হুয়াওয়ে আইসিটি ইনকিউবেটর প্রতিযোগিতার চলতি বছরের আসরে চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছেছে ২০ স্টার্টআপ।
ইনকিউবেটর বুটক্যাম্পে অংশ নিয়ে ৬৮ স্টার্টআপ থেকে নির্বাচিত হয় ২০টি। স্টার্টআপকে বাছাই করেছে দুটি স্বতন্ত্র জুরি প্যানেল এবং এই প্রোগ্রামের কৌশলগত সহযোগী–স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড ও ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড আন্ট্রাপ্রেনারশিপ একাডেমি (আইডিয়া)।
হুয়াওয়ের আইসিটি ইনকিউবেটর প্রোগ্রামের বুটক্যাম্প থেকে আইডিয়া স্টেজ ও আর্লি স্টেজ, এই দুইটি গ্রুপে বিজয়ীদের ভাগ করা হয়। প্রতি গ্রুপ থেকে ১০ জন করে ফাইনালিস্ট বাছাই করা হয়।
আইডিয়া স্টেজের ফাইনালিস্ট স্টার্টআপগুলো হচ্ছে- অর্গাভেট মেডিসিন, ওয়েস্টেক, ইনসিউরকাউ, সিনারজি, বণিক, দুর্জয় ডিএসএস, ইউ-টার্ন, কৃষিয়ান লিমিটেড, ফিটনেশন এবং রিল্যাক্সি। পাশাপাশি, আর্লি স্টেজের ফাইনালিস্ট স্টার্টআপগুলো হচ্ছে: পালকি, বিপ্রেজেন্ট আইটি, আরবান গ্যাজ লিমিটেড, উইগ্রো টেকনোলোজিস লিমিটেড, এসক্রে, ট্রাবিল, জাহাজি লিমিটেড, পুঁজিঘর, সায়েনটিকো লিমিটেড এবং ইনোভেক্স আইডিয়া সল্যুশন।
বাংলাদেশের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ও কমিউনিকেশনস ডিপার্টমেন্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর কার্ল ইউ ইং বলেন, ‘ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নে আইসিটি ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা এবং স্টার্টআপগুলোর বিকাশে সহায়তা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হুয়াওয়ে গত ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে হুয়াওয়ে এ দেশে কাজ করে যাচ্ছে।’
আইসিটি ইনিকিউবেটর প্রতিযোগিতার আইডিয়া ও আর্লি– এ দুই স্টেজের চ্যাম্পিয়নদের প্রাইজ মানি হিসেবে দেয়া হবে পাঁচ লাখ টাকা, এক লাখ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার সমমূল্যের হুয়াওয়ে ক্লাউড ক্রেডিট।
এ ছাড়া বিজয়ী স্টার্টআপগুলোর প্রধান নির্বাহীরা বিদেশের সফল স্টার্টআপগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন।
২০১৩ সালে বিশ্বের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করে সাড়া ফেলে দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এই সার্চ ইঞ্জিনের নাম দেয়া হয় ‘পিপীলিকা’। তবে গত তিন বছর ধরে থমকে আছে এর কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ সংকটে সার্চ ইঞ্জিনটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কেবল সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ই নয়, একই অবস্থা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ‘একুশে বাংলা কি-বোর্ড’-এরও। প্লে-স্টোরে অ্যাপটি থাকলেও তা একপ্রকার নিস্ক্রিয়। দ্রুত ক্যানসার শনাক্তের সম্ভাবনাময় ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ ডিভাইসটিও অর্থ সংকটে আটকে গেছে। করোনা মহামারি এবং অর্থ ও জনবলের অভাবে এগোতে পারেনি বাংলায় কথা বলতে পারা রোবট ‘রিবো’।
দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তেত্রিশ বছর আগে সিলেটে প্রতিষ্ঠিত হয় শাহজালা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কিছু উদ্ভাবন সকলের প্রশংসা কুড়ায়। উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুত দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠে পরিণত হয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তবে গত কয়েক বছর ধরেই নেই নতুন কোনো উদ্ভাবন। এমনকি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে থমকে আছে পুরনোগুলোও।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে তারা গবেষণা, উদ্ভাবনসহ সৃজনশীল কাজে যুক্ত হতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও এ ব্যাপারে এখন কোনো উৎসাহ দেয়া হয় না।
পিপীলিকা
