রাজধানীর হলি ক্রস কলেজের শিক্ষার্থী সোফিয়া মুন্সী। একাদশ শ্রেণির সোফিয়া করোনার কারণে প্রায় ঘরবন্দি। তবে তার পড়ালেখা থেমে নেই; আছে কলেজ এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগও। প্রতিদিনই নিয়ম করে অনলাইন ক্লাস করে। তাকে শুধু মানতে হচ্ছে করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি।
সোফিয়া মুন্সীর মতো আরও অনেক শিক্ষার্থীই বর্তমানে এমন সময় পার করছে। এক কথায় বলতে গেলে, মহামারির এই সময়ে তাদের শিক্ষাজীবন আসলেই থেমে নেই; যা সম্ভব হয়েছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর কল্যাণে।
যেখানে ২০০৮ সালে যে বাংলাদেশ ছিল, তাতে করোনা মহামারির মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত সোফিয়াদের মতো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর প্রযুক্তির যে বিকাশ হয়েছে, তার সুবিধা নিয়ে নতুন নতুন পরিস্থিতি সহজেই মোকাবিলা করতে পারছে নতুন প্রজন্মসহ দেশের প্রায় সব বয়সী মানুষই।
সোফিয়ারা যদি প্রযুক্তিবান্ধব হয়ে বড় না হতো, তাহলে মহামারির এই সময় শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে কোনোভাবেই তাদের যুক্ত রাখা যেত না।
শুধু অনলাইন ক্লাসই নয়, এখন স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ভর্তির আবেদন অনলাইনে করা যাচ্ছে। সোফিয়ার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য সশরীরে কোথাও যেতে হয়নি। ঘরে বসেই ভর্তি হতে পেরেছে।
গত এক যুগে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে যেন বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশে। পরিবর্তন এসেছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবা খাতসহ তরুণদের নানা উদ্যোগ আর প্রচেষ্টায়। এখন মানুষ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৬০ লাখ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এ সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার।
করোনা মহামারির কারণে মানুষের ইন্টারনেট নির্ভরতা বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে লকডাউন শুরুর পর থেকে। অনেক মানুষ ঘরে বসেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করেছে, করছে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে। স্বাস্থ্যসেবাও নিচ্ছে অনলাইনে। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ডাক্তারি পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে।
শিল্পী সাহা এক জন ডায়াবেটিস রোগী। প্রতি মাসেই ডাক্তারের পরামর্শের প্রয়োজন তার। কিন্তু লকডাউনের সময় ঘর থেকে বের হওয়া সহজ ছিল না তার জন্য। টেলিমেডিসিন সেবা নিয়ে এখন ভালোই আছেন।
বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত গতি পেতে শুরু করে ২০১৩ সালে। সে বছর দুটি ঘটনা ঘটেছিল। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক কেনাকাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই বছর দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো দ্রুতগতির তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (থ্রিজি) চালু করে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা একটি দেশের ই-কমার্স খাতের অবস্থান নির্ণয়ের প্রধান সূচক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে এখন চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (ফোরজি) চালু রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে প্রায় ১১ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যা বাংলাদেশের ই-কমার্সকে এনে দিয়েছে গতি। প্রতি মাসেই আসছে নতুন নতুন উদ্যোগের ওয়েবসাইট।
যদিও ই-কমার্সের ক্রেতারা মূলত শহরকেন্দ্রিক। ৮০% ক্রেতা ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের। এদের মধ্যে ৩৫% ঢাকার, ২৯% চট্টগ্রামের এবং ১৫% গাজীপুরের অধিবাসী। নারায়ণগঞ্জ ও সিলেট শহরে আছে প্রায় ২০ শতাংশ ক্রেতা। ৭৫% ই-কমার্স ব্যবহারকারীর বয়স ১৮-৩৪ বছরের মধ্যে।
আলু-পটলও যে অনলাইনে কেনা যায়, তা এই করোনাকাল শিখিয়েছে দেশের মানুষকে। বিশেষ করে রাজধানীবাসীকে। এখন অনেকেই অনলাইনে কাঁচাবাজার সারছেন, ওষুধ কিনছেন। অনলাইনে ইলেকট্রনিকস পণ্য, পোশাক, গৃহস্থালির বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার প্রবণতা শুরু হয়েছে অনেক আগেই।
যারা এতদিন গরুর হাটে গিয়ে শিং দেখে, দাঁত দেখে, সঙ্গে দু-একটা গুঁতো খেয়ে গরু কিনতে অভ্যস্ত ছিলেন, তাদের একটা বড় অংশ এবারের ঈদে অনলাইনে গরু কিনে খুশি ছিলেন।
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের হিসাব অনুযায়ী, বছরে বিক্রি হচ্ছে আট হাজার কোটি টাকার পণ্য। এর বাইরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছোটখাটো ব্যবসা করছেন অনেকেই।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকার যে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করেছিল, সেই ঘোষণার আলোকে এরই মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়েও ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে।
মোবাইলে মানি ট্রান্সফার, বিমানের টিকিট সংগ্রহ করা যাচ্ছে। টেন্ডারে অংশ নেয়া যাচ্ছে অনলাইনে। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসব সেবা বহু মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও মানুষ দ্রুততম সময়ে মোবাইলে টাকা পাঠাতে পারছে। যেখানে ২০০৮ সালে দেশের অধিকাংশ মানুষ অপেক্ষায় থাকত বিদ্যুৎ আসবে কখন। শহরের মানুষও বিরক্ত ছিল লোডশেডিং নিয়ে।
