আমাদের সিনিয়র ব্যাচের একজন ছিলেন যিনি একাডেমিতে থাকার সময় স্বনামধন্য কে-লাইন (K-Line) কোম্পানির স্কলারশিপ পরীক্ষা দিতে রাজি হননি। একাডেমির ইতিহাসে এমন নজির আছে কিনা আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে আমাদের সময়ে ডেক আর ইঞ্জিন ডিপার্টমেন্ট থেকে পাঁচ জন করে মোট ১০ জনকে স্কলারশিপ দেয়া হতো। দুই ডিপার্টমেন্টের প্রথম ১৫ জন করে মোট ৩০ জনকে চূড়ান্ত ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হতো। সিলেকশনের দিন সকালে কোম্পানির প্রতিনিধিরা ৩০ জনকে ব্রিফিং দেয়ার পর কারো কোনো প্রশ্ন আছে কিনা জিজ্ঞেস করেন।
বরিশাল ক্যাডেট কলেজের ‘কলেজ প্রিফেক্ট’ সেই জহির রায়হান স্যার তখন জিজ্ঞেস করেন, কে-লাইন কোম্পানির কন্টেইনার ছাড়াও অয়েল/কেমিক্যাল, গ্যাস ট্যাংকার আছে, সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে এসব ট্যাংকার ফ্লিটে যাওয়ার সুযোগ আছে কিনা।
প্রতিনিধিরা উত্তর দেন, একাডেমি থেকে বাছাই করা হচ্ছে কেবল কন্টেইনার জাহাজের জন্য, ট্যাংকার ফ্লিটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তখন স্যার জানিয়ে দেন, উনি ইন্টারভিউ দেবেন না, কারণ উনার ইচ্ছা ট্যাংকারে চাকরি করার।
এটা শুনে একাডেমির কমান্ড্যান্ট স্যার থেকে সবাই অবাক! স্যারের রেজাল্ট ভালো থাকায় স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি ছিল। অনেকেই তাকে বলেছিলেন, এত বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করা বোকামি, কে-লাইনের মতো কোম্পানিতে জয়েন করা মেরিনারদের কাছে স্বপ্নের মতো।
তবে এরপরেও তিনি ট্যাংকারে জয়েন করার ইচ্ছায় অবিচল থাকেন এবং কোনো স্কলারশিপ না নিয়েই একাডেমি থেকে বের হন। স্যার অবশ্য একাডেমিতে ‘চিফ রেগুলেটিং ক্যাডেট’ ছিলেন এবং তাদের ব্যাচের ‘বেস্ট ক্যাডেট’ নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার পান পাসিং আউটের সময়। উনি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে চূড়ান্ত মেধাতালিকায় চতুর্থ হয়েছিলেন।
স্যার কে-লাইন পরীক্ষায় অংশ নেননি শুনে তাদের ব্যাচের প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল, জহির নিশ্চিত ‘জ্যাকপার্টি’। তা না হলে একাডেমির যে স্কলারশিপের জন্য ক্যাডেটরা স্বপ্ন দেখেন. সেটা তিনি কীভাবে নিজ হাতে দূরে ঠেলে দিলেন! তবে সত্যিকার অর্থে স্যার ছিলেন স্বপ্নবান মানুষ, কোনো কিছুর বিনিময়ে তিনি নিজের স্বপ্নকে হাতছাড়া করতে চাননি।
পাসিং আউটের ছয় মাস পর স্যার কোনো ট্যাংকারে সুযোগ না পেয়ে বাংলাদেশি কোম্পানি ট্রান্সওশান শিপম্যানেজমেন্টের একটা বাল্ক ক্যারিয়ারে ইঞ্জিন ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন।
তখন একাডেমিক স্কলারশিপ প্রত্যাখ্যান করার জন্য তার আফসোস হয়েছিল কিনা জানি না। যা হোক, মিশর এঙ্করেজে থাকার সময়ে তিনি একদিন একটি গ্যাস ট্যাংকার দেখতে পেয়ে সঙ্গে থাকা ফিটার সাহেবের কাছে জানতে চান ওটা কিসের জাহাজ।
ফিটার সাহেব জানান, ওটা একটি গ্যাস ট্যাংকার আর সেখানে সব ইউরোপীয়ানরা চাকরি করেন। বাংলাদেশি অফিসাররা এ ধরনের জাহাজে নেই বললেই চলে। এটা শুনে স্যারের স্বপ্ন আরও তীব্র হয় এবং তিনি গ্যাস ট্যাংকারে জয়েন করতে লক্ষ্য স্থির করেন।
জহির রায়হান স্যার ‘বেসিক গ্যাস ট্যাংকার’ কোর্স করার জন্য কাউকে না পেয়ে একা পাঁচ জনের খরচ বহন করেছিলেন। ইন্সটিটিউট এরপর জানায়, গ্যাসের কোর্স করানোর জন্য কোনো ইন্সট্রাক্টর নেই, স্যার কাউকে ম্যানেজ করতে পারলে তাহলেই সম্ভব।
সৌভাগ্যক্রমে স্যারের পরিচিত একজন গ্যাস ট্যাংকার এক্সপেরিয়েন্সড সিনিয়র মেরিনার ছিলেন এবং স্যার অনেক অনুরোধ করে উনাকে ক্লাস নিতে রাজি করিয়েছিলেন। এরপর সিওসিতে গ্যাস ট্যাংকার এন্ডোর্সমেন্ট নিতে গিয়ে দেখেন গ্যাস ট্যাংকার এন্ডোর্সমেন্টের সিলই নাই ডিজিতে। এর কারণ, গ্যাস ট্যাংকারে বাংলাদেশিরা সেভাবে সেইল করেন না।