২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল ১১ জন ডেভেলপার মিলে তৈরি করেন বিশ্বের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা। পিপীলিকার প্রকল্প পরিচালনায় ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মুখ্য গবেষক ও টিম লিডার হিসেবে কাজ করেন মো. রুহুল আমীন সজীব।
শাবির আইআইসিটি বিভাগ জানায়, বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ সংক্রান্ত কিছু সার্ভিস গ্রহণের বিনিময়ে সরকারের এটুআই (অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন) প্রোগ্রাম থেকে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৮ কিস্তিতে মোট ১ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৬ টাকা দেয়া হয়। শেষ কিস্তির (৯ম কিস্তি) ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৫৩ টাকা পিপীলিকাকে পরিশোধের আগেই সরকারের এটুআই প্রোগ্রামের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকেই অর্থ সংকটে পিপীলিকা বন্ধ রয়েছে।
আগের মতো ৫-৬ জন পূর্ণকালীন আইটি/সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের মাধ্যমে কাজ করানোর জন্য মাসিক ৩-৪ লাখ টাকা অনুদান পেলে পিপীলিকার উন্নয়ন কাজ চলমান রাখা যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এই প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে টিম লিডার মো. রুহুল আমীন সজীব বলেন, ‘আমি এখন এই প্রকল্পের সঙ্গে সংযুক্ত নই।’
শাবির আইআইসিটির পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রজেক্টের ফান্ডিং আসত সরকারের কাছে থেকে। ২০২০ সাল থেকে আমাদের প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট সবকিছু সঠিক সময়ে পাঠালেও কোনো অর্থ পাইনি। সর্বশেষ আমাদের প্রায় ২২ লাখ টাকা আটকে আছে।’
তিনি বলেন, ‘টাকা ছাড়া তো আমরা গবেষক ও কর্মচারীদের কাজ করাতে পারি না। আমরা যতটুকু সম্ভব দিয়েছি। তবুও তাদের বেশ কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের আর টাকা দেয়া হয়নি। আবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক সাপোর্ট না পাওয়ায় কারণে বর্তমানে তা বন্ধ আছে। বিষয়টি নিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও এটুআইয়ের পিডিসহ সকলের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। আমাদের সব রিসোর্স আছে। সরকারের কাছে থেকে আবার সাপোর্ট পেলে আমরা তা সচল করতে পারব।’
এটুআই প্রোগ্রামের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, “যতটুকু মনে পড়ে ‘পিপীলিকা’ সার্চ ইঞ্জিনটা যেমন প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেই মানের হয়নি। এজন্য ফান্ডিং বন্ধ করা হয়। এ বিষয়ে বর্তমান পিডি ভালো বলতে পারবেন।’
বর্তমান পিডি (যুগ্মসচিব) মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি আমার জানা নাই। এটা আসলে কী অবস্থায় আছে, খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করব।’
একুশে বাংলা কি-বোর্ড
কি-বোর্ড নিজেই বুঝে ফেলবে ব্যবহারকারী কী লিখতে চাইছেন- ২০১৮ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এমন কি-বোর্ড কি-বোর্ড উদ্ভাবন করেন শাবি শিক্ষার্থীরা। এর নাম দেয়া হয় ‘একুশে বাংলা কিবোর্ড’।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযোজনের পাশাপাশি দ্রুত টাইপিং ও স্পর্শ করে লেখার ব্যবস্থা রয়েছে এ কি-বোর্ডে। ফলে টাইপ না জানলেও যে কেউ সহজেই বাংলা টাইপিং শিখতে পারে এর মাধ্যমে।
২০২০ সালে কি-বোর্ডটির উদ্ভাবক তৎকালীন শাবির সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বিদেশে চলে গেলে সেটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। প্লে-স্টোরে অ্যাপটি থাকলেও নিস্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে।
প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কাছে এই প্রজেক্টের কোনো আপডেট নেই। আমি দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর এ ব্যাপারে আর কোনো কাজ করা হয়নি।’
