× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

পুঁজিবাজার
Investigation The question is about the selection of 9 companies of BSEC
google_news print-icon

তদন্ত: বিএসইসির ৯ কোম্পানি বাছাই নিয়েই প্রশ্ন

তদন্ত-বিএসইসির-৯-কোম্পানি-বাছাই-নিয়েই-প্রশ্ন
বিএসইসি ভবন। ছবি: নিউজবাংলা
চার বছর পর উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে এমারেল্ড অয়েল। ঢাকা ডায়িং টানা চার বছর বিপুল পরিমাণ লোকসান দেয়ার পর টানা দুই বছর মুনাফায় ফিরেছে। তিন বছর চাপে থাকা ন্যাশনাল ফিড এবার আকর্ষণীয় মুনাফার তথ্য জানিয়েছে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে। বিএনআইসিএলের চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে আরও দুই বিমা কোম্পানির দর, বিকন ফার্মার মুনাফায় প্রবৃদ্ধি তাক লাগানোর মতো। পেপার প্রসেসিং নিয়ে তদন্ত হলে তমিজউদ্দিন নিয়ে কেন নয়, সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা নেই। তবে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ও জিবিবি পাওয়ারের দাম কেন বাড়ছে তার কোনো ব্যাখ্যাই নেই।

চার বছর ধরে বন্ধ থাকা এমারেল্ড অয়েল যখন উৎপাদনে আসার ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে সময় কোম্পানির শেয়ারদর তিন গুণের বেশি বেড়েছে।

একে অস্বাভাবিক ভেবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে। তবে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই এক বছরে ৭ থেকে ৮ বা ১০ গুণের বেশি দাম বেড়েছে, এমন কোম্পানির নাম নেই তদন্ত শুরুর নির্দেশ দেয়া ৯ কোম্পানির তালিকায়।

২০১০ সালের মহাধসের পর গত বছরের জুলাই থেকে পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলো তাদের হারিয়ে ফেলা শেয়ারদর ফিরে পাচ্ছে, তখন দ্বিতীয়বার এই ধরনের নির্দেশনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে, এটা স্পষ্ট।

মঙ্গলবার লেনদেন চলাকালে দুপুরের দিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানায়, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স, বিকন ফার্মা, জিবিবি পাওয়ার, এমারেল্ড অয়েল, ন্যাশনাল ফিড মিল, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ঢাকা ডায়িং এবং ফুয়াং সিরামিক কোম্পানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি তদন্ত হবে।

বিএসইসির পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমান, সহকারী পরিচালক জিয়াউর রহমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট বিভাগের প্রধান মইনুল হক এই তদন্ত করবেন। কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করবেন শেখ মাহবুব উর রহমান।

আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই নির্দেশ আসার সময় লেনদেন চলছিল। আর বাজার আগের দিনের চেয়ে বেশি ছিল ৩২ পয়েন্ট। লেনদেনও আগের দিনের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত ছিল। তবে গণমাধ্যমে নির্দেশনার খবরটি আসার পর শুরু হয় দরপতন। অবশ্য শেষ বেলায় সবচেয়ে বড় বাজার মূলধনের ব্যাংক খাতের শেয়ারগুলোর অল্প করে দর বৃদ্ধি আর আর্থিক খাতে উল্লম্ফনের পর দিন শেষে সূচক কমে ১০ পয়েন্টের মতো।

লেনদেন শেষে সেই ৯ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির তদন্ত নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা শুরু হয় পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক পেজে। তখনই স্পষ্ট হয় যে, একধরনের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ফলে সেই নির্দেশনার প্রভাবটি মূলত পড়েছে দ্বিতীয় দিন।

দ্বিতীয় দিন একপর্যায়ে সূচক কমে যায় ৭৭ পয়েন্ট। তবে দিন শেষে ক্রয়চাপে তা আগের দিনের চেয়ে ৫ পয়েন্ট বেড়েছে। তবে বাজার নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেটা স্পষ্ট। লেনদেন একদিনেই কমেছে ৬১২ কোটি টাকা।

গত এক বছরে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার আভাসে শতাধিক কোম্পানির শেয়ার দর শতকরা হিসেবে ১০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বেড়েছে এমন কোম্পানিরও অভাব নেই।

এর মধ্যে কিছু কোম্পানির দর বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে বন্ধ থাকা বেশ কিছু কোম্পানিতে প্রাণ ফেরাতে বিএসইসির বোর্ড পুনর্গঠন করে দেয়া, দুটির এরই মধ্যে উৎপাদনে ফিরে আসা, আরও একটি উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দেয়ায় বাকি কোম্পানিগুলো নিয়েও আগ্রহী হয়ে উঠেছে বিনিয়োগকারীরা। এতে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের যে শেয়ারদর দুই টাকা বা আশেপাশে নেমে এসেছিল, সেগুলোর বেশ কয়েকটি তিন থেকে চারগুণ বেড়েছে।

পুঁজিবাজার চাঙা থাকার প্রভাবেও কোম্পানিগুলোর আয় বেড়েছে দুটি কারণে। প্রথমত, শেয়ারের দাম বাড়ায় সেগুলো বিক্রি করে মুনাফা করেছে তারা; দ্বিতীয়ত, লোকসানের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে না। বরং আগের সংরক্ষণ করা সঞ্চিতি এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে।

তবে তদন্ত শুরুর ঘোষণা দেয়া এই ৯টি কোম্পানি নয়, বরং এগুলোর শেয়ারদর যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে এমন কোম্পানির অভাব নেই।

যেমন বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়ে প্রায় ৮ গুণ হয়েছে, ১০ গুণের মতো হয়েছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক কমলেও ৫ গুণের মতো বেড়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের দর। এই আদেশ আসার দিনও সর্বোচ্চ পরিমাণে বাড়া বন্ধ থাকা তাল্লু স্পিনিংয়ের দরও বেড়েছে ব্যাপকভাবে।

নয়টি কোম্পানি কোন বিবেচনায় বাছাই করা হলো- জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কোম্পানিগুলো সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তদন্ত: বিএসইসির ৯ কোম্পানি বাছাই নিয়েই প্রশ্ন
ধানের কুঁড়া থেকে উৎপাদিত এমারেল্ড অয়েল ব্র্যান্ডের ভোজ্য তেল স্পন্দন

দারুণ খবরে বেড়েছে এমারেল্ড অয়েলের দর

যে নয়টির বিষয়ে তদন্ত হবে, তার মধ্যে এই কোম্পানির প্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে। ২০১৭ সালে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটির উৎপাদন আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন মালিকানায় আবার চালুর ঘোষণা এসেছে। এখানে উৎপাদিত ধানের কুঁড়ার তেল দেশের পাশাপাশি জাপানে রপ্তানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এই কোম্পানিটির বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে বিএসইসি নিজেই। জাপান প্রবাসী এক বাংলাদেশির ‘মিনোরি বাংলাদেশ’ নামে কোম্পানির মালিকানায় আসছে। আগের মালিকদের খেলাপি ঋণের দায় তারা নিয়ে এর বিপরীতে শেয়ারগুলো ধারণ করতে চায় তারা। ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা ইতিবাচকভাবেই এগিয়েছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে কোম্পানিটি ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদনকারী দেশসেরা প্রতিষ্ঠান ছিল। ‘স্পন্দন’ নামে সেই তেলের ব্র্যান্ড তখন দেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল এবং এই তেলের মার্কেট শেয়ারের সিংহভাগই ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে।

