পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ কোম্পানি কেপিসিএলের ৩ কোটি ২৩ লাখের বেশি শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা জুলাই মাসে কীভাবে কিনল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে এই মাসে শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৮০ লাখের কম। ব্লকেও লেনদেনের তথ্য নেই।
গত জুলাই মাসে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে মোট ১৫ কর্মদিবস। ওয়েবসাইটের হিসাব অনুযায়ী, এই ১৫ দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইতে মোট শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ৬১০টি। আর চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ বা সিএসইতে লেনদেন হয়েছে মোট ৫ লাখ ১ হাজার ৯০৬টি।
সব মিলিয়ে হয় ৭৯ লাখ ২০ হাজার ৫১৬টি।
অথচ ডিএসই ও সিএসই জুলাই মাস শেষে কেপিসিএলের শেয়ারের হিস্যা নিয়ে যে তথ্য দেয়া আছে, তাতে বলা আছে, এখন কেপিসিএলের মোট শেয়ারের ৮.৪৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ধারণ করে আছে। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ০.২১ শতাংশ।
জুন শেষে মোট শেয়ারের ০.৫২ শতাংশ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল ০.০১ শতাংশ।
এই হিসাবে জুলাইয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কিনেছে ৭.৯৩ শতাংশ, আর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিনেছে ০.২০ শতাংশ।
৩৯৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিতে মোট শেয়ার সংখ্যা ৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ১৭৯টি।
এই হিসাবে জুলাই মাসে ৩ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৬৫টি শেয়ার কিনেছে। আর বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিনেছে ৭ লাখ ৯৪ হাজার ৮২৬টি।
অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মিলিয়ে এই মাসে কিনেছে মোট ৩ কোটি ২৩ লাখ ৯ হাজার ৬৯১টি শেয়ার।
মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন বিনিয়োগকারী প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে বাকি ২ কোটি ৪৩ লাখ ৮৯ হাজার ১০৩টি শেয়ার কীভাবে, কোথায় বিক্রি হলো।
কোম্পানির পক্ষ থেকে ডিএসই ও সিএসইতে যে হিসাব দেয়া হয়, তাতে পাবলিক মার্কেটের বাইরে ব্লক মার্কেটে লেনদেনের হিসাব থাকে না। অবশ্য জুলাই মাসে ডিএসইর ব্লক মার্কেট ঘেঁটে কেপিসিএলের শেয়ার লেনদেনের কোনো তথ্য মেলেনি।
বেশি দামে বিক্রি করে কম দামে ক্রয়
মাস দুয়েক আগে যখন কেপিসিএলের বন্ধ হয়ে যাওয়া দুই কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, তখন মে ও জুন মাসে কোম্পানিটির প্রায় সব শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিক্রি করে দিয়েছিল। এরপর কোম্পানিটির দাম পড়ে যায়। আর জুলাইয়ে কম দামে সেই শেয়ার আবার কিনেছে তারা।
গত এপ্রিল শেষেও কোম্পানির মোট শেয়ারের ৯.২ শতাংশ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর ০.৩০ শতাংশ ছিল বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে।
তবে মে ও জুন মাসে এই শেয়ারের প্রায় পুরোটাই বিক্রি করে দেয়া হয়।
৩০ মে শেষে কোম্পানির শেয়ারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমে দাঁড়ায় ১.৬৫ শতাংশ আর বিদেশি বিনিয়োগ কমে হয় ০.০২ শতাংশ।
জুন শেষে আরও কমে তাদের হিস্যা।
গত মে মাসে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন শেয়ার বিক্রি করে, তখন শেয়ার মূল্য ৩৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৩ টাকায় উঠেছিল।
জুন ও জুলাইয়ে ৩৭ ও ৩৯ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে দর। এর মধ্যেই শেয়ারটি আবার কিনেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
আগস্টে যখন প্রথমে টিচাগং স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার সংখ্যার হিসাবটি হালনাগাদ করা হয়, তখন নামে উল্লম্ফন ঘটে। ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৪৫ টাকায় উঠে যায় দাম। বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর খানিকটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ৬০ পয়সা।
আগস্টে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনও বেড়েছে। কেবল আট কর্মদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার ৭৭২টি, অর্থাৎ গত মাসের দ্বিগুণের বেশি।
ডিএসই, সিএসই, কেপিসিএল যা বলছে
মাসে ৮০ লাখের কম শেয়ার লেনদেন হলেও কীভাবে সোয়া তিন কোটি হাতবদল হলো, এমন প্রশ্নে কিছু বলতে পারেননি ডিএসই উপমহব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কোম্পানি থেকে যে তথ্য পাওয়া যায় তাই ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে রোববার ডিএসই খোলা হলে বিস্তারিত জানাতে পারব।’
সিএসই সিনিয়র অফিসার ও মুখপাত্র তানিয়া বেগম বলেন, ‘বিএসইসি নির্দেশনা অনুযায়ী মাসের ৫ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডিং বিষয়ে ডিএসই সিএসইকে জানাতে বলা আছে। সে অনুযায়ী আমাদের কাছে কোম্পানি যেসব তথ্য সরবরাহ করে সে অনুযায়ী আমরা ওয়েবসাইটে দিয়ে থাকি।’
