জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২তম আবর্তনে (ব্যাচ) র্যাগের আয়োজন নিয়ে চলছে তুমুল তর্কবিতর্ক। ক্যাম্পাসের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিতর্কে যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরাও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের নৃত্যানুষ্ঠানে অশালীনতার অভিযোগ তুলছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একাংশ। তাদের অভিযোগ, এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সাংস্কৃতিক মান’ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।
তবে এর বিরোধিতা করে আরেকটি অংশ বলছে, বিতর্ক ছড়ানো হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। একটি সাধারণ নাচকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মানসিক সংকীর্ণতার পরিচয় দেয়া হচ্ছে বলেও তাদের অভিযোগ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম আবর্তনে র্যাগের অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। অনুষ্ঠানে একটি হিন্দি গানের সঙ্গে দুই শিক্ষার্থীর নাচের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মূল পরিবেশনাটি একটি হিন্দি গানের সঙ্গে হলেও পরে সেটি একটি বাংলা গানের সঙ্গে যুক্ত করেও প্রচার হচ্ছে।
ট্যাঙ্গো নাচের ভঙ্গিমায় এই নৃত্যায়োজনে নারী শিক্ষার্থীর পোশাক ও ধারণ করা ভিডিও নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। ভিডিওতে দেখা যায়, যুগল নাচে নারী শিক্ষার্থীর পরনে ছিল ফ্রক ও স্কিন কালার টাইটস।
এ ধরনের আয়োজনে চরম ক্ষুব্ধ ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মারুফ মল্লিক। ২৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মারুফ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসে রুচিশীলতার চরম অধঃপতন ঘটছে। এটা শিক্ষক, শিক্ষার্থী সবার জন্যই প্রযোজ্য। যে ভাষায় এখন শিক্ষার্থীরা কথা বলে, আনন্দ প্রকাশ করে বা শিক্ষকদের যেসব কীর্তির কথা শুনি তা স্পষ্টতই মানসিক বিকারগ্রস্ততার প্রমাণ।’
মারুফ মল্লিক বলেন, ‘অনলাইনে সরাসরি র্যাগ উৎসব দেখলাম। মান দেখে আমি খুবই আহত হইছি। আমরাও র্যাগ করছি। আমাদের সময় নানা ধরনের সংকট ছিল। কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি মান বজায় রাখতে।’
‘গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উপলক্ষে যা দেখছি তা খুবই হতাশাজনক। একটা বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে জাবিয়ানদের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না। অশ্লীলতা, মানহীন কথোপকখন কখনই আনন্দ প্রকাশের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না।’
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৪০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মাজেদ সীমান্ত লিখেছেন, ‘র্যাগের প্রোগ্রামে অনেকগুলো সিঙ্গেল, কাপল, দলীয় নাচ হয়েছে। ভিডিওতে দেখলাম, বেশ সুন্দর হয়েছে। যে নাচটা নিয়ে কথা উঠেছে সব জায়গায় সেখানে নিশ্চয় সমস্যা হয়েছে বলেই কথা উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তবুদ্ধির চর্চা হবে সেটাই স্বাভাবিক। ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে যেটা অপসংস্কৃতি/অশ্লীল সেটা আপনাদের ১০ জনের কাছে শ্লীল হইলেই হয়ে যাবে কি?’
৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী আখলাক হোসেন লিখেছেন, ‘৭টা বছর ক্যাম্পাসে আছি, ১০ তারিখ রাতের মতো নোংরা আর সস্তা কন্টেন্টের প্রোগ্রাম দেখি নাই। ৪২ ব্যাচের বড় ভাই আপুরা সেরা, আমার দেখা অন্যতম সেরা ব্যাচ। কিন্তু যেই স্ট্যান্ডার্ডের প্রোগ্রাম তারা ডেলিভার করলেন, তা পরবর্তী প্রোগ্রামগুলোর জন্য হুমকিই বলবো। সেক্সুয়াল কন্টেন্ট আর্ট হতেই পারে। কিন্তু সেটা যদি সেভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় তবেই এ রকম একটা মঞ্চে মঞ্চস্থ হতে পারে। আপনারা যা করলেন ভাই, তা আর্ট ও হয় নাই, সেক্স ও হয় নাই। মানে কোনো দিক দিয়ে এটা মজারও ছিলো না আবার **** সুরসুরিও দেয় নাই।’
তবে ৪২তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের আয়োজনকে সমর্থন করেও ফেসবুকে ঝড় তুলেছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রাজু নুরুল লিখেছেন, ‘ধরেন, জাহাঙ্গীরনগরের মুক্তমঞ্চে ওখানকার ছেলেমেয়েরা না, নাচছে ভারতের নোরা ফাতেহী। আবার এইটা বইলেন না যে, নোরা ফাতেহীকে চিনেন না! টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা। আজ সেই একই মুক্তমঞ্চে কি তিল ধারনের জায়গা থাকতো? বুকে হাত দিয়া বলেন তো? সিনিয়র থেকে জুনিয়র - পারলে কিডনি বেচে হলেও মুক্তমঞ্চের সিট বুকিং দিতে ঝাপাইয়া পড়তো না?
‘তাইলে কি দাঁড়াইলো ব্যাপারটা? নোরা ফাতেহী ভারত থেকে আইসা কয়েক কোটি টাকা সম্মানি নিয়ে, মোটামুটি প্রেসিডেন্ট লেভেলের নিরাপত্তা বেস্টনিতে থাইকা, প্রায় কিছু না পরে মুক্তমঞ্চে নাচতে পারবে, ওইটা আন্তর্জাতিক মানের হাই ক্লাস শিল্প, কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরের রর্যাগে, ৪২ ব্যাচের ছাত্রী তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে স্কিন কালারের লেগিংস আর স্লিভলেস ফ্রক পইরা নাচতে পারবে না? সেই নাচ দেইখা আপনার নিচের দিকে ধুকুরপুকুর শুরু হয়ে যাবে? দেশের সংস্কৃতি রসাতলে চলে গেল বলে হায় হায় রব উঠে গেল? কামডা কি ঠিক হইলো বাবাজি?’
তিনি আরও লেখেন, ‘অথচ একই মঞ্চে কম পোশাক পরে একটা ছেলে যখন নাচছে, একটা ছেলে ঠিক না, অনেকগুলো ছেলে যখন নাচলো, ওদের মাসলড শরীরের উপরের দিকে প্রায় সামান্য পোশাক, ওইটা নিয়া আপনার কোনও আপত্তি নাই৷ তার মানে কি এইটা যে, সেক্স ব্যাপারটা শুধু ছেলেদের ডিপার্টমেন্ট? মেয়েরা সেক্সুয়ালি আপিলড হয় না? আর আপনি কিনা দাবি করছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন কিংবা পড়েছেন? স্যরি, নিতে পারলাম না ভাই। কারণ আপনার দাবিখানার সাথে মামুনুল হকদের দাবির যে সঙ্গতি খুঁজে পাচ্ছি আমি? ঠিক এইটাই ওনাদের দাবি না? বহুদিন ধইরা?’
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৩০তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফারদীন ফেরদৌস লিখেছেন, ‘না দেখে বলতে পারছিলাম না। এখন দেখলাম। কোনো সমস্যা দেখছি না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২ এর শিক্ষা সমাপনী উৎসব (র্যাগ) উপলক্ষে মুক্তমঞ্চে নাচ হয়েছে। নাচের মতোই নাচ হয়েছে। অবশ্যই নাচটি সমকালীন ও আনন্দকর হয়েছে। সংকীর্ণমনাদের কাছে কোনো নাচই ভালো ঠেকবে না।
‘কিন্তু তারা সবাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওই ড্যান্সটা দেখতেও থাকবে। ইউটিউব/ফেসবুকে সোরগোলও তুলবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘৪২ এর ব্যাপারে আমাদের বাতুলতা খাটে না এইজন্য যে, ওরা ওদের জন্য শিল্পের পসরা সাজিয়েছিল। অন্যদের জন্য নয়। শিল্পের স্বরূপ লক্ষণ হলো আনন্দ। শিল্পবস্তু (কনটেন্ট) যাই হোক না কেন তা থেকে রস আহরণ করাই হল রসিকের কাজ-রসিকজনার বৃত্তি। আমরা যারা মুক্তমঞ্চের ড্যান্স থেকে অশান্তি কুড়াচ্ছি তারা রসিক তো নই-ই, শিল্পকর্মের রসোপলব্ধিতে সহৃদয় সামাজিক মানুষও নই।’
গণিত বিভাগের ৩৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থী কৌশিক আজাদ প্রণয় লিখেছেন, ‘আশি বা নব্বই দশকের বাংলা মুভিকেও আমরা সুস্থ বিনোদন বলি। যদি একজন নায়ক ও নায়িকার নাচের দৃশ্যকে সহজভাবে নিতে পারি আর নন্দন সংস্কৃতির আধুনিকতা মানতে পারি, তাহলে এ রকম নন্দন শিল্পের প্রকাশকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নেতিবাচক ভাবে দেখার মানে কী?
