ব্যাংকের শেয়ারের দাম দল বেঁধে বাড়লেও তা ধরে রাখতে না পেরে পরের দিনই পতনের যে বিষয়টি এর আগে একাধিকবার ঘটেছে, তা আবারও দেখা গেল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। সব কটি ব্যাংকের শেয়ার দর বৃদ্ধির পরদিন দু-একটি বাদে কমে গেল সিংহভাগের দাম।
ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাপক দরপতন ঘটল আর্থিক খাতেও। দিনের প্রায় পুরোটা সময় উত্থান হলেও শেষ বেলায় বস্ত্র খাতেও দেখা গেল দরপতন। প্রকৌশল খাতেও দিনটি ভালো যায়নি।
সব মিলিয়ে উত্থানে থাকা পুঁজিবাজারে ছন্দপতন হলো। সকাল ১০টা থেকে লেনদেন শুরু হয়ে বেলা পৌনে একটা পর্যন্ত উত্থানে থাকলেও শেষ পৌনে দুই ঘণ্টায় বিক্রয়ের চাপে সূচকের পতন হলো।
দিন শেষে ১৫ পয়েন্টের পতনে সূচকের অবস্থান ৬ হাজার ৭৭১ পয়েন্ট। অবশ্য এক পর্যায়ে সূচক এখান থেকে ৫০ পয়েন্ট বেশি ছিল। লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যে সূচক এক পর্যায়ে উঠে যায় ৬ হাজার ৮২১ পয়েন্টে। তখন আশা করা হচ্ছিল আরও একটি ঝলমলে দিন বুঝি এলো পুঁজিবাজারে।
তবে শেষ পর্যন্ত যত কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় দেড় গুণ। দর সংশোধনের দিন লেনদেনও কমে গেছে।
দিন শেষে ১৩৮টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২১৬টির। অপরিবর্তিত ছিল বাকি ২০টির দর। লেনদেন নেমেছে আড়াই হাজার কোটি টাকার নিচে। হাতবদল হয়েছে ২ হাজার ৪৬৫ কোটি ৫৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল২ হাজার ৬৭৩ কোটি ৪৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে চাঙাভাবে মূল্য সূচক প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেলেও তার পুরোপুরি ছাপ নেই ব্যাংক খাতে।
সবচেয়ে বড় বাজার মূলধনের খাতটিতে শেয়ারের দাম একেবারে বাড়েনি এমন নয়। তবে কোম্পানিগুলো যে লভ্যাংশ দিয়েছে এবং চলতি বছর যে হারে তারা আয় করেছে, শেয়ারপ্রতি যে সম্পদমূল্য আছে, এসবের বিবেচনায় শেয়ার দর অবমূল্যায়িত বলেই মত দিয়ে থাকেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।
এর ভিড়ে মাঝেমধ্যে ব্যাংকগুলোর শেয়ার দর দল বেঁধে বাড়ে, কিন্তু তা ধরে রাখা যায় না। গত ২৭ মে এক দিনে সব ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়ে যে অবস্থানে পৌঁছে, সেখান থেকে কমে লেনদেন হচ্ছে ২০টির মতো ব্যাংক। আর বেড়েছে ১০ থেকে ১২টির দর।
অথচ চলতি বছর যে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন, তা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত বলা যায়। করোনার বছরে ব্যাংকের আয় কমে আসবে- এমন আশঙ্কায় শেয়ার দর কমছিল, কিন্তু বছর শেষে দেখা যায়, আয় আসলে বেড়েছে। আর লভ্যাংশও বাড়িয়েছে বেশির ভাগ ব্যাংক।
চলতি বছর অর্ধবার্ষিক মুনাফার যে হিসাব প্রকাশ হয়েছে, তাতেও আয়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে বেশির ভাগ ব্যাংকের। কোনো কোনো ব্যাংকের আয় দ্বিগুণ হয়েছে, কোনোটির দেড় গুণ, কোনোটির আড়াই গুণ, কোনোটির তিন গুণ, কোনোটির প্রায় চার গুণ হয়েছে। এমন ব্যাংকও আছে, যেটি গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আয় করেছে এই সময়ে।
এর মধ্যেও ব্যাংকের শেয়ার দর যখন ঝিমোচ্ছে, তখন মঙ্গলবার ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে লেনদেন হওয়া ৩১টিরই শেয়ার দর বেড়েছে। এর মধ্যে চারটির দাম বাড়ে দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই। অর্থাৎ ১০ শতাংশ অথবা আশপাশে। ৫ থেকে ৯ শতাংশের আশপাশে দাম বাড়ে আরও বেশ কয়েকটির।
সেদিন লেনদেন স্থগিত থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক, টানা লোকসানে থাকা আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, নতুন তালিকাভুক্ত সাউথবাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের দর আজও বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই। কিন্তু এর বাইরে কেবল ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১০ পয়সা। কমেছে বাকি ২৮টির দর।
ব্যাংকের দল বেঁধে উত্থানের পর দিনই দল বেঁধে পতনের এই চিত্র এ খাতটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি আর অনিশ্চয়তার বিষয়টিই সামনে নিয়ে এসেছে।
লোকসানি ব্যাংক টানা উত্থানে
ব্যাংক খাতের লাভজনক কোম্পানির আয় যখন আরও বাড়ছে, সে সময় দাম বাড়লে লোকসানি আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের। ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থাকাকাল ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া ব্যাংকটি ২০০৬ সালে পুনর্গঠন করেও লাভের মুখ দেখতে না পারা ব্যাংকটি চলতি বছরেও লোকসানেই আছে।
