‘বন্ধু’। ছোট এ শব্দের মাঝে মিশে আছে যেন পৃথিবীর সব নির্ভরতা। বন্ধুত্ব মানেই জীবনের সবুজতম সম্পর্ক। বন্ধু মানে দুটি দেহের একটি প্রাণ। আরও সহজ করে বলতে গেলে আত্মার কাছাকাছি যে বাস করে, সেই বন্ধু। সুসময় কিংবা অসময়ের সঙ্গী। কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবাই বন্ধুত্বের কদর করেন। বলা হয়ে থাকে, যদি বন্ধু হও হাতটা বাড়াও। সেই হৃদয়ের আহবানে মিলেছে সব বন্ধুদের হাত। সত্যিকারার্থেই বন্ধুত্ব এক অদ্ভূত সম্পর্কের নাম। রক্তের হয়তো কোনো লেনদেন থাকে না এ ক্ষেত্রে, তবু সে সম্পর্কের চেয়েও বেশি আবেগের হয়ে ওঠে বন্ধুত্ব।
বন্ধু মানেই বিশেষ কিছু। বন্ধু মানে নির্ভরতা। বন্ধু মানে আনন্দ, প্রাণখুলে আড্ডা আর অম্লমধুর খুনসুটি। সবারই বন্ধু আছে আর বন্ধু থাকলেই দেখা হবে, কথা হবে, হবে অনাবিল আড্ডা। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ নিংড়ে, সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে যে জায়গায় কথা বলা যায়, তা হলো বন্ধু। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা নানা কাজে ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মধ্যেও মন চায় এই দিনটিতে বন্ধুর হাতে হাত রেখে হাঁটি, মন খুলে জমানো কথাগুলো খুলে বলি বন্ধুদের।
প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম রোববার সারা বিশ্বে বন্ধু দিবস পালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশেও এখন বন্ধু দিবস পালন হয়। কিন্তু এই বন্ধু দিবসেরও রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৯৩৫ সাল থেকেই বন্ধু দিবস পালনের প্রথা চলে আসছে আমেরিকাতে। জানা যায়, ১৯৩৫ সালে আমেরিকা সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। দিনটি ছিল আগস্ট মাসের প্রথম শনিবার। তার প্রতিবাদে পরের দিন ওই ব্যক্তির বন্ধুটি আত্মহত্যা করেন। এরপরই জীবনের নানা ক্ষেত্রে বন্ধুদের অবদান আর তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর লক্ষ্যেই আমেরিকার কংগ্রেস ১৯৩৫ সালে আগস্ট মাসের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
পৃথিবীর অসংখ্য দিবসের মাঝে রয়েছে বন্ধু দিবসও। বন্ধুত্বের গুরুত্ব নিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে ‘বন্ধু দিবস’। সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা। মানুষ স্বভাবতই আড্ডা ও বন্ধুপ্রিয়। পৃথিবীতে অল্পসংখ্যক লোক থাকতে পারে যারা আড্ডা পছন্দ করেন না। বন্ধুত্বের পরিপূরক সম্পর্কের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় যাপিত জীবনের রস। কর্মব্যস্ত যান্ত্রিক জীবনে বন্ধুত্বের স্বর্ণালি প্রহরগুলোকে আমরা ভুলতেই বসেছি।
প্রকৃত বন্ধু হলো সে যে অপর বন্ধুর দুঃখে সমব্যথী হয়, সুখকে সমানভাবে ভাগ করে নেয়। বন্ধুত্ব কোনো সূত্রের মাপকাটিতে মাপা যায় না। যে কথাগুলো গুরুজন বা পিতা-মাতাকে বলা যায় না, সে কথাগুলো আমরা প্রাণ খুলে বন্ধুর কাছে প্রকাশ করি। ভালো-লাগা, মন্দ-লাগা, সুখ-দুঃখের কথা বন্ধুর কাছে নির্ভয়ে মন খুলে বলা যায়। বন্ধুত্বের বন্ধনে কোনো স্বার্থ থাকে না। বন্ধুত্ব যতই পুরোনো হয়, ততই দৃঢ় হয়। জীবনের প্রয়োজনেই মানুষ বন্ধু খুঁজে নেয়। তবে এ কথাও ঠিক, সব বন্ধুর গুরুত্ব সমান হয় না। সত্যিকারের বন্ধুত্ব নিয়ে নানান মত থাকলেও একটি ব্যাপারে সবাই একমত- বন্ধু ছাড়া জীবন অসম্ভব।
একজন ভলো বন্ধু হচ্ছে জীবনের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়। ভাবনা, টেনশন, আবেগ, অনুরাগ সব কিছুই বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করা যায়। তুমি আমার পাশে বন্ধু হে একটু বসিয়া থাক...আসলেই এ গানের মতো করে বন্ধুর পাশে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করে দেয়া যায়, সময় কখন ফুরিয়ে যায় তা টেরই পাওয়া যায় না। বন্ধুত্বের অটুট বন্ধন। এ বন্ধন যেন থাকে চিরকাল। বন্ধুদের সঙ্গে আজ মন হারিয়েছে অজানায়। বলা হয়ে থাকে বন্ধু ছাড়া জীবন কখনোই পূর্ণতা পায় না। সেলফি এখন আমাদের জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ। তাই প্রিয় মানুষদের কাছে পেলে সেলফি তোলা চাই-ই চাই। বন্ধুত্বের মাপকাঠি নিচে নামতে নামতে এতটাই সংকীর্ণ এক কানাগলিতে এসে ঘুরপাক খাচ্ছে, যেখানে বন্ধুত্ব বলতে বোঝায় কেবলই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। বন্ধুত্বের এমন মধুর বন্ধন স্মৃতি থেকে যেন কখনোই হারিয়ে না যায়। বন্ধুত্বের সম্পর্ক দিয়েই সেজে উঠুক আগামীর পৃথিবী।
