একটা সময় ছিল যখন বছর শেষ হতে না হতেই আমরা খোঁজ করতাম নতুন বছরের ক্যালেন্ডার। সে ক্যালেন্ডারে আঁকা থাকত নানা ধরনের দৃশ্যপট। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা রঙে সে ক্যালেন্ডার বাজারে ছাড়ত। শুধু ক্যালেন্ডার নয়, বই, খাতা থেকে শুরু করে নানান ধরনের কাজের একমাত্র ভরসা ছিল অ্যানালগ প্রিন্টিং।
সময়ের পরিক্রমায় প্রিন্টিংয়ের ধারণা পাল্টেছে। আগে একটা প্রিন্ট করাতে যেখানে ছুটতে হতো কমপক্ষে জেলা শহরে, সেখানে এখন চাইলে ঘরে বসেই যেকোনো কিছু প্রিন্ট করা যাচ্ছে। এমন সব সুবিধা নিয়ে প্রিন্টিং ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন এসএম আল মাহমুদ অনিক।
দেশে কয়েক দশকের প্রিন্টিংয়ের ইতিহাস হলেও তার ধারণা কিছুটা ব্যতিক্রম। দেশের প্রেক্ষপটে প্রিন্টিংয়ের ডিজিটালাইজেশন খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু বাধা থাকলেও তরুণ উদ্যোক্তা অনিক সেটা করছেন।
পড়ালেখা শেষ করে চাকরির খোঁজ না করে তিনি গড়ে তুলেছেন অনলাইন প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান ‘প্রিন্টএগ্রাফি’।
শুধু প্রিন্টিং নয়, পাশাপাশি প্যাকেজিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিওগ্রাফি ও ওয়েব ডিজাইনসহ অনলাইনভিত্তিক বেশ কিছু সেবা দিচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান।
অনিক জানান, ২০১৮ সালে তিনিসহ কয়েকজন তরুণ শুরু করেন প্রিন্টিং নিয়ে কাজ। সেটা পুরোটাই অনলাইনভিত্তিক। ধীরে ধীরে পরিসর বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমাদের নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমাদের দেশে এখনও প্রিন্টিংয়ের বিষয়টি কম্পিউটারাইজড বা ডিজিটাল হয়ে ওঠেনি। ফলে প্রথম দিকে গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’
সেসব সমস্যা নিজেদের মতো করে কাটিয়ে উঠছেন তারা। এখন প্রিন্টএগ্রাফিতে ২৩ তরুণ কাজ করছেন বলে জানান অনিক।
পথচলার তিন বছরের মধ্যেই অনিকের প্রিন্টএগ্রাফি দেশের টপ ব্র্যান্ডসহ সরকারি বেশ কিছু কাজ করে সফলতা পেয়েছে বলে জানান তিনি।
অনিক বলেন, ‘খুব ছোট পরিসরে কাজ শুরু করেছিলাম। এত অল্প সময়ে এত বেশি সাড়া পাব ভাবিনি। এখন আমরা শুধু দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই কাজ করছি না, আমাদের কাজ এখন যাচ্ছে বিদেশেও।’
এরই মধ্যে লন্ডনে বেশকিছু প্রিন্টিং পণ্য রপ্তানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনিক জানান, তারা ক্যালেন্ডার, নোট-প্যাড, খাম, প্যাকেজিং, ভিজিটিং কার্ডসহ প্রিন্টিয়ের যেকোনো পণ্য খুচরা ও পাইকারিভাবে ছাপানোর কাজ করেন। সেটা অর্ডার থেকে শুরু করে কাজ, সবই হয় অনলাইনে।
‘চাইলে ক্রেতারা নিজেরা ডিজাইন দিতে পারেন। যদি চান, আমরাও তাদের মতো করে ডিজাইন করে দিই। এ জন্য আমাদের রয়েছে গ্রাফিক্স ডিজাইনার।’
প্রিন্টএগ্রাফির কাজ লন্ডনেও যাচ্ছে বলে জানান অনিক। বলেন, ‘প্রিন্টিং কোনো কিছু যে রপ্তানি করা যায় সেটা আমরা জানতাম না। কিন্তু যখন প্রথম আমরা একটি অর্ডার পাই লন্ডন থেকে, সেই কাজটা করে তাদের পাঠাই। বিমানে করে দেশটিতে আমাদের প্রিন্টিংয়ের কাজ গেছে। তারপরও তাদের অনেক অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।’
ভবিষ্যতে বিদেশ থেকে যেন আরও কাজের অর্ডার আসে সে জন্য লন্ডনে একটি অফিস খুলেছে প্রিন্টএগ্রাফি।
উদ্যোক্তা হলেও সমাজসেবামূলক কাজও করেন অনিক। ‘চিলড্রেন'স হ্যাভেন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। যেখানে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের শিক্ষা ও পুনর্বাসনে সহযোগিতা করা হয়।
সারা দেশের মহাসড়কে রয়েছে ৮৮৩টি বিপজ্জনক বাঁক। তাতে এসব পয়েন্টে তৈরি হয়েছে মরণফাঁদ। এসব বাঁকে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছে বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও পথচারী।
মহাসড়কে বিগত ১০ বছরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এসব বিপজ্জনক বাঁক চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। বাঁকগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে মহাসড়কের ওই অংশ সোজা করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে।