করোনাকালে ব্যাংক খাতের মুনাফা ব্যাপক বাড়লেও আইসিবি ইসলামী নামে পরিচালিত ব্যাংকটি লোকসান কমাতে পারেনি এক পয়সাও। কিন্তু গত এক বছরে গোটা খাতের মধ্যে এই কোম্পানিটির শেয়ারদরই বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
এই সময়ে শেয়ারটির সর্বনিম্ন দাম ছিল ৩ টাকা ২০ পয়সা। আজ দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৩০ পয়সা।
আগের দুই দিনের ধারাবাহিকতায় আজও ব্যাংকটি শেয়ারদর দিনের সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে লেনেদেন শেষ করেছে।
নিয়মিত আকর্ষণীয় লভ্যাংশ দিয়ে আসছে এমন পুরনো কোম্পানি ঢাকা ব্যাংক, প্রিমিয়ার, এক্মিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, এনসিসি, ওয়ান ব্যাংকের দাম ছাড়িয়ে গেল নতুন তালিকাভুক্ত সাউথ বাংলার শেয়ারদর। মার্কেন্টাইল ব্যাংক ছুঁই ছুঁই দাম এখন এটির।
গত সপ্তাহে লেনদেন শুরুর পর থেকে টানা ৫ কর্মদিবস সর্বোচ্চ পরিমাণে বেড়ে দাম হয়ে গেছে ১৬ টাকা।
তৃতীয় যে ব্যাংকটির দাম দিনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে সেটি হলো এনবিএল। আগের দিন রেকর্ড ডেটের কারণে লেনদেন স্থগিত ছিল ব্যাংকটির। চলতি বছরের ঘোষিত লভ্যাংশ ৫ শতাংশ সমন্বয় হওয়ার পর শেয়ারের দাম হয় ৭ টাকা ৬০ পয়সা। সেখান থেকে এক দিনে বাড়ার সুযোগ ছিল ৭০ পয়সা। গোটা খাতে মন্দার দিন এই পরিমাণই বাড়ল দাম।
আর আগের দিন দল বেঁধে দাম বৃদ্ধির পরদিন দাম কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা কী হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা বোঝা যায় কিছু ব্যাংকের লেনেদেনে।
আগের দিন ৪০ পয়সা দাম বেড়েছিল এবি ব্যাংকের, আজ কমেছে ৬০ পয়সা। একই পরিমাণ দাম বেড়েছিল আল আরাফাহর। আজ কমেছে ১ টাকা ৩০ পয়সা।
ওয়ান ব্যাংকের দাম বেড়েছিল ৮০ পয়সা, আজ কমেছে ৬০ পয়সা। এনসিসির দাম বেড়িছিল ৭০ পয়সা, আজ কমেছে ৫০ পয়সা। ঢাকা ব্যাংকের দাম বেড়েছিল ৮০ পয়সা, আজ কমেছে ৪০ পয়সা। ইসলামী ব্যাংকে দাম বেড়েছিল ৯০ পয়সা, আজ কমেছে ৭০ পয়সা।
৪টি কোম্পানির দাম বৃদ্ধির ভিড়ে ২৮টির পতনের দিন লেনদেনও কমে গেছে। আগের দিন যেখানে হাতবদল হয়েছিল ৪৫২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, আজ হয়েছে ৩৩৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
ব্যাংকের মতোই চিত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এই খাত টানা দুই কর্মদিবস বাড়ার পর পতনও হলো দুই দিন।
খাতটির ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। বাকিগুলোর মধ্যে তিনটির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৮টির। লেনদেন নেমে এসেছে ২২৫ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ৩৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
দরপতন হয়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতেও। চলতি বছর রেকর্ড লভ্যাংশও এই খাতটিকে আকর্ষণীয় করতে পারেনি। ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে কেবল ৫টির। পড়ে গেছে ২৫টির। আর অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৬টির দর। লেনদেনও কমে গেছে। হাতবদল হয়েছে ৫২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার ইউনিট। আগের দিন লেনদেন ছিল ৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার।
উজ্জ্বল দুই খাত
দরপতনের দিনটিতে পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে গত জুন থেকে সংশোধনে থাকা বিমা খাত। টানা দুই দিন দাম বাড়ল এই খাতের শেয়ারগুলোর।
সবচেয়ে বেশি ১২ টাকা ১০ পয়সা বা ৮.৯৯ শতাংশ বেড়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের দর। তবে দর বৃদ্ধি পাওয়া বাকি ৩৬টির হার খুব একটা বেশি নয়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বেড়েছে ২.৯৪ আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা রূপালী লাইফের ২.৮৮ শতাংশ।
তবে শেয়ারদর বাড়লেও লেনদেন কমেছে। সব মিলিয়ে বিমা খাতে হাতবদল হয়েছে ১৬৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা যা আগের দিন ছিল ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
টানা এক বছর ঝিমুতে থাকা বিমা খাত সম্প্রতি যে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে, তার আরেকটি নমুনা দেখা গেল আজ।