শৈশবে স্কুল ছুটি হলে অনেকেই গাঁয়ের বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে নদীতে ঝাঁপাঝাঁপি, বিকেল হলে লুকোচুরি, কানামাছি আর গোল্লাছুট খেলায় কাটিয়েছে। কলেজ জীবনে ক্যাম্পাস কিংবা করিডোরগুলোকে প্রতিদিনই মুখরিত করে রেখেছে নানান গুঞ্জনে। আধুনিকতার স্রোতে অনেকেই হারাতে বসেছেন প্রকৃত বন্ধুদের। বন্ধুত্ব এখন আটকে আছে কতিপয় অ্যাপসে। আজকের এই বন্ধু দিবসে শৈশবে খেলার ছলে বেড়ে ওঠা বন্ধুদের বেশ মনে পড়ছে। জীবিকার তাগিদে কর্মের সন্ধানে আজ কে কোথায়। শৈশবের অনেক বন্ধুই হারিয়ে গেছে। এমনি করেই শেষ হয়ে যায় বন্ধুত্ব।
আধুনিক যুগে বন্ধুত্ব ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে দূর তেপান্তরে। গোটা বিশ্ব হাতের মুঠোয় চলে এসেছে প্রযুক্তির কল্যাণে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ যোগাযোগ রাখতে পারছে বন্ধুর সঙ্গে। ফলে বন্ধুত্বের পরিধি আজ বিশ্বময়। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে বন্ধুত্বের ধরন পাল্টে গিয়েছে বহুলাংশে। যুগ পাল্টালেও বন্ধুত্বের বন্ধন আদি ও অকৃত্রিম। প্রকৃতির চিরন্তন নিয়মে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মানুষে-মানুষে, ছেলে-মেয়েতে, ছাত্র-শিক্ষকে, বাবা-মায়ে, পাড়া-প্রতিবেশীতে। জীবনের পথ পরিক্রমায় শৈশব, কৈশোর, ছাত্রজীবন, কর্মক্ষেত্রে, সংসার ও সমাজজীবনে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে অনেকের সাথে। প্রকৃত ও যোগ্য বন্ধু নির্বাচন একটি সঠিক সিদ্ধান্ত জীবনের জন্য প্রয়োজন। বন্ধু নির্বাচনে ভুল করলে জীবনে ছন্দপতন ঘটে। ছেলে-মেয়ে প্রত্যেকেরই উচিত সঠিক ও যোগ্য বন্ধু নির্বাচন করা। তবে কোনো বাঁধাধরা নিয়মে নয়, বন্ধুকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানাতে হলে তাকে বন্ধুত্বের রাখিবন্ধন করে রাখতে হবে।
সব থেকে বড় কথা, এই বন্ধুত্বের মাঝে মানুষ আশায় রঙিন স্বপ্ন দেখে। কখনো মারাত্মক হতাশ হয়ে নিরাশার পাহাড় মাথায় নিয়ে উল্টে পড়তে বসে। পালিয়ে বাঁচতে চায় জীবন থেকে। তখন বন্ধুত্ব আর বন্ধু শব্দটাই কেন যেন অসহ্য মনে হতে থাকে। তাই মনে হয় সব থেকে কঠিন হচ্ছে বন্ধুত্বের বিষয় আর মাত্রাজ্ঞান। স্কুলজীবনে ধীরে ধীরে এই বন্ধুত্বের মাত্রা পরিবর্তন হতে শুরু করে। কিন্তু লক্ষ করলে খুব অবাকই লাগে কেননা একসময় সবাই বন্ধুত্ব করতে চেষ্টা করেছে ক্লাসের প্রয়োজনে। ঠিক কিছুদিন পর স্কুলজীবনের শেষে ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আবার সেই স্কুলের মতো প্রয়োজনেই। কিন্তু সত্যি বলতে সেই বন্ধুত্ব বেশি দিন টেকেনি। আর বন্ধুত্বের লিঙ্গবৈষম্যের ক্ষেত্রে জটিলতাটা একটু মনে হয় বেশি। একটি ছেলে ও একটি মেয়ের বন্ধুত্ব খুব সুন্দরভাবে ততদিন ঠিকই এগিয়ে যায়, যতদিন তারা একে অপরের ওপর আস্থাশীল না হয়। বিষয়টি অবাক হওয়ার মতো হলেও সত্য। বিশেষ করে এখনকার সমাজে একটি ছেলে ও মেয়ে বন্ধু হতে পারে। কিছুদিন পর এই বন্ধুত্ব যখন আরও ঘনিষ্ঠতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, একসময় তা বর্ষকালের পরিপক্ব দোপাটি ফুলের মতো ফেটেছিটে যেতে সময় নেয় না।
সারা পৃথিবীতে দিবসটি নিয়ে মাতামাতি হলেও অনেক দেশ রয়েছে যেখানে বন্ধু দিবস হিসেবে কোনো আলাদা দিবস পালিত হয় না। তবে বন্ধুত্ব আর আড্ডা কেবল সময় নষ্ট আর বখাটেপনা নয়। এই বন্ধুত্ব হতে পারে নির্মল বিনোদনের উৎস। এই বন্ধুত্ব হতে পারে সৃষ্টিশীলতার সূতিকাগার। আর উন্নয়নের শপথ নিয়ে একুশ শতকের বিশ্বে এগিয়ে যেতে গেলে এ ধরনের বন্ধুত্বটা অনেক জরুরি। এখানে বয়স আর লিঙ্গগত সমতা আর চাহিদা থেকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে উদ্দেশ্য। উদ্দেশ্য যদি থাকে সৎ আর চিন্তাধারা যদি হয় সৃষ্টিশীল, তবে এই ধরনের বন্ধুত্ব নিজের দেশ ও দশের জন্য হবে মঙ্গলজনক। কিন্তু বিপরীত ধারায় চলতে গিয়ে সমাজের প্রচলিত রীতি ভাঙার কৃৎকৌশলে যদি কারও মূল চিন্তা হয়ে থাকে তবে তা ভিন্ন কথা। দিবস পালন হোক বা না হোক, বন্ধুত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হোক এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। সবাই হানাহানি আর বৈরিতা ভুলে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করুক এই হোক একুশ শতকের অঙ্গীকার।