এরপর স্যারের অনুরোধে সপ্তাহখানেক পর নতুন সিল বানিয়ে ডিজি শিপিং থেকে এন্ডোর্স করা হয়। মানে, গ্যাস ট্যাংকারে জয়েন করার জন্য প্রতিটি পদে পদে স্যারকে নিজ উদ্যোগে সব করতে হয়েছে। প্রবল ইচ্ছাশক্তির জন্যই তিনি এতসব বাধা অতিক্রম করতে পেরেছিলেন।
জহির রায়হান স্যার সিওসি পাওয়ার পর গুগলে শুধু এলপিজি/এলএনজি কোম্পানি খুঁজে খুঁজে ই-মেইল পাঠাতেন। তবে আশানুরূপ কোনো রিপ্লাই আসছিল না। এরপর আবার বাধ্য হয়ে তিনি একটি বাল্ক ক্যারিয়ারে যোগ দেন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, পরে অনবোর্ড ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রমোশন পান।
জহির স্যারের কাজে মুগ্ধ হয়ে কোম্পানির সুপারিন্টেন্ডেন্ট তার পরিচিত অন্য একটি ট্যাংকার কোম্পানির সুপারিন্টেন্ডেন্টকে একটি সুযোগ দেয়ার অনুরোধ করেন। এরপর স্যার তার পরম কাঙ্ক্ষিত ট্যাংকারে জয়েন করার সুযোগ পান। সেখানে থাকার সময়েও উনি গ্যাস ট্যাংকারের টার্গেটে লেগে থাকেন এবং অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে একজন অত্যন্ত আন্তরিক সিনিয়রের প্রচেষ্টায় অবশেষে কাতার গ্যাস কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দেয়ার সুযোগ পান।
এসএসসিতে বরিশাল বোর্ডে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করা অত্যন্ত মেধাবী জহির স্যার ইন্টারভিউতে খুবই ভালো করেন এবং প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এলএনজি ফ্লিট কোম্পানি NAKILAT-এর জাহাজে যোগ দেন।
নাকিলাতে এর আগে কোনো বাংলাদেশি অফিসার ছিলেন না, তাই স্যার জয়েন করার এক মাস পরেই কোম্পানি থেকে তার পারফরম্যান্স জানতে চাওয়া হয় চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে। জহির স্যারের মতো রত্ন চিনতে চিফ ইঞ্জিনিয়ার ভুল করেননি। স্যারের পারফরম্যান্স এতটাই ভালো ছিল যে, ইন্ডিয়ান চিফ ইঞ্জিনিয়ার তাকে ‘এক্সেপশনালি ট্যালেন্টেড’ হিসেবে রিপোর্ট করেন।
জহির স্যার বাংলাদেশি অফিসারদের জন্য কাতার গ্যাসে একজন পাইওনিয়ার। তার একস্ট্রা অর্ডিনারি পারফরম্যান্সের জন্যই নাকিলাতে বাংলাদেশি মেরিনারদের জন্য দরজা উন্মুক্ত হয়।
কিছুদিন আগে আমার এক ক্লোজ ব্যাচমেট কথা প্রসঙ্গে বলেছিল, মেরিন লাইনে চেষ্টা করলে আর লেগে থাকলে সবই হয়। জহির স্যারের স্বপ্নপূরণের ঘটনাটি সেই কথারই উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
এ লেখাটি মূলত জহির স্যারের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাতে লিখেছি। উনি যে লড়াই করেছেন সেজন্য এই ধন্যবাদ তার প্রাপ্য।
জহির স্যারের মতো আরও অসংখ্য বাংলাদেশি মেরিনার আছেন, যারা এমন বহু নামি-দামি কোম্পানির দরজা খুলেছেন আমাদের জুনিয়রদের জন্য, আপনাদের প্রতিও অশেষ কৃতজ্ঞতা।
আপনাদের মতো মেরিনারদের সুনামের জন্যই আমরা জুনিয়ররা এখনও অনেক জায়গায় সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারছি।
এই লেখাটির আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, জুনিয়রদের স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করা। জহির স্যারের মতো তোমরাও নিজের স্বপ্ন আর ইচ্ছায় অবিচল থেকো। এর মানে এই নয়, সবাইকেই অয়েল/গ্যাস ট্যাংকারে জয়েন করতে হবে। কারও স্বপ্ন থাকতে পারে বিদেশি কোম্পানি, কারওবা ক্যারিয়ার, কারও কেমিক্যাল ট্যাংকার, কারও হয়তো কন্টেইনার।
যার যে স্বপ্নই আছে তা পুষে রাখো, পূরণ করতে অবিরাম চেষ্টা চালাতে থাকো, ইনশাআল্লাহ পজিটিভ কিছুই হবে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই ভালো কোম্পানি বা একাডেমিক স্কলারশিপ না পাওয়া মানেই সব শেষ- এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
মেরিন একাডেমিতে থাকার সময়ে সিনিয়ররা জিজ্ঞেস করতেন, ‘জুনিয়র্স! হু উইল প্রভাইড ইওর জব?’ আমরা তখন গলা ফাটিয়ে জবাব দিতাম, ‘অনারেবল সিনিয়র স্যার!
তখন মনে মনে ‘বুলশিট’ ভেবে হাসলেও এখন বুঝতে পারছি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আসলেই আমাদের পাওয়া বেশিরভাগ জব অনারেবল সিনিয়র স্যারদেরই দেয়া।