এদিন সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায় দুই নম্বরে উঠে আসে শাহজিবাজার পাওয়ার। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৯.৭৯ শতাংশ। এক দিনে এর চেয়ে বেশি বাড়ার সুযোগ ছিল না।
তবে টানা দুই দিন বৃদ্ধি পাওয়ার পর কমেছে কেপিসিএলের দর। সব মিলিয়ে ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৮টির। কমেছে ৫টির।
এই খাতে ব্যাপকভাবে বেড়েছে লেনদেন। আজ হাতবদল হয়েছে ২৫৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকার শেয়ার। যা আগের দিন ছিল ১৫৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
অন্যান্য খাতের যে অবস্থা
আগের দিন দরপতন হওয়া বস্ত্র খাত বেলা একটা পর্যন্ত উজ্জ্বলই দেখাচ্ছিল। তবে শেষ দেড় ঘণ্টায় দাম পড়ে যায় শেয়ারের।
শেষ পর্যন্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমে যায় ৩৪টির। বাড়ে ১৭টির। আর অপরিবর্তিত থাকে বাকি ৭টির দর। লেনদেন কমেছে এই খাতেও। মোট হাতবদল হয়েছে ৩৭৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকার শেয়ার। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ৪০৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের শেয়ারে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। এই খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেন স্থগিত একটির। বাকিগুলোর মধ্যে ১৩টির দাম বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৬টির দর। আর অপরিবর্তিত ছিল একটির।
এই খাতে লেনদেনও বেড়েছে। সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ২৪১ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২১৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে। এই খাতের ২০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৮টির, কমেছে ৯টির, একটির লেনদেন স্থগিত ছিল। আর দুটির দাম ছিল অপরিবর্তিত।
লেনদেন হয়েছে মোট ৫৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
প্রকৌশল খাতে লেনদেন কমে গেছে। হাতবদল হয়েছে ২০১ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ২৫৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
এই খাতের ৪২টি কোম্পনির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫টির। কমেছে ২৭টির।
বিবিধ খাতের বড় মূলধনী কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের দাম বৃদ্ধি পাওয়া সূচকের বড় পতনের হাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি এই খাতে লেনদেনও বাড়িয়েছে। আগের দিন শেয়ার দর কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছিল ১০১ টাকা ৭০ পয়সা। আজ সেটা বেড়ে হয়েছে ১০৫ টাকা ৬০ পয়সা। লেনদেনে যথারীতি সেরা এই কোম্পানিটিই। একটি কোম্পানিতেই লেনদেন হয়েছে ১৩০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
এই খাতের ১৪টি কোম্পানির মধ্যে বেক্সিমকো ছাড়া বেড়েছে আর তিনটির দর। সব মিলিয়ে লেনদেন ১৭৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ১৬৭ কোটি ১২ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন:দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, প্রতিটি অপরাধ ও দুর্নীতির সঙ্গে রাজনীতির যোগসূত্র থাকে। শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি রেখে সামগ্রিকভাবে দেশকে ভালো করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সততা আনতে পারলেই দেশের দুর্নীতি দমনে পরিবর্তন আসবে। আমরা জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সৎ লোককে চাই।
গতকাল মঙ্গলবার দুদকের সম্মেলনকক্ষে রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র্যাক) সদস্যদের এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন কোনো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি মনোনয়ন না পায়, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনে মনোনয়ন বেচাকেনা বন্ধ করতে হবে। এটি যদি বন্ধ না করা যায়, তাহলে দুর্নীতি কখনোই নির্মূল হবে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে প্রায় সর্বস্বান্ত করে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। এসব দুর্নীতির তদন্ত দুদক ভয়ভীতিহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ পলাতক দুর্নীতিবাজদের দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশসহ বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানো কঠিন হলেও দুদকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এ বিষয়ে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম, মহাপরিচালক আবদুল্লাহ-আল-জাহিদ এবং আবু হেনা মোস্তফা জামান।