কোনো সম্পদ নেই, উল্টো শেয়ারপ্রতি দায় ১১৩ টাকা ৬৩ পয়সা। কোম্পানির রিজার্ভে কোনো অর্থ নেই, উল্টো দায় ২ হাজার ৭৪২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি ১২৬ টাকা ৩৬ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব এখনও প্রকাশ করেনি। তবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০ টাকার শেয়ারে লোকসান ছিল ১১ টাকা ৩৮ পয়সা।
এমন একটি কোম্পানিতে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকার কোনো যৌক্তিক কারণ ছিল না। কিন্তু তৈরি হয়েছে এই আগ্রহ। জুলাই থেকে আর্থিক খাতের ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার দর বেড়েছে ৪৯.২০ শতাংশ।
৩০ জুন কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি দাম ছিল ৬ টাকা ৩০ পয়সা। ১ থেকে ৪ জুন কোনো লেনদেনের রেকর্ড পাওয়া যায়নি। ৬ জুলাই কোম্পানিটির বোর্ড পুনর্গঠন করা হয় আর তার আগের কর্মদিবসে এক লাফে প্রায় ১০ শতাংশ দাম বেড়ে যায়। এরপর টানা বাড়তে বাড়তে দাম এখন ৯ টাকা ৪০ পয়সা।
অথচ গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়া ন্যাশনাল ব্যাংক বা এনবিএলের দাম এই ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ কম। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকটি চাপে থাকলেও ২০২০ সালে ৩৬১ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছে।
আলোচিত ব্যাংকার পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে ডুবেছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। একই ব্যাংকারের কারণে ডুবে যাওয়া ফাস ফিনান্সের দামও বেড়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের মতোই।
এই কোম্পানিটির বোর্ড পুনর্গঠন করা হয় গত ৩১ মার্চ। এই কোম্পানিটি ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ১০ টাকা ১২ পয়সা। তখন শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য মাত্র ১ টাকা ৯৩ পয়সা। তবে এখন নিশ্চিতভাবেই তা ঋণাত্মকে চলে গেছে। কারণ, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ৮ টাকা ৫৪ পয়সা। কোম্পানির রিজার্ভে দায় আছে ১ হাজার ২০২ কোটি ৮০ লাখ টাকার।
এমন দুর্বল কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠনেও সে সময় দামে উল্লম্ফন হয়নি। বরং ১ এপ্রিল এই সংবাদ আসার দিন সকালে কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৪ টাকা ৭০ পয়সা। এক দিনে কমে যতটা সম্ভব ততটাই, ৪ টাকা ৩০ পয়সায় নেমে আসে।
কিন্তু এখন দাম ৮ টাকা ৩০ পয়সা। অর্থাৎ এপ্রিল থেকে দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
একই দিন বোর্ড পুনর্গঠন করা লোকসানি ফারইস্ট ফিনান্সের শেয়ার মূল্য ছিল ৩ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু দাম এখন ৮ টাকা ৯০ পয়সা। দাম হয়ে গেছে আড়াই গুণেরও বেশি।
তারও আগে ২২ জানুয়ারি বোর্ড পুনর্গঠন করা বিআইএফসি ২০১৮ সালের পূর্ণাঙ্গ আর্থিক বিবরণীই এখনও প্রকাশ করেনি। ২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি ৬৯ টাকা ৫৫ পয়সা লোকসান, ৬৬ টাকা ৪০ পয়সা দায়, ৭৬৯ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণাত্মক রিজার্ভ থাকা কোম্পানিটি ২০১৮ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত কেবল হিসাব দিয়েছে। ২০১৮ সালে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৪ টাকা ৭৯ পয়সা, আর শেয়ারপ্রতি দায় ছিল ৮৪ টাকা ২৪ পয়সা।
এমন দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দর বোর্ড পুনর্গঠনের আগের দিন ছিল ৪ টাকা ৭০ পয়সা। বর্তমান দাম ৭ টাকা।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বেশ কিছু বন্ধ, লোকসানি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে সেগুলোতে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে উৎপাদনে চলে আসে আলহাজ টেক্সটাইল ও রিংশাইন টেক্সটাইল। আর এমারেল্ড অয়েল আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে।
কোম্পানিগুলো কখন বা আদৌ চালু হবে কি না, এ নিয়ে সংশয় ছিল। তবে এখন বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পাওয়ার আশায় আছেন।