সরকারি সব দরপত্র এখন ই-টেন্ডারের মাধ্যমে পাওয়া যায়। দ্রুততম সময়ে কাজ পাওয়া যাচ্ছে। কাজ বাস্তবায়ন নিয়ে যে ঢিমেতাল ছিল তাও কেটে গেছে অনেকটা।
২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে আয় ১০০ কোটি ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ এই আয় ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্রামের মানুষও যাতে প্রযুক্তিনির্ভর কাজে যুক্ত থাকতে পারে সে জন্য দেশব্যাপী ২৮টি হাইটেক পার্ক করা হচ্ছে। যেখানে ফাইভজি প্রযুক্তির হাত ধরেই আসবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিকস ও বিগ ডাটা অ্যানালাইসিসের মতো নানা কাজ। দেশে ব্লকচেইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেবা নিয়ে কাজ করছে কিছু প্রতিষ্ঠান।
তাদের তৈরি ইআরপি সফটওয়্যার মাদাগাস্কার, ফিজি ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে ব্যবহার হচ্ছে। তারা থাইল্যান্ডের জন্য ব্লকচেইনের মতো প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছে। এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী এক দশক রাজত্ব করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশে আইসিটি খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিসের সদস্য এখন এক হাজার ৩০০টির বেশি। এর মধ্যে ৬০টি কোম্পানির শেয়ার রয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের।
তবে দেশের সব কার্যক্রম ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় সাইবার সিকিউরিটির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটাল সব সেবাকে সঠিক নিরাপত্তা দেয়া না গেলে হুমকির মুখে পড়তে হতে পারে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সম্প্রতি জানিয়েছেন, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস প্রোভাইডিং হাব হবে বাংলাদেশ। আর এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে তরুণ মেধাবীদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে নেয়া হবে নানা পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ ডিজিটাল কার্যক্রমের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করছে। সরকার প্রায় দেড় হাজার সেবা অনলাইনে নিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় সাইবার সিকিউরিটি অত্যন্ত জরুরি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইসিটি বিভাগ কাজ করছে। দেশের ব্যাংকিং, হেলথ, সিভিল এভিয়েশনসহ নানা খাতে নিরাপত্তা জোরদারে ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি কাজ করছে।
পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে এক হাজার সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট তৈরি করা হবে। এতে সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান, দেশে বসেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে তরুণরা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বৃহস্পতিবার সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের কোয়ার্টার গার্ড পরিদর্শন শেষে বিজিবি কার্যালয় পরিদর্শন করেন। দুপুরে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া প্রতিবেশী দেশটির জান্তা বাহিনীর সদস্যদের খোঁজখবর নেন তিনি।
পরে তিনি ১১ বিজিবির অধীন চাকঢালা বিওপি (বর্ডার অবজারবেশন পোস্ট) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমার থেকে জান্তা বাহিনীর সদস্যদের পালিয়ে আসার স্পটগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। সীমান্তে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেন।
পরিদর্শনকালে বিজিবি মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার রিজিয়ন কমন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলমসহ বিজিবি রামুর সেক্টর ও অধীনস্ত বিজিবি ব্যাটালিয়নে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি’র জোন কমন্ডার ও অধিনায়ক লে. কর্নেল সাহল আহমদ এসিসহ বিজিবির কর্মকর্তারা।
বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। রুমা থানার দুটি মামলায় বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এক নারীকে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদসহ মামলায় ৫৭জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বান্দরবান সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নাজমুল হোছাইন বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে একাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবীরা জানান, রুমা থানার জিআর মামলা নং- ৪ ও ৭ মামলায় পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ৫৩জনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এর মধ্যে ৫২জনকে দু’দিন করে রিমান্ড এবং একজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয়।