ঘটনাটি কীভাবে ঘটল- এমন প্রশ্নে কেপিসিএলের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা সোহরাব আলী খান বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কোনো ডাটা নেই এখানে। কোম্পানির শেয়ার ধারণের তথ্য তা আমরা সিডিবিএল থেকে নিয়ে থাকি এবং সে অনুযায়ীই তা ডিএসই ও সিএসইকে সরবরাহ করা হয়।’
শেয়ার কেনাবেচা ও মালিকানা পরিবর্তন হলে তা নিশ্চিত করাই সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএলের কাজ। দুই স্টক এক্সচেঞ্জে কেপিসিএলের যত শেয়ার লেনদেন হয়েছে, তার চেয়ে বেশি লেনদেনের হিসাব কীভাবে এলো- এমন প্রশ্নে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শুভ্র কান্তি চৌধুরীও কিছু জানাতে পারেননি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি না দেখে কিছু বলতে পারব না।’
শেয়ারধারীরা ভীষণ চিন্তিত
খুলনা পাওয়ার কোম্পানি বা কেপিসিএল নিয়ে বিনিয়োগকারীরা গত কয়েক মাস ধরেই চিন্তিত। গত মে মাসে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন কেবল একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৫ শতাংশ মালিকানার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে তাদের।
অবশ্য কেন্দ্র দুটির মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। আর এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও। খোদ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। আর এই চেষ্টার সুফল মিলতে যাচ্ছে বলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিশেষ শর্তে কেপিসিএলের দুই কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আরও দুই বছরের জন্য দুটি কেন্দ্র চালু থাকবে। তবে যতটুকু বিদ্যুৎ কেনা হবে, কেবল ততটুকুর জন্য অর্থ পাবে কেপিসিএল। অর্থাৎ আগের মতো কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দেবে না সরকার।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সায় পাওয়ার পর সম্প্রতি তা পাঠানো হয় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি)। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর তা পাঠানো হয় মন্ত্রণালয়ে। আর মন্ত্রণালয় সেটি চূড়ান্ত করে সরকারপ্রধানের দপ্তরে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, সব সংস্থার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফাইলটি এখন একজন যুগ্ম সচিবের কাছে আছে। শাটডাউনের সময় জরুরি ও নিয়মিত ফাইল ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অন্য কোনো ফাইল পাঠানো হয়নি। তবে এটি যেকোনো দিন পাঠানোর মতো অবস্থায় আছে।
দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন অনুমোদনের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত আছে কি না, এমন প্রশ্নে সেই কর্মকর্তা বলেন, ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পে ভিত্তিতে এটি অনুমোদনের বিষয়ে আগেই কথা হয়েছিল। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনও এতে আপত্তি জানায়নি। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই পর্যায়ে ফাইল পাঠালে তা অনুমোদন না হওয়ার কারণ নেই।’
কেপিসিএলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সোহরাব আলী খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্ল্যান্ট দুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এ বিষয়ে এখনও কোনো সরকারি নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি প্ল্যান্ট দুটির মেয়াদ বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি হচ্ছে জেনেছি। তবে আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারা
পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সক্রিয় অংশগ্রহণ করে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। পুঁজিবাজারে তাদের সবচেয়ে দক্ষ বিনিয়োগকারী হিসেবে দেখা হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হচ্ছে মূলত অনুমোদিত স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য বা ব্রোকারেজ হাউস। এ ছাড়া ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, কাস্টডিয়ান, ট্রাস্টি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো পুঁজিবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে পরিচিত।
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক বা তফসিলি ব্যাংক পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ করে থাকে, তাদেরও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কেপিসিএলের আদ্যোপান্ত
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি হয় গড়ে ২১১ টাকায়। এটি যে মেয়াদি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তা বন্ধ হয়ে যাবে, সে বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধারণা ছিল না।
কোম্পানিটির বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল মোট তিনটি। এর মধ্যে ২০১৮ সালে একটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিষয়টি জানতে পারে।