‘৪২তম ব্যাচের র্যাগ উদযাপনে একটা নাচের দৃশ্য দেখলাম। যতদূর দেখলাম ছেলে মেয়ে দুজন তো খারাপ কোরিওগ্রাফি করেনি। আমি জানি না বাকি প্রোগ্রামের কী অবস্থা। যদি কোনো কথা বার্তা বা অন্য কিছুতে অশ্লীলতা থাকে তা সমর্থনযোগ্য নয়। তবে নাচের মূদ্রা বা পোশাককে এভাবে নেতিবাচকভাবে খুঁটিয়ে না দেখে ওদের নির্মাণশৈলীকে বাহবা দেয়া উচিত। আমাদের এই দুই চোখই কিন্তু একই গানে সেলুলয়েড স্ক্রিনে- স্যাটেলাইটে এইরকম কোরিওগ্রাফিকে নান্দনিকভাবেই গ্রহণ করে।’
যার ধারণ করা ভিডিও নিয়ে এত আলোচনা
মুক্তমঞ্চের নৃত্যানুষ্ঠানের আলোচিত ভিডিওটি ছড়িয়েছে একটি ফেসবুক লাইভ থেকে। লাইভটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম আবর্তনের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ।
জাহিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ৪২-এর অনেক বন্ধুরা চাকরি, দেশের বাইরে থাকার কারণে প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকতে পারেনি। তারা পুরো প্রোগ্রাম লাইভ করার জন্য রিকোয়েস্ট করেছিল। তাই আমি করেছি।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘একটি ভূঁইফোঁড় নিউজপোর্টাল উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার প্রোফাইল থেকে বিনা অনুমতিতে ভিডিওটির একটি অংশ কেটে নিয়ে সস্তা বি গ্রেডের বাংলা গান যুক্ত করে দেয়। সেই ভিডিওটি পরে ভাইরাল হয়।’
৪২তম আবর্তনের র্যাগ উৎসবের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সাংস্কৃতিক কমিটি ক্যাম্পাস ছাড়াও ক্যাম্পাসের বাইরের এবং দেশের বাইরের দর্শকদের কথা চিন্তা করে এমন আয়োজন করেছিল। আমাদের দর্শকরা মুক্তমঞ্চে পুরোটা সময়ই আগ্রহের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
‘আমাদের প্রোগ্রামের নাচের একটি অংশ এডিট করে বিনা অনুমতিতে প্রচার করা হয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনিগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছি। তারা আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ভিডিও ডিলিট করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে।’
আলোচনার কেন্দ্রে থাকা শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ
যে নাচটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল বিতর্ক চলছে তাতে অংশ নেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নিগার সুলতানা তৃষা ও চারুকলা বিভাগের আসিফ আল নূর রাতুল।
‘পেয়্যার কি ইয়ে কাহানি সুনো’ গানের সঙ্গে নাচে অংশ নেন তারা। এরপর ফেসবুকে সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমালোচনা এবং অন্য গানের সঙ্গে ভিডিও ভাইরাল করার ঘটনায় তৃষা বেশ ক্ষুব্ধ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রোগ্রাম নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। তবে যারা ভিডিওটি ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
বিষয়টি নিয়ে ৪২ আবর্তনের ‘র্যাগ রাজা’ সিফাত আল রাব্বানি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নাচটি পরিবেশনের সময় এবং নাচ শেষ হওয়ার পর মুক্তমঞ্চের দর্শকরা কোনো ধরনের বাজে প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এরপর ভিডিওটি যারা প্রকাশ করেছেন তারা ভিডিওটিতে কারসাজি করেছেন, এমনকি গানও পরিবর্তন করেছেন। এটি ক্যাম্পাস নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে একটি বাজে ভাইব তৈরি করেছে।’
আরও পড়ুন:আগামীতে দেশজুড়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আগামীতে বাণিজ্য মেলা হবে দেশজুড়ে। বিদেশিদের নিয়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয় মেলা হবে। উপজেলা থেকে সেরা উদ্ভাবন আনতে পারলেই হবে প্রকৃত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ মাত্রই উদ্যোক্তা। মানুষের কাজই হলো নিজের মনমতো কাজ করা। বাণিজ্য মেলা মানুষকে নিজের উদ্যোগ ও সৃজনশীলতাকে তুলে ধরার সুযোগ দেয়। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রস্তুতি সারা বছর ধরে চলবে। জেলায়-উপজেলায় তরুণ-তরুণী, বয়স্ক-বয়স্কা উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হবে। সেখান থেকে তিন-চারজন করে সেরা উদ্যোক্তা বাছাই করা হবে। তারা চূড়ান্তভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করবেন। এদের সব ব্যয় সরকার বহন করবে।’