ফেনীর ছাগলনাইয়ার যশপুর সীমান্তের মটুয়া এলাকা দিয়ে ১১ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিজিবি জানায়, গভীর রাতে ফেনী ব্যাটালিয়নের টহলদল ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুরের মটুয়া এলাকায় টহল দেওয়ার সময় শিশুসহ ১১ জন বাংলাদেশী নাগরিককে আটক করে। তাদের মধ্যে একজন পুরুষ, সাতজন মহিলা ও তিনজন শিশু আছে। বিজিবি আরো জানায়, বিএসএফ রাতের অন্ধকার ও বৈরী আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে আসে এবং সুকৌশলে বাংলাদেশে পুশইন করে। আটককৃতরা জানায়, তারা বাসা বাড়ির কাজ ও বিভিন্ন কাজের উদ্দেশে চোরাইপথে বিভিন্ন সময় দালালের মাধ্যমে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে।
আটককৃতদের থেকে প্রাপ্ত জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি সূত্রে জানা যায়, তারা সকলে বাংলাদেশের নাগরিক, তাদের বাড়ি ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরায়। বিজিবি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশী নাগরিক নিশ্চিত হয়ে আটককৃতদের ছাগলনাইয়া থানায় হস্তান্তরের করেছে।
আটককৃতরা হলেন: নড়াইল জেলার কালিয়া থানার যাদবপুর গ্রামের মৃত হাসান শেখের পুত্র মো. রাসেল হাসান শেখ (৩৩), একই গ্রামের মৃত আবু বক্কর এর মেয়ে শ্যামলী খাতুন (৩৫), একই জেলার নড়াইল থানার পলি ডাঙ্গা গ্রামের আজিজুল ফকিরের মেয়ে সোনালী খাতুন (৩২), যশোর থানার পেরুলিয়া গ্রামের রবিউল হকের স্ত্রী হোসনেয়ারা (৪০), একই জেলার নোয়াপাড়া থানার নওলী মোল্লা বাড়ি গ্রামের মৃত রৌশন মোল্লার মেয়ে সালমা (৪৫), এই গ্রামের মৃত রৌশন মোল্লার মেয়ে মিনা (৪২), সাতক্ষীরা কলারোয়া থানার কাতপুর গ্রামের মৃত আকবর আলী মন্ডলের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম (৬০), একই গ্রামের প্রীত আনোয়ারুল হকের স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪৫), পুত্র জিয়ারুল (১১), পুত্র তৌহিদুল (০৯), পুত্র ইসমাইল (০৭)।
বিজিবি আরো জানায়, এ ঘটনায় ৪ বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার কর্তৃক প্রতিপক্ষ বিএসএফ কোম্পানী কমান্ডারকে মৌখিক প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক কর্তৃক প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। পুশইন প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পোস্ট অফিস রোডের সরকারি বড়পুকুর পাড় ঘেঁষেই ছিল ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন হলে ওই দলীয় কার্যালয়ে বসে পানের হাট। বিভিন্ন সময়ে সাংগঠনিক অনুষ্ঠান ছাড়াও একসময় আওয়ামী লীগের এই কার্যালয়টিতে প্রতিনিয়ত দেখা যেতো দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণা। ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময়ে কার্যালয়টি ভাঙচুর করে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
এ অফিসটিতে দলীয় কার্যক্রমে একসময় জৌলসময় থাকলেও দেশের পট পরিবর্তন পরবর্তী এখন আর কোন কিছুই নেই। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বসানো হয়েছে পানের হাট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের পান চাষিরা পানের হাটে পান বিক্রি করতে এসেছেন। পাশাপাশি পান ক্রয় করতে হাজির হয়েছেন স্থানীয় পাইকারও। আড়তদার ও পাইকাররা দর দাম নিয়ে হাঁক-ডাক ও করছেন। উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, সকালে শুরু হওয়া এই হাটে প্রায় দুই ঘণ্টা বিকিকিনি হয়। বিক্রি শেষে আড়তদারকে শতকরা ১০ টাকা হারে টাকা দিতে হয় কৃষকদের।