কোম্পানির শেয়ারদরও একপর্যায়ে ৬০ টাকার কাছাকাছি ছিল। পরে যদিও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে আগে তা ৩০ টাকার ঘরে নেমে এসেছিল। সেই সময়ের তুলনায় এই তেলের দাম এখন দ্বিগুণ প্রায়।

তদন্ত: বিএসইসির ৯ কোম্পানি বাছাই নিয়েই প্রশ্ন
ঢাকা ডাইংয়ের ফ্যাক্টরি

ঢাকা ডায়িংয়ের দাম বৃদ্ধি কি অস্বাভাবিক?

ঢাকা ডায়িংয়ের কোনো ঘোষণা নেই। কোম্পানিটি তার দীর্ঘ লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় ফিরেছে। ২০১৫ সালের পর ২০২০ সালের জন্য কোম্পানিটি প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। চলতি বছরও মুনাফায় আছে।

মাঝে লভ্যাংশ না দেয়া বছরগুলোতে ২০১৬ সালে শেয়ার প্রতি লোকসান ছিল ৩ টাকা ৩০ পয়সা। পরের তিনি বছর শেয়ারপ্রতি যথাক্রমে ৩ টাকা ৯৬ পয়সা, ৪ টাকা ১০ পয়সা ও ৪ টাকা ২৫ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটি ২০২০ সালে শেয়ার প্রতি ১৭ পয়সা আয় করে ১ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে।

দুই বছর হিসাব না দেয়া কোম্পানিটির ২০২০ সালের হিসাব প্রকাশ পেয়েছে সম্প্রতি। আর এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে তিনটি প্রান্তিকের হিসাব প্রকাশ হয় একবারে। আর গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৪৭ পয়সা মুনাফা করেছে তারা। ফলে এবার আরও ভালো মুনাফার প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীরা করতেই পারেন।

বুলবুল আহমেদ নামে এক বিনিয়োগকারী বলেছেন, এই কোম্পানি যে মুনাফায় ফিরছে তার কোনো ইঙ্গিত ছিল না। কারণ, গত কয়েক বছর কোম্পানিটি প্রান্তিকের হিসাব দেয়নি। এখানে বরং বিএসইসিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করা যায়।

তদন্ত: বিএসইসির ৯ কোম্পানি বাছাই নিয়েই প্রশ্ন
ন্যাশনাল ফিডের কারখানা

দুর্বলতা কাটিয়ে আগাচ্ছে ন্যাশনাল ফিড

২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ফিডমিল গত তিন বছরে বেশ চাপে ছিল। লোকসানে না থাকলেও ২০১৮ সালে শেয়ার প্রতি ৫৬ পয়সা, ২০১৯ সালে ১৫ পয়সা আর ২০২০ সালে আয় ছিল ১৭ পয়সা। তবে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে তাদের আয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে তৃতীয় প্রান্তিক মার্চ পর্যন্ত শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা আয় ছিল তাদের।

এটি প্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আর চাপ থেকে বেরিয়ে আসলে কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে, এটা অস্বাভাবিক নয়। ২০১৮ সালে ৩ শতাংশ, ২০১৯ সালে ১ শতাংশ আর ২০২০ সালে ২ শতাংশ নগদের পাশাপাশি ৮ শতাংশ বোনাস পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

এখন যে দাম, শেয়ারটির সর্বোচ্চ দাম তার চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশিও ছিল। গত জুনে দাম ছিল ৪৪ টাকা ৮০ পয়সা। সেখান থেকে সংশোধন হয়ে দাম এখন ৩০ টাকার কিছু বেশি।

এটাও ঠিক যে, পুঁজিবাজারে ধস নামার পর শেয়ারটির দাম কমে ৮ টাকা ৭০ পয়সায় নেমে এসেছিল। কিন্তু ধসের বাজারের শেয়ারদরকে মান হিসেবে ধরে নেয়া ঠিক কি না, সে প্রশ্ন অবান্তর নয় মোটেও।

তদন্ত: বিএসইসির ৯ কোম্পানি বাছাই নিয়েই প্রশ্ন
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের অনলাইন বিমার উদ্বোধন করছেন কর্তাব্যক্তিরা। ফাইল ছবি

কেবল বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স কেন

বিএসইসি যে বিমা কোম্পানিটিকে বেছে নিয়েছে সেটির দাম গত এক বছরে অস্বাভাবিক বেড়েছে সত্য। তবে যখন দাম বাড়ছিল, সে সময় কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এখন যখন পড়তির দিকে, তখন কেন তারা উদ্যোগী হয়েছে, সে প্রশ্ন রেখেছেন পাপ্পু নামে এক বিনিয়োগকারী।

গত এক বছরে সাধারণ বিমার মধ্যে অস্বাভাবিক দাম কেবল বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের বাড়েনি। এই খাতের প্রায় সব কোম্পানিরই উল্লম্ফন ঘটেছে দামে। বরং গত জুন থেকে বাড়তি দাম কমে কমতে শুরু করেছে। এই কোম্পানির সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৫৮ টাকা, এখন তা ১১০ এর ঘরে নেমে এসেছে।

এর চেয়ে বেশি দাম বেড়েছে প্রভাতী, পাইওনিয়ারের দর। ১৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার যুক্ত হওয়ার পরও গত বছর ২০ টাকার নিতে থাকা প্রভাতীর দাম এখনও ১৮০ টাকার ঘরে, আর ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়রে পর গত বছর ৩০ টাকার নিচে থাকা পাইওনিয়ারের দর এখন ১৩০ টাকার আশেপাশে।

২০২০ সালের জুলাইয়ের শুরুতে প্রভাতীর দাম ছিল ২০ টাকার কম আর পাইওনিয়ারের ৩০ টাকার আশেপাশে। সে সময় বিএনআইসিএলের দরও ছিল প্রভাতীর কাছাকাছি।

কেবল এই তিনটি নয়, নানা সিদ্ধান্ত আর গুঞ্জনে বিমা খাত গত বছরের জুলাই থেকে ব্যাপক চাঙা থাকে গত জুন পর্যন্ত। জুনের মাঝামাঝি থেকে দর সংশোধন শুরু কলে কোম্পানিগুলো বরং ৩০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি দর হারানোর পর বিনিয়োগকারীরা এখন হতাশ।

যখন দাম কেবল বাড়ছিল, সে সময় বারবার প্রশ্ন উঠেছে এ নিয়ে। কিন্তু বিএসইসি কোনো পদক্ষেপেই নেয়নি।

ওটিসি থেকে ফেরা কি কেবল পেপার প্রসেসিংয়ের দাম বেড়েছে?