এরপর থেকে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়ে লভ্যাংশ পেয়ে আসছে বিনিয়োগকারীরা। এই দুটির মধ্যে ১১৫ মেগাওয়াটের কেপিসিএল-১-এর মেয়াদ শেষ হয় গত ৩১ মে। আর ৪০ মেগাওয়াটের নওয়াপাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয় ২৮ মে।
গত ২০ মে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়াতে আমাদের চেষ্টা-তদবির অব্যাহত রয়েছে।’
মেয়াদ শেষে কেন্দ্র দুটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই চেষ্টা-তদবিরের কতটা এগোল, সে বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
আরও পড়ুন:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দলের অনেক নেতাকর্মীকে সরকার কারাগারে নিক্ষেপ করে আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত করছে।
শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জিয়া প্রজন্ম দল আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে রিজভী এ কথা বলেন। খবর ইউএনবির
তিনি আরও বলেন, বিনা কারণে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দি থাকতে থাকতে কারাগারগুলো বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর স্থায়ী আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।
রিজভী বলেন, মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবের মতো শীর্ষ নেতারা তিন-চার মাস ধরে কারাভোগ করে মুক্তি পেয়েছেন।
শেখ হাসিনার বিএনপি নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠানোর নীতি এখনো শেষ হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে ভয় পান এবং জানেন যে তার পক্ষে কোনো জনসমর্থন নেই।
জনগণের সমর্থনহীন সরকার স্বৈরাচারী হয়ে যায় উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জনগণ যখন অধিকারের জন্য আওয়াজ তোলে তখন তারা দমন করে।
এই বিএনপি নেতা বলেন, তারা দমন-পীড়নের সব উপায় অবলম্বন করে, যেমন- আটকে রাখা, নির্যাতনের জন্য আয়না ঘর তৈরি করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে হত্যা করা এবং বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে দলীয় ক্যাডারদের ব্যবহার করা।
তিনি দাবি করেন, ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ২৫ থেকে ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
রিজভী আরও বলেন, বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন। আর কয়েকজন ৩ থেকে ৪ মাস কারাভোগের পর বের হতে পেরেছেন।
বিএনপির এত সদস্য কেন কারাগারে, তার কোনো সদুত্তর সরকারের কাছে আছে কি না জানতে চান রিজভী।
অবৈধভাবে অর্জিত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্যই প্রধানমন্ত্রী এসব করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
শেরপুরের নকলায় বসতবাড়ির সীমানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক নারীর লাঠির আঘাতে প্রতিবেশি মোরাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ওই নারী ও তার মেয়েকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার টালকী ইউনিয়নের পূর্বটালকী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ৫৫ বছর বয়সী মোরাদ হোসেন নকলার পূর্বটালকী গ্রামের মৃত রহিম মাস্টারের ছেলে। চাকরির সুবাদে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতেন তিনি।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, নকলার মোরাদ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে চাকরি করতেন। অনেকদিন থেকে তার প্রতিবেশি চাচাতো ভাই জালাল উদ্দিনের সঙ্গে বসতবাড়ির সীমানা নির্ধার্ণ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন মোরাদ। বাড়িতে প্রবেশ করার পর তার প্রতিবেশি চাচাত ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত ওই নারী লাঠি দিয়ে মোরাদের মাথার পেছনে আঘাত করেন। এতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা মোরাদকে নকলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
ঘটনার পর জালাল উদ্দিনের স্ত্রী ও মেয়েকে আটক করে পুলিশ।
নকলা থানার ওসি মো. আব্দুল কাদের মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় হত্যা মামলার আসামি মোহন আলীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার দিকে উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চকমহাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহন ওই গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি নান্নু খান জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহন তার ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি মেরামতের জন্য পার্শ্ববর্তী বাঘা উপজেলার খাগড়বাড়িয়া বাজারে যান। ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে বাগাতিপাড়ার চকমহাপুর এলাকায় পৌঁছালে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলে ঢাকা নেয়ার পথে ভোর ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওসি আরও জানান, ২০২১ সালে ১১ জুলাই বাগাতিপাড়ার সীমান্তবর্তী রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের হরিপুরে অনার্সপড়ুয়া ছাত্র জাকির হোসেন ছুরিকাঘাতে হত্যার শিকার হন। মোহন আলী ওই হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
