বেক্সিমকো লিমিটেডের ছাড়া সুকুক বন্ড কেনায় কোম্পানিটির শেয়ারধারীরা আগ্রহ না দেখালেও এই কোম্পানি তো বটেই গ্রুপের চারটি কোম্পানির শেয়ারেই তুমুল আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
গ্রুপের চারটি কোম্পানির তিনটির শেয়ার নিজ নিজ খাতের অন্য যে কোম্পানির চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া দুটি কোম্পানি এই গ্রুপের। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০টি কোম্পানির মধ্যে তিনটি এই গ্রুপের।
বেক্সিমকো লিমিটেড দেশে প্রথমবারের মতো ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক বন্ড সুকুক ছেড়ে তিন হাজার কোটি টাকা তুলতে চায়। এতে আকর্ষণীয় যে শর্ত রাখা হয়েছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের বেশ লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে।
সুকুকের বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে বেক্সিমকো প্রথমে অগ্রাধিকার দিয়েছে শেয়ারধারীদের। তবে তারা আগ্রহ দেখায়নি।
প্রাথমিক গণ আবেদনের সময় শেষ হয়েছে ২৩ আগস্ট। শেয়ারধারীদের কাছ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা তোলার লক্ষ্য ঠিক করা হলেও ৭১ জন বিনিয়োগকারী ৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার আবেদন করেছে।
তবে এই আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিন বেক্সিমকো গ্রুপের শেয়ারে তুমুল আগ্রহের বিষয়টি আবার দেখা গেছে।
গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিত লেনদেনের শীর্ষে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার।
এই কোম্পানিটি বিবিধ খাতে লেনদেন হয়।
এই খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন। এই কোম্পানিটির শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার।
সব কোম্পানির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার। এই কোম্পানিটির ৯৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে লেনদেন হয় এই কোম্পানিটি। এই খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়া ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানা থাকা আরেক কোম্পানি আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪০ কোটি ১৭ লাখ টাকার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
গ্রুপের আরেক কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ২৬ লাখ টাকার। অবশ্য সিরামিক খাতের আরেক কোম্পানির শেয়ার এরচেয়ে বেশি হাতবদল হয়েছে। এই গ্রুপে সবচেয়ে বেশি হাতবদল হয়েছে ফুওয়াং সিরামিকের শেয়ার। ১৩ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন বিনিয়োগকারীরা।
সব মিলিয়ে চারটি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ৩৩৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকার।
সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৭৬২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট লেনদেনের ১২.১৪ শতাংশ হয়েছে কেবল এই গ্রুপটিতে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুকুক নিয়ে হতাশার কিছু নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশ এটি একেবারেই নতুন একটি প্রোডাক্ট হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সেটি খুব ভালো ভাবে আয়ত্বে নিতে পারেনি।
‘এছাড়া যখন বলা হয় এটি কোনো কোম্পানির আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব, তখন কিন্তু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোনো সন্দেহ থাকে না। কিন্ত যখন বলা হচ্ছে এটি একটি বন্ড, তখন কিন্ত কেউ আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে এই ধরনের প্রোডাক্ট বাজারে নতুন হওয়ায় এমনটি হয়েছে।’
সুকুককে এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো একটি প্রোডাক্ট উল্লেখ করে দেবব্রত বলেন, ‘এটি পুঁজিবাজারে লেনদেন হবে। ফলে দাম যখন বাড়বে এবং এটি থেকে যখন বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পেতে শুরু করবে তখনই সুকুক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তালিকায় চলে আসবে।’
বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা উত্তলন করবে। এরমধ্যে ৭৫০ কোটি টাকা আইপিও মাধ্যমে।
বাকি ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকার প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে। এর মধ্যে বিদ্যমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের থেকে ১৫০০ কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনা ছিল বেক্সিমকো লিমিটেডের। তবে বিদ্যমান শেয়ারধারীরা আগ্রহ না দেখানোয় এখন প্রাইভেট প্লেসমেন্ট ও অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে হবে তাদের।
লেনদেনের কী হাল
সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার লেনদেনে শুরুতেই ছিল সূচকের উঠা নামা। লেনদেন শুরুর ৪৩ মিনিটে আগের দিনের চেয়ে খানিকটা কমে দিনের সর্বনিম্ন ৬ হাজর ৮৫৮ পয়েন্টে নেমে আসে। সেখান থেকে আবার উত্থান ঘটে।
বেলা ১টার পরপরই সূচক পৌছে ৬ হাজার ৯০৪ পয়েন্টে। যদিও সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা টিকেনি। আবার নেমে আছে ৬ হাজার ৮শ পয়েন্টের ঘরে, যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এ ঘরেই থেকেছে সূচক।
শেষ পর্যন্ত আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয়েছে লেনদেন।