আর পেপার প্রসেসিং সম্প্রতি ওটিসি মার্কেট থেকে পুঁজিবাজারে আসার চার কোম্পানির একটি। গত ১৩ জুন ফেরা চারটি কোম্পানির মধ্যে শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এই কোম্পানিটির।

ফেরার দিন শেয়ারপ্রতি দাম ছিল ১৭ টাকা আর বিএসইসি তদন্তের ঘোষণা দেয়ার দিন দাম ছিল ১৬৪ টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ সাড়ে ৯ গুণ বেড়েছে দাম। নির্দেশনা আবার পর দাম কমে এক পর্যায়ে ১৪৫ টাকায় নেমে এলেও পরে তা আবার বেড়ে ১৭০ টাকাও ছাড়িয়ে যায়।

প্রায় এক্ই হারে বেড়েছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দর। ওটিসি থেকে শেয়ার প্রতি ১২ টাকা দামে ফেরা কোম্পানিটির শেয়ারদর এক পর্যায়ে টানা বেড়ে ৯৪ টাকায় উঠে গিয়েছিল। এরপর কিছুটা কমে তা এখন ৮০ টাকার বেশি।

তদন্ত: বিএসইসির ৯ কোম্পানি বাছাই নিয়েই প্রশ্ন
অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের শেয়ারের দর

শেয়ারপ্রতি দর ১০০ টাকার বেশি বেড়েছে মনস্পুল পেপারেরও। সেটি অবশ্য ৫০ টাকা দাম নিয়ে ফিরেছিল মূল মার্কেটে। অন্যদিকে ১০ টাকায় ফেরা মুন্নু ফেব্রিকস ৩৭ টাকায় উঠার পর তা কমে ২০ টাকার ঘরে নেমে বিনিয়োগকারীদেরকে ব্যাপক লোকসান ফেলেছে।

প্রশ্ন উঠেছে ওটিসি থেকে ফেরা দুটি কোম্পানির দামই একই রকম হারে বাড়লেও একটি রেখে একটির তদন্ত কেন। এই প্রশ্নের কোনো ব্যাখ্যা বিএসইসি দেয়নি।

ফুওয়াং সিরামিকস

ফুওয়াং সিরামিকদের দর অস্বাভাবিভাবে বেড়েছে সত্য, কিন্তু সেটার পেছনে কারণ নেই, এমন নয়। বিএসইসি বেশ কিছু বন্ধ, লোকসানি বা উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার সংখ্যা কম, এমন কোম্পানিগুলোর বোর্ড পুনর্গঠন করে সেগুলোকে জীবন দেয়ার চেষ্টা করছে।

ফুওয়াং সিরামিক বন্ধ কোম্পানি না হলেও এতে উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার সংখ্যা বেশ কম। আর তাদের শেয়ারের হিস্যা বাড়াতে হবে। না করলে পরিণতি কী হয়, তা ফুওয়াং ফুডের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। উদ্যোক্তা পরিচালকরা বাজার থেকে শেয়ার কিনে তাদের হিস্যা ৩০ শতাংশে উন্নীত না করায় সেটির বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে বিএসইসি।

তদন্ত: বিএসইসির ৯ কোম্পানি বাছাই নিয়েই প্রশ্ন

বিকন ফার্মা

বিকম ফার্মার দর গত দুই বছরে ১০ গুণ হয়ে গেছে। আর এক বছরে বেড়েছে তিন গুণের বেশি। এক পর্যায়ে কোম্পানিটির শেয়ার দর এই খাতের সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানি স্কয়ারের দরকে ছাড়িয় যাওয়া নিয় তৈরি হয় প্রশ্ন।

তবে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মহামারিকালে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, এমন একটি ওষুধ বানায় কোম্পানিটি। আর দেশে একমাত্র তারাই উৎপাদন করে সেটি।

দুই বছর আগে যে শেয়ার ২০ টাকার ঘরে নিয়মিত লেনদেন হতো, আর শেয়ার প্রতি আয় ছিল ৫০ পয়সার আশেপাশে। চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ২৭ পয়সা। ৩০ জুন অর্থবছরের হিসাব প্রকাশ হলে বোঝা যাবে চূড়ান্ত আয়ে প্রবৃদ্ধি কত হলো।

ক্যান্সারের ওষুধ প্রস্তুত করা কোম্পানিটি ২০১৬ সালে শেয়ার প্রতি ২৭ পয়সা আয় করেছিল। পরের বছর তা হয় ৪৫ পয়সা। ২০১৮ সালে তা আরেকটু বেড়ে হয় ৫৫ পয়সা, আর ২০১৯ সালে ৫১ পয়সা।

তবে ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি আয় তিনগুণ বেড়ে হয় ১ টাকা ৬৫ পয়সা আর চলতি বছর ৯ মাসেই আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ আয় করে ফেলেছে তারা। এই বিষয়টিই প্রলুব্ধ করতে পারে বিনিয়োগকারীদের।

জিবিবি আওয়ার আর আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের দর বৃদ্ধির ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন

গত এক বছরে জ্বালানি খাতের শেয়ারগুলো ঝিমিয়ে থাকলেও জিবিবি পাওয়ারের শেয়ার দর বেড়ে তিন গুণ হয়ে গেছে। শেয়ার প্রতি আয় আহামরি বেড়েছে, এমন নয়।

গত বছর শেয়ার প্রতি ১ টাকা ১৪ পয়সা আয় করা কোম্পানিটি এবার ৯ মাসে শেয়ার প্রতি সমপরিমাণ আয় করেছে। অর্থাৎ আয় বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের দাম বৃদ্ধিও প্রশ্নের বাইরে নয়। এক বছরে ৭৩ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৩৪ টাকায় উঠে যায় শেয়ার দর। এ সময়ে শেয়ার প্রতি আয় খুব একটা বেড়েছে এমন নয়। গত বছর শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৩ পয়সা আয় করা কোম্পানিটি গত ৩০ জুলাই সমাপ্ত অর্থবছরে প্রথম তিন প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ২ টাকা ১৪ পয়সা আয় করেছে। অর্থৎ আয় বেড়েছে ৩০ শতাংশের মতো। কিন্তু শেয়ারদর বেড়েছে সাড়ে চার গুণের বেশি।

তদন্তের নির্দেশ নিয়ে বিএসইসির পিছু হটার কাহিনি

গত ১২ জানুয়ারিও বিএসইসির এমন একটি নির্দেশনা চাঙা পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি করে। সে সময় জানানো হয়, গত ৩০ কার্যদিবসে যেসব কোম্পানির শেয়ার দর ৫০ শতাংশ বেড়েছে বা কমেছে সেসব কোম্পানির বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

নির্দেশনাটি আসে লেনদেনের পরে। আর পরের দিন ডিএইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এর পতন হয় ৯১ পয়েন্ট। আর সেই দিনই সেই নির্দেশনাটি প্র্রত্যাহার করা হয়।

নতুন নির্দেশনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাবার। এরপর অবশ্য মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ১২ শতাংশ করার আদেশ জারির পর ১৪ জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত দীর্ঘ সংশোধনে যায় পুঁজিবাজার। আর সেই নির্দেশনা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করার পাশাপাশি মার্জিন ঋণের অনুপাত বাড়ানোর পর ৫ এপ্রিল থেকে ঘুড়ে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার।

তদন্তে ঘোষণা দেয়া কি জরুরি?