তথ্যমতে, ৮৮৩টি বাঁকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬৪টি বাঁক রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের মাদারীপুর রিজিওনে। এই রিজিওনের আওতায় রয়েছে মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, বরিশাল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর ও নড়াইল।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে বগুড়া রিজিওনে। এই রিজিওনের আওতাধীন বগুড়া, পঞ্চগড়, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে ২৪৮টি।
এর বাইরে কুমিল্লা রিজিওনে ১৮১টি ও সিলেট রিজিওনে ১২৬টি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। এই মরণফাঁদ সবচেয়ে কম রয়েছে গাজীপুর রিজিওনে। এখানকার মহাসড়কে বিপজ্জনক বাঁকের সংখ্যা ৬৪টি।
হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দীন খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ঝুঁকি বিবেচনায় মহাসড়কের বাঁকগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি। সে অনুযায়ী কাজও হচ্ছে। এসব বাঁকে যে রেগুলার দুর্ঘটনা ঘটছে এমনটা নয়। তবে এই স্পটগুলোতে বাড়তি ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কোনোটাতে কম ঝুঁকি, কোনোটাতে বেশি।
তিনি জানান, দুর্ঘটনা কমানোর জন্য কিছু সড়কে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজ হয়েছে। আরিচা মহাসড়কে কাজ হয়েছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রোড প্রশস্ত করা এবং সার্ভিস লেন করার মাধ্যমে কাজ হয়েছে। এভাবে ঝুঁকি কমানোর কাজ চলছে।
তিনি বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পথচারী ও যানবাহনের চালকদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সচেতনতার পাশাপাশি মহাসড়ককে বাঁকমুক্ত করতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত গবেষকদের। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ও দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআরআই) সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘মহাসড়কের এসব বাঁক বছরের পর বছর ধরে আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বাঁক সোজা করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বাঁকই আগের মতোই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়ে গেছে। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হার বাড়ছে।
‘পাশাপাশি অনেক যানবাহনের ফিটনেস না থাকার পরও তারা মহাসড়কে বেপরোয়া। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই তদন্তে ফিটনেস ফেইলের তথ্য বেরিয়ে আসে।’
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, বরিশাল থেকে মহাসড়ক ধরে গৌরনদী পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে একজন চালককে অতিক্রম করতে হয় চারটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এসব বাঁকে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহনের অবস্থান চিহ্নিত করা যায় না। চালক যখন বুঝতে পারেন ততক্ষণে ঘটে যায় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। সারাদেশে এ ধরনের ৮৮৩টি বাঁক রয়েছে।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে নানামুখী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দুর্ঘটনাপ্রবণ বিপজ্জনক বাঁক চিহ্নিত করার কাজটিও করে থাকে হাইওয়ে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, বরিশাল থেকে ভুরঘাট পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার মহাসড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে অন্তত দুই ডজন। এর মধ্যে কাশিপুরের বন বিভাগ ও সমবায় ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তা, গড়িয়ারপাড়ের জননী পেট্রোল পাম্প ও কলাডেমা, ক্যাডেট কলেজ, রহমতপুর সেতুর ঢাল, বিমানবন্দর মোড়, দোয়ারিকা ব্রিজের ঢাল, জয়শ্রী, গৌরনদীর প্রবেশপথ, বামরাইল স্কুল সংলগ্ন, বাটাজোড়, আশুকাঠি, টরকি বাজার, কটকস্থল, বার্থি ও ভুরঘাটা সেতুর আগে বিপজ্জনক এসব বাঁক রয়েছে।