এদিন প্রধান খাতগুলোর মধ্যে চমক দেখিয়েছে আগের দিন পতন হওয়া আর্থিক খাত। বস্ত্র, বিমা, প্রকৌশল খাতের শেয়ারেও দেখা গেছে চাঙাভাব। অন্যগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রবণতা ছিল খাদ্য, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ওষুধ ও রসায়ন খাতে।
রোববার ব্যাপক চাঙা থাকা ব্যাংক খাত সোমবারও আগ্রহ ধরে রাখতে পারলেও আজ আর পারেনি। অল্প কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগের।
খাতভিত্তিক উঠানামার ভিড়েও লেনদেনের চাঙাভাবে এটা স্পষ্ট যে, বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে ভীষণ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। টানা তৃতীয় কর্মদিবসে লেনদেন ২ হাজার ৭শ কোটির ঘর অতিক্রম করল।
এ নিয়ে টাকা ১৪ কর্মদিবস লেনদেন দুই হাজার কোটির ঘর অতিক্রম করল। এর মধ্যে ৯ কর্মদিবস লেনদেন হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি।
সবচেয়ে বেশি চাঙা আর্থিক খাত, ব্যাংকে আবার হতাশা
সোমবার সবচেয়ে বেশি দরপতন হওয়া ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতেই দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। কমেছে দুটি, অপরিবর্তিত ছিল একটি। বেড়েছে বাকি সবগুলোর।
সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ার তালিকায় এই খাতের দুটি কোম্পানি ছিল শীর্ষে। ১০ শতাংশ দাম বেড়েছে ইউনাইটেড ফিনান্সের আর প্রায় সম পরিমাণ বেড়েছে আইপিডিসির দর।
এ ছাড়া ফার্স্ট ফিনান্সের দর ৫.৮১ শতাংশ, প্রাইম ফিনান্সের দর ৫.৫১ শতাংশ আর ফিনিক্স ফিনান্সের ৪.৯১ শতাংশ, বিআইএফসির দর বেড়েছে ৪.৬৫ শতাংশ।
শেয়ারদরে লাফের দিন লেনদেনও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। হাতবদল হয়েছে ২৫৯ কোটি ৮ লাখ টাকা, আগের দিন যা ছিল ১৫৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
আর্থিক খাতে উত্থানের দিন সবচেয়ে বড় বাজার মূলধনের ব্যাংক খাত ছিল অনেকটাই মন্দাভাবে। রোববার প্রায় সব কটি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির পর দিনও প্রায় দুই তৃতীয়াংশ কোম্পানির দর বৃদ্ধি এই খাতটি সাম্প্রতিক প্রবণতার বিপরীতে এগিয়ে যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা ছিল।
ব্যাংক খাতে গত কয়েকমাসে দেখা গেছে, কোনো একদিন দল বেঁধে বাড়ে সব কোম্পানির শেয়ারদর। কিন্তু পরের দিনেই কমে যায়। এবার রোব ও সোমবারের চিত্র এই খাদের শেয়ারধারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করলেও মঙ্গলবার আবার হতাশ হতে হয়েছে তাদের।
ব্যাংক খাতের ৩২ কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র আটটির। পাল্টায়নি তিনটির। বাকি ২১টি দরই কমেছে।
যেগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে, তার মধ্যে শীর্ষে নতুন তালিকাভুক্ত সাউথ বাংলা ব্যাংকের। টানা ৯ কর্মদিবস দিনের সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হলো ব্যাংকটির শেয়ার। এর মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শেয়ারদরের দিক থেকে ১২ নম্বরে উঠে এল এই ব্যাংকটি।
১০ টাকায় লেনদেন শুরু করা ব্যাংকটির শেয়ারের মূল্য এখন দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা ৩০ পয়সা। নিয়মিত ১৫ বা ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে আসছে, এমন ব্যাংকগুলোর চেয়েও এর দাম এখন বেশি।
এদিন ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বেশি শেয়ার দর কমেছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের; ২.৮৫ শতাংশ। শেয়ার দর ৭ টাকা থেকে কমে হয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সা।
ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ২.১৯ শতাংশ। শেয়ার দর ৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৮ টাকা ৯০ পয়সা।
এক্সিম ব্যাংকের দর ১.৪৮ শতাংশ, ওয়ান এবং মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দর কমেছে ১.৪০ শতাংশ হারে।
লেনদেনে সেবা বস্ত্র, আগ্রহ ধরে রাখল বিমা
বস্ত্র খাতের শেয়ারের দর আগের দিনের মতো অব্যাহত আছে। এই খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ৪১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার। আগের দিন লেনদেন ছির ৩৬২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
দর কমেছে ১৩টির, দর পাল্টায়নি তিনটির। বাকি ৪২টির কোম্পানির শেয়ারের দামই দাম বেড়েছে।
দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায় উঠে আছে বস্ত্র খাতের বেশ কিছু কোম্পানি। এর মধ্যে আছে মেট্টো স্পিনিং মিলস, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯.৯৩ শতাংশ।
মোজাফফর হোসেন স্পিনিং মিলস আর রিজেন্ট টেক্সটাইলের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৬৩ শতাংশ।
বন্ধ থাকা মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেডের শেয়ার দর আরও বেড়েছে ৭.৮৮ শতাংশ। লোকসানি ম্যাকসন স্পিনিং লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.৪৭ শতাংশ। এইচ আর টেক্সটাইলের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.৩০ শতাংশ।
টানা দুই মাসের দর সয়শোধন শেষে এই খাত যে আবার উত্থান পর্ব শুরু করেছে, তার আরেকটি ইঙ্গিত দেখা গেল আজ। তিন দিন টানা বাড়ার পর একদিন কমার পর আবার পরপর দুই দিন দর বৃদ্ধিতে আশাবাদী হয়ে উঠেছে এই খাতের শেয়ারধারীরা।