তিনি বলেন, ‘তরুণরা আমাদের পথপ্রদর্শক। তারা জাতিকে পথ দেখাবে। দুনিয়াকে পথ প্রদর্শন করবে। একটা সময় আসবে যখন বাংলাদেশে তরুণরা কী করছে তা দেখতে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে তরুণরা আসবে। তারা বাংলাদেশের তরুণদের কাছ থেকে বুদ্ধি নিতে আসবে, শিখতে আসবে। জয়েন্ট ভেঞ্চার করতে আসবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় তরুণদের জন্য একটা পৃথক অংশ থাকবে। এখানে ২৫ বছরের কম বয়সী উদ্যোক্তা যারা তারা আসবে। তারা কে কী করে তা সেখানে দেখাতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘অসংখ্য কাজ করে এই তরুণরা। অত্যন্ত চমৎকার বুদ্ধি দিয়ে ব্যবসা নিজে সৃষ্টি করেছে। এদের দেখানো এজন্য প্রয়োজন যে এদের দেখার পর প্রত্যেকের মাথায় সুড়সুড়ি আসবে।
‘মেলার উদ্দেশ্য হলো সুড়সুড়ি দেয়া। বিশেষ করে তরুণদের মাথার মধ্যে সুড়সুড়ি দেয়া। একটা অংশ হবে তরুণদের জন্য। তাদের মধ্যে মেয়েদের একটা অংশ হবে। সেখানে তারা কত ধরনের প্রোডাক্ট করছে তা একে অন্যকে দেখাবে। ছেলেরা মেয়েদেরটা দেখবে, মেয়েরাও ছেলেদেরটা দেখবে। দেখে দেখে আরও বুদ্ধি বের হবে। বুদ্ধিতে বুদ্ধিতে ঘষা দিলে আরও বুদ্ধি বের হয়।’
প্রতি বছরের মতো এবারও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করছে। এবারের বাণিজ্য মেলায় প্রথমবারের মতো অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল ও প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়া ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস।
আরও পড়ুন:ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসরের উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিসিএফসি) এই মেলা উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, এবারের বাণিজ্য মেলায় বিশ্বের ৭টি দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানসহ ৩৬২টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন থাকছে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকে প্রাধান্য দিয়ে মেলায় থাকছে জুলাই চত্বর, ছত্রিশ চত্বর ও তারুণ্যের প্যাভিলিয়ন। ই-টিকিটের ব্যবস্থা থাকায় প্রবেশ পথে রয়েছে ভিন্ন ব্যবস্থা।
এবার প্রথমবারের মতো অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল বা প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস।
মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর বা পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এ বছর। বিদেশি উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে থাকছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় থাকছে শিশু পার্কও।
এছাড়া মেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের সম্মানার্থে তৈরি করা হয়েছে জুলাই চত্বর ও ছত্রিশ চত্বর। সঙ্গে দেশের তরুণ সমাজকে রপ্তানি বাণিজ্যে উদ্বুদ্ধকরণে তৈরি করা হয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন।
প্রসঙ্গত, মাসব্যাপী এই মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া গারো লাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে গারো জনগোষ্ঠীর ওয়ানগালা উৎসব। রোববার সকালে ওয়ানগালা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে গারো সম্প্রদায়ের দিনব্যাপী এই উৎসবে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় গারো জনগোষ্ঠী তাদের নতুন ফসল সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ করেন।
ওয়ানগালা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ি এলাকায় একসময় জুম চাষের মাধ্যমে বছরে মাত্র একটি ফসল ফলতো। তখন ওই জুম বা ধান ঘরে তোলার সময় গারোদের শস্য দেবতা ‘মিসি সালজং’-কে উৎসর্গ করে এ উৎসবের আয়োজন করা হতো।
মূলত গারোরা ছিল প্রকৃতিপূজারী। সময় পরিক্রমায় গারোরা ধীরে ধীরে খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে পালন করা হয়। এক সময় তারা তাদের শস্য দেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ‘ওয়ানগালা’ পালন করলেও এখন তারা নতুন ফসল কেটে যিশু খ্রীষ্টকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করে থাকেন।