পাটুলি এলাকার কাদের মিয়া বলেন, আগে এটি আওয়ামী লীগের অফিস ছিল, হাসিনা পালানোর পর থেকে এটি পরিত্যক্ত। তাই এখানে পানের হাট বসানো হয়েছে। সবাই এখানে পান নিয়ে আসে তাই আমরাও পান বিক্রি করতে নিয়ে আসছি। আলমগির ও সুজাৎ বলেন, এই পানের হাটে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শতাধিক পান চাষি ও পাইকাররা উপস্থিত হন। এই হাটে মুটামুটি বেশ ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। পান নিয়ে আসা কৃষক ও পাইকাররা জানান, এ পানের বাজারে আড়ৎদারির মাধ্যমে পান বিক্রি হয়। আর এ আড়তদারের দায়িত্বে রয়েছেন আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সরকারি ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায়ই খসে পড়ছে পলেস্তারা। দেয়ালের পলেস্তারে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অংসখ্য ফাটলের দাগ। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে থাকে। আর যেকোনো সময় মাথার ওপর ছাদ ধ্বসে পড়ার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন ৮ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। তবে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটার আগেই দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এলাকাবাসী, সেবা প্রার্থী ও উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার একটি ৩ তলা ভবনে উপজেলা হিসাব রক্ষক, মৎস্য, সমাজসেবা, মহিলা বিষয়ক, যুব উন্নয়ন, সমবায়, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস এই ৮টি দপ্তরের কার্যক্রম চলে আসছে। কিন্তু দীর্ঘ দিনের পুরাতন ভবনটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। ওই ভবনের ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় প্রায় ছোট-বড় পলেস্তার খসে পড়ছে। ফলে ছাদের রড ও ইটের সুরকি দেখা যাচ্ছে।
বিকল্প কোনো ভবন না থাকায় নিরুপায় হয়ে ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই সরকারি সেবা দিচ্ছেন বলে জানান অনেকে।
এদিকে, গত বুধবার বিকেলে এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপজেলা যুব উন্নয়ন দপ্তরের একটি অফিস কক্ষে হঠাৎ ছাদের বড় পলেস্তার খসে পড়ে সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জাহানারা খাতুনের টেবিল ও যন্ত্রপাতি ওপর। এতে টেবিলসহ কিছু আসবাবপত্রের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই খসে পড়া পলেস্তারের কিছু অংশ ছিটকে অফিস সহকারী তমিজুর রহমানের হাতে পড়ে। এ সময় তিনি ভবন ধ্বসে পড়ার আতঙ্কে দৌড়ে অফিস থেকে নিচে নেমে আসে। শুধু ওই অফিস সহকারী নয়, ওই ভবনের অন্যান্য দপ্তরের উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দৌড়ে নিচে নেমে যায়। এর আগেও ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ২য় দিনে তৃতীয় তলায় ছাদের পলেস্তার খসে সিড়ির ওপর পড়ে। এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে ওই ৮ দপ্তরের ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সরকারী সেবা দিচ্ছেন ও নিচ্ছেন। এছাড়াও পাশেই উপজেলা পরিষদের পরিত্যক্ত পুরাতন দ্বিতীয় তলা ভবন রয়েছে। ওই পুরাতন ভবনের কিছু অংশ কেটে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই ভবনের এক তলার ছাদ ও বিম খসে খসে পড়ছে। সে জরাজীর্ণ ভবনটিও যেকোনো সময় ধ্বসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিদিন প্রায় শত শত মানুষ উপজেলার ১৭টি দপ্তরে যাতায়াত করে থাকেন। চলাচলরত সেবা গ্রহীতাসহ অন্যান্য লোকজন যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন।
ওই উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস সহকারী বিএম তমিজুর রহমান বলেন, ‘ওইদিন হঠাৎ করেই আমাদের অফিসের ছাদের পলেস্তার একটি বড় অংশ খসে পড়ে। এর কিছু অংশ আমার হাতের ওপর পড়ে। অল্পর জন্য প্রাণে বেঁচে গেছি। পরে আমিসহ অন্যান্য দপ্তরের স্যাররাও আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে যাই।
সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী মুনসের আলী বলেন, ‘আমাদের অফিসের ভবনটি এখন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই ওই ভবনের ছাদ ও ভীমের বড় পলেস্তার খসে খসে পড়তে দেখা যায়।
সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, ‘ওইদিন বিকেলে অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমার টেবিলের ওপর ছাদের বড় প্লাস্টারের অংশ খসে পড়ে। এখনো আমার মাথার ওপর ছাদ ও দেওয়ালে আরো ফাটল আছে। আতঙ্কে আমার টেবিলে বসতে পারছি না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কিভাবে অফিস করবো? মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে শিগগিরই জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা উচিত।