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, টানা এক দশকের মন্দাভাবের পর পুঁজিবাজার যখন স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে, লেনদেন যখন তিন হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই হয়ে শেয়ারগুলো হারানো দর ফিরে পাওয়ার অবস্থায়, সে সময় এই ধরনের তদন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে করার কিছু নেই। বিএসইসি অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

অবশ্য পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্তের আগে নির্দেশনা জারি করার অর্থ হচ্ছে সে কোম্পানিকে সর্তক করা। বিনিয়োগকারীদের সে কোম্পানিতে বিনিয়োগের বিষয়ে অ্যালার্ম দেয়া।’

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘অতিমূল্যায়িত কোম্পানির তদন্তের পরের চেয়ে আগে জানানোই ভালো। কারণ, আগে জানালে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়ার সুযোগ থাকবে।’

তবে এবারের নির্দেশনাটি অন্য রকম জানিয়ে দেবব্রত কুমার বলেন, ‘এর আগেও বিএসইসি কোনো কোম্পানি অস্বাভাবিক দাম বাড়লে সেগুলো তদন্ত বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে এখন যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটি স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে যে, এসব কোম্পানির ক্ষেত্রে কোন ইনসাইডার ট্রেডিং হয়েছে কি না সেটি তদন্ত করা হবে। ফলে এ নির্দেশনা কে নেতিবাচকভাবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএসইসি যে নির্দেশনা দিয়েছে সেখানে নেতিবাচক কিছু আছে বলে আমি দেখছি না। নির্দেশনা স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে আইনের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সূচক উত্থান-পতন থাকবে এটা স্বাভাবিক বিষয়। এখানে নির্দেশনা ভূমিকা আছে এটি আমি মনে করি না।’

আরও পড়ুন:
বোনাস শেয়ারে লাগাম দিয়ে বিএসইসির আদেশ
‘আরও ভালো হবে পুঁজিবাজার, ভয়ে শেয়ার বিক্রি নয়’
উদ্যোক্তা সহায়ক ফান্ডে সমর্থন বিএসইসি’র
‘সব খাত মুভিং, আর পেছনে তাকাতে হবে না’
আমদানি পণ্য আমরা রপ্তানি করছি: বিএসইসি চেয়ারম্যান

মন্তব্য

আরও পড়ুন

পুঁজিবাজার
The capital market is indicating to turn around

ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার

ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার ডিএসইর একটি ব্রোকারেজ হাউসে বিনিয়োগকারীরা। ফাইল ছবি
পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে বুধবার। তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৫৮ পয়েন্ট। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এসে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনেও বাড়তি গতি এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।

ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পুঁজিবাজার। বুধবারের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারও দেশের পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। সে সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের গতি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি সবক’টি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইতে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে হাফ ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান।

পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মেলে বুধবার। তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে ৫৮ পয়েন্ট। তবে লেনদেন কমে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এসে মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কিছুটা ফিরে এসেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।

এদিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হতে থাকে।

এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ৩০৩টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে। দিনের সর্বোচ্চ দামে এ সাত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ শেয়ার ক্রয়ের আদেশ এলেও বিক্রিয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, শাহিনপুকুর সিরামিক, পেপার প্রসেসিং, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং এবং পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স।

দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এ সাত প্রতিষ্ঠান দাপট দেখানোর পাশাপাশি আরও প্রায় এক ডজনের প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার সর্বোচ্চসীমার কাছাকাছি চলে আসে। আর ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ৪ শতাংশের ওপরে বেড়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৯৪১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৯৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ বেড়ে ৬০০ কোটি টাকার ওপরে চলে এসেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪২২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে বেস্ট হোল্ডিংয়ের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের ২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন সন।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফু-ওয়াং সিরামিক, মালেক স্পিনিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিস, রবি, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এবং ওরিয়ন ফার্মা।

অপরদিকে সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৭৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৭টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন:
‘বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিতে সক্ষম বেস্ট হোল্ডিংস’
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দৃঢ় ও সম্ভাবনাময়: বিএসইসি চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজারে ৮ বছরে বিনিয়োগকারী কমেছে ১৪ লাখ
পুঁজিবাজারে বিমা খাতের দাপট, সূচকের উত্থান
পুঁজিবাজারে কারসাজি রোধে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি

মন্তব্য

পুঁজিবাজার
Good news index in the capital market is the highest in 15 months

পুঁজিবাজারে সূচক ১৫ মাসে সর্বোচ্চ

পুঁজিবাজারে সূচক ১৫ মাসে সর্বোচ্চ ফাইল ছবি।
সপ্তাহের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার ডিএসইতে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো।

পুঁজিবাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার লেনদেন বেড়ে এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর এটাই সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।

সপ্তাহের শেষ দিনে ডিএসইতে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) মূল্যসূচক বেড়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো। একই সঙ্গে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর বা ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৪২ পয়েন্ট বেড়ে যায়।

অবশ্য লেনদেনের শেষদিকে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে যায়। পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় থাকা বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার হার কমে আসে। একই সঙ্গে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতাও কমে। এমনকি ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে।

লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। দাম কমেছে ১৪০টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৪টির।

দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৩০টির দাম ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে হল্টেড হয়েছে ৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।

ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ৮ নভেম্বরের পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৮৪ পয়েন্ট।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ১৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৮৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার দিনে ডিএসইতে এক হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় এক হাজার ৭৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকার। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে ২ হাজার ৮৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর আর দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।

এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ৬৫ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার। ৫৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মালেক স্পিনিং, ফরচুন সুজ, ফু-ওয়াং সিরামিক, ফু-ওয়াং ফুড, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, এডভেন্ট ফার্মা এবং বিডি থাই অ্যালুমিনিয়াম।

অপর সিএসই-তে সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১২০ পয়েন্ট। এখানে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩০৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২০টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন:
লেনদেন ও সূচকে হতাশার মাঝে শেষ দিনে আশা
‘বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিতে সক্ষম বেস্ট হোল্ডিংস’
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দৃঢ় ও সম্ভাবনাময়: বিএসইসি চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজারে বিমা খাতের দাপট, সূচকের উত্থান
পুঁজিবাজারে কারসাজি রোধে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি

মন্তব্য

পুঁজিবাজার
23 more Subatas floor price free returns to the capital market

পুঁজিবাজারে সুবাতাস, ‘ফ্লোর প্রাইস’মুক্ত আরও ২৩ কোম্পানি

পুঁজিবাজারে সুবাতাস, ‘ফ্লোর প্রাইস’মুক্ত আরও ২৩ কোম্পানি ফাইল ছবি।
ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে বিএসইসি’র পদক্ষেপ যে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, তা এক কার্যদিবসের ব্যবধানেই প্রমাণ হয়ে গেছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। সোমবার সূচক বাড়ার পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ছয় মাসের বেশি সময় পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর ছাড়িয়েছে।

শেয়ারের ওপর থেকে বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার সুফল মিলতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজারে। ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকি সব শেয়ারের ওপর থেকে ‘ফ্লোর প্রাইস’ তুলে নেয়ার এক কার্যদিবস পরই সোমবার লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর ছুঁয়েছে।

ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরবর্তী কার্যদিবসে রোববার পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনে বড় নিম্নমুখিতা দেখা যায়। অবশ্য বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সক্রিয় ভূমিকায় ওইদিন আরও বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা পায় স্টক এক্সচেঞ্জ।

তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসইসি’র পদক্ষেপ যে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, তা প্রমাণ হয়ে গেছে পরবর্তী কার্যদিবসেই। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজার। সোমবার সূচক বাড়ার পাশাপাশি দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছয় মাসেরও বেশি সময় পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা ৩৫ কোম্পানির মধ্যে আরও ২৩ কোম্পানির সর্বনিম্ন দরসীমা সোমবার তুলে নিয়েছে বিএসইসি।

সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্ত বাজারকে আগামী কয়েক দিনের জন্য কিছুটা নিম্নমুখী করতে পারে- এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বাজারে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় ভূমিকার কারণে গত দুদিন আমাদের ধারণার তুলনায় মার্কেট অনেকটা ভালো আচরণ করেছে। ধারণা ছিল যে, এতগুলো শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস যেহেতু একবারে তোলা হয়েছে, সেহেতু কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০০ পয়েন্ট পর্যন্ত সূচক কমতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সাপোর্ট মার্কেটকে একটা স্ট্যাবল অবস্থানে রাখতে সাহায্য করেছে।’

নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য তাদের আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

তবে নতুন করে ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার নেতিবাচক একটা দিক আগামী কয়েক দিন বাজারে দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষক মো. আল-আমিন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি সংক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত থাকলে এ ক্ষেত্রে বাজারের জন্য সহায়ক হতে পারে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সোমবার লেনদেন শুরুর ২ মিনিট পর অতিরিক্ত বিক্রির চাপে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৬০ পয়েন্ট কমে যায়। পরে অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে সূচক বাড়তে থাকে। দিন শেষে সূচকটি ১৪ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে অবস্থান নেয়। এর আগের কার্যদিবস রোববার লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে।

ডিএসইএক্স সূচকটিকে পতনের দিকে ঠেলে দিতে সোমবার সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে জিপিএইচ ইস্পাত, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ফরচুন সুজ, বিবিএসই ক্যাবলস ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। তবে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, খান ব্রাদার্স পিপি, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের ইতিবাচক ভূমিকায় সূচক দিন শেষে বেড়েছে।

ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে এদিন লেনদেন শেষে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬০ পয়েন্টে। আগের দিন লেনদেন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে।

বাছাইকৃত শেয়ারের সমন্বয়ে গঠিত ব্লু-চিপ সূচক ডিএস ৩০ দিনের ব্যবধানে ১০ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে। আগের দিন শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ২ হাজার ১৩৭ পয়েন্টে।

ডিএসইতে সোমবার মোট ১ হাজার ৪২ কোটি ২১ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। এর আগে এক্সচেঞ্জটিতে সবশেষ ১ হাজার কোটি টাকার ঘরে লেনদেন হয়েছিল গত বছরের ১৮ জুলাই। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ।

সোমবারের লেনদেন আগের কার্যদিবসের (রোববার) চেয়ে ৭৭ শতাংশ বেশি। ডিএসইতে এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২০৭টির, কমেছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪০টি সিকিউরিটিজের বাজার দর।

এদিকে বাজারকে সক্রিয় রাখতে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন ‘সিইও ফোরাম’ থেকে সাপোর্ট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি।

সিদ্ধান্ত অনুসারে, পুঁজিবাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রত্যেক ডিলার অ্যাকাউন্টে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো শেয়ার বিক্রি করা হবে না। বিনিয়োগকারীদেরকে ইতিবাচকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। যেসব শেয়ারের ক্রেতা থাকবে না, সেখানে বিক্রির আদেশ বসানো হবে না। ট্রেডারদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হন বা বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি না করেন, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতেও বলা হবে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বহাল

পুঁজিবাজারে এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৯২টি। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ৩৫৭টি শেয়ারদরের সর্বনিম্ন সীমা তুলে নেয় বিএসইসি। আর নতুন করে আজ আরও ২৩ কোম্পানির ওপর থেকে সীমা তুলে নেয়ার পর কেবল ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকল। নতুন এই ২৩ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হওয়া সব কোম্পানির শেয়ারদর ওঠানামার সার্কিট ব্রেকার আগের মতোই ১০ শতাংশ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো শেয়ারের দাম ১০ শতাংশের বেশি কমতে বা বাড়তে পারবে না।

যে ১২ কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকছে- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা লিমিটেড, রবি আজিয়াটা ও শাহজীবাজার পাওয়ার লিমিটেড।

এই ১২ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস কবে তুলে নেয়া হতে পারে এমন প্রশ্নে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের লেনদেন ও বাজার পরিস্থিতি দেখে কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ফ্লোর ধরে রাখা কোম্পানিগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। বাজারের প্রতি তারা যেন নেতিবাচক না হন, তাই পরের ধাপে এসব কোম্পানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

আরও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে গভর্নরের সহযোগিতা চাইলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান
লেনদেন ও সূচকে হতাশার মাঝে শেষ দিনে আশা
‘বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিতে সক্ষম বেস্ট হোল্ডিংস’
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দৃঢ় ও সম্ভাবনাময়: বিএসইসি চেয়ারম্যান

মন্তব্য

পুঁজিবাজার
Finally the capital market is free from floor price barriers but

অবশেষে ফ্লোর প্রাইসের বাধামুক্ত হলো পুঁজিবাজার, তবে…

অবশেষে ফ্লোর প্রাইসের বাধামুক্ত হলো পুঁজিবাজার, তবে…
বিএসইসি বৃহস্পতিবার এক আদেশ জারি করে পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়। একইসঙ্গে তাতে বলা হয়, দৈনিক লেনদেনের সার্কিট ব্রেকার অর্থাৎ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরসীমা কার্যকর থাকবে। আর ৩৫টি কোম্পানি এখনও ফ্লোর প্রাইস-এর আওতায় থাকবে।