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী ২৩ অক্টোবর। এছাড়া ইনুর সঙ্গে তার আইনজীবীর তিন দিন দুই ঘণ্টা করে সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ইনুর আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। ইনুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নাজনীন নাহার।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ চারজনকে আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জড়িত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য আসামি চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত ১৪ আগস্ট মামলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল মঙ্গলবার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এই আদেশ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৭৩ জন ও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু করে সিআইডি। বিষয়টি সিআইডি থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, মামলা রুজুর পর সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সার্ভার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণ কার্যক্রম শুরু করে সিআইডি। পাশাপাশি সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সকল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে। এভাবে পাঁচ মাসেরও কম সময়ে শেখ হাসিনাসহ মোট ২৮৬ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সিআইডি।
সিআইডি আরও জানায়, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর জুমে একটি মিটিং করে ‘জয় বাংলা ব্রিগেড’ নামের একটি অনলাইন প্লাটফর্ম। সেখানে অংশগ্রহণ করেন দেশ ও বিদেশ থেকে অনেকেই। সিআইডি জনাতে পারে, ওই মিটিংয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের আহ্বান, গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠার ঘোষণাসহ রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য রয়েছে। এসব তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের কাছে অভিযোগ দায়েরের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মার্চে সিআইডিকে অনুমতি দেয়।
এসব তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষার জন্য পাঠালে সেখানে শেখ হাসিনা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. রাব্বি আলমসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের এই রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়। অন্যান্য মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য সিআইডি বিজ্ঞ আদালতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার মাধ্যমে মোট ৯১ জনের গ্রেপ্তার নিশ্চিত করে। এছাড়া বাকি ১৯৫ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।
গতকাল মামলাটির শুনানি ধার্য ছিল। অধিকাংশ আসামি অনুপস্থিত থাকায় আদালত জাতীয় পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারিক আদালতে বিচারকার্য পরিচালিত হওয়ার আদেশ দেন।
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি পোশাক কারখানা ও একটি কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এখনো অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল ও আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন অসংখ্য মানুষ। অনেকে প্রিয়জনের ছবি হাতে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে বলেন, রূপনগরে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়েছে। প্রথমে ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, পরে আবার ৭ জনের মরদেহ নতুন করে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গার্মেন্টস ভবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কেমিক্যাল ভবনের আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং উদ্ধারে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছে। পোশাক কারখানার ভেতরে ঢুকতে পারলেও এখনো রাসায়নিকের গুদামে প্রবেশ করা যায়নি। এই অবস্থায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সকল লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ফায়ার সার্ভিসের কাছে আগুনের সংবাদ আসে। সংবাদ পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ১১টা ৫৬ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে শিয়ালবাড়িতে চারতলা ভবনে থাকা ‘আনোয়ার ফ্যাশন’ নামের একটি পোশাক কারখানা এবং তার পাশে থাকা টিনশেড ঘরে রাসায়নিকের গুদামে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন।