বিপজ্জনক বাঁকগুলোতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে অবৈধ যানবাহন। এসব যানবাহন মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলেও মনে করে হাইওয়ে পুলিশ। গত এক বছরে সড়কে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সবচেয়ে বেশি জরিমানা আদায় হয়েছে মাদারীপুর রিজিওনে। এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে কুমিল্লা, গাজীপুর, সিলেট ও বগুড়া রিজিওন।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (এইচ আর অ্যান্ড মিডিয়া) মো. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেয়া হয়েছে। বাঁকগুলো সম্পর্কে আশপাশ এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে। পাশাপাশি মহাসড়কে চলাচল করা যানবাহনের চালকদের নিয়েও সভা করা হয়েছে। সচেতনতামূলক কর্মসূচি এখনও পালন করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর মগবাজারে ফ্লাইওভারের ঢালে বাসের চাপায় এক শিক্ষানবিশ আইনজীবী নিহত হয়েছেন।
বুধবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে মগবাজারের ওয়ারলেস এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ২৫ বছর বয়সী আনিসুল হক সাকি কিশোরগঞ্জের বোলাই থানার আব্দুস সালামের ছেলে। উত্তরায় একটি মেসে থাকতেন তিনি।
হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদেরের বরাত দিয়ে নিহতের বোন জামাই আল আমিন বলেন, হাতিরঝিল এলাকার সোনালীবাগে বড় বোন ইশরাত জাহানের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন সাকি। পরে বাসা থেকে বের হয়ে মোটরসাইকলে চালিয়ে উত্তরা যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় পড়েন তিনি।
তিনি জানান, মগবাজার ওয়ারলেস ঢালে পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে আমার শ্যালক মারা যান। হাতিরঝিল থানার এসআই আব্দুল কাদের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
পটুয়াখালীর বাউফলে ছুরিকাঘাতে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক শিক্ষার্থী।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার সূর্য্যমনি ইউনিয়নের ইন্দ্রকূল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, ইন্দ্রকূল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হামলায় নিহত হয়েছেন দশম শ্রেণির ওই দুই ছাত্র।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন। তিনি জানান, মরদেহ শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে মর্গে রাখা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রাত সাড়ে ৭টার দিকে শেবাচিম হাসপাতালে মারা যায় দুই শিক্ষার্থী। নিহতরা হলো ১৬ বছর বয়সী নাফিস মোস্তফা আনসারী ও ১৫ বছরের মো. মারুফ হোসেন। হামলায় আহত হয়েছে ১৫ বছরের আরেক শিক্ষার্থী ফুজাযেল হোসেন সিয়াম।
আহত সিয়াম জানায়, ইন্দ্রকূল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল বুধবার। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিল সবাই। স্কুলের পাশে ব্রিজের ওপর আসলে গায়ে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে নবম শ্রেণির রায়হান, সৈকত, হাসিবুল এবং তাদের বন্ধু নাঈম (১) ও নাঈম (২) সহ আরও কয়েকজন মিলে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিস, মারুফ ও সিয়ামের ওপর ছুরিকাঘাত করে।
সিয়াম জানায়, এতে নাফিস ও মারুফ গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল শেবাচিমে পৌঁছার পর চিকিৎসারত অবস্থায় রাত সাড়ে ৭টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, ঘটনা শুনেছি। নাফিস ও মারুফ দুইজন শিক্ষার্থী বরিশাল হাসপাতালে মারা গেছে। আর সিয়াম বাউফল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক মিরাজুল ইসলাম জানান, নাফিস ও মারুফের পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাত থাকায় তাদেরকে বরিশালে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এ ছাড়া সিয়ামের উরুতেও ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল।
