কষ্টে রয়েছি; গ্রামের মানুষজন অস্তিত্বতে আছে। কেউই কোনো কাজ কামাই করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আগের যুগের মানুষরা ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হতো। সেই বিশ্বাস থেকেই আজ ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিয়ে দেখতে আসা জাহিদ নামের একজন বলেন, “আমার জীবনে প্রথম ব্যাঙের বিয়ে দেখলাম। খুবই ভালো লেগেছে। ‘বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে’ বিষয়টি প্রথম জানলাম।”
বৃদ্ধ আজিজুল হক বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আবাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়েতে অংশগ্রহণ করেছি।’
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। আজ (শনিবার) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে এক বছরের শিশু হুমাইরা আক্তারের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মদিনা বাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মদিনা বাজারের উত্তর পাশে খানকা শরীফের সামনের সড়কে দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ সময় রাস্তার পাশে এক বছরের শিশু সন্তান হুমাইরাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবা বেগমের ধাক্কা খান অটোরিকশার সঙ্গে। এতে শিশু হুমাইরা মায়ের কোল থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। শিশুটিকে দ্রুত মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় অটোরিকশা দুটি আটক করা হয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মুন্সীগঞ্জে হিটস্ট্রোকে সাখাওয়াত হোসেন মুকুল নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মাঠ পর্যায়ের বিপনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
২৭ বছর বয়সী মুকুলের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়।
প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির মুন্সীগঞ্জ শহরের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ মোহাম্মদ রোকন জানান, শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ শহরের অদূরে মুন্সীরহাট এলাকায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন মুকুল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে এলে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস হাসান জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের হিটস্ট্রোকের লক্ষণ রয়েছে বলে জানান তিনি।
নিহতের মরদেহ তার নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আকস্মিক কালবৈশাখীর তাণ্ডবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ও শমশেরনগর ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বেশ কিছু বাড়িঘর। ঝড়ের পর খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে অর্ধশতাধিক পরিবার।
এ ছাড়াও গাছপালা উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙেছে এবং তার ছিঁড়ে পড়ে। এতে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় সাড়ে ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের পতনঊষার, ধূপাটিলা, উসমানগড়, ব্রাহ্মণঊষারসহ ৮টি গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর এবং শমশেরনগর ইউনিয়নের কেছুলুটি, ভাদাইরদেউল গ্রামে আরও কয়েকটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অসংখ্য গাছ-বাঁশ উপড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
পতনঊষার ইউনিয়নের নেছার মিয়া, ময়নুল মিয়া, খুশবা বেগম, লিপি বেগম, রহমান মিয়া, সুফিয়ান মিয়া, কালাম মিয়া, আনু মিয়া, ফখরুল মিয়াসহ অসংখ্য পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, গতরাতে কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে তাদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। সহোযোগিতা না পেলে আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে।’
পতনঊষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান জানান, আকস্মিক ঝড়ে পতনঊষার গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যাদের বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেসব দরিদ্র পরিবারের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে।
পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি আহমদ খান বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে আমার ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাহেবকে অবহিত করা হয়েছে।’
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক মীর বলেন, ‘ঝড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য কাজ চলছে।’
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ ইউএনও জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘পতনঊষার ইউপি চেয়ারম্যান বাড়িঘর বিধ্বস্তের কথা বলেছেন। তবে পরিপূর্ণ হিসাব জানা যায়নি। চেয়ারম্যানদেরকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে দেয়ার জন্য। দ্রুত তাদের সহোযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত অতি তীব্র তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
শনিবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র থেকে অতি তীব্র আকার ধারণ করছে জেলার তাপপ্রবাহ। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ। তবে, ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই কোথাও। আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছে না জেলাবাসী। কেউ আবার পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে প্রাণিকূল। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডের ইজিবাইক চালক হারেজ আলী বলেন, ‘কঠিন তাপ পড়চি। সূর্য মনে হচ্চি মাতার উপর চলি এসিচে। আমরা গরীব মানুষ, পেটের দায়ে বাইরি বের হয়িচি। মাজে মাজে রাস্তার পাশের দুকান থেকি শরবত খেয়ি ঠান্ডা হচ্চি।’
চলমান দাবদাহে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম; নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
মৌসুমের প্রায় সময়জুড়েই উত্তপ্ত থাকে চুয়াডাঙ্গা। এবারও চৈত্রের মধ্যভাগ থেকে শুরু হওয়া তাপমাত্রার এমন দাপট বৈশাখের আবহাওয়াকে জটিল করে তুলছে। এ যেন মরুর উষ্ণতা অনুভব করছে মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘এ মাসের শেষের কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য