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বাছেদ জানান, আজকেই এখানে যোগদান করেছি। তবে খুব দ্রুতই খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহামেদ জানান, ছাদের পলেস্তার খসে পড়ার বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রমের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তবে ওই ভবনে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে যাতে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করেণ তার জন্য প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরগুনার আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া নামক স্থানে সোয়া ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গুলিশাখালী খালের ওপরে নির্মিত সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। মই বেয়ে ওঠতে হয় সেতুতে। যা রীতিমতো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী, কুকুয়া ও চাওড়া এই তিন ইউনিয়নের সংযোগস্থল আমড়াগাছিয়া বাজারের পশ্চিমপাশে গুলিশাখালী খালের ওপর ৬৬ মিটার দৈর্ঘ্য ৬.৭৭ মিটার প্রস্থের এই গার্ডার সেতু ৬ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ৩২৩ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের চুক্তি করে বরগুনা এলজিইডি। কাজটি পায় বরিশালের মেসার্স কহিনুর এন্টার প্রাইজ অ্যান্ড ত্রিপুরা জেভি নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের ১৯ মে কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জুনে নির্ধারিত সময়ের আগেই মূল সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। কিন্ত বিপত্তি দেখা দেয় সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে। সেতুর পশ্চিম পাশের সেতুর ঢালের ৫ ফুটের মাথায় রয়েছে পূর্ব খেকুয়ানি গ্রামের চলাচলের জন্য সড়ক। সেতুর ডিজাইন এবং উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক নির্মাণ করলে এই সড়কটি বন্ধ হয়ে যাবে এ নিয়ে দেখা দেয় বিপত্তি।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সেতু নির্মাণের ১১ মাস ধরে সংযোগ সড়ক ছাড়া এভাবে পরে আছে। এতে তিন ইউনিয়নের ২০ গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পড়েছে ভোগান্তিতে। যাতায়াতের জন্য স্থানীয়রা সেতুর পশ্চিম পারে কাঠ ও বাঁশের মই বানিয়ে কোনো রকমে যাতায়াতের উপযোগী করে চলাচল করছে। এই মই বেয়ে বয়স্ক ও শিশুরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কোনো ধরনের যানবাহন সেতুতে ওঠতে না পারায় পণ্য পরিবহনে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। পণ্য পরিবহন করতে দশ কি. মি. ঘুরে মহিষকাটা সেতু পাড় হয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এতে ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুটি গুলিশাখালী, চাওড়া ও কুকুয়া এই তিন ইউনিয়নের সংযোগস্থল । এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নের পূর্ব খেকুয়ানী, গুলিশাখালী, ডালাচারা, বাইবুনিয়া, কলাগাছিয়া গ্রামের শত শত মানুষ আমতলী সদর, বরিশাল, ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করে। চাওড়া ও কুকুয়া ইউনিয়নের মানুষও এই সেতু পার হয়ে গুলিশাখালী ইউনিয়নে যাতায়াত করেন। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় আমাদের চলাচলে অনেক কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন, রোগী আনা-নেওয়ায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। মরদেহ আনা-নেওয়ায়ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দ্রুতই সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে যাতায়াতের সুব্যবস্থার দাবি করছেন এলাকাবাসী । ঠিকাদার মো. কাওছার মিয়া বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই মূল সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করেছি। সংযোগ সড়কের জন্য আলাদা দরপত্র হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে তারাই কাজ করবে। এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, সেতুর উচ্চতা অনুযায়ী সংযোগ সড়ক তৈরি করতে গেলে পাশের একটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে বিকল্প হিসেবে সেখানে আন্ডারপাস নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে যাতে মূল সড়কটি ঠিক থাকে। এতে ব্যয় কিছুটা বাড়বে। এ লক্ষ্যে নতুন করে নকশা ও বাজেট তৈরি করে প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলেই দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