ননলিনিয়ার অপটিকস
রক্তের নমুনা পরীক্ষা করার মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্তকরণ পদ্ধতি উদ্ভাবনেও রয়েছে শাবিপ্রবির সাফল্য। অল্প খরচে ও কম সময়ে ‘ননলিনিয়ার অপটিকস’ নামের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে রক্তের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিটেই ক্যানসার শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে দাবি ছিল উদ্ভাবকদের।
হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (হেকেপ) আওতায় শাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সেসময়কার অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক ক্যানসার শনাক্তকরণের এ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন।
গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন, মনজ কান্তি বিশ্বাস ও এনামুল হক।
প্রজেক্টটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ফান্ডিংসহ অনেক সমস্যা আছে। মূলত ফান্ডিংয়ের জন্য আমরা আটকে গেছি। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রজেক্ট শিগগিরিই চালু হবে। সম্ভবত পিডি নিয়োগ হয়ে গেছে। ওটা হলেই আমরাও ফান্ড পেয়ে যাব।
‘বর্তমানে আপগ্রেডের কাজ চলছে। ফান্ডিং পেলে আমরা ক্লিনিক্যালি ব্যবহারের উপযুক্ত করে তুলব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে এটাকে সর্বসাধারণের ব্যবহাপযোগী করে তোলা। হেকাপের আওতায় কাজটি চলছিল, পরে হিট আসার কথা ছিল। সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছি আমরা। পরবর্তী প্রজেক্ট পেলে আমরা বাকি কাজ করে ফেলতে পারব।’
প্রকল্পটি একেবারে বন্ধ হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ আমাদের মতো করে চলছে।’
রোবট রিবো
২০১১ সাল থেকে শাবির তৎকালীন অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব উদ্যোগে ১১ জনের একটি দল রোবট নিয়ে কাজ শুরু করে।
২০১৫ সালে বার্ষিক সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি রোবোসাস্টকে মানবসদৃশ রোবট তৈরির করতে ১ লাখ টাকা অনুদান দেয়। দলটি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মানবসদৃশ রোবট তৈরি করে, যার নাম দেয়া হয় ‘রিবো’।
রোবটটি ২৪ ডিগ্রি কোণে স্বাধীনভাবে ঘুরতে, নাচতে, মুখের অঙ্গভঙ্গির প্রকাশ, হ্যান্ডশেক, হাত উপর-নিচে তোলা, বাংলায় কথা বলা, এমনকি নিজের নামও বলতে পারত। বাংলাদেশ ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত।
রোবটটি তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়া শাবির সিএসই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নওশাদ সজীব বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন।
দলের সদস্য মেহেদী হাসান রূপক বলেন, ‘আমরা ঢাকায় প্রোগ্রাম করেছিলাম। সেখানে আইসিটি প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তিনি বলেছিলেন ফান্ডিং করবেন। আমরা তখন উনাকে একটা আবেদনপত্রও দিয়েছিলাম। পরে করোনা ও জনবল সংকটে আর এগোতে পারিনি। এর মধ্যে আমাদেরও পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কবির হোসেন বলেন, ‘এই উদ্ভাবনগুলোর বর্তমান অবস্থার বিষয়ে আমি খোঁজখবর নেব। প্রয়োজনে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও আমরা কথা বলব।’
উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত কর্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
সম্প্রতি ঢাকার গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের আগুনে নারী ও শিশুসহ চারজন নিহতের ঘটনা নাড়া দেয় পুরো দেশকে। এ ছাড়াও গত কয়েক মাসে ট্রেনে আগুন, ট্রেনের স্লিপার খুলে নেয়া এবং অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বহুবার।
এসব দুর্ঘটনা রোধের উদ্দেশ্যে ‘ট্রেন সিকিউরিটি সিস্টেম’ উদ্ভাবন করেছে চুয়াডাঙ্গার ফার্স্ট মাল্টিমিডিয়া মডেল স্কুলের ছাত্র জাহিদ হাসান জিহাদ।
দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ চত্বরে মঙ্গলবার আয়োজিত ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ ও বিজ্ঞান মেলায় ফার্স্ট মাল্টিমিডিয়া মডেল স্কুলের স্টলে ট্রেন সিকিউরিটি সিস্টেম এবং এআই বেইজড আর্টিফিশিয়াল রোবট প্রদর্শন করে জাহিদ।
সিকিউরিটি সিস্টেমটি সম্পর্কে জানতে কথা হয় জাহিদের সঙ্গে।
সে বলে, ‘বর্তমানে হরতাল-অবরোধের সময় ট্রেনে আগুন দেয়া, ট্রেনের স্লিপার খুলে নেয়া ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেক। যদি কোনো দুর্গম জায়গায় ট্রেনে আগুন লাগে তাহলে ওই মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ফলে যদি তাৎক্ষণিক আগুন না নেভানো যায় তাহলে পুরো ট্রেনে আগুন লেগে যাবে।’
জাহিদ বলে, ‘এই সিস্টেম আগুন লাগা প্রতিরোধ করবে। ট্রেনের প্রতিটি বগিতে থাকা ওয়াশরুমের পানিকে কাজে লাগিয়ে ট্রেনে লাগা আগুন নেভানো সম্ভব। ট্রেনের কোনো বগিতে যখনই আগুন লাগবে, সেই মুহূর্তে ফায়ার ডিটেকশন সেন্সর অ্যাক্টিভেট হয়ে যাবে এবং পুরো ট্রেনে পানি ছড়িয়ে গিয়ে আগুন নিভে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনে অ্যালার্ম বেজে উঠবে এবং ট্রেন থেমে যাবে।’
এতে শত শত মানুষের প্রাণ ও কোটি টাকার সম্পদ বাঁচবে বলে জানায় জাহিদ।
জাহিদ এ সিস্টেম সম্পর্কে আরও জানায়, দেশে ট্রেন লাইন অনেক সময় গ্রাম কিংবা বাজারের ভেতর দিয়ে যায়। এই সিস্টেমে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বা বাজারের ভেতর যে রেললাইন রয়েছে তার ৫০০ মিটার পরপর পোলের ব্যবস্থা আছে। যেখানে ট্রেন আসার ৫০০ মিটার আগে থেকেই সেই পোলগুলোতে অ্যালার্ম বেজে উঠবে।
এ ছাড়াও এ সিস্টেমে ট্রেনের স্লিপার খুলে নেয়া মাত্রই ট্রেন চালক সংকেত পাবেন এবং ট্রেন নিজে থেকেই থেমে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রেন লাইন ঠিক না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো ট্রেন চলবে না।
ইংরেজি-বাংলায় কথা বলা রোবট সম্পর্কে জাহিদ বলে, ‘আমরা দীর্ঘ সাত মাসের প্রচেষ্টায় এআই বেইজড আর্টিফিশিয়াল রোবটটি তৈরি করতে পেরেছি। এ রোবটটি ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় কথা বলে। যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো প্রয়োজনে রোবটটি ব্যবহার করতে পারবেন।’
জাহিদের উদ্ভাবন সম্পর্কে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘জাহিদ হাসান জিহাদ খুব ছোট থেকেই ছোটো-খাটো বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে আসছে। আমাদের স্কুলের কম্পিউটার ল্যাবে বিজ্ঞানের শিক্ষকদের সহযোগিতায় ট্রেন সিকিউরিটি সিস্টেম এবং এআই বেইজড আর্টিফিশিয়াল রোবট তৈরি করেছে সে।’
দামুড়হুদা উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার রাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষুদে বিজ্ঞানী জিহাদের এমন উদ্ভাবনে আমি মুগ্ধ। তার উদ্ভাবন দেখে অন্য শিক্ষার্থীরাও উৎসাহিত হবে। আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকসানা মিতাও জাহিদের এ উদ্ভাবনের প্রশংসা করেন।
আরও পড়ুন:ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (সিইউবি) ক্লাব ইলেক্ট্রো এবং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশনের যৌথ আয়োজনে তিন দিনের রোবোফেস্ট সংস্করণ আলফা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিইউবিতে।
সোমবার বিকেলে সিইউবি চত্বরের লেভেল-৯ এ সিইউবির ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও প্রধান অতিথি হিসেবে শাহনুল হাসান খান ফেস্টের উদ্বোধন করেন। এটি চলবে বুধবার পর্যন্ত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এইচ এম জহিরুল হক, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আক্তার হোসেন।