কিন্তু বিএসইসির বোর্ড পুনর্গঠন মানেই যে সব কোম্পানি উৎপাদনে আসবে এমন নয়। কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এর আগে নিউজবাংলাকে বলেছেন, নতুন বোর্ড কোম্পানির দায়, দেনা, সম্পদের বিষয়টি বিবেচনা করে তা অবসায়নেরও সুপারিশ করতে পারে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিউজবাংলাসহ কয়েকটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও ফ্যামিলি টেক্স নিয়ে তারা হতাশ। এগুলো আদৌ চালু করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। সে ক্ষেত্রে তারা মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করবেন।
তবে এ বিষয়ে এখনো বিএসইসির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি আর তার আগেই শেয়ার মূল্য বেড়ে গেছে বহুগুণ।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এই দুটি কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে বিএসইসি। সেদিন সিঅ্যান্ডএর শেয়ার মূল্য ছিল ২ টাকা আর ফ্যামিলি টেক্সের ছিল ২ টাকা ৭০ পয়সা।
সিঅ্যান্ডএর শেয়ারের বর্তমান দাম ৬ টাকা ৭০ পয়সা, আর ফ্যামিলি টেক্সের ৫ টাকা ৭০ পয়সা। সর্বশেষ কর্মদিবসে সিঅ্যান্ডএর শেয়ার মূল্য বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই। অন্যদিকে ফ্যামিলি টেক্সের শেয়ার মূল্য দিনে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বাড়ার সুযোগ ছিল, বেড়েছে ৪০ পয়সা।
বোর্ড পুনর্গঠন বা মালিকানায় পরিবর্তন এলেই যে কোম্পানি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না, তার উদাহরণ পুঁজিবাজারেই আছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া ওরিয়েন্টাল ব্যাংককে পুনর্গঠন করে নতুন মালিকানা পরিবর্তন করেও ব্যাংকটিকে জাগানো সম্ভব হয়নি।
ব্যাংকটির পরিচালকদের মাধ্যমে ৬০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ডুবন্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয় ২০০৬ সালের ১৯ জুন। ব্যাংকটি অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর দুই বছর ধরে বেনামে থাকা শেয়ার বাজেয়াপ্ত করাসহ আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় একটি পুনর্গঠন স্কিম তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই স্কিমের আওতায় ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার মালয়েশিয়াভিত্তিক কোম্পানি আইসিবি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপ হোল্ডিং এজি লিমিটেডের কাছে বিক্রি করা হয়। গত ১০ বছর ধরে এই গ্রুপের অধীনে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক নামে পরিচালিত হচ্ছে ব্যাংকটি। কিন্তু ১৩ বছরেও মুনাফার মুখ দেখেনি ব্যাংকটি। ফলে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
আইসিবি ইসলামী ব্যাংক মুনাফায় যদি ফেরেও, তার পরেও তার ১ হাজার ৮৩০ কোটি ৬৩ লাখ টাকার দায় কবে পূরণ করবে, তার নেই কোনো নিশ্চয়তা। ফলে আপাতত লভ্যাংশ পাওয়ার আশা না করাই ভালো।
এই ব্যাংকটি ১৩ বছরেও লাভের মুখ দেখতে না পারলেও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফাস ফিনান্স বা ফারইস্ট ফিনান্সে কোন আশায় শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা, সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া কঠিন।
বন্ধ, লোকসানি কোম্পানির দাম বাড়ল লাফিয়ে লাফিয়ে
এখন পুঁজিবাজারে এমন লোকসানি ও বন্ধ কোম্পানির জোয়ার। বোর্ড পুনর্গঠন হতে যাচ্ছে বা হয়েছে, এমন খবরেই সেই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে তৈরি হচ্ছে হুলুস্থুল।
যেমন নুরানী ডায়িং। ২০২০ সালে শেয়ারপ্রতি ৪১ পয়সা আর চলতি অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ৯৫ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ বলে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমে খবর আসে। সোমবার কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য ছিল ১১ টাকা ৪০ পয়সা। দুই দিন টানা কমে বুধবার দাম দাঁড়ায় ৯ টাকা ৯০ পয়সা। আর দিন শেষে বিএসইসির বিজ্ঞপ্তি আসে কোম্পানিটির বোর্ড পুনর্গঠনে।
আর এ খবরে বৃহস্পতিবার আবার শেয়ার দর দেয় লাফ। সেদিন শেয়ার দর ৯০ পয়সা বাড়ার সুযোগ ছিল। বেড়েছেও তাই। আবার আতঙ্কে আগের দিন যত শেয়ার বিক্রি হয়েছিল, পরের দিন বিক্রি হয়েছে তার অর্ধেকেরও কম। অর্থাৎ দর আরও বাড়বে ভেবে তা ধরে রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা।
বোর্ড পুনর্গঠন না হলেও আর্থিক খাতের লোকসানি ফার্স্ট ফিনান্সের শেয়ারদরও বাড়ছে তরতর করে।