নিহতের মা হনুফা বেগম জানান, হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় তার ছেলে মোহন কারাগারে ছিল। প্রায় চার মাস আগে জামিনে মুক্ত হয়ে সে বাড়ি ফেরে। বাড়িতে আসার পর থেকেই মোহনকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন জাকিরের স্বজনরা।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে জাকিরের স্বজনরা মোহনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন হনুফা বেগম। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত মোহনের মামা আয়নাল আলী বাদী হয়ে বাগাতিপাড়া মডেল থানায় শুক্রবার সকালে একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাই রাজনৈতিক নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অগ্নিসংযোগ, গ্রেনেড হামলা, আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান ও দুর্নীতির মতো সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তরাই এ সংক্রান্ত মামলার আসামি হয়েছেন।
তিনি বলেন,“আজকে তারা (বিএনপি) সব জায়গায় কান্নাকাটি বলছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা। তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে মামলাগুলো কীসের মামলা? অগ্নিসন্ত্রাস, অস্ত্রপাচার, গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা। তারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেটাই তো বাস্তবতা।”
এসব মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে এগুলোর শাস্তি দিয়ে দেয়া উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুক্রবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। খবর বাসসের
২০১৩ ও ১৪ সালে নির্বাচন বানচালের জন্য এবং পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস ও সহিংসতার প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, তারা ৩ হাজার ৮০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, বাস, লঞ্চ ও রেল পুড়িয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না তো কি হবে।
তিনি বলেন, ওদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাইতো পলিটিক্যাল মামলা না, প্রত্যেকটা মামলা হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা। তারা মানুষ হত্যা করেছে আগুন দিয়ে। নির্বাচন ঠেকাতে যেয়ে তারা রেলে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে পুড়িয়ে মেরেছে, যারা এগুলো করলো তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না?
“যারা এগুলো করলো তাদের বিরুদ্ধে কি মামলা হবে না? তাদেরকে কি মানুষ পূজা করবে,” সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
বিএনপির নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কান্নাকাটি করে তারা সব জায়গায় বলছে এত লাখ লোক তাদের গ্রেপ্তার। সারা দেশে যত জেলখানা আছে সেগুলোর একটা ধারণ ক্ষমতা রয়েছে, তারা যত লক্ষ গ্রেপ্তার হয়েছে বলছে জেলখানাগুলোর তত ধারণ ক্ষমতা নেই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “তারা (বিএনপি) যেভাবে বলছে তাদের ৬০ লাখ লোক গ্রেপ্তার হয়েছ, ৬০ লাখ লোক ধারণ করার ক্ষমতাও নাই এসব জেলে। তারপরও যতটুকু ধারণ ক্ষমতা আছে সবই বিএনপির লোক এটাই তো তারা বলতে চাচ্ছে। তার মানে বাংলাদেশে যত অপরাধ সব অপরাধ করে বিএনপি।”
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ভাগ্য ভালো আমরা ক্ষমতায় আছি, আমরা তাদের মতো প্রতিশোধপরায়ণ না, তাই তারা এখনো কথা বলার সুযোগ পায়। তারা সারাদিন কথা বলে মাইক লাগিয়ে, তারপর বলবে কথা বলার সুযোগ পায় না।
বিরোধী দলে থাকার সময়কার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসেতো আমরা ঢুকতেই পারতাম না। কীভাবে তারা অত্যাচার করেছে আমাদের ওপর, আমরা তো তার কিছুই করি নাই। আমরা প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত থাকিনি। আমরা আমাদের সব শক্তি-মেধা কাজে লাগিয়েছি দেশের উন্নয়নে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাংক অনুসরণ করে সমবায় ভিত্তিক কৃষি নিশ্চিত করে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমবায় ভিত্তিক কৃষি চালু করে জমির আইল দূর করে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি রক্ষা করা যেতে পারে। কৃষিতে গবেষণার পাশাপাশি কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশ সবচেয়ে সফল। আমাদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উদ্যোগে কৃষিখাতের উন্নয়ন এবং খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থানার পদক্ষেপ সমূহের চুম্বকাংশ তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি উন্নত হয়েছে, কারণ সরকার কৃষিখাতের গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কৃষি খাতে ২৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপের ফলে দেশের খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে।