লিবিয়া থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করা আরও ১২৩ অনিবন্ধিত বাংলাদেশি নাগরিককে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব বাংলাদেশির সবাই বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে (ইউজেড ০২২২) সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
উল্লেখ্য, প্রত্যাগতদের অধিকাংশই মানবপাচারের শিকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সমন্বিত উদ্যোগে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমটি বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশে ফেরার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম-এর প্রতিনিধিরা তাদের স্বাগত জানান ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিকাংশ বাংলাদেশি সমুদ্রপথে ইউরোপে পৌঁছানোর উদ্দেশে অনিবন্ধিতভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। লিবিয়ায় অবস্থানকালে তাদের অনেকেই মানব পাচারকারীদের দ্বারা অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হন।
সরকারি কর্মকর্তারা এসব অভিবাসীকে পরামর্শ দেন, যেন তারা অন্যদের এই ধরনের বিপজ্জনক ও অবৈধ পথে বিদেশ গমনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেন এবং ভবিষ্যতে এমন যাত্রা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।
পুনর্বাসন সহায়তার অংশ হিসেবে আইওএম প্রত্যেককে নগদ ৬ হাজার টাকা, জরুরি খাদ্য সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা এবং প্রয়োজনে অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আটক থাকা অন্যান্য বাংলাদেশির নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কাজ চলছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইওএম যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গম পাহাড়ে বিরল প্রজাতির গোলাপি রঙের নতুন হাতির বাচ্চা দেখা গেছে। দেশে প্রথমবারের মতো রাঙ্গামাটির পাহাড়ে দেখতে পাওয়া বিরল এই গোলাপি হাতির বাচ্চাটির বয়স দুই সপ্তাহের একটু বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জেলার বরকল উপজেলার সুভলংয়ের বরুনাছড়ি ইউনিয়নের ফরেস্টের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) এর প্রধান সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এর আগে গোলাপি রঙের হাতির দেখা পাওয়া যায়নি। এটা বাংলাদেশের প্রাণিজগতে হাতির প্রথম বিস্ময়কর ঘটনা হতে পারে। রাঙ্গামাটি শহর থেকে এক থেকে দেড় ঘণ্টায় স্পিডবোটে করে ঘটনাস্থলে যাওয়া যায়। সাধারণ বোটে হলে সময় আরো একটু বেশি লাগতে পারে।
জেলার বরকল উপজেলার বরুনাছড়ি ইউনিয়নে দুর্গম পাহাড়ে হাতির অবস্থান সম্পর্কে মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনিই প্রথম দেখতে পান একটি হাতির পাল গোলাপি রঙের হাতি শাবকসহ বরুনাছড়ি এলাকায় কাপ্তাই হ্রদ পার হতে । পরে জাহাঙ্গীর আলম সঙ্গে সঙ্গে সেই দৃশ্যটির ভিডিও ধারণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিমকে পাঠান। তিনি সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
তিনি জানান, বর্তমানে বরুনাছড়িতে হাতির নতুন গোলাপি বাচ্চাসহ দুটি হাতির শাবক এবং আরো ৬টি হাতিসহ সর্বমোট ৮টি হাতি রয়েছে। এর মধ্যে নতুন গোলাপি বাচ্চাসহ ৫টি একটি দলে, ২টি হাতি একসাথে এবং আরো একটি বড় হাতি সেখানে অবস্থান করছে। সরজমিনে দেখা যায়, সদ্য জন্ম নেয়া হাতির ছোট শাবকটি গোলাপি রঙের। সাধারণত বাচ্চা হাতির সারা গায়ের লোম কালো হলেও নতুন বাচ্চার গায়ের রং অনেকটাই গোলাপি এবং কিছুটা ব্যতিক্রম এই গোলাপি শাবক।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি সার্কেলের বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, পাহাড়ে হাতি সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগ ছাড়াও ফরেস্ট বিভাগের দায়িত্বরত ব্যক্তির পাশাপাশি আরো একটি ইআরটি রয়েছে। তারা সব সময় পাহাড়ে থাকা হাতির সমস্যাসহ নানা বিষয় তদারক করে। আমরা এই টিমের মাধ্যমেই গত ১৩ জুন গোলাপি রঙের হাতির নতুন শাবকের কথা জানতে পারি। খবর পেয়ে আমরা বন বিভাগের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