২০২০ সালের চূড়ান্ত হিসাব এখনও প্রকাশ না করা কোম্পানিটি গত বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ২ টাকা ৩০ পয়সা। অথচ গত দুই কর্মদিবসে ৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে এনবিএলের সমান দাম ৮ টাকায় পৌঁছে গেছে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য ছিল ৪ টাকা ৩০ পয়সা।
মালিকানা বদল দাম বাড়ার আরেক অনুষঙ্গ। গত বছর শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা ৬২ পয়সা ও ৩০ জুলাই সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ১ টাকা ২১ পয়সা লোকসান দেয়া বিবিধ খাতের মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর বাড়ছে গত ১৩ জুলাই থেকে। সেদিন শেয়ার দর ছিল ৩১ টাকা ২০ পয়সা, বর্তমান দাম ৪৫ টাকা ২০ পয়সা।
কোম্পানিটি নতুন মালিকের অধীনে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে এবং এ খবরেই দামে এই ঊর্ধ্বগতি।
বস্ত্র খাতের তাল্লু স্পিনিংয়ের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। এই কোম্পানিটিরও মালিকানা বদলের গুঞ্জন আছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর লোকসান দেয়া কোম্পানিটি ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাবই দেয়নি।
কোম্পানিটির শেয়ার দর বাড়ছে গত ৫ এপ্রিল থেকে। সেদিন দর ছিল ৩ টাকা ৯০ পয়সা। বর্তমান দর ১১ টাকা ৫০ পয়সা। এর মধ্যে সবশেষ চার কর্মদিবসের মধ্যে তিনটিতে বেড়েছে এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততই। গত ৩ আগস্টও দাম ছিল ৭ টাকা ৯০ পয়সা। এরপর ৫ কর্মদিবসে বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
বস্ত্র খাতেরই আরেক কোম্পানি তুংহাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ২০১৭ সালের হিসাবই দেয়নি। কোম্পানিটি নিয়ে অন্ধকারে বিনিয়োগকারীরা। অথচ গত ৮ জুন থেকে দাম বেড়ে হয়ে গেছে আড়াই গুণ। সেদিন শেয়ার দর ছিল ৩ টাকা ২০ পয়সা। বর্তমান দর ৭ টাকা ৭০ পয়সা। তিন কর্মদিবসে দাম বেড়েছে ১৮.৪৬ শতাংশ।
মিথুন নিটিংয়ের দর গত ১ জুন ছিল ৯ টাকা ১০ পয়সা। বর্তমান দাম ১৮ টাকা। বেড়েছে প্রায় ১০০ শতাংশ। এর মধ্যে গত ২৯ জুলাইয়ের পর সাত কর্মদিবসে বেড়েছে ৫ টাকা। এই কয়দিনেই বেড়েছে ২৭.৭৭ শতাংশ।
সরকারি লোকসানি কোম্পানির দাম মুনাফায় ডুবে থাকা কোম্পানির চেয়ে কম
প্রতিবছর আকর্ষণীয় মুনাফা করা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পাওয়ার গ্রিডের চেয়ে বেশি দাম লোকসানে জর্জরিত সরকারি চিনিকল শ্যামপুর সুগারের। কেবল চার কর্মদিবসে ২৮.২৯ শতাংশ বেড়ে ৬২ টাকা ২০ পয়সার শেয়ার হয়ে গেছে ৭৯ টাকা ৮০ পয়সা।
আরেক চিনিকল জিলবাংলা সুগারের দাম গত চার বছরে শেয়ারপ্রতি সর্বনিম্ন ১৮ টাকা ১৩ পয়সা মুনাফা করা যমুনা অয়েলের প্রায় কাছাকাছি। অথচ গত বছর শেয়ারপ্রতি ৯৩ টাকার বেশি লোকসান দেয়া জিলবাংলা ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে আরও ৪৭ টাকা ৮ পয়সা লোকসান দিয়ে আছে।
যমুনা অয়েলের শেয়ার মূল্য ১৭৮ টাকা ৭০ পয়সা আর জিলবাংলার ১৬৯ টাকা ২০ পয়সা।
জিলবাংলার দাম গত ২৭ জুলাই থেকে বেড়েছে ৮৮ শতাংশ।
এই দুটি কোম্পানিকে বিদেশি বিনিয়োগে আধুনিকায়ন করে চালুর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে সরকার আর কেবল এ খবরেই এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম।
অন্যদিকে উৎপাদন বন্ধ থাকা সিভিও পেট্রোক্যামিকেলকে আবার কাঁচামাল কনডেনসেট সরবরাহে রাজি হয়েছে সরকার। আর এতে তারা উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের সঙ্গে কাদামাটি ও জ্বালানি তেলে পরিপূর্ণ আরও যে উপাদানগুলো আসে, তাকে বলে কনডেনসেট আর সেখান থেকে ডিজেল ও আরও কিছু উপাদান পাওয়া যায়। সেগুলো আলাদা করে বিক্রি করত কোম্পানিটি।
২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে কোম্পানিতে কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিপিবি। এরপর থেকে উৎপাদন বন্ধ তাদের। সম্প্রতি বিপিসির সঙ্গে এ ধরনের কোম্পানিগুলোর সমঝোতা হয়েছে বলে খবর এসেছে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি।
এই আলোচনা চলছে, এমন সংবাদে গত ২২ জুন থেকে দাম অল্প করে বাড়তে থাকে। সেদিন দাম ছিল ৮৩ টাকা ২০ পয়সা। আর সমঝোতা হওয়ার আগে ২ আগস্ট দাম ছিল ১১১ টাকা ৯০ পয়সা। সেখান থেকে মাত্র ছয় কর্মদিবসে দাম পৌঁছেছে ১৫৫ টাকা ৫০ পয়সা। এই কয়দিনেই বেড়েছে ৩৮.৯৬ শতাংশ।