এর মধ্যে কারখানা থেকে ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হওয়ার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস।
বিকেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তল্লাশি অভিযান এখনো চলমান। পাশের যে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে, সেখানে এখনো আগুন জ্বলছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওখানে কাউকে যেতে দিচ্ছি না। আমরা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি দিয়ে, ড্রোন দিয়ে এসব কার্যক্রম করছি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, আগুনের সূত্রপাত এখনো জানা যায়নি। যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও গার্মেন্টস দুই দিকেই আগুন দেখেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, পোশাক কারখানার নিচ তলায় ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন চার তলা পোশাক কারখানার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন লাগার পর কারখানা থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, রাসায়নিকের গুদামে ব্লিচিং পাউডার, প্লাস্টিক, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
ঘটনার পর থেকে রাসায়নিকের গুদামের মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের জানান ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেখে মনে হচ্ছে, এই রাসায়নিকের গুদামের অনুমোদন নেই। যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করে বিস্তারিত পরে জানা যাবে।
এদিকে এ ঘটনায় কেন এত মৃত্যু হলো, প্রাথমিকভাবে তার কয়েকটি কারণ জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তাদের ধারণা, কারখানার পাশে থাকা রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে বিষাক্ত সাদা ধোঁয়া বা টক্সিক গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে, যা ছিল প্রাণঘাতী।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ‘আগুন খুব দ্রুত ‘ডেভেলপ স্টেজ’ বা তৃতীয় ধাপে পৌঁছে যায়, ফলে ভুক্তভোগীরা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।’ এছাড়া যে পোশাক কারখানার ভবন থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ভবনের ছাদের দরজায় দুটি তালা লাগানো ছিল। এর ফলে কারখানার শ্রমিকেরা কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। এছাড়া পোশাক কারখানার ভবন ও রাসায়নিকের গুদাম কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তা সনদ ছিল না বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
কারখানা ভবন ও রাসায়নিকের গুদামে আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং কারখানা ভবনে তল্লাশি অভিযান চলার মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
পোশাক কারখানা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানিয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসায়নিকের গুদামের আগুন এখনো জ্বলছে। সেখানে এখনো ধোঁয়া ও আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগবে। ওই গুদামে ৬-৭ ধরনের রাসায়নিক ছিল।
ঘটনাস্থল থেকে ১৬টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, মরদেহগুলো পোশাক কারখানার ভবনের দোতলা ও তিন তলায় বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। মরদেহগুলোর অবস্থা এমন যে সেগুলো ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করা সম্ভব নয়।
কীভাবে এই আগুনের সূত্রপাত, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এর আগে বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, যারা শুরুতে আগুন নেভাতে এসেছেন, তারা রাসায়নিকের গুদাম ও পোশাক কারখানার দুই দিকেই আগুন দেখেছেন।
তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাসায়নিকের গুদামের পাশে একটি ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে। সেখানে প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামের ছড়িয়ে পড়লে সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন পোশাক কারখানার ওই পাঁচ তলা ভবনে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই কারখানা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় আরএন ফ্যাশন নামের একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। সেখানে গেঞ্জি তৈরি করা হতো। দোতলায় ছিল টি-শার্ট প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, নাম স্মার্ট প্রিন্টিং। আর পাঁচ তলায় বিসমিল্লাহ ফ্যাশন নামে আরেকটি প্রিন্ট কারখানা চলছিল। আগুন লাগার পর কারখানা ভবন থেকে শ্রমিকেরা নানাভাবে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই অনেকে আটকা পড়েন।