এর আগে বান্দরবান জেলা কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তায় ১৮জন নারী ও ৩৯জন পুরুষ বন্দিকে দুটি গাড়িতে করে আদালতে হাজির করা হয়। সম্প্রতি বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে লুটের ঘটনায় তাদেরকে রুমা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বান্দরবানে চলমান যৌথ অভিযানে সন্দেহভাজন আরও একজনকে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৬জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচন বিরোধী অবস্থান নেয়ায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগকেও কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করতে হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দিচ্ছে না। দল ও দলের বাইরে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যাতে নির্বাচিত হয় সেটাই আওয়ামী লীগ প্রত্যাশা করে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতারা যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেজন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম ধাপের নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের জনগণ যখন নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে বিএনপি নেতারা তখন বরাবরের ন্যায় দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচনি ব্যবস্থাকে বাধ্যগ্রন্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে চায়। বিপরীতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে নিরন্তন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে।
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী অপতৎপরতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন ও সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন ।
ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টে বিএনপি লাগাতারভাবে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ও অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে গণতন্ত্র ও নির্বাচন বানচালের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছিল বিএনপি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইতোপূর্বে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি সারাদেশে ভয়াবহ অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে শত শত নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল। তাদের এই ভয়াবহ সম্মিলিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই বিএনপি নেতারা বিরোধী দল দমনের কথা বলে। সরকার বেপরোয়াভাবে কাউকে কারাগারে পাঠাচ্ছে না। বরং সন্ত্রাস ও সহিংসতার অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা আইন ও আদালতের মুখোমুখি হচ্ছে এবং জামিনে মুক্তিও পাচ্ছে।
তিনি বলেন, তবে যারা নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে-জনগণের জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি করেছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে সেসব সন্ত্রাসী ও তাদের গডফাদারদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা ও মহামান্য আদালত যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় নেই, সে যে দলেরই হোক না কেন সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতারা উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর ও রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারবর্হিভূত বক্তব্য প্রদান করছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশে বদ্ধপরিকর। জনগণের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি বরাবরের ন্যায় নির্বাচন ও দেশের গণতন্ত্র বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। সে কারণে জনগণও তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় গত দুই দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এমন বাস্তবতায় হিট অ্যালার্ট জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
টানা দাবদাহে অতিষ্ঠ সীমান্তবর্তী জেলাটির মানুষ। হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা।
তীব্র দাবদাহে হিট অ্যালার্ট জারি করে জেলা প্রশাসনের ভাষ্য, খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে।
জেলায় দিনের বেশির ভাগ সময় তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। এতে কম আয়ের শ্রমজীবী মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে। নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, ইজিবাইকচালক ও ভ্যান-রিকশাচালকদের গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে। হতাশ হতে দেখা গেছে তাদের।
প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না অনেকে।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভ্যানচালক আবদুর রহিম বলেন, ‘যে তাপ পড়চি, তাতে বাইরি বের হওয়া যাচ্চি না। তাপে হাত-পা জ্বালাপুড়া করচি। ছায়ায় গিয়িও শান্তি নেই।’
আবহাওয়া অফিসের চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘তীব্র দাবদাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে, তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।’
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের কালকিনিতে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে তিনজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
ওই কলেজছাত্রীর মা এ মামলা করেন বলে বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছে থানা পুলিশ।
মামলার প্রধান আসামি ও তার পরিবারের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন।
স্থানীয়, পুলিশ ও কলেজছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার একটি গ্রামের নাজমুছ সাকিবের সঙ্গে একই এলাকার কলেজছাত্রীর প্রায় দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর জেরে গত শুক্রবার রাতে ওই কলেজছাত্রীকে তার বসতঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন নাজমুছ সাকিব।