উৎপাদন শুরুর আলোচনা থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিডি ওয়েল্ডিংয়ের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায় গত ৬ জুন থেকে। সেদিন দাম ছিল ১৫ টাকা ৭০ পয়সা। বর্তমান দাম ২৩ টাকা। এই কয় দিনে বেড়েছে ৪৬.৪৯ শতাংশ।
আরেক লোকসানি কোম্পানি জুট স্পিনার্সের পরিচালনা পর্ষদকে গত ২৫ মে আরও ১০টি কোম্পানির সঙ্গে তলব করে বিএসইসি। তলব করার দিন শেয়ার দর ছিল ৯৮ টাকা। বর্তমান দাম ১৫৮ টাকা। বেড়েছে ৬০ টাকা বা ৬১.২২ শতাংশ।
২০১২ সালের পর থেকে লোকসানের কারণে কখনও লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটি গত মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি লোকসান দিয়েছে ৩৩ টাকা ৮৩ পয়সা। গত বছরে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল ১৪৭ টাকা ৪৪ পয়সা।
ঝুঁকি কোথায়
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিনিয়োগকারীরা এসব জাংক শেয়ারে অতি নির্ভরশীল হলে দুটি ক্ষতি হতে পারে। উচ্চমূল্যে যারা শেয়ার কিনে থাকেন, পরে তারা দাম কমতে থাকলে লোকসান দিয়ে বের হতে পারেন না। বছর বছর লভ্যাংশ না আসায় এসব শেয়ার কম দামে কিনেই সমন্বয় করতে হয়। আবার একবার দাম বৃদ্ধির প্রবণতা বন্ধ হয়ে গেছে দ্বিতীয়বার সেই প্রবণতা আসতে সময় লাগে।
দ্বিতীয়ত, তুলনামূলক দাম কম হয় বলে মৌলভিত্তির ভালো কোম্পানিবিমুখ হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। যারা ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন, তারাও ভাবতে থাকেন, এসব কোম্পানিতে থেকে কী লাভ। তার চেয়ে জাংক শেয়ারে বিনিয়োগ লাভজনক। এতে বাজারে দীর্ঘমেয়াদে এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা যেভাবে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সেটিকে অস্বাভাবিক আচরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। বিনিয়োগকারীরা এখন ঢালাওভাবে লোকসানি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করছেন। তবে তারা সেসব কোম্পানি থেকে মুনাফাও পাচ্ছেন। ফলে এসব কোম্পানির প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি।’
এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিটা কী, সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বলেন, ‘এ ধরনের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে লাস্ট বলটি যার হাতে থাকবে, তিনি লোকসানের মুখে পড়বেন।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের গবেষণা বিভাগের সাবেক প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নানা কারণে একটি কোম্পানি লোকসানি হতে পারে। অনেক কোম্পানি আছে যেগুলো পরবর্তী সময়ে মুনাফা বা উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি দুই ধরনের কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের দেখতে হবে এর মধ্যে কোন কোম্পানিগুলো উৎপাদনে গিয়ে লোকসান কাটানোর সম্ভাবনা আছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন বিএসইসি লোকসানি কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করে দিচ্ছে, কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া বিনিয়োগকারীরা সেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে একসময় তাই ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হবে।
‘দুর্বল নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেগুলো আছে সেগুলো অন্যান্য যেকোনো কোম্পানির তুলনায় অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আর এই ঝুঁকি থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতেই বিএসইসি সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানির শেয়ার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, যা এসব কোম্পানিতে ঢালাও বিনিয়োগ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হবে।’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করেই সম্প্রতি কিছু কোম্পানির দর বৃদ্ধি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে এমন কোম্পানিও আছে, যেগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে কমিশন।’