ফেস্টে সভাপতিত্ব করেন ইইই-এর প্রধান, সিআরআই-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. এমডি শাহরুখ আদনান খান। ক্লাব ইলেক্ট্রোর উপদেষ্টা মো. আমানত হোসেন, সহউপদেষ্টা মো. সাদরিবুল হাসান ও মো. নাসিম তাজ ফ্যাকাল্টি, সকল ইইই অনুষদ ফেস্টের আয়োজক ছিলেন।
প্লাস্টিক-পলিথিন থেকে তেল-গ্যাস উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান।
স্বল্প খরচে মাটি দিয়ে অনুঘটকের মাধ্যমে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপন্ন করতে সফল হয়েছেন তিনি। পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য প্লাস্টিককে তরল জ্বালানিতে রূপান্তরের গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে গবেষণায় তিনি এই সাফল্য পেয়েছেন।
গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাটালিস্ট বা অনুঘটকের মাধ্যমে পাইরোলাইসিস পদ্ধতিতে প্লাস্টিক ও পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপন্ন হয়। প্রথমে মাটি থেকে সিলিকা অ্যালুমিনা ভেঙে ক্যাটালিস্ট তৈরি করা হয়েছে। সেই ক্যাটালিস্ট দিয়ে প্লাস্টিককে ভেঙে ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন জাতীয় জ্বালানি তেল তৈরি করেছি। এই জ্বালানি তেল দিয়ে ছোট ও মাঝারি নৌকার ইঞ্জিনও চালনা করা সম্ভব। এ ছাড়া জেনারেটরের মাধ্যমে এ জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের চারপাশে অনেক প্লাস্টিক বর্জ্য পড়ে থাকে। এসব পরিবেশের জন্য হুমকি এবং মাটির উর্বরতা নষ্ট করে। এই প্লাস্টিক পলিথিন ধুয়ে পরিষ্কার করে জ্বালানি উৎপাদনের উপযোগী করা সম্ভব। মাটি ও প্লাস্টিক দুটি উপাদানই আমাদের হাতের কাছে পাওয়া যায়। এতে করে খুব অল্প খরচে সরকার চাইলে জ্বালানি সংকটের এই সময়ে তেল উৎপাদন করতে পারবে।’
মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ‘এই জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। কারণ জ্বালানির বেশির ভাগ অংশ ডিজেল, পেট্রল ও কেরোসিন থেকে আসে। সরকারের কাছ থেকে গবেষণার জন্য বড় আকারের তহবিল পেলে বড় আকারে উৎপাদনের জন্য একটি প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন করতে পারব। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে একক ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক-পলিথিন রয়েছে। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী এবং অন্যান্য নদী ও খাল থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে তা ডিজেল, পেট্রল ও কেরোসিনে রূপান্তরিত করা যাবে। সেই সঙ্গে পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাবও কমে যাবে।’
এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা যাবে বলে দাবি গবেষকদের। বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রকল্পের মাধমে দূষণ কাটিয়ে বর্জ্য প্লাস্টিককে জ্বালানিতে রূপান্তর করে এর সংকটও মোকাবেলা করা যাবে। এই জ্বালানিকে বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদন করা যাবে বলে জানান এই অধ্যাপক।
গবেষণা প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যাবে এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তহবিল বা বাজেট পেলে বড় আকারে গবেষণা করার চেষ্টা করব।’
গবেষণা প্রকল্পটি ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ ইনঅর্গানিক কেমিস্ট্রি, ওয়াইলি’ নামের একটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল একক ব্যবহারের বর্জ্য পলিথিনকে জ্বালানিতে রূপান্তর করে পরিবেশ রক্ষা করা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এই গবেষণা প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফীস আহমেদ, ড. জয়ন্ত কুমার সাহা এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সুব্রত চন্দ্র রায় সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া একই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল রহমান ও জুনায়েদ মাহমুদ শুভ গবেষণায় সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন।