আমাদের মতো জুনিয়রদের জন্য নতুন নতুন পথ তৈরি করা প্রতিটি বাংলাদেশি মেরিনারের প্রতি হাজার সালাম আর অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা।
লেখক: এক্স-ক্যাডেট, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি (৪৭তম ব্যাচ)
আরও পড়ুন:সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২৩ এর তৃতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৯ মার্চ, শুক্রবার। এই ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের আবেদনকারীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আবেদনকারী প্রার্থীদের নিজ নিজ জেলায় ২৯ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, প্রার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত মোবাইল নম্বরে যথাসময়ে ০১৫৫২-১৪৬০৫৬ নম্বর থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোডের এসএমএস পাঠানো হবে।
তৃতীয় ধাপের এই পরীক্ষার জন্য প্রার্থীরা ২৩ মার্চ থেকে এসএসসির রোল, বোর্ড ও পাসের সন দিয়ে লগইন করে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে রঙিন প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
এছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীদেরকে অবশ্যই ডাউনলোডকৃত প্রবেশপত্রের রঙিন প্রিন্ট এবং নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (মূল এনআইডি/স্মার্ট কার্ড) সঙ্গে আনতে হবে। পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য প্রবেশপত্রে পাওয়া যাবে।
পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো বই, উত্তরপত্র, নোট বা অন্য কোনো কাগজপত্র, ক্যালকুলেটর, মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, পার্স, হাতঘড়ি বা ঘড়িজাতীয় বস্তু, ইলেক্ট্রনিক হাতঘড়ি বা যে কোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, কমিউনিকেটিভ ডিভাইস, জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) ব্যতীত কোনো ধরনের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড অথবা অন্য কোনো কার্ড বা এ জাতীয় বস্তু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা বা সঙ্গে রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কোনো পরীক্ষার্থী উল্লিখিত দ্রব্যাদি সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করলে তাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারসহ সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী বলেছেন, ‘শিক্ষার মান উন্নয়ন, সিলেবাস ও কারিকুলাম নিয়ে আমরা কাজ করছি। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী তিন মাসের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। শিক্ষক পদে যে শূন্যতা রয়েছে তা পূরণ করা হবে।
টাঙ্গাইলে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধনের আগে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেলের উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ‘টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী বলেন, ‘শিক্ষা নীতি নিয়ে আমারা কাজ করছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে আমাদের স্মার্ট নীতিমালা আনতে হবে। স্মার্ট কারিকুলাম লাগবে, স্মার্ট বাচ্চা তৈরি করতে হবে যারা ভবিষ্যতে যোগ্য নাগরিক হিসেবে তৈরি হবে। আমরা তথ্য-প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। সে লক্ষ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’
নতুন শিক্ষা নীতি প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যখন নতুন কোনো কিছু আসে তখন তার পক্ষ-বিপক্ষে অনেক কিছু আসে এবং কথাবার্তাও বেশি হয়। নতুন কিছুকে আমরা গ্রহণ করতে ভয় পাই। আমরা যদি জনগণকে বুঝাতে পারি এবং আপনারা যদি আমাদেরকে সাহায্য করেন তবে নিশ্চয়ই আমরা পারবো শিক্ষানীতিকে সম্পূর্ণ জায়গায় নিয়ে যেতে।’
সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ফরহাদ হোসেন, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ আর এম সোলাইমান, টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাফিসা আক্তার প্রমুখ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. খুরশীদ আলম ও প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমানকে ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এই দু’জনকে তিন বছরের জন্য ডেপুটি গভর্নর পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আদেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বর্তমান পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ ও অবসর-উত্তর ছুটি স্থগিতের শর্তে তাদের ডেপুটি গভর্নর পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যোগদানের তারিখ থেকে তাদের নিয়োগ কার্যকর হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নরের চারটি পদেই নিয়োগ দেয় সরকার। ২ ফেব্রুয়ারি একেএম সাজিদুর রহমান এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি আবু ফরাহ মোহাম্মদ নাসের অবসরে যাওয়ায় দুটি পদ শূন্য হয়। সেই শূন্য পদে এই দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হলো।
ডেপুটি গভর্নরের বাকি দুই পদে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী ছাইদুর রহমান ও নুরুন নাহার।
নতুন ডেপুটি গভর্নর খুরশীদ আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে পরে এমবিএ করেন। ১৯৮৮ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দেন তিনি। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে।
মো. হাবিবুর রহমানও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান। তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএইড) বৃত্তি নিয়ে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায়োগিক অর্থনীতিতে মাস্টার্স ও পিএইচডি করেছেন।
১৯৯০ সালে গবেষণা বিভাগের সহকারী পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন হাবিবুর রহমান। নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ এবং বর্তমানে মানিটারি পলিসি বিভাগে কাজ করেছেন তিনি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এ ধাপে খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় ২০ হাজার ৬৪৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় (www.mopme.gov.bd) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে (www.dpe.portal.gov.bd) পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীরা মোবাইলেও এসএমএস পাবেন।
গত ২ ফেব্রুয়ারি খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের ২২ জেলার ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ জন চাকরিপ্রত্যাশী পরীক্ষায় অংশ নেন।
উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার সময় পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তিন ধাপে পরীক্ষা হবে।
গত ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের (বরিশাল, সিলেট, রংপুর বিভাগ) লিখিত পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৭ জন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩৩৭ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
নওগাঁয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া জরিমানা করা হয়েছে দুজনকে।
শুক্রবার সকালে পরীক্ষা চলাকালে তাদের আটক করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা প্রশাসনের মিডিয়া সেলে এসব তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে মান্দা উপজেলার মমিন শাহানা সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে মিঠুন, সুলতান ও রবিউল ইসলাম নামে তিনজন চাকরিপ্রত্যাশীর কাছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়া যায়। এ অপরাধে মিঠুনকে ১ মাস, সুলতানকে ১ মাস এবং রবিউল ইসলামকে ১০ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই উপজেলার শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল কেন্দ্র থেকে আটক নাইমুর রহমান ও মোস্তাফিজুর বিন আমিনকে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