ওয়ানগালা উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালাউদ্দিন বিশ্বাস, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য প্রীতম দাস প্রমুখ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়ায় আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) সম্প্রদায়ের ১২৫তম বর্ষবিদায় ও ১২৬তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খাসিদের আয় ও জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ। চলতি মৌসুমে পানের ব্যবসা মন্দা ও আর্থিক সংকটের কারণে ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ আয়োজন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছিল খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল। তবে পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় বেশ আড়ম্বরের সঙ্গেই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের আয়োজনে শনিবার আদিবাসী খাসিদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘সেং কুটস্নেম' অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবকে ঘিরে পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ উপলক্ষে নানা রঙের পোশাক পরে খাসিরা নাচগান, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। মাঠের এক পাশে খাসিদের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলা বসে। মাঠের একপাশে সুপারি গাছের পাতা দিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়। তবে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় আয়োজন কিছুটা কম ছিল। কারণ একেবারে শেষ সময়ে এসে প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ২৩ নভেম্বর মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজসজ্জায় সেজে নেচে–গেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন।
‘সেং কুটস্নেম’ উৎসবের দিন সবাই মিলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন।
অনুষ্ঠানস্থলে মাঠ জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন।
এই উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন।
হেলেনা পতমী বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর আমাদের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠানটি করে আসছি। অনুষ্ঠানটি ঘিরে আমরা খাসি সম্প্রদায়ের সবাই একসঙ্গে জমা হয়ে উৎসবে মেতে উঠি।’
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা অনুষ্ঠানটি করতে পারছিলাম না। পরবর্তীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা সেং কুটস্নেম আয়োজন করি।’
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, ‘সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। দেশ–বিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষবিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব।’
আরও পড়ুন:জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক অনুপ্রেরণামূলক দেয়াল লিখন ও দেয়ালচিত্র বা গ্রাফিতি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বিশ্বব্যাংক। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই প্রদর্শনী।
সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের জন্য ছাত্র, তরুণ ও যুবসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো এই আয়োজন শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনে শুরু হয়েছে।
‘পেইন্ট দ্য স্কাই, মেক ইট ইওরস: ফিউচার বাংলাদেশ ইন দ্য আইজ অব দ্য ইয়ুথ’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে তিনি একটি প্রকাশনারও মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ ও ভুটান) আবদৌলায়ে সেক, কান্ট্রি ডিরেক্টর ও প্রতিনিধি (এশিয়া ও প্যাসিফিক) ড. ভ্যালেন্টাইন আচানচো এবং বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া দেশি-বিদেশি শিল্পানুরাগীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে প্রদর্শনী গ্যালারি।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক তার বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গঠনে তরুণরা যে মূল ভূমিকা পালন করে তার স্বীকৃতি বিশ্বব্যাংক বরাবরই দিয়ে এসেছে।
‘একটি অভূতপূর্ব ত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে সে বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি জানাতে বাংলাদেশি ছাত্র ও তরুণরা তাদের সৃজনশীলতা এবং শিল্পকে ব্যবহার করেছে। ছবিগুলো তরুণদের পরিবর্তন আনয়নকারী হওয়ার সীমাহীন সম্ভাবনার কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়।’