ফ্লোর প্রাইসের বাধামুক্ত হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর অবশেষে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে এই পদক্ষেপ। তবে নির্দিষ্ট ৩৫টি কোম্পানি ফ্লোর প্রাইজের এই শর্তের মধ্যেই থেকে গেছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দরসীমা বেঁধে দেয়ার ফ্লোর প্রাইজ জারি হয়েছিলো প্রায় দেড় বছর আগে। অবশ্য এর আগে ২০২০ সালে আরও একবার ফ্লোর প্রাইস দিয়ে তা ২০২১ সালে তুলে নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি। তবে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির সুরক্ষা দিতে এতো দীর্ঘ সময় ধরে ফ্লোর প্রাইস এর আগে দেখা যায়নি দেশের পুঁজিবাজারে।

বিএসইসি বৃহস্পতিবার এক আদেশ জারি করে পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়। ওই আদেশে একইসঙ্গে জানানো হয়, ৩৫টি কোম্পানি এখনও ফ্লোর প্রাইস-এর আওতায় থাকবে। কবে নাগাদ ওইসব কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হবে তা জানায়নি কমিশন।

আদেশে কমিশন জানিয়েছে, ৩৫টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আগের মতোই স্বাভাবিক লেনদেন হবে। তবে দৈনিক লেনদেনের সার্কিট ব্রেকার অর্থাৎ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরসীমা কার্যকর থাকবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একদিনে কোনো শেয়ারের দর সর্বোচ্চ দশ শতাংশ বাড়তে পারে, কমার ক্ষেত্রেও সমপরিমাণ দর কমতে পারে।

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পুঁজিবাজার নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন অনেক বিনিয়োগকারী। তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়ে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তাদের সেই শঙ্কা অনেকাংশেই কেটেছে। সুদিন ফিরতে শুরু করেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারেই।

সদ্য শেষ হওয়া সপ্তাহে আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশ। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই ও চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জ-সিএসইতে বেড়েছে সবগুলো সূচক। পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠতে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও।

ইতোমধ্যে বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের মুদ্রানীতি। টানা কয়েকদিন বাড়তে থাকা পুঁজিবাজারে বৃহস্পতিবার অবশ্য কিছুটা দর সংশোধন হয়েছে। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ পয়েন্ট।

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সম্প্রতি নিউজবাংলাকে এক সাক্ষাৎকারে জানান, যে কোনো সময় প্রত্যাহার হতে পারে ফ্লোর প্রাইস। যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাজার তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে বলে মনে করে নিয়ন্ত্রণ কমিশন।

অবশেষে তার সেই কথারই প্রতিফলন ঘটলো ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। শিমুল আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারীর মন্তব্য, এতে সাময়িকভাবে সূচকের কিছুটা পতন হলেও দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হওয়া যাবে। তিনি বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস আজ হোক কাল হোক প্রত্যাহার করতে হতোই। এখানে বহু বিনিয়োগকারীর মূলধন আটকে আছে। তবে আমার কাছে মনে হয় কমিশন যথাসময়েই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে’।

এছাড়া ৩৫টি কোম্পানির ওপর এখনও বহাল থাকা ফ্লোর প্রাইসও দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি এই বিনিয়োগকারীর।

বিএসইসির আদেশে যে কোম্পানিগুলোর ওপর ফ্লোরপ্রাইস বলবৎ থাকার কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো- আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, বারাকা পাওয়ার, বিএটিবিসি, বেক্সিমকো, বিএসসিসিএল, বিএসআরএম লিমিটেড, বিএসআরএম স্টিল, কনফিডেন্স সিমেন্ট, ডিবিএইচ, ডোরিন পাওয়ার, এনভয় টেক্সটাইল, গ্রামীণফোন, এইচআর টেক্সটাইল, আইডিএলসি, ইনডেক্স অ্যাগ্রো, ইসলামী ব্যাংক, কেডিএস লিমিটেড, কেপিসিএল, কট্টালি টেক্সটাইল, মালেক স্পিনিং, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল পলিমার, ওরিয়ন ফার্মা, পদ্মা অয়েল, রেনাটা, রবি, সায়হাম কটন, শাশা ডেনিমস, সোনালী পেপার, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, শাহজীবাজার পাওয়ার, সামিট পাওয়ার ও ইউনাইটেড পাওয়ার।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং শ্রীলঙ্কার দেউলিয়া ঘোষণাজনিত পরিস্থিতিতে দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতনের শঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। তার আগে কোভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে একবার ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল।

তবে দ্বিতীয় ধাপের ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচা তলানিতে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইস বহাল থাকায় বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি ব্রোকার হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোও সংকটে পড়ে।

আরও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে গভর্নরের সহযোগিতা চাইলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান
লেনদেন ও সূচকে হতাশার মাঝে শেষ দিনে আশা
‘বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিতে সক্ষম বেস্ট হোল্ডিংস’
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দৃঢ় ও সম্ভাবনাময়: বিএসইসি চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজারে ৮ বছরে বিনিয়োগকারী কমেছে ১৪ লাখ

মন্তব্য

পুঁজিবাজার
BSEC chairman wants cooperation to increase liquidity in the capital market

পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে গভর্নরের সহযোগিতা চাইলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান

পুঁজিবাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে গভর্নরের সহযোগিতা চাইলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান গভর্নর ‎আব্দুর রউফ তালুকদার ও বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বুধবার নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ছবি: সংগৃহীত
আর্থিক খাতের দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তারল্য কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়টি ছিল। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় করার জন্য গভর্নরকে অনুরোধ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ‎আব্দুর রউফ তালুকদার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম একে অপরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বুধবার নিজেদের মধ্যে নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে গভর্নরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক খাতের দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানদের এই বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজার ও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তারল্য কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এ জন্য ব্যাংকগুলোকে আইনের মধ্যে থেকে আরও সক্রিয় করার জন্য গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বৈঠকে মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যান নতুন বছরের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এক পর্যায়ে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনায় উঠে আসে। এ সময় পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ব্যাংকগুলো কীভাবে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে গভর্নরের সহযোগিতা চান বিএসইসি চেয়ারম্যান।

বৈঠকে গভর্নরও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করার বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান রেজাউল করিম।

প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ বছর জুড়েই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। নতুন বছরে পুঁজিবাজারকে আরও বেগবান করতেও নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে কারসাজি রোধে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি
ডিএসইতে ৪ মাসের সর্বনিম্ন লেনদেন
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন এটিএম তারিকুজ্জামান
পুঁজিবাজার: ৪০০ কোটির নিচে নামল লেনদেন
পুঁজিবাজার: হতাশা দিয়ে সপ্তাহ শুরু