বাউফল থানার ওসি জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
‘রমজান মাস সামনে রেখে বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। এর ফলে দাম বৃদ্ধির কোনো আশঙ্কা নেই। এ বিষয়ে ভোক্তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বুধবার এসব কথা বলেছেন। এর আগে রাজধানীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে অধিদপ্তরের একটি দল।
অধিদপ্তরের পরিদর্শন দলটি সকাল ১১টায় নিউমার্কেট বনলতা কাঁচাবাজার, নিত্যপণ্য বিক্রয়কারী ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করে। মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান, এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ও সংশ্লিষ্ট বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ( প্রশিক্ষণ ও প্রচার) আতিয়া সুলতানা জানান, তদারকিকালে মাছ, মুরগি, চাল ও মুদি দোকানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। দেখা যায় ছোলা ও মসুর ডালের দাম নিম্নমুখী এবং অন্যান্য পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে।
ব্রয়লার মুরগির দামের ক্ষেত্রে কোনো অসঙ্গতি আছে কিনা তা যাচাইয়ে মুরগি কেনার ভাউচার দেখে যে দোকান থেকে কেনা করা হয়েছে সে দোকানে তাৎক্ষণিক তদারকির জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অপর একটি টিমকে নির্দেশনা দেন। রমজানে কোনোভাবেই যেন ব্রয়লার মুরগির দাম না বাড়ে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়।
তদারকিকালে ‘পণ্য কিনি প্রয়োজনে, মূল্য রাখি নিয়ন্ত্রণে’ এমন জনসচেতনতামূলক বার্তা দিয়ে ব্যবসায়ীদেরম মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
বাজার তদারকি কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে এফবিসিসিআই ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ সব বাজার কমিটি যৌথভাবে কাজ করবে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর মালিবাগ রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কা লেগেছে। এতে কারো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বুধবার রাত ৯টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেলপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে রেলে যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রেলক্রসিংয়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সোহাগ পরিবহনের বাসটিকে পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় ফেরা দ্রুতযান এক্সপ্রেস ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি পুরোপুরি রাস্তা থেকে সরে যায়।
ফরহাদ হোসেন জানান, বাসটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খিলগাঁও ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোহাগ পরিবহনের বাসটি বেনাপোল থেকে ঢাকায় ফিরছিল। সংঘর্ষের আগে যাত্রীরা নেমে যাওয়ায় বাসটি খালি ছিল। ফলে সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলি জানান, সোহাগ পরিবহনের বাসটি দ্রুতযান এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের সঙ্গে আটকে যায়। এতে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ধার কাজ শেষ হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
আরও পড়ুন:
ছাত্রলীগের যারা খারাপ ও কুকর্মে জড়িত তাদের সংগঠন থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘যারা খারাপ তাদের সংশোধন না করে বের করে দাও। যে কমিটি চাঁদাবাজি করে ওই কমিটির কোনো প্রয়োজন নেই।’
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছাত্রলীগের নামে কেউ অপকর্ম করলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু কয়েকদিন পর তা তুলেও নেয়া হয়। এদের শাস্তি হতে হবে স্থায়ী। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলে দিতে হবে।