আরও পড়ুন:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভোট দিলে বেহেশতে যাওয়া সহজ হবে, এমন প্রচারণা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল আয়োজিত কোরআন অবমাননা ও বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, জামায়াত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা কিছু ছেলেপেলেকে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার, কটূক্তি ও করুচিপূর্ণ কথা ছড়ানোর বাহিনী গড়ে তুলেছে। এরা মিথ্যাকে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রচার করছে প্রতিনিয়ত।
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত আওয়ামী লীগের লেজ ধরে চলতে ভালোবাসে, এখনো কেন যেন আওয়ামী লীগের ভোট নেওয়ার জন্য কায়দা কানুন করছে। শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইসলামের মৌলিক নীতির বাইরে কথা বলছে তারা।’
সাধারণ মানুষ পিআর সম্পর্কে জানে না জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘যারা নভেম্বরে গণভোটের কথা বলছেন তাদের কোনো মাস্টারপ্ল্যান আছে, তারা শর্ত দিয়ে বিভ্রান্ত করে জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চাচ্ছে।’
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আগামীর স্বপ্নপূরণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য প্রস্তুতি লাগবে।
তিনি বলেন, যোগ্য হয়েই সুযোগ্য স্থানে অধিষ্ঠিত হতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠানটির ছাত্র সংসদের আয়োজনে ১ম এমডিসি জাতীয় স্কুল, কলেজ ও আন্তঃমাদ্রাসা বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্রান্ড ফিনালে ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমাদেরকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা একটি স্থানে আসতে পেরেছি। এখানেই শেষ নয়, আরো বহুদূর যেতে হবে। এই পথ পাড়ি দিতে কোনো বাঁধা আসলে আমাদেরকে থেমে গেলে চলবে না। সকল বাঁধা অতিক্রম করেই এগিয়ে যেতে হবে।’
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. খালিদ বলেন, সকল ভেদাভেদ ও মতপার্থক্য ভুলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যে সুযোগ এসেছে সেটাকে পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে হবে। এ সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলে আমাদেরকে বহুবছর সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তিনি সকলকে কালেমা তায়্যেবার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান।
পরে উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী দলের সদস্যদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উল্লেখ্য, তিন মাসব্যাপী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ৫৪টি প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।
স্কুল ক্যাটেগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুগদা আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রানারআপ হয়েছে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
কলেজ ও উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে নটর ডেম কলেজ চ্যাম্পিয়ন এবং মনিপুর স্কুল ও কলেজ রানারআপ হয়েছে।
মাদ্রাসা ক্যাটাগরিতে তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা চ্যাম্পিয়ন এবং বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মাদানীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ড. শামসুল আলম, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মনিরুজ্জামান ভূইয়া, আল ফাতাহ পাবলিকেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সাঈদ, ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি আবু সাদিক কায়েম, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রফেসর নুরুন্নবী মানিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হয়ে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আয়োজিত মানববন্ধনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন ও উপদেষ্টা পর্যায়ে দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কিছু উপদেষ্টা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন। কারা কারা ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের তালিকা ও রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।
তিনি আরো দাবি করেন, বর্তমানে ডিসি, এসপি ও ইউএনও নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এই নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারের কিছু উপদেষ্টা, যারা নিজেরা নিরপেক্ষ থাকার কথা বললেও, মূলত একটি দলের হয়ে ভূমিকা রাখছেন।