এই খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৫টির, কমেছে ১৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল একটির দর।
দাম বৃদ্ধির দিনও লেনদেনে অবশ্য গতি নেই। এটা স্পষ্ট যে, এই খাতের শেয়ারধারীরা দাম আরও বাড়তে পারে ভেবে বিক্রি করতে চাইছেন না। আগের দিন লেনদেন যেখানে ছিল ৪০৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, সেখানে আজ হাতবদল হয়েছে ২৬৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে বিমা খাতের এগিয়ে ছিল জনতা ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৯৮ শতাংশ। তারপরই ছিল স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সে, যার দর বেড়েছে ৭.৫৯ শতাংশ। পদ্মা লাইফের দর বেড়েছে ৭.২১ শতাংশ।
অন্যান্য খাতের কী চিত্র
অন্যান্য খাতগুলোর মধ্যে লেনদেনে খুব একটা গতি না থাকলেও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিষয়টি উল্লেখ না করলেই নয়। বেশ ভালো লভ্যাংশ আসার পরও গত কয়েকদিন ধরে এই খাতের ফান্ডগুলো অল্প অল্প করে যে দর হারাচ্ছিল, তার অবসান হয়েছে।
৩৬টি ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ২০টির, কমেছে ২টির আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি ১৪টির দর। বুধবার লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা ইবিএলে ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ৫.৬৮ শতাংশ।
এ ছাড়া লভ্যাংশ ঘোষণা করা আইসিবি সেকেন্ড এনআরবির দর ৪০ পয়সা ও লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৩০ পয়সা। বাকি সবগুলোর দর বেড়েছে ১০ থেকে ২০ পয়সা করে।
লেনদেনও খানিকটা বেড়েছে। হাতবদল হয়েছে মোট ৬২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছে ৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকা।
প্রধান অন্য খাতগুলোর মধ্যে প্রকৌশল খাত এ দিন ছিল চাঙা। ৪২টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ২৬টির দর, কমেছে ১৪টির। অপরিবর্তিত ছিল দুটির। লেনদেনও খানিকটা বেড়েছে। আজ হাতবদল হয়েছে ২৯১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ২৬৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লেনদেন কিছুটা কমলেও আগ্রহ ধরে রেখেছে খাতটি। এই খাতের ১১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ১২টি দর হারিয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৯৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ৩৬৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬টির, কমেছে ১২টি, দুটির দর ছিল অপরিবর্তিত আর একটির লেনদেন স্থগিত। এই খাতে হাতবদল হয়েছে মোট ২৬২ কোটি ৭ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ২১৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার।
লেনদেন বেড়েছে বিবিধ খাতের। এই খাতের ১৪টি কোম্পানির ২৫১ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেনের মধ্যে অবশ্য বেক্সিমকোর একার অবদান ১৮৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের দিন এই খাতে লেনদেন ছিল ২০৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
তবে বেশিরভাগ কোম্পানি দর হারিয়েছে এদিন। ১৪টির মধ্যে ৫টির শেয়ারদর বেড়েছে, ৯টির কমেছে।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ১২টির। কমেছে ৭টির। অপরিবর্তিত ছিল একটির দর। এই খাতে লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ৫৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার।
তথ্য প্রযুক্তি খাতের ১১টি কোম্পানির মধ্যে চরটির দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৭টির। লেনদেন হয়েছে ৭৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ৪৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৮৪ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৭.১৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৯৪ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৬৩ পয়েন্টে।
চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৬৮ দশমিক ২২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৫ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ১১৮ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১০১ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাতে সমগ্র বিশ্ব যখন টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হয়, ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়।
যদিও একটি শ্রেণি বাজারে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে বরাবরই সক্রিয় ছিল। তবে দূরদর্শী নেতৃত্বগুণে বিনিয়োগকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে বারবার বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে দেননি অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সম্প্রতি বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক আচরণ করছে পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারকে স্থিতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এমনকি পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে গতকাল ফ্লোর প্রাইসমুক্ত সব শেয়ারে একদিনের দর কমার নিম্নসীমা (সার্কিট ব্রেকার) ৩ শতাংশে বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএসইসির সময়োপযোগী এমন পদক্ষেপ বাজারকে আবারও টেনে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সন্দেহভাজন বেশকিছু লেনদেন পরিলক্ষিত হয়েছে বাজারে। এতে বিশেষ একটি শ্রেণি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও এতে জড়িত রয়েছে। বাজারে অবাঞ্ছিত বিক্রির আদেশ দিয়ে তারা অস্থিরতা তৈরি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে বাজারে একটা শ্রেণি স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে বাজার কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