তিনি বলেন, “একসময় যারা নুন-ভাত বা ডাল-ভাতের কথা ভাবতেন, তারা এখন মাছ-মাংস-ডিমের কথা ভাবেন। তাই যারা সরকারের সমালোচনা করেন, তাদের বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে, বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে কি না।”
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানান সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
মধ্যসত্ত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ।
শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন সুবিধা নিতে না পারে, সিন্ডিকেট করে কৃষকদের যেন বিপদে ফেলতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে কৃষকরা বঞ্চিত হবেন না।
মন্ত্রী বলেন, কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে চায় সরকার। সরকারের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সুনামগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে বন্যা দুর্যোগ বেশি হয়। খড়াও হয়। জেলা প্রশাসনকে বলেছি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে।
তিনি বলেন, কৃষিকে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ। কৃষকের ধানের মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী পরশু মিটিং করব। দাম নির্ধারণ করে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠাব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সাদিক, ১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
তীব্র তাপদাহ চলমান থাকা চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলাটিতে।
অতি তাপে অতিষ্ঠ চুয়াডাঙ্গার লোকজন। জেলার হাসপাতালে বাড়ছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা।
প্রচণ্ড গরমে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বেরিয়েও কাজ করতে পারছেন না তারা।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ভ্যানচালক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক দিন থেকি যে তাপ পড়চি মনে হচ্চি যেনে সূর্য মাতার ওপর চলি এসিচে। আজ যেনে সব থেকি বেশি তাপ পড়চি। গা দিয়ি তরতর করি ঘাম ঝরচি।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, সরকারি ছুটির দিন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘আরও কয়েক দিন এমন দাবদাহ অব্যাহত থাকতে পারে, তবে এখনই এই এলাকায় বৃষ্টির কোনো সম্ভবনা নেই।’
হিট অ্যালার্ট
তীব্র দাবদাহে জনসাধারণকে সচেতন করতে হিট এলার্ট জারি করেছে জেলা প্রশাসন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে।
সতর্কতার অংশ হিসেবে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের প্রথম পতাকার অন্যতম নকশাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শিবনারায়ণ দাশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে জানানো হয়, ঢাকার একটি হাসপাতালে শুক্রবার সকালে শিবনারায়ণের মৃত্যু হয়, যার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
শিবনারায়ণ দাশের ছেলে অর্ণব আদিত্য দাশ মোবাইল ফোনে ইউএনবিকে বলেন, ‘রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শুক্রবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বাবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।’
কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করা শিবনারায়ণ দাশের বাবা সতীশচন্দ্র দাশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে।
শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রী গীতশ্রী চৌধুরী ও তাদের সন্তান অর্ণব আদিত্য দাশ।
ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন শিবনারায়ণ দাশ। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন তিনি।
ঢাকার পল্টন ময়দানে ১৯৭০ সালের ৭ জুন অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণের কথা ছিল। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী, মতান্তরে ‘ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনী’ গঠন করা হয়। ছাত্রনেতারা এ বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়।
এ লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১০৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন।
এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন।
সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
কামরুল আলম খান (খসরু) তখন ঢাকা নিউ মার্কেটের এক বিহারির দর্জির দোকান থেকে বড় এক টুকরো সবুজ কাপড়ের মাঝে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে নিয়ে আসেন। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়েদে আজম হলের (বর্তমানে তিতুমীর হল) ৩১২ নম্বর কক্ষের এনামুল হকের কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে ট্রেসিং পেপারে আঁকা হয় পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র।
শিবনারায়ণ দাশ পরিশেষে তার নিপুণ হাতে মানচিত্রটি আঁকেন লাল বৃত্তের মাঝে। এমনি করে রচিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৫ বাহিনীর পতাকা, যা কিছুদিন পর স্বীকৃত হয় বাংলাদেশের প্রথম পতাকা হিসেবে।
মন্তব্য