এ ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয় লোকজন সালিশ করে নাজমুছ সাকিবকে জিজ্ঞাসা করলে ওই কলেজছাত্রীকে বিয়ে করবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন, কিন্তু সালিশের বেশ কয়েক দিন পার হলেও ওই কলেজছাত্রীকে বিয়ে না করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান সাকিব।
পরে কলেজছাত্রীর মা বাদী হয়ে নাজমুছ সাকিবসহ তার পরিবারের তিনজনকে আসামি করে আদালতে ধর্ষণের মামলা করেন। এর প্রেক্ষাপটে থানা পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে চিকিৎসা পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালে পাঠায়।
মামলার বাদী কলেজছাত্রীর মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করেছে নাজমুছ সাকিব, কিন্তু এখন আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চায় না বলে ধর্ষণকারীসহ তার পরিবারের তিনজনের নামে আমি মামলা করেছি। আমি এর বিচার চাই।’
বিষয়টি জানার জন্য অভিযুক্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের এলাকায় পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই ঘটনা জানতে পেরে আমরা নাজমুছ সাকিবকে জিজ্ঞেস করলে ওই কলেজছাত্রীকে বিয়ে করবে বলে আশ্বাস দেয়, কিন্তু ঘটনার বেশ কয়েক দিন পার হলেও ওই কলেজছাত্রীকে বিয়ে না করে ধর্ষণকারী ও তার পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়, তবে ওই যুবকের বিরুদ্ধে এই ধরনের ঘটনা আরও আছে।’
কালকিনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আদালতে একটি মামলা হয়েছে। পরে ওই ছাত্রীকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং আসামিকে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জে একটি মোটরসাইকেলে বাসের ধাক্কায় মামা-ভাগ্নে নিহত হয়েছেন।
সদরের ভৈরব মহাসড়কের কামালিয়ারচর এলাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন বাজিতপুর উপজেলার কৈলাগ গ্রামের দিলবাহারের ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন (২৫) ও একই এলাকার আবদুল্লাহ আল রাজিবের ছেলে আশরাফুল ইসলাম লাদেন (২০)। সম্পর্কে তারা মামা-ভাগ্নে।
কটিয়াদী হাইওয়ে থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মামুন এবং তার ভাগ্নে লাদেন মোটরসাইকেল করে বাজিতপুর থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে যাওয়ার সময় কামারিয়ারচর এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলটিকে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী বাস ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তারা।
‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় বাসটিকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।’
ওসি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারদের মতোই ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। অথচ পরিতাপের বিষয়, সেই বিএনপি মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ দিবস ১৭ এপ্রিল পালন করে না।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে ‘নবম আওয়ার ওশান কনফারেন্সে’ যোগ দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে নভোটেল এথেন্স হোটেল বলরুমে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যে ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেই ৭ মার্চও বিএনপি পালন করে না। এ থেকেই স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধে বিএনপি কতটুকু বিশ্বাস করে তা প্রমাণ হয়।
মুজিবনগর দিবস স্মরণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার বৈদ্যনাথতলা অর্থাৎ বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণের আগের মধ্যরাতে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের কলকাতা প্রেসক্লাবে সমবেত হতে বলা হয়। গোপনীয়তার মধ্যে তাদেরকে পরদিন সকালে মুজিবনগরে পৌঁছানো হয় যেখান থেকে তারা সংবাদ পরিবেশন করেন।
এ সময় গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশিদের আইনানুগ ও পরিশ্রমী জীবনের জন্য নিজের ও গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশংসার কথা জানিয়ে এই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ও সবাইকে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে আহ্বান জানান মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সমবেতদের হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি জানান, গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সাথে বৈঠকে জানিয়েছেন যে, গ্রিস আরও ৬টি দেশে দূতাবাস খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
গ্রিস আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ ত্রিশটিরও বেশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
গ্রিস আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মাতুব্বরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য এফেয়ার্স মোহাম্মদ খালেদ, বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস নেতাদের মধ্যে গোলাম মওলা, হাজী আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল খালেক মাতুব্বর, আহসান উল্লাহ হাসান, শেখ আল আমিন, আব্দুল কুদ্দুস মাতুব্বর, রায়হান খান, মিজানুর রহমান আলফা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন।
মন্তব্য