এ বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে বেশ কিছু ট্রেডার নিজেদের মধ্যে যোগশাজসের মাধ্যমে প্রথমে কম দরে শেয়ার বিক্রি করত। পরে তাদের দেখাদেখি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি করত তখন তারা আবার কম দরে শেয়ারগুলো কিনে নিত। এভাবে তারা নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন করে প্যানিক সৃষ্টির মাধ্যমে ভালো শেয়ারগুলোর দাম কমাত। এই কাজে তাদের বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউসও সহযোগিতা করত।’
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শেয়ারের দর কমার কথা নয়। গুটি কয়েক অসাধু ট্রেডারের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এক শ্রেণির অসাধু বিনিয়োগকারী চাচ্ছেন বর্তমান কমিশন বিদায় হয়ে নতুন কেউ দায়িত্বে আসুক, যাতে তারা নতুন করে আরও সুযোগ নিতে পারেন। তারাই বিভিন্ন দুর্বল শেয়ারে কারসাজি করে সুবিধা নিচ্ছেন।
‘ফোর্সড সেলের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার তারা কম দরে কিনে নিচ্ছেন। কমিশনের উচিত হবে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা, যাতে তারা বারবার বাজারকে ম্যানিপুলেট করার সাহস না পায়।’
এদিকে শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা পতন ঠেকাতে আবারও শেয়ারের মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিএসইসি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে।
ওই আদেশে বলা হয়, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। বর্তমানে দরভেদে কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে আদেশে জানানো হয়েছে। সার্কিট ব্রেকারের এ সিদ্ধান্ত বুধবার থেকে কার্যকর করতে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই সার্কিট ব্রেকার আরোপ বাজারে কারসাজি রোধ করবে। এটি সন্দেহভাজন লেনদেন বন্ধ করবে। আর এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ সম্পদশালী একক বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো শেয়ার বর্তমানে আন্ডারভ্যালুতে আছে। এখানে তারা বিনিয়োগ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
সার্কিট ব্রেকার বাজারের দরপতন ফেরাতে ব্যর্থ হলে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আশা করছি, আমাদের বাজারে আর কখনও ফ্লোর প্রাইস দিতে হবে না। শিগগিরই বাজার একটা স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরবে।’
আরও পড়ুন:দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দরপতনের গতি কমিয়ে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে এবার মূল্যসীমায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার আগের দিনের শেষ হওয়া দরের ভিত্তিতে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।
শেয়ারের দাম কমার ক্ষেত্রে আগে মূল্যসীমা ছিল ১০ শতাংশ। তবে ঊর্ধ্বসীমা অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম বাড়ার সীমা ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বুধবার এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে। বৃহস্পতিবার থেকেই এ আদেশ কার্যকর হবে বলে আদেশে জানানো হয়েছে।
বিএসইসি জানিয়েছে, যেসব শেয়ার ফ্লোর প্রাইসের আওতায় আছে সেসব শেয়ারের ক্ষেত্রে নতুন আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাজার সূচকের অবাধ পতন ঠেকাতে এর আগে ২০২২ সালের জুলাই শেষে প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস ছিল ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ও তার আগের চার দিনের ক্লোজিং প্রাইসের গড়।
বর্তমানে বেক্সিমকো, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও শাহজীবাজার পাওয়ার কোম্পানির ক্ষেত্রে ওই ফ্লোর প্রাইস কার্যকর রয়েছে।
আরও পড়ুন:ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার। বুধবারের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি সবক’টি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইতে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে হাফ ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান।
পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে বুধবার। তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৫৮ পয়েন্ট। তবে লেনদেন কমে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এসে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কিছুটা ফিরে এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।
এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হতে থাকে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৩০৩টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। দিনের সর্বোচ্চ দামে এ সাত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের আদেশ এলেও বিক্রিয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, শাহিনপুকুর সিরামিক, পেপার প্রসেসিং, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স।
দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এ সাত প্রতিষ্ঠান দাপট দেখানোর পাশাপাশি আরও প্রায় এক ডজনের প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার সর্বোচ্চসীমার কাছাকাছি চলে আসে। আর ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ৪ শতাংশের ওপরে বেড়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে ৬০০ কোটি টাকার ওপরে চলে এসেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে বেস্ট হোল্ডিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের ২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন সন।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফু-ওয়াং সিরামিক, মালেক স্পিনিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, রবি, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং ওরিয়ন ফার্মা।
অপরদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৭টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার লেনদেন বেড়ে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর এটাই সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।
সপ্তাহের শেষ দিনে ডিএসইতে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো। একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর বা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
অবশ্য লেনদেনের শেষদিকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় থাকা বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার হার কমে আসে। একই সঙ্গে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতাও কমে। এমনকি ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।
লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। দাম কমেছে ১৪০টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টির।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩০টির দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে হল্টেড হয়েছে ৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৮৪ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে এক হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় এক হাজার ৭৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর আর দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৫ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার। ৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, ফরচুন সুজ, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুড, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, এডভেন্ট ফার্মা এবং বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম।
অপর সিএসই-তে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১২০ পয়েন্ট। এখানে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২০টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:শেয়ারের ওপর থেকে বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার সুফল মিলতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজারে। ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকি সব শেয়ারের ওপর থেকে ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার এক কার্যদিবস পরই সোমবার লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর ছুঁয়েছে।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরবর্তী কার্যদিবসে রোববার পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনে বড় নিম্নমুখিতা দেখা যায়। অবশ্য বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সক্রিয় ভূমিকায় ওইদিন আরও বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় স্টক এক্সচেঞ্জ।
তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসি’র পদক্ষেপ যে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, তা প্রমাণ হয়ে গেছে পরবর্তী কার্যদিবসেই। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। সোমবার সূচক বাড়ার পাশাপাশি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় মাসেরও বেশি সময় পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা ৩৫ কোম্পানির মধ্যে আরও ২৩ কোম্পানির সর্বনিম্ন দরসীমা সোমবার তুলে নিয়েছে বিএসইসি।
সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্ত বাজারকে আগামী কয়েক দিনের জন্য কিছুটা নিম্নমুখী করতে পারে- এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় ভূমিকার কারণে গত দুদিন আমাদের ধারণার তুলনায় মার্কেট অনেকটা ভালো আচরণ করেছে। ধারণা ছিল যে, এতগুলো শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস যেহেতু একবারে তোলা হয়েছে, সেহেতু কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০০ পয়েন্ট পর্যন্ত সূচক কমতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাপোর্ট মার্কেটকে একটা স্ট্যাবল অবস্থানে রাখতে সাহায্য করেছে।’
নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে নতুন করে ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার নেতিবাচক একটা দিক আগামী কয়েক দিন বাজারে দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষক মো. আল-আমিন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি সংক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত থাকলে এ ক্ষেত্রে বাজারের জন্য সহায়ক হতে পারে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার লেনদেন শুরুর ২ মিনিট পর অতিরিক্ত বিক্রির চাপে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬০ পয়েন্ট কমে যায়। পরে অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে সূচক বাড়তে থাকে। দিন শেষে সূচকটি ১৪ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এর আগের কার্যদিবস রোববার লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে।
ডিএসইএক্স সূচকটিকে পতনের দিকে ঠেলে দিতে সোমবার সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে জিপিএইচ ইস্পাত, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ফরচুন সুজ, বিবিএসই ক্যাবলস ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। তবে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, খান ব্রাদার্স পিপি, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের ইতিবাচক ভূমিকায় সূচক দিন শেষে বেড়েছে।
ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে এদিন লেনদেন শেষে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬০ পয়েন্টে। আগের দিন লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে।
বাছাইকৃত শেয়ারের সমন্বয়ে গঠিত ব্লু-চিপ সূচক ডিএস ৩০ দিনের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে। আগের দিন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ২ হাজার ১৩৭ পয়েন্টে।
ডিএসইতে সোমবার মোট ১ হাজার ৪২ কোটি ২১ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এর আগে এক্সচেঞ্জটিতে সবশেষ ১ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছিল গত বছরের ১৮ জুলাই। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ।
সোমবারের লেনদেন আগের কার্যদিবসের (রোববার) চেয়ে ৭৭ শতাংশ বেশি। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২০৭টির, কমেছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪০টি সিকিউরিটিজের বাজার দর।
এদিকে বাজারকে সক্রিয় রাখতে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন ‘সিইও ফোরাম’ থেকে সাপোর্ট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি।
সিদ্ধান্ত অনুসারে, পুঁজিবাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রত্যেক ডিলার অ্যাকাউন্টে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো শেয়ার বিক্রি করা হবে না। বিনিয়োগকারীদেরকে ইতিবাচকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। যেসব শেয়ারের ক্রেতা থাকবে না, সেখানে বিক্রির আদেশ বসানো হবে না। ট্রেডারদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হন বা বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি না করেন, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতেও বলা হবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বহাল
পুঁজিবাজারে এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৩৫৭টি শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নেয় বিএসইসি। আর নতুন করে আজ আরও ২৩ কোম্পানির ওপর থেকে সীমা তুলে নেয়ার পর কেবল ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকল। নতুন এই ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হওয়া সব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামার সার্কিট ব্রেকার আগের মতোই ১০ শতাংশ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমতে বা বাড়তে পারবে না।
যে ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকছে- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা লিমিটেড, রবি আজিয়াটা ও শাহজীবাজার পাওয়ার লিমিটেড।
এই ১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস কবে তুলে নেয়া হতে পারে এমন প্রশ্নে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের লেনদেন ও বাজার পরিস্থিতি দেখে কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ফ্লোর ধরে রাখা কোম্পানিগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। বাজারের প্রতি তারা যেন নেতিবাচক না হন, তাই পরের ধাপে এসব কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আরও পড়ুন:ফ্লোর প্রাইসের বাধামুক্ত হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। তবে নির্দিষ্ট ৩৫টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইজের এই শর্তের মধ্যেই থেকে গেছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দরসীমা বেঁধে দেয়ার ফ্লোর প্রাইজ জারি হয়েছিলো প্রায় দেড় বছর আগে। অবশ্য এর আগে ২০২০ সালে আরও একবার ফ্লোর প্রাইস দিয়ে তা ২০২১ সালে তুলে নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি। তবে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির সুরক্ষা দিতে এতো দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লোর প্রাইস এর আগে দেখা যায়নি দেশের পুঁজিবাজারে।