‘এ ছাড়া মান্দা থানা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আরও ৫ জনকে আটক করা হয়। যেখানে জারজিস আলমকে ১০ দিন, ফজলে রাব্বি মন্ডলকে ১ মাস, নুর আলমকে ৭ দিন, জামাল উদ্দিনকে ১০ দিন এবং আব্দুল্লাহ সাইরাফি ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড সাজা পেয়েছেন।’
কিনি আরও বলেন, ‘নওগাঁ সদর উপজেলার বশির উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ (বিএমসি) কেন্দ্রে দুজনকে ৫০০ টাকা করে মোট ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
‘সদর উপজেলার চক এনায়েত উচ্চ বিদ্যালয় এবং পাহাড়পুর জিএম হাইস্কুল কেন্দ্র করে ১ জন করে মোট দুজনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মহাদেবপুর উপজেলায় একজনকে দেয়া হয়েছে ১৫ দিনের কারাদণ্ড।’
অন্যদিকে, বদলগাছী উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দের পর তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:বিশ্বের ১৭৮টি দেশে কাজ করেন দেড় কোটি বাংলাদেশি। আর ২০১৫ সাল থেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন ৫ লাখ প্রবাসী। তাদের মধ্যে ২ লাখ প্রবাসী প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাকিদেরও প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য কাজ করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
‘বিদেশ প্রত্যাগত অভিবাসী কর্মীদের পুনরেকত্রীকরণে রেইজ প্রকল্পের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মঙ্গলবার এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রেইজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক যুগ্ম সচিব সৌরেন্দ্র নাথ সাহা।
ওয়েলফেয়ার সেন্টার কুমিল্লার উদ্যোগে আয়োজিত এ সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ওয়েলেফেয়ার সেন্টার কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. আলী হোসেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের প্রতিনিধি মো. আসাদুল ইসলাম।
জানা যায়, ওয়েলফেয়ার সেন্টারের রেইজ প্রকল্পের মাধ্যমে কুমিল্লা জেলায় ৭ হাজার ৩০০ প্রত্যাগত প্রবাসী এখান থেকে সুবিধা নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাদের মধ্য থেকে জনপ্রতি ১৩ হাজার ৫০০ টাকা প্রণোদনা হিসেবে এ পর্যন্ত ১৮৪ জনকে দেয়া হয়েছে।
সেমিনারে বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রত্যাগত প্রবাসী, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে ছেলেবন্ধুর হয়ে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন এক তরুণী। তৎক্ষণাৎ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর ইস্পাহানি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
দণ্ডিত ওই ছাত্রীর নাম প্রিয়তি জান্নাত। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরুর পর স্বাক্ষরপত্রে গরমিল দেখে দায়িত্বরত হল পরিদর্শকের সন্দেহ হয়। পরে ওই ছাত্রীকে আটক করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার জবানবন্দি ও পরিদর্শকের সাক্ষ্য নেন। পরীক্ষায় প্রক্সি দেয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলে সরকারি কর্ম কমিশন আইন-২০২৩-এর (১০) ধারা অনুযায়ী তাকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ওই ছাত্রী তার এক ছেলেবন্ধুর হয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। তিনি যেহেতু মেয়ে, তাই নিজের ছবি দিয়ে ভুয়া প্রবেশপত্রও তৈরি করেছিলেন। তবে হল পরিদর্শক স্বাক্ষর নেয়ার সময় দেখেন মেয়েটি ছেলের নামে স্বাক্ষর করেছেন। এতেই ধরা পড়েন তিনি।’
জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণী সব স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য