ঘটনার পর থেকে রাসানিকের গুদামের মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফায়ার ব্রিগেডের পরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামটির কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান বা লাইসেন্স ছিল না।’
প্রধান উপদেষ্টার শোক
অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা নিহত ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
প্রধান উপদেষ্টা অগ্নিকাণ্ডে আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন।
তারেক রহমানের শোক
মিরপুরে আগুনের ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই শোকবার্তা দেন। শোকবার্তায় তারেক রহমান নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের দ্রুত পূর্ণ সুস্থতার দোয়া করেন।
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার মান নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অবশ্যই কাজ করতে হবে। যাতে অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে। সরকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে অগ্নিদুর্ঘটনার তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান দায়ীদের অবিলম্বে জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রিয়জনদের হারানো অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও হৃদয়বিদারক। আমরা এই শোকের সময়ে তাদের পরিবারের পাশে আছি।’
শেরপুরের নকলায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বসতবাড়ি ও মাঠে চাষযোগ্য জমিতে আগাম শীতকালীন শাক-সবজি আবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চত্বরে বীজ ও সার বিতরণের উদ্বোধন করেন নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মুরসালিন মেহেদী বলেন, বীজ ও সার মাঠে আবাদ না করে যদি কোনো কৃষক বিক্রির উদ্দেশ্যে অসদুপায় অবলম্বন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ২৩০ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ৯ প্যাকেট করে মোট ২ হাজার ৭০ প্যাকেট সবজির বীজ এবং ৪০৫ কৃষকের মাঝে মাঠে চাষযোগ্য ২০ শতাংশ জমির জন্য লাউ, বেগুন, শসা, মিষ্টিকুমড়াসহ যেকোনো সবজির ১ প্যাকেট করে বীজসহ ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় যৌথ অভিযানে প্রায় ১৪ কোটি টাকার অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল জব্দ করেছে কুষ্টিয়া ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় বিজিবি জানায়, গত ১১ ও ১২ অক্টোবর উপজেলার সীমান্তবর্তী আশ্রায়ণ বিওপির আওতাধীন এলাকায় অভিযানকালে উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চল্লিশপাড়া ও মদনের ঘাট এলাকায় ৩৫ হাজার কেজি অবৈধ চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা। পরে গত সোমবার দুপুরে এসব অবৈধ জাল ধ্বংস করেন পরিচালক (অপারেশন) যশোর সদর দপ্তর, দক্ষিণ-পশ্চিম রিজিয়ন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান শিকদারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব মুর্শেদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হোসেন আহমেদ।
রাঙামাটির বিলাইছড়িতে নদীতে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল নয়টায় এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ হওয়ার দুঘণ্টা পর স্থানয়ীরা মাছের জাল দিয়ে নিহত নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত নারী হলেন লতা মার্মা (৩৩)। তিনি কেংড়াছড়ি গ্রামের মিলন কান্তি চাকমার স্ত্রী। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বিলাইছড়ি থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত মানস বড়ুয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে কেংড়াছড়ি থেকে নৌকাযোগে বিলাইছড়ি বাজার আসার পথে কেরণছড়ি এলাকায় এসে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মাছের জাল দিয়ে তল্লাশির পর বেলা সারে এগারটায় তার মরদেহ উদ্ধার হয়। নিহতের স্বামী মিলন কান্তি চাকমা জানিয়েছেন তার স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তাদের সংসারে দুই মেয়ে এক ছেলে রয়েছে।
মন্তব্য