তাহের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই ষড়যন্ত্র থামাতে হবে। প্রশাসনের ভেতর দলীয় প্রভাব ও গোপন মদদ থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। যারা নির্বাচনের নামে নাটক করতে চায়, জনগণ তা মেনে নেবে না।
জামায়াতের পক্ষ থেকে আবারও গণভোটের দাবি তুলে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি গণভোট আয়োজন করতে হবে। এতে জনগণের ইচ্ছা ও বাস্তবতা পরিস্কার হবে। স্বচ্ছতা থাকলে ২১ দিনেই গণভোট সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, একটি দল মুখে গণতন্ত্র ও সংস্কারের কথা বললেও ঐক্যমতের ক্ষেত্রে তারা অনুপস্থিত। জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য আমরা রাজপথে থাকব। প্রয়োজন হলে আরও বড় কর্মসূচিতে যাব।
জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার জবাবে তাহের বলেন, জামায়াত দখলবাজি করে না, চাঁদাবাজি করে না। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। ক্ষমতায় গেলে কৃষকের ঋণ মামলাগুলো প্রত্যাহার করব। আমরা সুষ্ঠু ও ন্যায়ভিত্তিক বিচার চাই, যেন-তেন বিচার নয়।
তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণমানুষের দাবি মেনে নিতে হবে। গণভোট দিতে হবে। পিআর পদ্ধতি মানতে হবে। আর যারা খুন-গুমে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ব সদরদী এলাকায় যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে পড়ে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো অন্তত ১০ জন। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অন্য একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালগামী ইউরো লাইন পরিবহনের বাসটি খাদে পড়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহত শামসুন্নাহার বেগম (৪১) বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী।
আহতদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা গেছে, শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় ইউরো লাইন পরিবহনের বাসটি। এ সময় বাসটি উল্টে খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই এক নারী নিহত হন। পরে ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ সময় সড়কের দুই দিকে বিপুল পরিমাণ গাড়ি আটকা পড়ে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রোকিবুজ্জামান জানান, একে অপরকে ওভারটেক করতে গেলে শ্যামলী পরিবহনের ধাক্কায় ইউরো লাইন বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান চালাই। দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি উদ্ধার করা হয়েছে।
একইসাথে শ্যামলী পরিবহন বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন 'শতফুল ফুটতে দাও'।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের এক মিশ্র সভাতে ইউনিয়নবাসীর সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। সভাতে মাদ্রাসার শিক্ষক, মুসলিম-হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ, রাজনীতিক ব্যাক্তিত্ব সহ অনেক শ্রেণিপেশার মানুষ ছিলেন।
এ সময় বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনারা দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারেন নি। আমরা যে লড়াইটা করেছি, সংগ্রামটা করেছি, ছেলেরা যে কারনে প্রাণ দিয়েছে এটা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা আপনারা সকলে বুঝেন। আপনারা যা বলবেন সেটাই৷ অর্থাৎ আপনারা ভোট দিবেন আপনার পছন্দের প্রার্থীকে। সে প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে যাবেন। পার্লামেন্টে গিয়ে জনগণের কথা বলবে, আপনাদের কথা বলবে। এটাকে আমরা বলি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।