প্রদর্শনীতে উপস্থিত জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট ও কমিক বুক আর্টিস্ট সৈয়দ রাশাদ ইমাম তন্ময় বাসস-কে বলেন, ‘একটি বিপ্লবের পর এই দেয়াল লিখন বা গ্রাফিতিগুলো আমাদের বাংলা সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠে। ম্যুরাল, গ্রাফিতি কিংবা কার্টুন যেহেতু সমাজের নেতিবাচক দিকগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে থাকে তাই এগুলো নিয়ে এতোদিন সেভাবে কোনো উৎসব হয়নি। তবে এখন হচ্ছে। আর তা তরুণদের ব্যাপারে আমাদের ধারণা একেবারে পাল্টে দিয়েছে।’
প্রদর্শনীতে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা, রংপুর, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানসহ ১২টি জেলার তরুণ-যুবাদের আঁকা শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত দেয়াল লিখন এবং দেয়ালচিত্র স্থান পেয়েছে, যা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী দেশের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পবিত্র হজের পর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই জমায়েত আয়োজনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে জানিয়ে দেয়া হয়েছে কোন পর্ব কাদের অধীনে আয়োজন করা হবে।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি শূরায়ী নেজামের অধীনে এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি সাদপন্থীদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ শূরায়ী নেজাম (মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়েরের অনুসারী) আয়োজন করবেন। আর আগামী ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ মাওলানা সাদের অনুসারীরা আয়োজন করবেন।
বিশ্ব ইজতেমার মাঠ হস্তান্তর প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রথম পর্বের আয়োজনকারীরা তাদের আয়োজন শেষে ইজতেমার মাঠ বিভাগীয় কমিশনার ঢাকার নেতৃত্বে গঠিত বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতি সংক্রান্ত কমিটিকে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে বুঝিয়ে দেবেন। আর দ্বিতীয় পর্বের আয়োজনকারীরা ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ওই কমিটি থেকে ইজতেমার মাঠ বুঝে নেবেন এবং ইজতেমা শেষে ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কমিটির কাছে মাঠ হস্তান্তর করবেন।
বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সার্বিক কার্যক্রম তদারকি সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানা যায় বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এর আগে জানিয়েছিলেন যে বিশ্ব ইজতেমা এবার এক পর্বে আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত দুই পর্বেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব মুসলিমের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই জামাত।
আরও পড়ুন:রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিগত কয়েক বছর ধরে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে এবার সরকার বিশ্ব ইজতেমা একীভূতভাবে এক পর্বে আয়োজন করতে চাইছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ইজতেমা দুই ভাগ হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে মতেরও কিছুটা ভিন্নতা আছে। আমরা তাদের সঙ্গে বসব। কীভাবে বিশ্ব ইজতেমা একসঙ্গে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের (উভয় পক্ষ) কাছে অনুরোধ করব- আপনারা নিজেদের মধ্যে যে সমস্যা আছে সেটা যদি নিজেরাই সমাধান করতে পারেন তাহলে ভালো হয়। আর যদি নিজেরা সমাধান করতে না পারেন আমরা আপনাদের সঙ্গে বসব। কীভাবে দু’পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করে বিশ্ব ইজতেমা একটা করা যায় সেই চেষ্টা করব।’
প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামাতের অন্তর্বিরোধের কারণে গত কয়েক বছর ধরে দুই পর্বে হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। সবশেষ গত বছরও প্রথম পর্বে শুরায়ে নিজাম অনুসারী মুসল্লিরা এবং দ্বিতীয় পর্বে নিজামুদ্দিন অনুসারী মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন।
টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমা। দেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এই ইজতেমায় অংশ নেন। এছাড়া সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, কাতার, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের অসংখ্য মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নিতে আসেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য