নারীর হাতে থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে নাক তৈরি করে তা সফলভাবে তার মুখমণ্ডলে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফ্রান্সের এক দল চিকিৎসক এমন অসাধ্য সাধন করেছেন। ক্যানসারের চিকিৎসায় নাকসহ মুখের একাংশ হারিয়েছিলেন ওই নারী।
ন্যাজাল ক্যাভিটি ক্যানসারে আক্রান্ত দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় শহর তুলুজের বাসিন্দা ওই নারী ২০১৩ সালে রেডিওথেরাপি ও ক্যামোথেরাপি নেয়ার সময় তার নাক হারান। তখন নাকের স্থানে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এর পর প্রায় এক দশক তিনি নাক ছাড়াই দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছেন।
একপর্যায়ে চিকিৎসকদল তার হাতে কৃত্রিম নাক তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রোসথেটিক পদ্ধতির মাধ্যমে এই নাক তৈরিতে কয়েকবার তারা ব্যর্থও হয়েছিলেন।
তুলুজ ইউনিভার্সিটি হসপিটালের বিশেষজ্ঞরা ওই নারীর শরীর থেকে কোষ নিয়ে থ্রি-ডি ফরম্যাটে অবয়ব তৈরি করে তা গজানোর জন্য স্থাপন করা হয় তার বাম হাতে। সেটি ধীরে ধীরে নাকের আকৃতি পায়। দুই মাসের মধ্যে এটি প্রতিস্থাপনের জন্য পুরোপুরি তৈরি হয়।
তুলুজ ইউনিভার্সিটি হসপিটাল কর্তৃপক্ষ জানায়, কৃত্রিমভাবে তৈরি করা অঙ্গটি সফলভাবে প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারে অধ্যাপক অ্যাগনেস ডুপ্রেট-বোরিস এবং ডা. বেঞ্জামিন ভাইরেল নেতৃত্ব দেন। জটিল এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই নাকের সঙ্গে শরীরের রক্তনালীর সংযোগ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন শুরু হয়েছে কৃত্রিম নাকে।
আরও পড়ুন:এনার্জি ম্যানেজমেন্ট এবং অটোমেশন ট্রান্সফরমেশনের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান স্নাইডার ইলেকট্রিক সম্প্রতি ইলেকট্রিসিটি ৪.০ কনসেপ্টকে পরিচিত করাতে ঢাকায় আয়োজন করেছে ‘ইনোভেশন ডে’।
সরকারি কর্মকর্তা, গ্রাহক, চ্যানেল পার্টনার এবং পরিবেশকরা এই আয়োজন অংশ নেন। ভবিষ্যতের একটি টেকসই নেট-জিরো পাওয়ার সল্যুশন এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন ফিচারগুলো দেখানো হয় আয়োজনে।
ইলেকট্রিসিটি ৪.০ হলো অল-ইলেকট্রিক এবং অল-ডিজিটালের সমন্বয় যা এনার্জিকে পরিষ্কার, সবুজ এবং টেকসই করা।
ইলেট্র্রিফিকেশন এনার্জিকে সবুজ করে তোলে এবং ডিজিটাল এনার্জিকে স্মার্ট এনার্জিতে পরিণত করে, তাই ইলেকট্রিসিটি ৪.০ হলো আরও টেকসই এবং স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যতের এনার্জির সমাধান।
স্নাইডার ইলেকট্রিকের ইনোভেশন ডে আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল গ্রাহকদের জন্য একটি সহযোগী প্ল্যাটফর্ম দেয়া, পাশাপাশি শিল্পের সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রবণতাগুলো দেখানো।
ভবিষ্যতে জিরো কার্বন নিঃসরণের যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, ইনোভেশন ডে আয়োজন ডিজিটাল সেই টেকসই পদ্ধতি গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কাজ করবে।
স্নাইডার ইলেকট্রিক ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের জোন প্রেসিডেন্ট, ইন্ডিয়া, অ্যান্ড সিইও এবং এমডি অনিল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে ক্রমাগত একটা উপস্থিতি বাড়াতে চাই এবং আমরা চাই সামনের দিনে একটা টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে। আমরা গত ২০ বছর থেকে বংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছি এবং সেই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, বাসাবাড়ির জন্য সোল্যার ইলেকট্রিফিকেশনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছি।
‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। ভবিষ্যৎ সমীকরণ খুব সহজ। বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ডিজিটাল ইফিসিয়েন্সি, ডিকার্বনাইজেশনের জন্য ইলেকট্রিক এবং টেকসই স্মার্ট ও একটি গ্রিন এনার্জি। আমরা ডিজিটাল রূপান্তরের এই পথচলায় পছন্দের প্রথম অংশীদার হতে চাই।’