তিনি বলেন, ‘নতুন এই বিস্ময়কর গোলাপি রঙের হাতির দিকে বন বিভাগ নজর রাখছে।’
হাতির বাচ্চাটির গায়ের রং গোলাপি হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বলেন, নিউট্রিশনজনিত কারণেও হাতির বাচ্চার রং এরকম পরিবর্তন হতে পারে। এটি একটি গবেষণার বিষয় এবং এটা নিশ্চিত করতে একটু সময় লাগবে।
বরুণাছড়ির ঘটনাস্থলেই দেখা হয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খানের সঙ্গে। তিনি হাতির বাচ্চার গোলাপি রঙের বিষয়ে বলেন, সাধারণত হাতির গায়ের রং কালচে ধরনের হয়ে থাকে।
হাতির চামড়ায় যে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয় তা যদি কোন অস্বাভাবিকতার কারণে তৈরি হতে না পারে সেটি কিছুটা ফ্যাকাসে বা গোলাপি রং ধারণ করে। এই নতুন হাতি শাবকটির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা এবং স্বাভাবিক অবস্থায় এটি হয় না।
তিনি বলেন, ‘হাতির জিনগত কোন অস্বাভাবিকতার কারণে অনেক সময় হাতির গায়ের রঙের ভিন্নতা আসে এবং এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’
অধ্যাপক এম মনিরুল এইচ খান বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ডসহ পুরো অঞ্চলে এশীয় হাতির রং এরকম গোলাপি হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল। রাজাদের শাসনামলে এ ধরনের বিরল সাদাটে বা গোলাপি হাতিগুলো রাজাদের কাছে খুবই কদরের ছিল। রাজারা তাদের হাতিশালায় এসব হাতি শখ করে পুষতেন এবং হাতিগুলোকে তাদের বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করতেন। তিনি এরকম বিরল হাতি সংরক্ষণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে যথাযথ ভূমিকা পালনের সুপারিশ করেন।
তিনি বলেন, পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সব অঞ্চলে বন্য হাতি আছে সে সব অঞ্চলের প্রায় বনাঞ্চলই দখল হয়ে বসতি, বাজারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো গড়ে উঠছে। ক্রমেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে হাতির আবাসস্থলসহ পাহাড়ের বনাঞ্চল। এ কারণে এক সময় হাতির নিরাপদ আবাসভূমি এখন তাদের জন্য বিপদসংকুল হয়ে উঠেছে। বর্তমানে পাহাড়ে হাতি আর মানুষ অনেকটা একসঙ্গেই বসবাস করছে। যার কারণে হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্ব অনেকটাই বেড়ে চলেছে এবং যার অনেক আলামত আমরা চারপাশেই দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বিরল প্রাণীর অভয়ারণ্য তৈরির জন্য সরকারি বনভূমি সংরক্ষণ করে সেখানে প্রাকৃতিকভাবে স্থানীয় উদ্ভিদ বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টেশন বা স্থানীয় যে সব উদ্ভিদ প্রজাতি ও বৃক্ষ প্রজাতি আছে সেগুলো বন বিভাগের মাধ্যমে রোপণ ও সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করতে হবে।
পাহাড়ের প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকাতে গোলাপি হাতিটি দেখতে এখন প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছে গবেষকসহ উৎসুক জনগণ। হাতির বাচ্চাটি ছোট থাকায় মা হাতিসহ অন্য হাতিরা তাকে হাতির শুড়ের ওপর করেও কাপ্তাই লেক পাড় হতে দেখেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্তমানে যে টিলাতে হাতিগুলো অবস্থান করছে হাতির গোলাপি শাবকটি বড় না হওয়া পর্যন্ত এই বুনো হাতির দল সেখানেই অবস্থান করতে পারে বলে ধারণা করছেন ইআরটির সদস্যরা।
তবে পাহাড়ে বিরল প্রজাতির এই গোলাপি হাতির বাচ্চাসহ পুরো হাতির দলকে নিরাপদে রাখতে সেখানে মানুষের অবাধ বিচরণকে নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তা না হলে যেকোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসহ হাতির আক্রমণের শিকার হতে পারে মানুষ। তাই পুরো এলাকাটি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করাটা অনেক জরুরি।
সূত্র: বাসস
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই গুম করা হতো বলে জানিয়েছেন গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সভাপতি এসব তথ্য জানান। কমিশনে দাখিল করা অভিযোগ বিশ্লেষণে এসব তথ্য দেন তিনি।
তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সম্ভাব্য যে ৪ ধরনের পরিণতি হয়েছে, তা হলো: ১. গুমের শিকার ব্যক্তিকে হত্যা করা। ২. বিচারের আগেই মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করে জঙ্গি তকমা দিয়ে বাংলাদেশেই বিচারাধীন বা নতুন ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতার দেখানো।৩. তাকে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। ৪. ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে, অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দেওয়া।
গুম কমিশনের ২য় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন গত ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়ার পর আজ দুপুরে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মইনুল ইসলাম চৌধুরী এ সব কথা বলেন।
গুম কমিশনের সভাপতি বলেন, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত দমননীতির অংশ হিসেবে গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরেও বহু অপরাধী ও তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকায় অনেক জোরালো প্রমাণ ও নিদর্শন ধ্বংস, অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানারকম ভীতিকর ও আতঙ্কজনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবুও বহু ভুক্তভোগী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিস্তারিতভাবে সে কাহিনি তুলে ধরেছেন।
গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সভাপতি আরো বলেন, বিগত সরকারের শাসনামলে গুম একটি সুশৃঙ্খল ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপে ‘জঙ্গিবাদবিরোধী’ অভিযানের ছায়াতলে ইসলামি উগ্রবাদের হুমকিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন ও শাসন দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশে পরিচালিত হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন- মেধাবী শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক থেকে সাধারণ জনগণ।
মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ প্রক্রিয়ায় তারা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে অস্ত্র বানিয়েছিল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন করে এবং নির্যাতন ও গোপন আটকের সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করেছিল। এমনকি সাধারণ নাগরিকদের বেআইনি পন্থায় বারবার ভারতীয় বাহিনীর হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল।
কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিলকৃত ১৩১টি অভিযোগের বিষয়ে আইন মোতাবেক জিডি রেকর্ডপূর্বক ভিকটিমদের সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গোপন আটক কেন্দ্রের অস্তিত্ব এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সকল ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা প্রায় একই ধরনের প্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। পদ্ধতিগত নির্যাতন, সন্ত্রাসী হিসেবে প্রচার, একই ধরনের আইন অনুযায়ী অভিযোগ দায়ের ও একই ধরনের ভাষায় বর্ণনা। বিভিন্ন পটভূমি থেকে আসা ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতার এই সামঞ্জস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে ১৯ শতাংশ ফেরত না আসা ১২ জন ভিকটিমের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেছি, যাদের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান সম্পন্ন হয়েছে। তাদের গুমের জন্য কারা দায়ী, তা প্রাথমিকভাবে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। চলমান অনুসন্ধানের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ফিরে না আসা ভিকটিমদের বিষয়ে অপরাধী ও গুমের অপরাধ সংঘটনের স্থানসহ নানাবিধ বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি বা পুরোনো কললিস্ট না পাওয়াসহ নানারকম বিলম্বঘটিত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হলেও কমিশন আন্তরিকতার সঙ্গে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনে কমিশন সন্ত্রাসবিরোধী যে সব মামলায় অপব্যবহার হয়েছে, তা ন্যায় বিচারের মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো উপযুক্ত কাউন্টার টেরোরিজম মেথড বের করার জন্য দুটি সুপারিশ করা হয়।
এ সময় গুম সংক্রান্ত কমিশন অফ ইনকোয়ারির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস, মানবাধিকার কর্মী ও কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য