বিএসইসি বৃহস্পতিবার এক আদেশ জারি করে পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়। ওই আদেশে একইসঙ্গে জানানো হয়, ৩৫টি কোম্পানি এখনও ফ্লোর প্রাইস-এর আওতায় থাকবে। কবে নাগাদ ওইসব কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হবে তা জানায়নি কমিশন।
আদেশে কমিশন জানিয়েছে, ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আগের মতোই স্বাভাবিক লেনদেন হবে। তবে দৈনিক লেনদেনের সার্কিট ব্রেকার অর্থাৎ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরসীমা কার্যকর থাকবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একদিনে কোনো শেয়ারের দর সর্বোচ্চ দশ শতাংশ বাড়তে পারে, কমার ক্ষেত্রেও সমপরিমাণ দর কমতে পারে।
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পুঁজিবাজার নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অনেক বিনিয়োগকারী। তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়ে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের সেই শঙ্কা অনেকাংশেই কেটেছে। সুদিন ফিরতে শুরু করেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই।
সদ্য শেষ হওয়া সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ-সিএসইতে বেড়েছে সবগুলো সূচক। পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠতে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও।
ইতোমধ্যে বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুদ্রানীতি। টানা কয়েকদিন বাড়তে থাকা পুঁজিবাজারে বৃহস্পতিবার অবশ্য কিছুটা দর সংশোধন হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ পয়েন্ট।
বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সম্প্রতি নিউজবাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, যে কোনো সময় প্রত্যাহার হতে পারে ফ্লোর প্রাইস। যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে বলে মনে করে নিয়ন্ত্রণ কমিশন।
অবশেষে তার সেই কথারই প্রতিফলন ঘটলো ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। শিমুল আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারীর মন্তব্য, এতে সাময়িকভাবে সূচকের কিছুটা পতন হলেও দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস আজ হোক কাল হোক প্রত্যাহার করতে হতোই। এখানে বহু বিনিয়োগকারীর মূলধন আটকে আছে। তবে আমার কাছে মনে হয় কমিশন যথাসময়েই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে’।
এছাড়া ৩৫টি কোম্পানির ওপর এখনও বহাল থাকা ফ্লোর প্রাইসও দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি এই বিনিয়োগকারীর।
বিএসইসির আদেশে যে কোম্পানিগুলোর ওপর ফ্লোরপ্রাইস বলবৎ থাকার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বারাকা পাওয়ার, বিএটিবিসি, বেক্সিমকো, বিএসসিসিএল, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডিবিএইচ, ডোরিন পাওয়ার, এনভয় টেক্সটাইল, গ্রামীণফোন, এইচআর টেক্সটাইল, আইডিএলসি, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, ইসলামী ব্যাংক, কেডিএস লিমিটেড, কেপিসিএল, কট্টালি টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল পলিমার, ওরিয়ন ফার্মা, পদ্মা অয়েল, রেনাটা, রবি, সায়হাম কটন, শাশা ডেনিমস, সোনালী পেপার, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, শাহজীবাজার পাওয়ার, সামিট পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া ঘোষণাজনিত পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতনের শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। তার আগে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে একবার ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল।
তবে দ্বিতীয় ধাপের ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা তলানিতে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকায় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকার হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোও সংকটে পড়ে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম একে অপরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বুধবার নিজেদের মধ্যে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক খাতের দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানদের এই বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তারল্য কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে আইনের মধ্যে থেকে আরও সক্রিয় করার জন্য গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বৈঠকে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যান নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এক পর্যায়ে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলো কীভাবে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে গভর্নরের সহযোগিতা চান বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বৈঠকে গভর্নরও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করার বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান রেজাউল করিম।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ বছর জুড়েই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। নতুন বছরে পুঁজিবাজারকে আরও বেগবান করতেও নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য