মন্তব্য

পুঁজিবাজার
Hopes in last days amid disappointment in trading and indices
পুঁজিবাজারের গত সপ্তাহ

লেনদেন ও সূচকে হতাশার মাঝে শেষ দিনে আশা

লেনদেন ও সূচকে হতাশার মাঝে শেষ দিনে আশা ফাইল ছবি।
বিনিয়োগকারীরা অবশ্য ধরেই নিয়েছেন এমন অবরোধ আর হরতালের মধ্যে পুঁজিবাজার থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়ার নেই তাদের। একইসঙ্গে তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ বাজার সম্ভাবনাময়। বিশেষত রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হবে।

হরতাল আর অবরোধের মধ্যে আরও একটি সপ্তাহ পার করলো দেশের দুই পুঁজিবাজার। এ নিয়ে চার সপ্তাহ ধরে প্রায় একই বৃত্তে ঘুরছে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই। বিনিয়োগকারীরা অবশ্য ধরেই নিয়েছেন এমন অবরোধ আর হরতালের মধ্যে পুঁজিবাজার থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়ার নেই তাদের। একইসঙ্গে তারা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ বাজার সম্ভাবনাময়।

সবশেষ সপ্তাহে ডিএসইর হিসাব বলছে, আরেক ধাপ কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। তবে সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসের লেনদেন ও সূচক বৃদ্ধিতে কিছুটা আশাবাদী অনেক বিনিয়োগকারী। বিশেষ করে শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারের লেনদেন দেখে তারা বলছেন, এটা পরের সপ্তাহটি ভালো থাকার ইঙ্গিত। অবশ্য এই সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকারও কম।

পাঁচ কর্মদিবসে গেল সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৩৮১ কোটি টাকা। সপ্তাহ কিংবা দিন উভয় ক্ষেত্রেই লেনদেন কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।

এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন ছিলো ২ হাজার ২ কোটি টাকা। আর দৈনিক হিসাবে গড় লেনদেন ছিলো চারশ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। সপ্তাহ শুরুর তিন দিনে অবশ্য আরও হতাশাজনক চিত্র ছিলো।

মঙ্গলবার লেনদেন নেমে আসে তিনশ কোটির নিচে। পাশাপাশি কমতে দেখা যায় সব সূচক। তবে তার পরদিনই সূচকের উত্থান দেখা যায় ডিএসইতে। তার পরদিন সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও গতি দেখা গেছে। বৃহস্পতিবারের লেনদেন ছিলো তার আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা বেশি।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী রোকন উদ্দিন বলেন, ‘সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে লেনদেন ভালো হওয়া মানে পরের সপ্তাহে আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা। যদিও ডিসেম্বর মাস ঘিরে খুব বেশি আশা করার কিছু নেই।’

ডিসেম্বর মাসে কেন আশা করছেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা তা-ই বলছে। একদিকে বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর ক্লোজিং থাকে এ মাসে। সব মিলে এ মাসে পুঁজিবাজারের উত্থান হতে পারে তবে সেটি বড় আকারে হবে না বলেই মনে হয়।’

আরেক বিনিয়োগকারী শরিফ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে লিখেছেন, ‘শেয়ার বাজার কি শুধু কমবেই, নাকি থামবে এবার?

‘সব কিছুরই তো একটা শেষ আছে। দর পতনের শেষ দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি নতুন বছরে অনেক হতাশার সাথে শেয়ার বাজারের হতাশাও দূর হবে।’

লেনদেনের পাশাপাশি গেলে সপ্তাহে কমেছে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স। অবশ্য পরিমাণে তা খুব বেশি নয়। ডিএসইএক্স গেল সপ্তাহে কমেছে দশ পয়েন্টের কিছুটা বেশি। সপ্তাহের শুরুতে প্রধান এই সূচকটির অবস্থান ছিলো ৬ হাজার ২৩৩ পয়েন্ট, যা সপ্তাহ শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২২৩ পয়েন্ট। তবে ডিএস-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচক সামান্য পরিমাণে বেড়েছে এ সপ্তাহে। সবমিলে পুরো নভেম্বর মাসে ডিএসইর প্রধান সূচকটি কমেছে প্রায় ৫০ পয়েন্ট।

হতাশা রয়েছে বাজার মূলধন ঘিরেও। গেল সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাতশ কোটি টাকা। তবে পুরো নভেম্বর মাসের হিসাবে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। নভেম্বরের শুরুর দিনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর বাজার মূলধন ছিলো ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, যা মাসের শেষ কার্যদিবসে নেমেছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৮১৬ কোটিতে।

বাজার মূলধন কমে আসাকে অবশ্য নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে বিনিয়োগকারী। তানভীর নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘যেভাবে বাাজার মূলধন কমেছে তা দেখলে ভয় হয়। ফ্লোর প্রাইসের কারণে এখন চাইলেও শেয়ার বিক্রি করা সম্ভব নয়। এজন্য আমরা অনেকে বাধ্য হয়ে পুঁজিবাজারের সাথে ইনভলভ রয়েছি। একটাই প্রত্যাশা- শেয়ারের দাম কমবে না। তবে যখন দেখি বাজার মূলধন কমে যাচ্ছে তখন কিছুটা ভয় পাই।’

একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা বলে পুঁজিবাজার এখান থেকে আবারও উপরের দিকে যাবে। যদি প্রশ্ন করেন- কেন? তাহলে বলবো অনেক কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হলো রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এটা ঠিক হয়ে গেলে বড় বড় বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠবে।’

নেতিবাচক বাজারেও ডিএসইতে গত সপ্তাহে বেড়েছে বেশ কিছু শেয়ারের দর। অনেকে এটাকে বলছেন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি।

সপ্তাহের বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে জিকিউ বলপেনের। ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত শেয়ারটির পুরো সপ্তাহে দর বেড়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলো আফতাব অটোমোবাইলস।

এছাড়া তৃতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে ছিলো যথাক্রমে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, লিবরা ইনফিউশন ও সমতা লেদার। তিনটি কোম্পানিই ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধিতে এক থেকে পাঁচের মধ্যে থাকা চারটি কোম্পানিই ‘বি’ ক্যাটাগরির।

এছাড়া লেনদেনেও আধিপত্য বিস্তার করছে ‘বি’ ক্যাটাগরির শেয়ার। গেল সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষস্থানে দেখা গেছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিলো সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড, ফুওয়াং ফুড এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড। এ সপ্তাহে লেনদেনে শীর্ষ অবস্থানে থাকা পাঁচটি কোম্পানির মধ্যেও চারটি ছিলো ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত।

আরও পড়ুন:
‘বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিতে সক্ষম বেস্ট হোল্ডিংস’
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দৃঢ় ও সম্ভাবনাময়: বিএসইসি চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজারে ৮ বছরে বিনিয়োগকারী কমেছে ১৪ লাখ
পুঁজিবাজারে বিমা খাতের দাপট, সূচকের উত্থান
পুঁজিবাজারে কারসাজি রোধে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি

মন্তব্য

পুঁজিবাজার
Best Holdings is capable of delivering consistent dividends to investors

‘বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিতে সক্ষম বেস্ট হোল্ডিংস’

‘বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিক লভ্যাংশ দিতে সক্ষম বেস্ট হোল্ডিংস’ ময়মনসিংহের ভালুকায় বেস্ট হোল্ডিংস-এর লাক্সারিয়াস প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট। ছবি: নিউজবাংলা
কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন আহমদ বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংসের প্রকল্পগুলো ব্যবসা সফল হওয়ার বিষয়ে আমরা শতভাগ আশাবাদী। সম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো মুনাফা অর্জনের চিত্রই তার প্রমাণ বহন করে। এর বাইরে কোম্পানির অর্জিত মুনাফা রয়েছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি, যা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দাবিদার।’

বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়ানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজার থেকে ৩৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা শুক্রবার কোম্পানির নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ তাদের প্রকল্পগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানান। এ সময় তিনি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার সক্ষমতা তুলে ধরেন।

এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংসের প্রকল্পগুলো ব্যবসা সফল হওয়ার বিষয়ে আমরা শতভাগ আশাবাদী। সম্প্রতিক বছরগুলোতে ভালো মুনাফা অর্জনের চিত্রই তার প্রমাণ বহন করে। এর বাইরে কোম্পানির রিটেইন্ড আর্নিংস বা অর্জিত মুনাফা রয়েছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি, যা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দাবিদার।’

তিনি বলেন, ‘বেস্ট হোল্ডিংস এমন একটি কোম্পানি যারা বিশ্বের স্বনামধন্য চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ম্যারিয়ট, লে মেরিডিয়ান, হেইলিবেরি ও লাক্সারিয়াস।

‘ওইসব প্রতিষ্ঠান থেকে লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ব্যবসা পরিচালনা করে বেস্ট হোল্ডিংস। বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মালিকানার কোম্পানি হিসেবে এটি এক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে থাকা প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে মধ্যে আগামী বছরেই শেষ করতে পারলে এর কার্যক্রম থেকে ভালো মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে, যা বিনিয়োগকারী ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে অবাদন রাখবে বলে বিশ্বাস করি।’

‘মানসম্পন্ন সম্পদ গঠনে বিনিয়োগ করুন, যা আপনাকে কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব তৈরি করতে সহায়তা করবে’ এমন দর্শনকে বুকে লালন করে গড়ে ওঠে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন আহমেদের তিন দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে দেশের একজন খ্যাতিমান সেতু নির্মাণকারী হিসেবে। তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সফল ব্যবসায়ী জীবনের পেছনে যেসব প্রতিবদ্ধকতাকে অতিক্রম করতে হয়েছে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আমিন আহমেদ। এতে তিনি কীভাবে তার কোম্পানি অবকাঠামো তৈরি করছে, ব্যবসায় কোন ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন এবং কীভাবে একটি বিলাসবহুল হোটেল-রিসোর্ট সাম্রাজ্যের জন্য তার স্বপ্নকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল সেসব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

আমিন আহমেদ বলেন, ‘চাহিদা মূল্যায়ন এবং স্থান নির্বাচনে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচ তারকা হোটেল লে মেরিডিয়ান প্রতিষ্ঠা একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। কেননা, ঢাকায় আসা বিদেশি অতিথিরা এখানে বিশ্বের বড় বড় হোটেলগুলোর চেয়ে বেশি মূল্যায়ন দিতেও আপত্তি করেন না।’

নির্মাণকাজ স্থগিত রাখা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দেরি হওয়ার কারণে ‘লে মেরিডিয়ান ঢাকা’র উদ্বোধন সাত বছর পিছিয়ে দিতে হয়েছিল। হোটেল প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫-০৬ সালে শুরু করা হলেও এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয় ২০১৫ সালে।

৯০০ কোটি টাকার এই প্রকল্প সময়সমতো শেষ করা সম্ভব না হওয়ায় এর ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। ফলে কোম্পানিকে ব্যাংক ঋণের সহায়তা নিতে হয়েছে। লে মেরিডিয়ান হোটেল এবং ভালুকা ও নোয়াখালীতে কোম্পানির কৃষি খামারের জন্য ব্যাংক ঋণ ও কনভার্টিবল বন্ড ইস্যুর পথ সহজ হয়েছিল।

২০১৯ সালে বেস্ট হোল্ডিংস তার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বন্ডের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। ইতোমধ্যে এর বড় একটা অংশ নগদ এবং ইক্যুইটিতে রূপান্তরের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে।

আমিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা যখন লে মেরিডিয়ানের যাত্রা শুরু করলাম তার কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে মহামারি কোভিড-১৯ আঘাত হানে। ফলে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের ব্যবসা অনেক কমে যায়। এর মধ্যে ২০২০-২১ হিসাব বছরে আমাদের রাজস্ব আয় নেমে আসে ১১৩ কোটি টাকায়, যা দুই বছর আগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ।

অবশ্য ২০২২-২৩ হিসাব বছরে আমরা মহামারির আগের বছরের থেকেও ভালো অবস্থানে ফিরতে পেরেছি। আশা করছি, আগামী বছরে আমাদের ব্যবসা আরও বাড়বে। কেননা, লে মেরিডিয়ান ঢাকায় এখন রুম ভাড়া আগের থেকে ৭০-৮০ শতাংশ বেশি।’

প্রসপেক্টাস অনুসারে, বেস্ট হোল্ডিংসের আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ভবন ও অন্যান্য পূর্তকাজ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়, ঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ খাতে ব্যয় করা হবে। কোম্পানিটির নির্মাণাধীন প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো- আন্তর্জাতিক মানের একটি ম্যারিয়ট হোটেল, বিলাসবহুল রিসোর্ট, ব্যক্তিগত ভিলা, স্কুল প্রকল্প এবং ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল।

আইপিওর মাধ্যমে তোলা ৩৫০ কোটি টাকার মধ্যে ১৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যবহার করা হবে ভালুকায় ৪৩ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা রিসোর্টটির ভবন তৈরিতে। ৪৫ কোটি টাকা দিয়ে এই রিসোর্টের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা হবে। আর ১১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হবে। এছাড়া আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে শান্তা ইকুইটি লিমিটেড ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। তালিকাভুক্তির আগে কোম্পানিটি কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছে বিএসইসি।

আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দৃঢ় ও সম্ভাবনাময়: বিএসইসি চেয়ারম্যান
পুঁজিবাজারে বিমা খাতের দাপট, সূচকের উত্থান
পুঁজিবাজারে কারসাজি রোধে তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি
ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন এটিএম তারিকুজ্জামান
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকে আরও সহজ করবে ডিজিটাল সেবা

মন্তব্য

p
উপরে