স্নাইডার ইলেকট্রিক বাংলাদেশের পরিচালক, জেনারেল ম্যানেজমেন্ট জহির আহমেদ বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল এবং স্থায়িত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এর প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুতের মাথাপিছু ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধির সাথে সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭% ধরে রেখেছে।
‘২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ৩৪ হাজার মেগাওয়াট এনার্জির প্রয়োজন হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, বিদ্যুতের খরচে এই বিশাল উল্লম্ফন গ্রিন এবং নির্ভরযোগ্য, এবং আমরা এই যাত্রায় আমাদের অংশীদার ও গ্রাহকদের ক্ষমতায়ন করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশের উৎপাদন খাত ক্রমাগত বেড়েই চলেছে এবং দেশে একটি শক্তিশালী শিল্পপ্রবৃদ্ধি ঘটছে, যা এনার্জির চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। এনার্জির চাহিদা মেটাতে এবং সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে, নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য ডিজিটাল এবং টেকসই রূপান্তর প্রয়োজন।
বিষয়টি মাথায় রেখে, বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেকের এনার্জির অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। গত কয়েক বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রশংসনীয় অগ্রগতি হয়েছে।
আরও পড়ুন:কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের একটি পুরনো সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা পদার্থের এমন এক নতুন দশা তৈরি করেছেন, যেখানে সময়ের দুটি মাত্রা বা ডাইমেনশন। পদার্থের এই দশা কঠিন, তরল ও বায়বীয় দশার চেয়ে ভিন্ন।
পরম তামপাত্রার (-৪৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কাছাকাছি তাপমাত্রায় কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের কাজ করে কিউবিট। একই সঙ্গে আশেপাশের বিদ্যুত ও চৌম্বক ক্ষেত্রকে এড়িয়ে তাদেরকে এ কাজটা করতে হয়।
বিদ্যুৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবের কারণে কিউবিটের তথ্য প্রবাহে বিঘ্ন হয়। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের এ ত্রুটিগুলো সারানোর পথ খুঁজে বের করাটাই বিজ্ঞানীদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
কানাডার একদল বিজ্ঞানীর দাবি, তারা এ সমস্যা সমাধানের নতুন এক উপায় বের করেছেন। আর সেটা করতে গিয়ে তারা পদার্থের এমন এক দশা তৈরি করেছেন, যেখানে সময় একটি নয়, দুটি মাত্রা নিয়ে অস্তিত্বশীল।
এক প্রতিবেদনে এটি জানিয়েছে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ভিত্তিক সাইট ভাইস। নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য সেটির ভাষান্তর করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
নতুন এ আবিষ্কারের খবর প্রকাশিত হয়েছে নেচার জার্নালে, গত বুধবার। গবেষকদের অন্যতম সদস্য ও কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার পদার্থবিদ্যার শিক্ষক অ্যান্ড্রু পটার এক ই-মেইলে ভাইসকে জানিয়েছেন, ‘পদার্থের নতুন দশাকে নিয়ে তারা যে কাজ করেছেন, সেটা আমাদের পরিচিত কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থার চেয়ে ভিন্ন।
তিনি লেখেন, ‘পদার্থের দশাগুলি সম্পর্কে চিন্তা করার আধুনিক উপায় হল একটি দশাকে স্থিতিমাপের বিশেষ অঞ্চল হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা, যেখানে পরিবর্তনের সম্মুখীন না হয়ে কোনো দশার টিকে থাকা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে সেটা সঙ্গে সঙ্গে গলে তরলে পরিণত হয় না। এটা তখনই গলতে শুরু করে যখন এটা একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা অতিক্রম করে, যা ওই পদার্থের মেল্টিং পয়েন্ট।’