তিনি আরও বলেন, এবারে এ ব্যবস্থাটার একটু পরিবর্তন হচ্ছে। এবারে দুইটা পার্লামেন্ট থাকবে। একটা নিম্নকক্ষ আরেকটাকে বলে উচ্চকক্ষ। নিম্নকক্ষে আমরা যারা যাবো তারা নির্বাচিত হয়ে যাবো। আর উচ্চকক্ষে যে দলগুলো পার্লামেন্টে যাবে তাদের যে প্রতিনিধির সংখ্যা থাকে সে অনুযায়ী তারা উচ্চকক্ষে যাবে৷ এরপরেও বিভিন্ন সেক্টরের কিছু মানুষ যাবে। যেমন হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ। আলেম সসাজের কিছু মানুষ। আমাদের বিদ্যান, পন্ডিত মানুষ যারা আছেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। তারাও সেখানে থাকবে। এভাবে এমন একটা পার্লামেন্ট হবে যে পার্লামেন্ট সত্যিকার অর্থে জনগণের কথা বলবে। এটা একটা দলের কর্তৃত্ব থাকবেনা। এটা নিয়ম মাফিক, যেটা আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলি। ফলে যেটা পনেরো বছর দু:শাসন হয়েছে, ফ্যাসিজম হয়েছে সে জিনিসটা থেকে থেকে আমরা হবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৫ আগস্টে যে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান দেশ নতুন করে সাজানোর সুযোগ হয়েছে। আমরা নতুন করে দেশটা সাজাতে চাই। অনেক মত থাকবে, অনেক মত একমত হবেনা। মতগুলোকে পার্লামেন্টে আনতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে মানুষ একটা সিদ্ধান্ত পাবে। দেশটা সেভাবে চলবে।
তিনি বলেন, আমরা এ কথাটা বারবার বলছি যে, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। এখানে সকল ধর্মের মানুষ থাকবে। এখানে যারা হিন্দু আছেন তারা হিন্দু ধর্ম পালন করবে, তাদের মন্দির সুরক্ষিত থাকতে হবে। যারা ইসলাম ধর্ম পালন করে তাদের মসজিত সুরক্ষিত থাকতে হবে। মানুষের কথা বলার সুযোগ সুরক্ষিত থাকতে হবে। এই যে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই মিলে থাকাটাই আমাদের বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, একটা কথা আছেনা। 'শত ফুল ফুটতে দাও'। শতফুল ফুটলে একটা বগানে সে ফুলের সৌরভ সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে যাবে৷ আমরা আর বিভেদের রাজনীতি চাইনা। আমরা হিন্দুমুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টানের মধ্যে কোন বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইনা। আমরা হিংসার রাজনীকে পশ্রয় দিতে চাইনা। আমরা চাই একটা শান্তির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হোক।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমাদের নেতা শহিদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। তিনি নয়মাস দেশটার জন্য যুদ্ধ করেছেন। আমরা যুদ্ধ করেছি। আমাদের সবার চাওয়া ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতার যে অস্তিত্ব সেটা ভুলে যাওয়ার কোন কারন নাই। আমরা স্বাধীনতা ভুলে যেতে পারিনা। ঠিক একইভাবে চব্বিশের ৫ আগস্ট আমরা ভুরবোনা। কারন এই দিন আমাদের ছেলেরা রক্ত দিয়েছে। আমাদের উপর যে একটা দানব এসে বসেছিলো সেটা সরিয়ে দিয়েছে। এটাকেউ আমরা ভুলতে পারবোনা। এই যে এক সাথে সবকিছুকে নিয়ে চলা এটাই হবে নতুন বাংলাদেশ।
এরপরে পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার শুকানপুকুরি ইউনিয়নে মতবিনিময় সভা করে মির্জা ফখরুল। সেখানে নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শিষের জন্য ভোট চান তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: পয়গাম আলী, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, পৌর বিএনপির সভাপতি শরীফুল ইসলাম শরীফ সহ বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা।
দৈনিক বাংলার চরফ্যাশন প্রতিনিধি মো. সাইফুল ইসলামকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন চরফ্যাশন পৌর শ্রমিকলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম সবুজ। এঘটনায় সাংবাদিক মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে চরফ্যাশন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে চরফ্যাশন পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম এর বসতবাড়ি সংলগ্ন জামে মসজিদের সামনে প্রকাশ্য হত্যার হুমকির ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক চরফ্যাশন রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক বাংলা পত্রিকায় চরফ্যাশন উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।