‘অনেক দিনের পচা গলিত জিনিস এখনও রয়ে গেছে। এই অংশকে বাদ দিতে হবে। তাতে ছাত্রলীগের কোনো ক্ষতি হবে না। ভালো ছেলেমেয়ে থাকলে আরও অনেক ভালো ছেলেমেয়ে ছাত্রলীগে আকৃষ্ট হবে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘কোথাও কোথাও অনেকে লাগামছাড়া হয়ে গেছে। এদের লাগাম টেনে ধরতে হবে। কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। অপকর্মকারী স্মার্ট কর্মীর দরকার নেই। ভালো কাজের স্মার্টনেস দরকার। আবেগের নয় চেতনার সৈনিক হতে হবে।’
ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী অনেক আশা করে অনেক যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছেন। তোমরা তাকে হতাশ করো না। আমাদের আশার প্রদীপ যেন নিভে না যায়।’
পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘আমি আশা করি অনতিবিলম্বে কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে খারাপ ছেলেমেয়েদের আমাদের দরকার নেই। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক আর সিট বাণিজ্যের মানসিকতা যাদের আছে তারা যেই হোক পরিহার করতে হবে। অপকর্মে জড়িত কাউকে নেতা বানানো যাবে না।’
কাদের আরও বলেন, তোমাদের এই আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হলে ভালো হয়। একবার স্টেজ ভাঙছে দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেছে। ভয় পাওয়ার দরকার নেই। স্টেজ ভেঙে আমার দুই পা রক্তাক্ত। তখনও কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে পুনরায় বক্তব্য দিয়েছি। কাউকে বুঝতে দেয়নি যে আমার কোনো ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। পাঁচবার আমার ড্রেসিং করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধানমণ্ডি পার্টি অফিসে কেন ঘুরে বেড়াতে হবে? ছাত্রলীগের অফিস কি সভাপতির কার্যালয়ে? ছাত্রলীগের জায়গা ২৩ নম্বর আর মধুর ক্যান্টিনে।’
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য তারানা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শাওন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।
আরও পড়ুন:বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ফেরানো সম্ভব নয় তা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকেও জানিয়ে এসেছি।’
বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগ এই সভার আয়োজন করে।
বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘বড় বড় কথা ছাড়ুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত আর বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না। আজ আমরা আমেরিকার অ্যাম্বাসেডরকে বলে এসেছি, তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব নয়।’
কাদের বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলন ভেসে গেছে নীরব পদযাত্রায়। পদযাত্রা থেকে দাঁড়িয়ে গেছে মানববন্ধনে। এখন বিএনপির আন্দোলন চোরাবালিতে আটকে গেছে। সামনেও যায় না, পেছনেও যায় না। ডানেও যায় না, বামেও যায় না।
‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ‘কাদায় পড়া গরুর গাড়ি’র চিত্রকর্মের মতো। বিএনপির অবস্থাও কাদায় আটকে পড়া জয়নুলের গরুর গাড়ির মতোই। নড়েও না, চড়েও না।’
আওয়ামী লীগের এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার সাধ্য কারও নেই। ঘোষণার পাঠককে ঘোষক বানিয়ে বঙ্গবন্ধুকে খাটো করার চেষ্টা কম হয়নি। ঘোষণা আর পাঠ করা এক নয়। পাঠক কখনো ঘোষক নয়। এই বিভ্রান্তিও বাংলাদেশে সৃষ্টি করা হয়েছে।
‘১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণার বৈধ অধিকার জনগণের কাছ থেকে পেয়েছেন। এই অধিকার বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কারও নেই। এই বৈধ অধিকারবলেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনিই স্বাধীনতার ঘোষক।
‘পাঠক অনেকেই আছেন। সে সময় চট্টগ্রামের নেতারা ভেবেছিলেন, সামরিক বাহিনীর কাউকে দিয়ে ঘোষণাটি পাঠ করা গেলে জনগণ উজ্জীবিত হবে। সেজন্য জিয়াউর রহমানকে খুঁজে এনে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য