তাপমাত্রার কীভাবে পদার্থের দশায় পরিবর্তন ঘটায় সেটার চেয়ে পটার ও তার সহকর্মীরা দেখেছেন যে বস্তুর কোনো অবস্থায় সময় কীভাবে একটি সীমানা নির্ধারণ করে দিতে পারে। এ সীমানার ফলে যা সৃষ্টি হচ্ছে তাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘ডাইনামিক টপোলজিক্যাল ফেজ’। এতে করে, তাপমাত্রার বদলে কোয়ান্টাম সিস্টেমের ভুলগুলো ফেজে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।
পটার যোগ করেন যে, এই দশায় তাদের সিস্টেমকে রেখে দলটি দেখিয়েছে যে তারা কিউবিটকে এক ধরণের ত্রুটি থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এই অবস্থা ধরে রাখার জন্য কিউবিটগুলির এমন কিছু প্রয়োজন যা অসম্ভব শোনায়, আর তা হলো দ্বিমাত্রিক সময়।
এটি অর্জন করার লক্ষ্যে গবেষকরা প্রাচীন ও বিখ্যাত একটি গাণিতিক প্যাটার্ন নিয়ে কাজ করেছেন– ফিবোনাচ্চি সিকোয়েন্স। ১১ শতকে ইতালির গণিতবিদ ফিবোনাচ্চি প্রথম এটি উদ্ভাবন করেন। এ সিকোয়েন্স আসলে সংখ্যার এমন একটি ধারা যেখানে প্রতিটি সংখ্যা আগের দুই সংখ্যার যোগফল। প্রাকৃতিক অনেক বিষয় যেমন সূর্যমুখী ফুলের বিজের সর্পিল বিন্যাসে এ সিকোয়েন্স লক্ষ্য করা যায়।
তাদের গবেষণার জন্য পটার ও তার দল এ সিকোয়েন্সে সংখ্যাগুলোর অনুপাতের দিকে লক্ষ্য করেছেন ও বের করার চেষ্টা করেছেন কী করে তারা সিস্টেমে আটকে পড়া কিউবিটকে এ অনুপাতে লেসার ছুড়ে রক্ষা করতে পারেন।
পটার বলেন, ‘ফিবোনাচ্চি সিকোয়েন্সে সংখ্যার পুনরাবৃত্তি নেই, আবার এটি কোনো দ্বৈবচয়ন ভিত্তিক ধারাও নয়। এর ফলে কার্যত আমরা সিস্টেমে সময়ের দুটো আলাদা মাত্রাকে ব্যাখ্যা করতে পেরেছি।’
ফিবোনাচ্চি সিকোয়েন্সের ফলে একটি আপাত-পর্যায়ক্রমিক ছন্দ তৈরি হয়েছে, যার সঙ্গে কোয়াসিক্রিস্টাল নামক পদার্থের আরেক ধরণের অদ্ভূত দশার মিল রয়েছে। সাধারণ একটি ক্রিস্টালে শৃঙ্খলাবদ্ধ কাঠামো ও একই ধরণের কাঠামো (মৌচাক যেমন) দেখা যায়, কিন্তু কোয়াসিক্রিস্টালে শৃঙ্খলাবদ্ধ কাঠামো থাকলেও তাতে পুনরাবৃত্তি থাকে না। কারণ কোয়াসিক্রিস্টালগুলো আসলে অন্য কোনো উচ্চমাত্রায় চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া ১ বা ২ মাত্রার চেহারা।
ঠিক যেভাবে কোয়াসিক্রিস্টালগুলো তাদের বাড়তি মাত্রাগুলো লুকিয়ে ফেলতে পারে, গবেষকরা দেখেছেন ঠিক একই ভাবে ফিবোনাচ্চি সিকোয়েন্স সময়ের ক্ষেত্রে একটা বাড়তি মাত্রা লুকিয়ে রাখতে সক্ষম।
পটার বলেন, ‘কার্যত এটি আমাদের সময়ের দুটো মাত্রাকে চিড়ে-চ্যাপ্টা করে সময়ের একটা নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত করতে সহায়তা করে। আর এতে করে আমরা সার্বিকভাবে কিউবিটগুলোকে সুরক্ষা দিতে পারি।’
গবেষকরা তাদের এ পরীক্ষা কোয়ান্টাম কম্পিউটারে আটকে পড়া কিউবিটের ওপর করে দেখেছেন যে, ফিবোনাচ্চি সিকোয়েন্স ব্যবহার করা লেসার পালসগুলো পরীক্ষা চলাকালীন পুরো সময় (৫.৫ সেকেন্ড) কিউবিটগুলোকে স্থির রাখতে সক্ষম হয়েছে। সাধারণ লেসার পালসের ক্ষেত্রে এ সময়টা ১.৫ সেকেন্ড।
যদিও এ গবেষণা দিয়ে এখনই কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সব ত্রুটি দূর করা যাবে না, তবে পটারের মতে কোনো পদ্ধতি ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম মেমোরি ও কম্পিউটিংয়ের উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে সেটার একটা ধারণা এ থেকে পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘এ পরীক্ষাগুলো থেকে অন্তত এটা প্রমাণ হয়েছে যে, ভুল আর গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণির ত্রুটির প্রতি সংবেদনশীল নয় এমন কোয়ান্টাম সিস্টেমকে নিজেদের কাজে ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের উপায় রয়েছে। আমি আশাবাদী এটি দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর হতে পারে।’
মন্তব্য