সাংবাদিক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'শ্রমিকলীগ নেতা সবুজের স্ত্রী একটি সরকারী প্রাইমারী স্কুলে সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন। ২০২৫ সনের ২০ জানুয়ারী তার স্ত্রী শ্রেণী কক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্লাসে তার শিশু কন্যাকে টেবিলে বসিয়ে বাকবাকুম পায়রা কবিতা পাড়িয়ে ভিডিও চিত্র ধারন করেন। ওই ভিডিও তার ব্যাক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে পোষ্ট করে ক্যাপশন লিখেন “ম্যাডাম যখন দ্বিতীয় শ্রেণীর ইংরেজি ক্লাসে বাকবাকুম পায়রা কবিতা শেখায়” এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এঘটনা নিয়ে একাধিক জাতীয় দৈনিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। আমি তার প্রতিবেশী হওয়ায় তার স্ত্রীকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশে আমার ইন্দন রয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে সে আমার সাথে বিরোধ শুরু করেন। এনিয়ে শ্রমিকলীগ নেতা সবুজ আমার ওপরে ক্ষিপ্ত হন। আমাকে একাধিকবার মামলায় হয়রানীর হুমকি দেন। ফের মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকলীগ নেতা আমার প্রতিবেশী হওয়ায় তার সঙ্গে মসজিদের সমানে দেখা হয়। তার স্ত্রীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে তর্ক হয়। ওই তর্কের জেরে এলাকার মানুষের সামনে প্রকাশ্যে আমাকে ও আমার বাবাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের তোপে মুখে তিনি ওই স্থান থেকে পালিয়ে যান।'
তিনি আরো অভিযোগ করেন, ওই শ্রমিকলীগ নেতা আমাকে ইতিপূর্বেও একধিকবার হত্যার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু ফের আমাকে পুড়িয়ে হত্যার হুমকি দেয়ায় আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। এঘটনায় আমি আইনি সহায়তা চেয়ে চরফ্যাশন থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছি।
অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ নেতা সবুজ হুমকির বিষয় অস্বীকার করে জানান, তাদের সাথে আমার কোন বিরোধ নাই। তাকে হুমকি কেন দিবো।
চরফ্যাশন থানার ওসি মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, হুমকির ঘটনায় সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাটোর জেলার সেপ্টেম্বর মাসের শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বড়াইগ্রাম থানা। একই সঙ্গে জেলার শ্রেষ্ঠ পুলিশ অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন বড়াইগ্রাম থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) রাকিবুল ইসলাম। মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও বিভিন্ন মামলার আসামি গ্রেফতারে বিশেষ সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি এই পুরস্কার অর্জন করেন।
বড়াইগ্রাম থানার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ থানার পুরস্কার গ্রহণ করেন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ গোলাম সারোয়ার। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর ২০২৫) নাটোর জেলা পুলিশ লাইন্স কনফারেন্স রুমে সেপ্টেম্বর মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ তারিকুল ইসলাম পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।সভায় জেলার সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মামলার নিষ্পত্তি, ওয়ারেন্ট তামিল, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক মামলা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, চুরি-ডাকাতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, নাটোর জেলার আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার। তিনি চাঁদাবাজি রোধ, রাত্রিকালীন টহল জোরদার এবং চুরি-ডাকাতি ও দস্যুতা নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও জোরদারের নির্দেশনা দেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইফতে খায়ের আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমিন নেলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) শোভন চন্দ্র হোড়, জেলার সব থানার অফিসার ইনচার্জ, সিআইডি প্রতিনিধি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নাটোর জেলার শ্রেষ্ঠ থানা বড়াইগ্রাম এবং শ্রেষ্ঠ এসআই রাকিবুল ইসলামের সাফল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ গোলাম সারোয়ার বলেন, এই অর্জন বড়াইগ্রাম থানার পুরো টিমের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। মাদক নির্মূল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা দিন-রাত পরিশ্রম করছি। এই স্বীকৃতি আমাদের আরও দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে উৎসাহিত করবে। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া কোনো সাফল্য সম্ভব নয়, তাই জনসাধারণের সহযোগিতাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
মন্তব্য